বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০

হাতুড়ে গদ্য- অন্ধকার এবং ঘন্টার টুং টাং

ঘন্টার টুং টাং শব্দ অন্ধকারে পুকুরে একেকটা করে রঙ ছুঁড়ে দেয়। আর রঙের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে সময়গুলো।



টুং... অন্ধকারের ভিতরে একঝলক সবুজ গন্ধ নিয়ে ছুটে এলো সময়।
অনুপমা বসে আছে বই হাতে। গায়ে জড়ানো কলাপাতা আর সাদা চেককাটা সুতির শাড়ী। মাথাটা একটু কাত করে বইয়ে ডুবে আছে সে। আলতো হাসির ছোঁয়া ঠোঁটের কোনে। শুভ্র একটু দূরে বসে তাকিয়ে আছে অনু’র দিকে।
-শুনছো, আমাকে একটু পানি এনে দেবে?
শুভ্র পানি নিয়ে এসে দেখে অনু’র চোখ ছলছল।
=কি হয়েছে তোমার? এই দেখে গেলাম হাসি, এই কান্না?
-তুমি কি বই টই পড়া বাদ দিয়ে দিয়েছো? সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকো?
=তোমাকে পড়তে পড়তেই তো আমার সময় চলে যায়, বই পড়ার কোনো ইচ্ছেই জাগে না।
-তুমি না...


টাং... অন্ধকারের ভিতরে একঝলক হলদে রোদের পরশ নিয়ে এলো সময়।
নিজের অফিস শেষে শুভ্র অনু’র অফিসের দিকে দ্রুতপায়ে। দূর থেকে চোখে পড়লো অনুকে। অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কারো কথায় হেসে কুটিপাটি।
কেন কেন কেন?
শুভ্রর ভিতরে দুপুরের গনগনে সুর্য উত্তাপ ছড়ায়।
নিয়মিত কেন অভির সাথেই দাঁড়িয়ে থাকবে অনু? আরও অনেক ছেলেই তো আছে অনুর অফিসে? কেন এভাবে হাসবে অভির কথায়? অভিই বা কেনো ছুটির দিনগুলোতে তাদের বাসায় আসবে? কেন অভিই?
সন্ধ্যাবেলাতেও শুভ্রর ভিতরে দুপুরের হলুদ রোদ উত্তাপ ছড়ায়। মনে মনে তেতে ওঠে আর শরীর জুড়ে বয়ে যায় ঘামের নদী।

টুং... নীলাভ নিয়নের সময় অন্ধকার কে পাশ কাটায়।
=অভির সাথে এতো কিসের মাখামাখি?
-মাখামখি মানে? ছেলেটা আমার ওয়েল উইশার।
=তো কিসের ওয়েল উইশ করে শুনি?
-সেটা তো আমিও জানতে চাইতে পারি।
=মানে?
-যেদিনই লাঞ্চে তোমার অফিসে যাই, শীলাকে দেখি তোমার ডেস্কে বসা?
=আরে, ও আমার কলিগ। আমার কাছে কাজ তো থাকতেই পারে। নাকি?
-কেমন কাজ সেটাতো বুঝতেই পারছি। আমি গেলেই কাজ শেষ হয়ে যায় তাইনা? মুখ কালো করে উঠে যেতে হয় ডেস্ক ছেড়ে?
=দেখো তুমি কিন্তু অভার রিয়্যাক্ট করছো।
-ও, তুমি করলে কিছু না। আমি অভির সাথে তোমার অপেক্ষায় দাঁড়ালেই আমাদের ভিতর কিছু চলছে?
=দেখো আমি কিন্তু এরকম কিছু বলিনি। তোমার মুখ দিয়েই বের হ’লো।
-তুমি সরাসরি বলনি, কিন্তু এরকমই তো মিন করেছো।
=তাইতো হবে। চোরের মন তো পুলিশ পুলিশ।
-তুমি আমাকে চোর বলছো? তুমি কি? ঘরে বউ থাকা সত্তেও আরেকটা মেয়ের সাথে যে সম্পর্ক চালাচ্ছো?
=না জেনে কিছু বলোনা বলছি।
-আমার আর জানতে হবে না। আমার বোঝা হয়ে গেছে তুমি কতটা সাধু পুরুষ। আমি যখন মায়ের বাসায় যাই তখন অই শীলাকে বাসায় নিয়ে আসো তাই না?
শুভ্র নিয়নের নীল আভাটাকে অনু’র গালে এনে বসিয়ে দিয়ে মনটাকে অন্ধকার করে ফেলে।


টাং... লাল রক্তের আঁশটে গন্ধ জমে ওঠে সময় কে ঘিরে।
শুভ্রর চিন্তা চেতনায় অনু-অভির সম্পর্ক। মাথার ভেতরে লালের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে সারাক্ষণ। রক্ত ছুটে চলে শিরা ও ধমনী বেয়ে। দ্বিগুন বেগে।
হয় অভি, নাহয় অনু।
দুজনের একজনকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতেই হবে। সিগারেটের লাল আগুনের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত খুঁজে চলে শুভ্র।
হয় অভি, নাহয় অনু।
অনুপমাই। কিন্তু কিভাবে?
গলায় ওড়না পেঁচিয়ে? নাকি ব্লেড দিয়ে রগ কেটে ফেলে? নাকি ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে?
ব্লেড। লাল। রক্ত। দায় এড়ানো?
দু’দিন পর অফিসের কাজে যেতে হবে শহরের বাইরে। অফিস জানবে কালকেই রওনা হবে, বাসাতেও তাই। মাঝপথে নেমে যাবে, জরুরী কাগজ আনতে ভুলে গেছে বলে। ফিরে আসবে বাসায়। এসে দেখবে অনুপমা মৃত পরে আছে শোবার ঘরে। পরনে কলাপাতা রঙের শাড়ীটা।




:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
শুভ্রর নীল টি-শার্টটা রক্তের ছোপ লেগে কালো হয়ে গিয়েছে।
অনু চাকরী ছেড়ে কোথায় চলে গিয়েছে। কেউ কোনো খোঁজ জানে না।
অভিকে ইদানীং শীলার সাথে এখানে ওখানে ঘুরতে দেখা যায়।