সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

কিভাবে আমাদের দশ বছরের স্মৃতিময় দিনগুলো ভুলে গেলে???

দশ টা বছর। খুব কম সময় কিন্তু না...
তার সাথে আমার এতদিনের সম্পর্ক। এতদিন ধরে সে রয়েছে, কিংবা বলা ভালো "ছিলো", আমার পাশে।

সুখে...
দুঃখে...
হতাশায়...
আশায়...
উৎসবে...
শোকসভায়...
তুমুল শ্রাবণে...
তীব্র চৈত্রে...
হাড় কাপানো মাঘে...
আমাকে সে চিনে নিয়েছিলো তার মতো করেই।

খুব বেশী মনে পড়ছে তার সাথে পরিচয়ের দিনটার (বলা ভালো সন্ধ্যা) কথা। নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম দাদুর (বড় বোন) সাথে। কিছু কেনাকাটা ছিলো দাদুর, আমি শুধু বিনেপয়সার মুটে হিসেবে গিয়েছিলাম। ঘুরতে খারাপ লাগছিলো না। হঠাৎ একটা দোকানে দেখা তার সাথে। প্রথম দেখায়ই ভালো লেগে গেলো। পরিচিত হ'লাম নিজেই। প্রথমে কিছুটা অনিচ্ছা থাকলেও, আস্তে আস্তে সে আমার হয়ে উঠলো।

সেও কি আমাকে ভালোবাসতো?
হয়তো হ্যাঁ, হয়তোবা না।

বুঝিনি, এত দিন ধরে তার সাথে থেকেও তাকে ঠিকভাবে চেনা হয়ে ওঠে নি। শুধু এটুকু বুঝতাম, আমি তার সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। আমার মানসিক কিংবা শারীরিক অবস্থার সাথে সে ও তার নিজের মানসিক অবস্থা মিলিয়ে নিতো। আমার মন যখন খারাপ হ'তো তার চেহারাতেও ছাপ পড়তো। আমার শরীর যখন খারাপ হ'তো সেও তখন বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। ঘুমোবার আগ পর্যন্ত সে আমাকে সঙ্গ দিতো, আবার ঘুম থেকে জেগে ওঠার সাথে সাথেই মিস্টি হাসি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাতো।
কতজন তাকে নিয়ে কত কিছু বলেছে, সে কখনো এক ফোটাও রাগ করেনি। বরঞ্চ রেগে গিয়েছি আমিই, ঝগড়া করেছি অন্যের সাথে। সে নিশ্চুপ সায় দিয়ে গিয়েছে আমার সকল পাগলামীর।

কিন্তু গতকাল, হঠাৎ আমার কাছ থেকে কোনো রকম আগাম কিছু না জানিয়েই হারিয়ে গেলো সে। সকাল বেলাও আমাকে কিছু বলে নি সে। কিন্তু সকাল ১০.১৭ থেকে সে লাপাত্তা হয়ে গেলো। একটু কি তার খারাপ লাগে নি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে? একটুও না?

তাকে তো আমি চিনি, খুজেও কোনো লাভ হবে না জানি। একেবারেই সে চলে গেলো। এক্কেবারেই...


মাত্র ষোল টাকা দিয়ে কেনা ব্রেসলেটের জন্য এতটা আবেগী হওয়া কি ঠিক হচ্ছে? কি জানি? এতদিন আমার সাথে সে ছিলো, এটুকু ভালোবাসাতো জন্মাতেই পারে...

(অশিরোনাম পংক্তিমালা)

চিনচিনে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে নিউরনে নিউরনে
গাছেরাও চলে যায় মেঘস্পর্শ এড়িয়ে
রোদার্ত মগজের খোঁজে।

টুপটাপ ঝরে ঝরে পড়ে জোছনা, চাঁদের কলসী ভেঙ্গে...

প্রসারিত বুকের গহন গভীরতা থেকে
ভেসে ওঠে স্ম্বতির শুশুক।

টুকটুকে লাল বউমনিরা বেনারসী আড়মোড়া ভাঙ্গে টুং টাং চুড়ির ছন্দে...

হাতুড়ে গদ্য- (আঠালো রোদের মেঘে একটি ছেলে)

আঠালো রোদ শরীরের সাথে জড়াজড়ি করে একটা চটচটে অনুভব ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেহে। সমুদ্রজল জমে উঠছে বাহুমূলের গভীরে, সমতল পিঠের ভুমিতে...

ছেলেটা নেমে আসলো লোকাল বাস থেকে। গনগনে রোদ। রাস্তায় বাতাসও কেঁপে কেঁপে উঠছে গরমের আলিঙ্গনে। কয়েকটা কাক কারেন্টের তারে বসি বসি করেও বসছে না। রাস্তা থেকে অদ্ভুত একটা সুগন্ধ আসছে। এই সুগন্ধটা যখনই আসে, বুঝতে হবে অল্প সময়ের ভিতরই বৃষ্টি হবে, এরকম কথাই ছেলেটা শুনেছিলো নানা কিংবা মা এর মুখে। প্রবল আগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে থাকলো ছেলেটা।



দুরে একফোঁটা মেঘের মত দেখা যাচ্ছে না?
হুঁ তাইতো, মেঘইতো দেখা যায়।

রোদ যেনো আরো ঘন, আরো আঠালো হয়ে উঠেছে। শুধু চোখই না শরীরের প্রতিটা রোমকুপ দিয়ে রোদ ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এদিকে মাথাও হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। পায়ের ছন্দ আস্তে আস্তে অগোছালো হয়ে উঠছে।
হুশ হুশ করে একেকটা বাস চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। বাতসের ধাক্কায় কেঁপে কেঁপে উঠছে ছেলেটা। যেমন কাঁপছে রোদের প্রকোপে রাস্তার বাতাস, দুরে তাকালে ছলছল পানির কাঁপন অনুভব হচ্ছে। কাছে গেলেই নাই। ছেলেটার দৃষ্টিপথ অনুসরণ করলে একটা প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে।
যা খানিকটা এরকম ভাবে দেখানো যায়
আকাশ-রোদ-রাস্তার কাঁপতে থাকা বাতাস-মাটি-রোদ-আকাশ....

ছেলেটার ছন্দ আরো অগোছালো হয়ে উঠেছে, রোদ আরো চটচটে, কালো মেঘটা আরো বড়...

ছেলেটা ছন্দ মেলাবার চেষ্টায় রাস্তার প্রায় মাঝে চলে গেছে, আকাশ পুরো আঁধার, হুশ হুশ করে গাড়িগুলো ছুটছে আশপাশ দিয়ে...

ছেলেটা ছন্দ হারিয়ে রাস্তাকে আলিঙ্গন করলো। মাটির সুগন্ধটা হঠাৎ ই তীব্র হয়ে উঠে আকাশটাকে কেঁদে উঠতে বাধ্য করলো...

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন-৫)

"চলে যাও আলফেসানী?"

পিছু ডেকেছিলো সুভদ্রা। আলফেসানী ফেরেনি। আসলে হাতে সময়ও ছিলো কম, ঐ দুরে এ্যসফল্টের নদীগুলোর পাশে একটা বিল্ডিংএর পেটের ভিতর ঢুকে পড়ার তাড়া ছিলো। সুভদ্রার শেষ কথা গুলো সারাদিনই অনুরণন তুলেছিলো কানে, মনে। বার বার ইচ্ছে হয়েছে রিনিক ঝিনিক শব্দে সুভদ্রার ফোনটা বাজাতে। সেটাও চাপা পড়ে গিয়েছে কাজের নীচে।

রিনিক ঝিনিক... সুভদ্রার ফোনটা নাচতেও জানে উদাস করা ছন্দে। সেও অপেক্ষায় ছিলো হয়তো, আলফেসানী ফোনের সাথে সাথে তার হৃদয়কেও কিছুটা নৃত্যছন্দ উপহার দেবে।সকাল চলে যায় দুপুরের হাত ধরে বিকেলের দিকে। সুভদ্রা অপেক্ষার মস-গুল্মের পরিচর্যা করে চলে। বিকেল সন্ধ্যার গালের লালিমা নিয়ে খেলতে শুরু করেছে যখন, তখন জল ভাসা সুভদ্রার চোখেও সন্ধ্যার আলো ছায়া ফেলেছে। ফোনটাকে হাতে নিয়ে সুভদ্রা জীবনের সবচে' বড় ভুলটার দিকে পা বাড়ায়।

মেঘমন্দ্রের ফোনটাও মেঘমন্দ্র ডাক দিতে পারে। হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো ফোনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে সুভদ্রার নামটা। যেটা দেখে তার বুকের ভিতর মেঘেরা গুড়গুড় করা শুরু করে। এতদিন... এত্তদিন পর সুভদ্রা তাকে ডাকছে। চকিতে ফোনটা রিসিভ করে মেঘমন্দ্র। মেঘে ঢেকে যাবার প্রক্রিয়া শুরু হয় সুভদ্রার জীবনের আকাশে।

শিশু রাতের নরম ছোঁয়ায় আলফেসানী বেরিয়ে আসে বিল্ডিংএর গর্ভ থেকে। মখমল সুরে বেজে ওঠে আলফেসানীর বাম পকেটে রাখা ফোন। হাঁটার ঝোঁক বুঝে উঠতে দেয় না সে মখমল সুর। যেটুকু সম্ভাবনা ছিলো, সুভদ্রার আকাশে আলফেসানীর রোদ জড়ানো রঙধনূ তৈরী করার তাও ডুবে যায় নাগরিক কোলাহলে।


আলফেসানী সুভদ্রার রিনিক ঝিনিক নাচের ছন্দ ভোলে।

মেঘমন্দ্র সুভদ্রার রিনিক ঝিনিক নাচের ছন্দ তোলে।

সুভদ্রা মেঘমন্দ্র ডাক তোলে।

সুভদ্রা মখমল সুর তুলতে বেসুরো সুর বাজায়।


আলফেসানীকে ডাকে সুভদ্রা

"তোমারই ভুল ছিলো, পিছু ডাকলাম, ফিরলেনা কেনো?"

আলফেসানীর কোনো শব্দ খুজে আনতে পারে না মনের গহন সমুদ্র থেকে।

"এখন বলে দাও আমি কি করবো?"

আলফেসানী শব্দ ঝিনুক হাতড়ে ফেরে মুক্তার খোঁজে।

"মেঘমন্দ্র দেহের বাঁকে বাঁকে বাঁশি বাজায়, মনের পথে বসারও সময় নেই তার"

আলফেসানী মন সাগরে গহীন থেকে গহীনতর ডুব দেয়।


সুভদ্রা তোমায় এখনও ভাবি।

সারাটা সময়।

যখন রাত হেঁটে যায় ভোরের পথ ধরে, সকালের দিকে।
যখন দুপুর হেসে ওঠে রোদে বা কেঁদে ওঠে বৃষ্টিতে।
যখন বিকেল সান্ধ্য উপাসনায় মাতে।

সুভদ্রা বুঝিনি তুমি এতো অভিমানীনী। সুভদ্রা ওহ সুভদ্রা।



আলফেসানী আবার চলে যায় এ্যসফল্টের নদীতে সাঁতার দিতে, পৃথিবীসম শুণ্যতায় চাপা পড়তে।

সুভদ্রা যায় মেঘমন্দ্রের দেহের বাঁশির সুর শুনতে, মেঘমন্দ্রকে মনের পথে বসতে আহ্বান জানাতে।

অন্য রকম চেষ্টা...

নিলীমা ঘিরে জমা হয় বিষণ্ণতার কালো মেঘ

স্বপ্নেরা বর্ষার ধারায়
চায় মুছে যেতে
মাঝে মাঝে
খুশির রোদ রংধনু আঁকে
আকাশের ক্যানভাসে
ভালোবাসা
ঠোঁটে করে নিয়ে আসে
স্বর্গীয় পাখিটা...



_______________________

এটা আমার আম্মা কে উৎসর্গ করা হ'লো

( ??? )

উৎসর্গ মনজু ভাই আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ

অন্ধকারের মত নিঃসঙ্গ
পাহাড়স্য শুণ্যতায় চাপা পড়ে যাই প্রতিবেলা
দুপুরের রোদে দেখি
বৃষ্টিমেঘের অশ্রু
টুকরো টুকরো পড়ে থাকে আনন্দের শরীর
ভেসে যায় অবিরাম
বিবস্ত্র মনেদের লাশ

বিষণ্ণতায় ঘেরা কিছু খুচরো পংক্তি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বিষণ্ণতার অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে
সরকারী নথিতে একে একে লেখা হয়ে যাচ্ছে
সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত
সময় গুলো ঢেকে যাচ্ছে অধিভুক্ত শুণ্যতায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কলাবউয়ের শরীরে জড়ানো লাজনম্র শাড়ি
ভোরের স্নিগ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে জেগে উঠেছে
সদ্য স্নান শেষের মোহময়তা
আদিগন্ত যে লালিমায় মেখে আছে আকাশের মঠ
তারই কিছুটা ছড়িয়ে আছে গালের দু'পাশে

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

উদ্দাম জঙ্গলের গভীরে নির্বাক হেঁটে চলে গিয়েছে জলপশু
ঘন সবুজের ভিতরে ক্রমান্বয়
গাঢ় থেকে গাঢ়তর অন্ধকার
দ্বিপ্রাহরিক রোদমুক্তি ঘেঁষে, অবিন্যস্ত শরীরাল্পনা
জলপশু, ফিরে এসো
খুঁজে দাও সময়ের সুপেয় জল
জলপশু, ফিরে এসো
শরীরে গড়ে তোলো মৃত্তিকার সুগন্ধ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

(অশিরোনাম সুখজমা মেঘ)

একঝাঁক কানিবক উড়ে চলে গেছে,
মহুয়ার মায়া ছেড়ে অন্য শহরের ছাদে।
কার্নিশ ছুঁয়ে গেছে ধবল পালকের ঘ্রাণমগ্ন বিকেল,
আর,
সন্ধ্যার কমলালচে আলো জলভাসা মোমের ছায়াকে দীর্ঘায়িত করে তুলেছে
অবিরাম।

সুখজমা মেঘেদের আড়ালে, আবডালে পরিত্যক্ত কাশবন।

জমা হ'তে থাকে, খরচ হ'তে থাকে
গার্হস্থ্য অসুখ।

(এলোমেলো দুঃখবিলাস)

দু' একটি সবুজ বোতল কখনও নীল হয়ে উঠতে পারে

যদিও দাবী নেই কোনো, তবুও হাতেরা

স্পর্শ করে অস্পৃশ্য দেহাবরণের খাঁজ

গীর্জা কিংবা রিকশার ঘন্টায়, ছুঁয়ে যাবার সম্ভাবনা

প্রাহরিক হতাশার।


দুঃখবিলাস অনুপুংখ বিশ্লেষণের অপেক্ষায়...

(দিন যাপনের ছিন্নচিত্র)

রোজ ভোরে ঘুম ঘুম জুতো গুলো জেগে উঠে বহুচর্চিত স্বপ্ন ছুঁয়ে
রোদ সীমানা পেরোয় সময়টেবিলের খোপ বন্ধ করে
প্রাচীন দুপুরের ছায়ারা মৃত স্তনচাপ বেয়ে

ঢলে পড়ে


রাত জাগলো...

রাত জাগলো...

হেঁকে যায় রাত প্রহরীর ইউনিফর্মের বোতামগুলো
শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে, রাস্তা ঘেঁষে নিথর পড়ে থাকে ফুটপাথের সাপ।

(মৃত্যুরও অধিক মৃততর কথামালা)

আজ রাতে যাদের মারা যাবার কথা ছিলো
তারা কেউ ই মারা যায়নি,
শোকপ্রস্তাব নিয়ে এ্যম্বুলেন্সগুলো ছুটে যায়নি
মর্গ থেকে হাসপাতালে
কিংবা পুঁতিগন্ধ আনাচে কানাচে।

ঘর্মগ্রন্থি নির্গত বিষাদের মতই সকলে
বেঁচে রয়েছে দুরবর্তী বাহুমূলের রোমে রোমে।

আর আমরা,
নিতান্ত অবহেলায়,
ফেলে রেখে গেছি নিঃশেষিত সিগারেটের প্যাকেট
ঘাসেদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের বাহুতে।

একে একে ক্ষয়ে গেছে চাঁদ
আমরা সবাই জেগে উঠেছি মৃত্যুর ও অধিক মৃত্যুতে।

হাতুড়ে গদ্য (খালিশপুর)

গুড়িয়া বসে ছিলো রাস্তার ঐপাড়ে। তার সবসময়ের সাথী তুলোর পুতুলটাও ছিলো সাথে। শীত শীত লাগছিলো তার। কিন্তু ছয় বছরের এই ছোট্ট জীবনেই সে জেনে ফেলেছিলো বেঁচে থাকার রূঢ় কিছু নিয়ম। যেমন বলা যায় ক্ষুধার কথা। তার আম্মি যে বাসায় কাজ করে সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসলেই তবে সকালের নাস্তা হবে। নইলে সারা সকাল 'হালুয়া রোটি খায়েঙ্গে তো নিন্দিয়া সাতায়েঙ্গে' জপে পার করতে হবে।
এ গুড়িয়া...কাঁহা গিয়ারে লাড়কিঠো... ইধার আ তো জারা...
আম্মির ডাক শুনে গুড়িয়ার শিকনি শুকানো নাকের নীচে একটা নিষ্পাপ হাসি ফুটে ওঠে। আম্মি জরুর কুছ খানেকো লেকর আয়া ভাবতে ভাবতে সে ছোট ছোট পায়ে ছুটে যায় বস্তির ঘরটার দিকে।

ওরা থাকে হাউজিং বাজারের একটু ঐপাশে যে ঈদগা মাঠটা আছে সেখানে। কিছু গোলপাতার তৈরী ঘর আছে। তাদের সমগোত্রীয় কিন্তু কিছু পয়সাওয়ালারা থাকে পাকা বাড়িতে। ডি লাইন, ই লাইন, ডাব্লু লাইন, আর লাইন, জে লাইন এখানে তাদের ঘনত্ব বেশী। অন্য গুলোতে বাঙ্গালীরা বুধানকি বাপ, নইলে শাহিনুরকি আব্বু লোগ যাব পাকিস্তান চলা যা রাঁহা তব খরিদকে রেখেছে।

তাদের এক কামরার বাড়ির পাশে যে ঘর টা আছে তাতে আনখীরা ছয়জন থাকে। উসকে বিঁচোমে আনখী কো ছোটা জো ভাই হ্যায় হিরা, উসকো সাথ ফির নাগমাকো খুব মিলমিশ হ্যাঁয়। ওদের দুজন কে হাত ধরাধরি করে হোটেলের দিকে যেতে দেখে গুড়িয়ার ছোটো মাথায় এই চিন্তা এসেই হারিয়ে গেলো। কারণ রাস্তা দিয়ে অনেক বেশি রিকশা চলছে। অবশ্য নিউজপ্রিন্ট, প্লাটিনাম, হার্ডবোর্ড, জুবিলী মিল গুলোয় পুরোদমে উৎপাদন চলছে যে, লোকজনতো যাওয়া আসা করবেই।

গুড়িয়া একটা ফাঁক ফোঁকড় খুজতে থাকলো রাস্তা পার হবার জন্য।
বাসার কাছে আসতে তার মা বললো, চল তুঝকো তেরে নানী বুলায়া।
নানী হ'লো গুড়িয়ার মা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার মহিলা।
গুড়িয়া বেশ খুশী মনেই চললো আম্মি কো সাথ।

নাগমা আর হিরা, থাকে পাশাপাশি দুটো গোলপাতার ঘরে। বয়স কতো আর হবে? ১০ আর ১২। কেন জানি তাদের শৈশব পালিয়ে গিয়েছে নিউজপ্রিন্ট মিলের ছাল কুড়াতে কুড়াতে। এই ছাল কুড়িয়ে তারা বিক্রি করে মিলের বাইরের ছালের ব্যবসায়ীর কাছে। প্রতি সের একটাকা করে। এতে দুপুর নাগাদ যে টাকা হয় তা দিয়ে হিরা নাগমাকে রুটি আর কলা কিনে খাওয়ায় বা নাগমা হিরা কে চা আর রুটি কিনে খাওয়ায়। এভাবেই দিন চলে ওদের। মনে মনে স্বপ্ন দেখে লাড্ডান ভাইরা য্যাঁয়সে রুপিয়া জমাকর আওর ঘর বেঁচকর পাকিস্তান চঁলা গ্যায়া ওঁয়াইসেহি হামলোগ ভি একদিন পাকিস্তান চলা যায়েঙ্গে।

ফিরে আসছিলো দু'জন, সন্ধ্যার মুখে। ঘন হয়ে পড়া কুয়াশার ভিতর দিয়ে। কচি দু'টো হাত ধরাধরি করে শীতের প্রকোপ কমাবার চেষ্টা ছিলো দু'জনের ভিতরেই।

কুয়াশার ফাঁদ থেকে হঠাৎ করেই বেরিয়ে আসলো যন্ত্রদানবটা।

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন-৪)

আলফেসানীর উদ্দেশ্যহীন তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো। তাই তার চোখ দুটো বাবলু এন্টারপ্রাইজ লেখা বাসের গায়ে সেটেছিলো। কান দিয়ে ঢুকছিলো ছড়ানো ছিটানো ছন্দময় শব্দ বা শব্দময় ছন্দ। তাবরেজী যখন বলে উঠলো "অন্ধকার আসলে ঢাকা থাকে অন্ধকার দিয়েই"। আলফেসানীর আঠালো চোখ দু'টো ফিরে আসলো তাবরেজীর জামায় বড় করে আঁকা সংখ্যাটার দিকে।

মাঠের ভিতর একেবারে মাঝখানে বাঁশের একটা উঁচু কাঠামো দাঁড়িয়েছে কয়দিন ধরে। তাবরেজীর তর্কের বিষয় ছিলো কেন এটা বাঁশেরই তৈরী? কেনো স্টিল কিংবা প্লাস্টিকের তৈরী না। আরো অনেকগুলো বিষয় নিয়েই তার ভিতর অভিযোগ তৈরী হয়েছিলো। ম্যাচের বাক্সের গায়ে কাঠি ঠুকলে সেটার আগুন কেনো এত অল্প সময় স্থায়ী হয়? বারুদেই কেনো আগুন সীমাব্দ্ধ থাকবে? সিগারেটটা ঠিকমতো না জ্বলে উঠলে কি ম্যাচের কাঠির নিভে যাওয়া উচিত? এরকম আরো অনেক কিছুই ছিলো অভিযোগের লিস্টিতে।

তাবরেজীর ভাবনাগুলো কেমন যেনো সবদিকে ছড়িয়ে যায় আবার কেমন একটা কেন্দ্রীয় আবহ ধারণ করে চলে। সে পড়তে ভালোবাসে। পঠিত বস্তু গুলোর কন্টেন্টের সুক্ষ্ম সুতোয় বুনে চলে নতুন চেতনার ভিত। প্রচলিত অর্থে তাকে দার্শনিক বলা চলে না আবার চিন্তশীল্পী না বললেও তাকে অপমান করা হয়। আলফেসানী কোনদিকে যাবে ভেবে উঠতে পারে না।

দু'জন মিলে মাঠের ভিতর চিত হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন চিন্তা করছিলো। মাঝে একটা ঘাস আলফেসানীর কানে কানে বললো তারা শুকিয়ে আসছে। সিগারেটগুলো দুর দুরে প্রক্ষেপনের সুত্রে পড়তে লাগলো। রাতের অন্ধকারও একে একে ঢাকা পড়ে যেতে থাকে অন্ধকারের আড়ালে।

(দুটি বেঞ্চিতে মুখোমুখি চারজন)

প্রবীণের চা'র দোকানের সামনে
দুটো বেঞ্চিতে অফিস ফেরতা চারজন
(পঞ্চম জন? আসি আসি করেও আসতে পারেনি)
বিভিন্ন ভঙ্গীতে বসে আছে।

একজন ঋষি ঢং এ
অপরজন কর্পোরেট ঘোড়সওয়ার
তৃতীয়জন ধ্যানমগ্ন বকের একাগ্রতায়
চতুর্থজন বেঞ্চি লাগোয়া গাছে নিজের সকল চিন্তা প্রবাহিত করে বসে।

চা'র দোকানের টেবিলে সকল দাপ্তরিক ওজন নামিয়ে রাখার পরও
বেঞ্চির উপর ছড়িয়ে ছিটয়ে থাকা
এস.এম.এস বা ফোনকল,
চা'র কাপ (একটায় তলানি নেই, দুটোয় উচ্ছিষ্টাংশ, শেষটা অর্ধভুক্ত),
তেলমাখা কাগজের ঠোঙ্গা,
লাল রঙ এর লাইটার
আর চারটি নিতম্ব।

অসংলগ্ন নানা কথা উড়ে যায় ধোঁয়ার সাথে সাথে
কিংবা, আষাঢ়ের প্রথম দিনের উত্তাপজাত ঘামে মিশে
মেখে থাকে বাহুমূল আর পিঠের জামায়।

জমায়েত শিশুদের কলতান,
পুর্ণবয়স্কদের সুদাসলের হিসাব, কোনো বাধা তৈরী করেনা
আলাপের প্রসঙ্গান্তরে
প্রসঙ্গান্তরের প্রসঙ্গান্তরে।

অবশেষে রওনা হয়; ভুট্টোকে, পাওনা সময়ের দাম
টাকার হিসেবে মিটিয়ে প্রাত্যহিক গুহার উদ্দেশ্যে চার জোড়া পা।

(মৌলিক পার্থক্য নির্ণয়ের উপায়)

যানবাহন আর মনবাহন নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে।

যানবাহনের আরোহী যেমন শরীর
তেমনই মনবাহনের আরোহী মন।

তবে,
এই দুই বাহনের মৌলিক পার্থক্য
তাদের এক্সিসটেন্স
আর,
গমন পথের ভ্যরিয়েন্সের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা যায়।

হাতুড়ে রূপকথা- সমুদ্রবাজের ডানায় আন্ধার মুক্তা

সমুদ্রবাজের ডানায় লাগে রঙধনুকের আলো।


যেই আলো ধরার জন্য সোলেমান সদাগর গিয়াছিলো। দুই সমুদ্দুর পাড়ি দিয়া সাত আলোর জংলায়। ফিরা আসার সময় মনে ছিলো না তার বউ এর লাগি আন্ধারের মুক্তা নিয়া আসার কথা।
শরীফা সুন্দরীর নাকের নথ খসিয়া যাওনের উপায় হয়াছিলো। সোলেমান তারে স্বপ্ন দিয়াছিলো মিশমিশা আন্ধারের মুক্তার। সমুদ্দুরের নীল পানিয়ার ভিতর দিয়া নিজের বজরা দেখতে দেখতে সোলেমান সদাগরের বুকে বউ এর লাগিয়া দুঃখ ঢেউ আছড়াইয়া পড়লো।


দুঃখের ঢেউয়ের অথবা সমুদ্দুরের দোলায় তার গলা দিয়া গান বাইর হইলো


বাজের ডানায়
সমুদ্দুরের আলো
খেলা করে, ও মন
দেখতে লাগে ভালো

শরীফার সুন্দরীরও নথেরও লাগিয়া
সোলেমান ফেরে কালা পানিয়া ||


সোলেমান সদাগর তার মাঝি মাল্লাদের কইলো বজরা ঘুরাইতে। কালাপানিয়ার ধুসর শহরে যাইতে হ’বে তার। সেইখানে বেগমের মদের দোকান। মদের দোকানে আসে অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ। যার কাছে ঠিকানা রইছে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা।

——————————————————————————–

শরীফা সুন্দরী সেগুন কাঠের তক্তপোষের উপর বইসা, আবলুস কাঠের জলচৌকি তে গোলাপী পা ছড়া’য়া রাখছে। খাস দাসী কামেলা বানু সেই পায়ে চন্দনের গুড়া লাগায়া দেয়। আরেক দাসী শরীফা সুন্দরীর কুঁচ বর্ণের কেশে সুগন্ধী লাগায়। শরীফা সুন্দরী আয়নায় নিজের মুখ দেখতে দেখতে অপেক্ষা করে সোলেমান সদাগরের। সে তারে স্বপ্ন দিছে। মিশমিশা আন্ধার মুক্তার নথ বানায়া আনবো।

——————————————————————————–

অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ সবেরে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা দেয় না। তারে সন্তুষ্টি দিতে হয়। সাত’শ বরজের পান, দুই’শ বাগানের সুপাড়ী, এক’শ নদীর কালাবাউস মাছ আর আট’শ রকমের মসল্লা।

সমুদ্রবাজের ডানার রংধনুকের আলোর ব্যবসায় ভালো লাভ ছিলো। সোলেমান সদাগরের পেটিতে বান্ধা ছিলো থোক সোনার মোহর, চান্দির গয়না। সেগুলা দিয়া অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণের সন্তুষ্টি মিটানো হইলে তার কাছে আসে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা।

সেই দিশাও বড়ো কঠিন দিশা। এক’শ সতের ক্রোশ দুরে সমুদ্দুরের সীমানা। সেই সীমানা দিয়া পানি ঝর ঝর কইরা পড়ে। এই পানির আব্রুর ভিতর দিয়া যাইতে হ’বে আঠারো ক্রোশ গুহার কোলে। এইখানে ঝিনুক রানী মিশমিশা আন্ধার মুক্তা বিছায়ে রাখছে।

“সাবধান”
অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ কইয়া দিসে।
ঝিনুক রানীর মেজাজ বড় চড়া, তার নজর খুব কড়া।
প্রয়োজনের বেশি মুক্তা লইলে তারে নজরানা দিতে হয়।
নিজের চক্ষু দিয়া নজরানা।



———————————————————————————

সোলেমান সদাগর আর কখনই শরীফা সুন্দরীর চেহারা দেখতে পারে নাই।

হাতুড়ে গদ্য (অন্য চেতনা)

হঠাৎ ঘরের দরজাটা খুলে গেলো। একরাশ আলো ঝাঁপিয়ে পড়লো অন্ধকারকে দুরে সরিয়ে দিয়ে। অবশ্য কিছুক্ষণ আগে থেকেই খচমচ শব্দ হচ্ছিলো, কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায় কাঠ হয়ে ছিলো ঘরটার অধিবাসিরা।
তাকে দুজন মিলে ধরে বের করে নিয়ে আসলো গাদাগাদি করে থাকা ঘরের ভিতর থেকে। সেই কবে তাদের সবাইকে একসাথে এই ঘরের ভিতরে ঢুকানো হয়েছিলো ভুলেই গিয়েছিলো। সবকিছুই এখন নতুন নতুন লাগছে। আশে পাশে কতো নতুন নতুন জিনিস। বাতাসে নতুন গন্ধ। নতুন সব মানুষেরা।

যখন তার চেতনা জেগেছিলো সেখানকার পরিবেশের কথা মনে পড়ে গেলো। সাদা দেয়ালে ঘেরা একটা বিশাল ঘর ছিলো সেটা। আশে পাশে নানা রঙ এর কিছু যন্ত্রপাতি। সবাই সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে একেকটা ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো। তারপর থেকে এই অন্ধকার ঘরেই তাদের জীবন। এত জন একসাথে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে বা শুয়ে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগছিলো না।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অন্যরকম একটা আলোকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চিন্তার সুতোটা খানিকটা ছিঁড়ে গেলো। আহ্... কি সুন্দর একটা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহজুড়ে।
তাহলে ঐ চেতনা ঘরে যা শুনেছিলো তাই সত্যি হতে যাচ্ছে? হয়তো।

মৃত্যুর আগেই যা যা দেখা সম্ভব দেখে নেওয়ার জন্য সে চারদিকে তাকিয়ে থাকলো। প্রাণভরে উপভোগ করতে থাকলো গাছের সবুজ, মেঘের নীল, রাস্তার ছাই রঙ। উত্তাপ এখন অসহনীয় হয়ে উঠছে। শরীরে জমে উঠছে ক্লেদ...



_____________________________________________

আঙ্গুলের টোকায় সিগারেটের ফিল্টারটা ঘাসফড়িংয়ের দ্রুততায় আলফেসানীর হাত থেকে চলে গেলো মেটে রঙ এর পানির আকর্ষণে।

হাতুড়ে গদ্য (তন্বী বা তার টেবিলের গর্ভে)

রুমের বিশাল এই রহস্যময় টেবিলটা নিয়ে তপতী, নীতু আর উর্মির আলোচনার অন্ত নেই। আর এটার মালিক যেহেতু তন্বী সেহেতু আলোচনায় তার অংশগ্রহনের কোনোই সুযোগ নেই। আসলে তন্বীকে নিয়েও তপতীরা কিছুটা সন্দেহের ভিতর থাকে। কেমন যেনো মেয়েটা। এমনিতে সুস্থ্য-স্বাভাবিক, কিন্তু রাত বাড়ার সাথে তার আচরণে কেমন একটা অস্থিরতা ভর করতে থাকে।

প্রায় রাতেই তিন রুমমেটের কেউ না কেউ তার ঘুম পাড়ানী গুনগুন বা মিহি সুরে কাঁদার শব্দ শুনতে পায়। প্রথম প্রথম তপতী কয়েকবার এ ব্যাপারে তন্বী কে জিজ্ঞাসাও করেছে তবে কোনোই উত্তর পায় নি।
আরেকটা রহস্য তন্বীর বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিলটা। যেটা নিয়ে তন্বীর আদিখ্যেতা লক্ষ্য করার মতো। প্রায় প্রতি ভোরেই তাকে নিজের বিছানার বদলে টেবিলের পাশে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। আর শুক্রবার সারাটা দিন সে টেবিলটা নিয়েই মেতে থাকে। একবার এভাবে সাজায়, একবার ওভাবে গুছায়, একবার ধুলো ঝাড়ে। কিন্তু অন্য কেউ তার টেবিলের আশে পাশে গেলেই খেঁকিয়ে ওঠে।

এই দু'টো অস্বাভাবিকতা ছাড়া তন্বীর মতো ভালো মেয়ে হয় না। এই কথাটা তার রুমমেটরা একবাক্যে স্বীকার করে।

গত একমাস তন্বীকে অতিরিক্ত অস্থির লাগছে। অন্ততঃ তপতী উর্মির কাছে। নীতু এসবের সাতে-পাঁচে নেই। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে বিয়ে করা, তার লেখাপড়ার কারণও এটাই।

সেদিন রাতে তন্বী যখন টেবিলের কাছ থেকে নিঃশব্দে ফিরে আসছে তখন তপতী আর উর্মি জেগেই আছে। আজকে তারা দেখবেই কি আছে তন্বীর গোপন ড্রয়ারে। কিন্তু আধো অন্ধকারে, কাপড়ে মোড়ানো আবছায়া একটা আকৃতি ছাড়া আর কিছুই দেখা গেলো না।

তন্বী সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে খানিকটা হাঁপিয়েই গিয়েছে। সমস্যা হলো বাড়িওয়ালা পাঁচতলা করেছে ঠিকই কিন্তু কোনো লিফট রাখেনি। অবশ্য যখন বাড়িটা বানানো হয়েছে তখন পাঁচতলা বাড়িতে লিফটের প্রচলন ওভাবে ছিলো না।

ঘরের দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখে সবগুলো রুমমেট মিলে তার টেবিলটা ঘিরে কি যেনো করছে। একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে উঠলো তন্বী। তপতী, উর্মি, নীতু ছিটকে সরে গেলো টেবিলটাকে ছেড়ে। এদিকে তন্বীও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে তন্বীকে বিছানায় নিয়ে আসলো, আশপাশের রুম গুলো থেকেও অন্যান্য মেয়েরাও এসে ভীড় করেছে তাদের দরজায়। কিছুক্ষণ পর তন্বীকে নড়েচড়ে উঠতে দেখে ভীড় পাতলা হওয়া শুরু করলো। এরমধ্যে অবশ্য তপতী বানোয়াট একটা গল্প শুনিয়ে দিয়েছে অন্যদের।

জ্ঞান ফিরে পেতেই তন্বী ছুটে গেলো টেবিলের কাছে। ড্রয়ারটা ঠিকমতো তালাবদ্ধ আছে দেখে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো, যেনো কোনো কারণ ছাড়া জ্ঞান হারানোটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

আজকে তপতী আর উর্মি ডেসাপরেট, দেখতেই হবে কি এমন অমূল্য জিনিস আছে ওই ড্রয়ারটায়। তাই সকাল সকাল ফিরে এসেছে একজন তালা সারাইআলাকে নিয়ে। পুরো বিল্ডিংটাতেই নীরবতা যেনো চিৎকার করছে। এর মাঝে তারা তালা সারাইয়ের লোকটা কে দিয়ে একটা চাবি বানিয়ে নিলো। লোকটা তাদের আচরণ বুঝতে পেরে স্বাভবিকের চেয়ে ডাবল মজুরী নিয়ে চাবিটা বানিয়ে দিলো। এর মাঝে নীতুও এসে হাজির। তালা সারাইয়ের লোকটাকে বিদায় করে তিনজন ড্রয়ারটা ঘিরে বসলো। উত্তেজনায় তাদের হৃদপিন্ড এমন ভাবে লাফাচ্ছে যেনো বুকের খাঁচা ছেড়ে বের হয়ে যাবে। কাঁপা কাঁপা হাতে তপতী চাবিটা দিয়ে ড্রয়ারটা খুললো। কয়েকটা ডায়েরী আর একটা কাপড়ে মোড়ানো বয়াম আছে। ডায়েরী গুলো বাদ দিয়ে তপতী বয়ামটা বের করে নিয়ে আসলো। বেশ ভারীই লাগছে। মাটিতে নামিয়ে রেখে কাপড়ের আবরণটা সরিয়েই তিনজন একসাথে ভয়ংকর একটা চিৎকার দিয়ে বয়ামটার কাছ থেকে ছিটকে গেলো।

বয়ামের ভিতর ফর্মালিনে ডোবানো প্রায় তিনমাস বয়সী একটা শিশুর দেহ রয়েছে...

(বৃশ্চিক নবান্নের প্রাক্কালে)

বালুঘড়ি থেকে প্রতিনিয়ত পড়ে যায়

সময়;

অসময়;

সুসময়;

দুঃসময়;


পূর্ণতা পাচ্ছে মে-ফ্লাই
নিষেকার্থে, একদিনের জীবনে।

স্বেচ্ছা পশুরা বিবিধ ফ্রিজারের শীতনিদ্রা অবসানে নামছে
চারণ ভুমিতে। বৃশ্চিক নবান্ন ছড়িয়ে দিতে হবে দেহ থেকে দেহে।

এলোমেলো পংক্তিমালা

-১

********************************************************

হত্যা চিন্তার জেগে ওঠা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই
আজন্ম লালিত স্বপ্নদের।

*******************************************************

মতবিনিময়
ভুলিয়ে দেয় ট্রেনের সিগন্যালে ডুবে থাকা বিলাপের প্রলম্বন।

*******************************************************

টিস্যু পেপারে মুছে ফেলা স্বেদবিন্দুর
গায়ে রুজ, পাউডার, ফেসিয়াল ইত্যাদি ইত্যাদি
জমা হতে থাকে নিত্য দুপুরের আলোতে।

********************************************************

কৃষ্ণচুড়া রাধাচুড়া কখনও আলাদা করে চেনা হয়ে ওঠে না
নিশাচর বাদুড়ের তরঙ্গ দৃষ্টি চালনে।

*********************************************************

- ২


***********************************************************
সেল ফোনের বৈদ্যুতিক সিগন্যাল
আবেগের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় আবেশেও প্রভাব ফেলে
নয়তো, ফোন বেজে উঠলেই বুকের রক্ত ছলকে উঠবে কেনো?

************************************************************

বিছিয়ে রাখা রাজপথে, দুরপাল্লার যানের শীৎকারে প্রতিবেশি পাখিরাও উদভ্রান্ত হয়। উড়নসুত্র লেখা হয় ইট ভাটার ধোঁয়ায়।

************************************************************

চশমা দিয়ে দেখা রাত আর খালি চোখে দেখা রাতের ভিতর মৌলিক কোনো পার্থক্য খুঁজে পায়না অন্ধহীন দৃষ্টি।

*************************************************************

- ৩

***************************************************
পেঁচার মৃত চোখে
লাল পিঁপড়েদের সারিবদ্ধ আনাগোনা
পালকের উজান ভাটিতে নেচে ওঠে
মাছেদের সমাধি সুবাস

সুগন্ধের চাষ হতে থাকে শস্য দেহজুড়ে...

****************************************************

(সমর্পিত স্বপ্নেরা কথা বলে ওঠে নিঃশব্দে)

সাদা থেকে ধবধবে উড়ে গেছে সন্তর্পনে

কুচকুচে এসে খুঁটি গাড়ে স্বপ্নের আনাচে কানাচে

নয় কিংবা তার গুণিতক গাঁদা স্নিগ্ধতা নিয়ে ছুঁয়ে
আছে চোখের তারা
রেটিনা।

অন্ধবিন্দুতে আলোর প্রতীক্ষায় বসে থাকা অনিবার্য নিয়তির...

হাতুড়ে গদ্য (একটা সকালের আগে থেকে)

রহমতজান লুঙ্গীটা কষে বাঁধতে বাঁধতে একটা গালি ছুঁড়ে দিলো নেমে যাওয়া প্যসেন্জারটাকে উদ্দেশ্য করে। "মাদারচোত দুই ট্যাকা ভারা দিয়া য্যান গাড়িটারে কিন্যা লইছে, ঘরের বগলেই নামায়া যাইতে হইবো লাটসাবরে" গজগজ করতে করতে বাসের দরজায় দুইটা থাপ্পর দিয়ে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ছাড়লো "বাড়ান ওস্তাদ। ডাইনে চাপায়া, বায়ে জমা পেলাস্টিক।"
সেই ভোর সক্কালে যখন কাজে আসছিলো রহমতজান তখনও ছেলেটা ওঠেনি। এখন গাড়ি জমা দিয়ে, দিনের বেতন নিয়ে যখন বেড়ি-বাঁধের ছাপড়াতে ফেরত যাবে তখনও বাচ্চাটাকে ঘুমাতেই দেখবে। "বালের হ্যালপারি" নিজের উপরেই কেন জানি রেগে উঠলো সে। ওস্তাদের যদি মনমেজাজ কিছুটা ভালো থাকে বা গাঁজায় দমটা বেশী পড়ে তখন তাকে মাঝে মাঝে গাড়ি চালাতে দেয়। "হাতের জ্যামটাও হালার কাটতেছে না, নাইলে কবেই এই বালের হ্যালপারি ছাইড়া দিতাম"।
বেড়ি-বাঁধের কাছে পৌছুতে পৌছুতে রাস্তার পাশের বিরিয়ানীঅলার কাছ থেকে তিরিশ টাকার বিরিয়ানী কিনে নেয় সে।
"বউ-পুলাডাটারে বহুতদিন ভালামন্দ কিছু খাওয়ানি হইতাছে না। ঐ বেডিও তো হারা দিন মাইনষের বাড়িত কাম-কাইজ কইরা আসে। আমার লগে বিয়া বইয়্যা বেডির সব শক-আল্লাদ মইরা গেছে। হেইদিন কইলাম ল সনি হলে ফিরদুসের বই লাগছে দেইখা আসি, হেয় কয় টেকা বেশি হইয়া গেসে নি? জমায়া রাহো, পুলার ইসকুলে লাগবো। আইজকা হেরে মুখে তুইলা বিরানী খাওয়ায় দিবার পারলে ভালা হইতো, বেডি তো কইবো গতর ছ্যানবা তো বুজতেছি, অত সুহাগ দেহাও ক্যা?"

ভোরে কোনোমতে চোখে পানি দিতে দিতে গাবতলী ছুটলো রহমতজান। আজকে যে ড্রাইভারের সাথে তার ডিউটি সে খুবই বদ। অল্পতেই গালাগালির ঝড় তুলে ফেলে। এদিকে রাতে ঘুমাতেও বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিলো। "ওস্তাদে পুরা চৈদ্দগুস্টির ভুত ছাড়ায়া দিবো আইজকা"। বাসের গায়ে পানি ছিটাতে ছিটাতে ওস্তাদকে রিকশা থেকে নামতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রহমতজান। "যাউক ওস্তাদে গাইল্লাইতে পারবো না"।
ড্রাইভার স্টিয়ারিংএ বসার পর রহমতজান চিরাচরিত হাঁক শুরু করে "ঐ কইল্যানপুর-শ্যামলি-কলেজগেট-আসাদগেট-ফারামগেট-শাহাবাগ-মতিঝিল-সায়দাবাদ"। এক দুইজন করে প্যাসেন্জার উঠতে থাকে। চেহারা দেখেই বুঝা যায় বেশীর ভাগই ফার্মগেটের উপরে যাবে না। একটু ভরে উঠার প্যাসেন্জাররা চেঁচামেচি শুরু করলে ড্রাইভার বাসটাকে চালানো শুরু করে। দুইজনকে রহমতজান ধরে তোলে, দুজনই সায়দাবাদ যাবে। বাসের গায়ে দুইটা থাপ্পর দিয়ে রহমতজান হাঁক ছাড়ে "বাড়ান ওস্তাদ"। সাথে সাথেই আবার দরজা থেকে নেমে গিয়ে একটা থাপ্পর মেরে হাঁক ছাড়ে "ওস্তাদ দৌড় দিসে। দৌড় দেন, দৌড় দেন, কই যাইবেন? ওঠেন ওঠেন, নামায়া দিমু। বাড়ান ওস্তাদ।"

বাস টা ফার্মগেটে (ঠিক ফার্মগেট না, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল থেকে ফার্মগেট সিগনালের দিকে) আসতে আসতে দেখে যে ট্রাফিক হাত তুলছে থামার জন্য। রহমতজান ট্রাফিকের ইশারা অগ্রাহ্য করে বাসের দরজায় দুইটা থাপ্পর মেরে এগিয়ে যেতে বলে। ড্রাইভারও টান দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। ওদিকে আরেকটা আট নম্বরও রহমতজানদের বাসটাকে ওভারটেক করার চেষ্টায়। অতি উৎসাহে রহমতজান শরীরটাকে প্রায় পুরোটাই বের করে দিয়ে পাশের বাসটার গায়ে থাপ্পর দিতে দিতে হাঁক ছাড়ে "ওস্তাদ বায়ে নম্বর আছে, হাল্কা চাপ দিয়া।" ড্রাইভার কি ভেবে স্টিয়ারিংটা একটু বাঁয়ে ঘুরিয়ে দেয়, আর বাস দুটো একসাথে লেগে যায়। মাঝে ডিভাইডার হিসেবে রহমতজান।

(নামহীন)

হয়তো স্কালপেলের ব্লেডটা মানিব্যাগের কোনায় ঘুমিয়েছিলো
সম্পর্কের শীতলতা লুকিয়ে থাকে উষ্ণতম কোনে।
তার তীক্ষ্ণতম কৌনিকে ঘর বেঁধেছিলো নেশা, কুসুম কুসুম গরম
রক্তের নেশা
উল্লাসে নত হয়ে চামড়া ভেদ করা ছিলো আপেক্ষিক
যাতে লেগেছে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ
কিংবা, এক জীবনের সবটুকু সময়।

(সমুদ্র তোমায় নিয়ে যাবে)

এসো,
এবার বসা যাক সমুদ্রের পাড়ে
চোখ, তোমার চোখে
হাত, তোমার স্তনবৃন্তে

বলা যাক কিছু কথা
নিঃশ্বাসের সাথে সাথে উড়ে আসুক
তিনশ' ছয়টা গাঙচিল

ফসফরাস মাখা ঢেউ গুলো
টেনে ধরুক তোমার পা
ডুবিয়ে দিক তোমার কাঁধ
ছড়িয়ে পড়ুক তোমার চুল

আমি যে এইমাত্র হত্যা করেছি তোমাকে।

(বিবর্ণ কাগজের ছায়ায়)

উদাসী দুপুরের হত্যালোচনায় মগ্ন পথিকদল।

পিচ গলা রাস্তার মাঝে ভগ্ন যৌবন সেবিকার
শরীরের আবেদন উড়ে যায়, বিভ্রান্ত শালিকের
হলুদ ঠোঁট আর খয়েরী পালকে ভর করে
আনমনা যুবকের শার্টের বাম পকেটে রাখা কাগজের
অনিঃশেষ প্রান্তরে।

বিবর্ণ কাগজের ছায়া দীর্ঘ হতে থাকে
আরো দীর্ঘ হয়...
আরো দীর্ঘ...
আরো...
তার পর হারিয়ে যায় আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠা ফুলের ধুলো মলিন বাহুতলে।

আম্মু

তোমাকে কখনও চিঠি লিখিনি, যদিও দু'বছর তোমার কাছ থেকে দুরে ছিলাম। তুমিও কখনো আমাকে কোনো চিঠি লেখোনি, শুধু একটা ছাড়া। সেই চিঠির উত্তর দেবার দরকারও মনে করিনি। তবে চিঠিটা এখনও আমার কাছে আছে।
তোমার সাথে মাঝে মধ্যেই রাগ করি। আবার খাবার সময় তুমি ভাত না খুলে দিলে, তরকারি না তুলে দিলে মনখারাপও করি। তোমাকে ভালোবাসি। বলিনা।
মনে পড়ে, ছোটো বেলায় যখন মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত কথাটা শিখেছিলাম, আর মাঝে মাঝে তুমি যখন বিছানায় পা তুলে বসতে তখন পায়ের তলায় বেহেশত খুজতাম। মাঝে মাঝে তোমার পায়ের পাতায় চুমু দিতাম। তুমি বলতা কি করিস, ময়লা না? আমি বলতাম তো কি হয়েছে?
বুঝতে শেখার পর কখনও কোনো ঈদ-চাঁদে তোমাকে নতুন কিছু নিতে দেখিনি। তুমি সযত্নে নিজের চাহিদাকে লুকিয়ে রাখতে শিখে নিয়েছো।
কখনও তোমাকে দেখিনি কাঁদতে। এত শক্ত কিভাবে হ'লে তুমি?
কখনও দেখিনি নিজের আনন্দের জন্য কিছু করতে, মেয়ে-ছেলের জন্য সব বিসর্জন দিলে?
আব্বুর সাথে কখনও দেখিনি ঝগড়া করতে। আব্বুর ভুল গুলোকে সবসময় দেখেছি আলোচনা করে শুধরিয়ে দিতে।

আম্মু, কখনও সরাসরি বলা হবেনা জানি।
আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি এটা নাহয় এভাবেই জানানোর চেষ্টা করলাম...

(অবিজ্ঞাপিত বিজ্ঞপ্তি)

বালক-বালিকা সকল,

তোমাদের হাতের আঙ্গুলে বেঁধে নাও তোমাদের সকল ঘৃণা। চোখের কোনায় এক এক করে ঝুলিয়ে নাও তোমাদের নাভিশ্বাস। ঠোঁট থেকে ফেলে দাও চুমুর স্বাদ। অশ্রু বিছিয়ে দাও বুকের অসমতল সমতলে। ঝুলে থাকা ঘামের গন্ধ ডুবিয়ে দাও বিছানার চাদরের ভাঁজে ভাঁজে। তারপর উঠে চলে যাও এই চৌহদ্দি ছেড়ে।

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন-৩)

কেনো সে সাবউফারের বিট গুলোকে নিজের হৃদস্পন্দনের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিলো, সেটা জেনে ওঠার আগেই একদিন ঢিপ করে সাবউফার অন করার ভোঁতা শব্দে সাথে চন্দ্রলোপার হার্টবিট থেমে গেলো।

'চন্দ্রলোপা' নামটা তার নিজের খুবই পছন্দের ছিলো। কিন্তু নামটার মানে জানা ছিলো না। রাস্তার পাশের টং-দোকান থেকে সিগারেট কিনতে এসে গৃহী আলফেসানীর খুব মন খারাপ হচ্ছিলো। খুলি কামড়ে ধরে থাকা চুলগুলোর ওপর কিছু খাড়া আর কিছু কৌণিক রোদের মনখারাপ করা ঝিকিমিকি সে নিজের মনেও অনুভব করছিলো। আলফেসানীর হাতে একটা রোদেলা রঙ এর দেশলাই। একটা কাঠি জ্বালিয়ে, সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রলোপার গালের উপর আলোর খেলা ভেসে উঠছিলো তার নিউরনে।

বাবা, মা আর দু ভাই নিয়ে চন্দ্রলোপার সংসার ছিলো। থাকতো গ্রামের মত মফস্বলে কিংবা মফস্বলের মতো গ্রামে। ভালোই তো দিন গুলো কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন খালার সাথে আলফেসানী এলো। কালো, লম্বা, চিকন, উস্কোখুস্কো আলফেসানী। ওর ভিতর কেমন একটা উদ্ধত ভাব। আধা গ্রাম-আধা মফস্বল কিংবা আধা মফস্বল-আধা গ্রামের চন্দ্রলোপার অভিভূত হবার শুরু। রাতে খাবার পর, যখন সে দেশলাই চাইলো, চন্দ্রলোপার খারাপ লাগেনি। মনে হয়েছিলো এরকমই তো হবার কথা। কিছুটা শান্ত, কিছুটা উস্কোখুস্কো, কিছুটা উদ্ধত।

এর পরে যতবারই চন্দ্রলোপা আলফেসানী যুগলবন্দী হয়েছিলো, ততবারই দুজন দুজনকে আরো কাছে টেনেছিলো। তবে তাদের নিজেরা কোনো কমিটমেন্টে আসেনি। যেখানে আকাশ আর মাটির মানসিকতাটা একই দিগন্তে মিশেছে সেখানে কমিটমেন্ট ততটা...

ফুলতোলা চাদরের উপর নিজের দেহটাকে বিছিয়ে দিয়ে, কৃত্রিম প্রকৃতিকে আত্মস্থ করার সাথে সাথে চন্দ্রলোপা নিজেকে আরেকটি পরিবর্তনে মানিয়ে নেবার চেষ্টায় ছিলো।
কাকতালীয়ই হবে। একই সময়ে আলফেসানীও চেক চেক চাদরের উপর শুয়ে ছাদের বিশালতায় আকাশটা খুঁজছিলো আর সাথে হাত বাড়িয়ে তার প্রিয় সাবউফারটার সুইচ...

মৃদু ভোঁতা ঢিপ শব্দের সাথে সাবউফারটা যখন অন হয়েছিলো, ঠিক তখনই চন্দ্রলোপার হার্টবিটটাও চুপ করে গিয়েছিলো...

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন-২)

আলফেসানীর ভঙ্গুর মাথাটা যখন ফুটপাথ নামের উলুবনে মগজ, হাড়ের টুকরো আর চোখদু'টো ছড়িয়ে দিয়ে ছিলো, তখন পুরো শরীরের ভিতর সবচাইতে জীবন্ত ছিলো কোটর ছাড়া চোখ দু'টোই। তা দিয়েই সে দেখছিলো সহস্র কাঁচের টুকরো মগজের বিভিন্ন স্মৃতিগুলো।

কালচে সবুজ রংএর গামছাটার উপর যে অংশটুকু বিশ্রাম নিচ্ছে সেখানে আলফেসানীর ছোট বেলার মাছ ধরার একটা দৃশ্য মাখামাখি করে আছে-
ঘরে বানানো ছিপ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে প্রায় হেঁজে ওঠা পুকুরের পাশে বসে থাকা, পিঁপড়ার বাসা ভেঙ্গে নিয়ে আসা ডিম বা কাদা মাখামাখি করে তুলে আনা কেঁচো গুলো পাশে কচুর পাতায় জড়িয়ে রাখা। আট আনা দিয়ে কেনা ঝাঁ চকচকে কালো কালো বড়শী, নাইলনের সুতায় পাটকাঠির ফাতনা, নড়ে উঠার সাথে সাথেই হ্যাঁচকা টান, ফলাফল, কেঁচোটা হারানো। বা হঠাৎ একটা পুঁটি মাছ।

এককোনায় আধশোয়া হয়ে থাকা এনার্জী ড্রিংকসের বোতলের কোনায় যে টুকু মগজ মাছরাঙার স্থিরতা নিয়ে বসে আছে (তফাত হলো ষে, সে কখনোই উড়বে না) তাতে আলফেসানীর নিষিদ্ধ কিছু স্মৃতি আঁকা-
সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ সে বৈশাখী মেলায় গিয়েছিলো, কিছু নারী, যারা তার পরিচিতদের মতো না,অন্য রকম আহ্বান। পরিপুর্ণ যুবক সে শহরে পুরোদমে বসবাসের যোগাড়যন্ত্রে ব্যাস্ত। বন্ধুদের সাথে এক সাথে কোন বস্তিতে সবাই মিলে সাদা পাউডারের আকর্ষণে। তবে একবারই। অন্য আকর্ষণ, সাধু সন্তদের প্রিয় ভেষজ। আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাওয়া। মফস্বলে থাকা বাবা-মার কাছ থেকে প্রয়োজনাতিরিক্ত.................

এপাশে অনেকবার পদদলিত জন্মনিরোধকের উপর শুক্রাণুর অস্থিরতায় পিছলে যাওয়া খন্ডটুকুতে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্মৃতি-
একটা কোমল মুখ, কপালে ছোট্ট করে টিপ, চোখে কাজল, নাকফুল সজ্জিত নাকের ডগায় মুক্তোবিন্দু ঘাম। গাঢ় নিশ্বাস, ঘরের আলোআঁধারী। তারো খানিক আগে হ্যালোজেন লাইটে উজ্জ্বল অনুষ্ঠান, রেজিস্টার খাতায় সিগনেচার, দু-তিন দিনের ভীষণ ব্যাস্ততা।

এবার আলফেসানীর কোটরবিচ্ছিন্ন চোখ দু'টোয় বুঝিবা কিছুটা জলের ছোঁয়া...

(লাশ কাটা ঘরের একজন)

চৈত্রের দুপুরে সে শুয়ে আছে হিম হিম ঠান্ডা ঘরে
চোখের উপর জমে থাকা তুষার দানা যেন
একজন্মের বিষাদের সকল উদাহরণ
জড়িয়ে ধরে স্বর্ণলতার আকুলতায়।

ভেসে থাকা মেঘেরা তুলনা খোঁজে
জোছনা পুকুরের চাঁদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
লক্ষ্মী পেঁচার পালকের সুঘ্রাণে নাক ডুবিয়ে,
লোহাগন্ধী আকর্ষণ এড়িয়ে।

রং চটা ধাতব পাত্রগুলো অবহেলায়
রেখে দেয় আভ্যন্তরীন প্রত্যঙ্গদের ভালোবাসা।

(বেনামী বন্দর)(বেনামী বন্দর-২)

সেখানে গিয়েছিলো...

আমাদের সকল নির্ঘুম রাত
সকল স্পর্শিত নারী
কাদায় গাঁথা ন'টা জোনাকির মালা
কাঁচপোকার টিপ
আনন্দিত মাঝ দুপুরের সুর্য
মরিচীকা জাগানো পিচঢালা রাজপথ


ফিরে আসেনি তারা কেউই...

_________________________

এখানে এসেছিলো স্বপ্ন জাহাজে চড়ে...

তোমাদের সকল ঘুম ঘুম রাত
সকল অনাঘ্রাত নারী
ন'টা মুক্তোর মালায় মিশে থাকা বেদনা
উড়তে থাকা বর্ণিল প্রজাপতি
বিষন্ন ভেসে যাওয়া মেঘের কুশন
কাদামাটি পিছল মেঠোপথ


ফিরে যায়নি তারা কেউই নিজেদের ডেরায়...

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন)

আলফেসানী ভোর পাহারা দিতে চেয়েছিলো। ও জানতো না ভোর পাহারা যারা দেয় তাদের নিশিকালীন সঙ্গমে বেশী সময় খরচ করা নিষেধ।

কত অজানারে বলে, যখন ঢুলতে ঢুলতে আলফেসানী পাবলিক বাস থেকে 'নামছিলো' ঠিক তখনই রাতজাগা কয়েকটা উদ্ভট শুকর তাদের মোটা ঘাড় গর্দান নিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে করতে পেট্রোলে টানা গাড়িতে করে বাড়ি 'ফিরছিলো'। যেখানে তাদের হরিণ চোখের অর্ধাঙ্গীনীরা বিছানাকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে শুয়ে আছে। হয়তো সারারাত তারাও কোনো উদ্ভট শুকরকে আনন্দ দিয়েছে, নিজেরাও আনন্দিত হয়েছে। হয়তোবা দেয়নি, সারারাত সতী-সাধ্বী নারীর মতো ভাতের থালা আগলে রেখেছে উচ্ছিষ্ট লোভী পোকা আর পশুদের কাছ থেকে।
যাহোক, পেট্রোল টানা গাড়ির আরোহীদের চোখে আরো রঙধনু জড়ানো 'ছিলো'। যার ফলশ্রুতিতে তারা রাস্তা পেরুতে থাকা আলফেসানীকে মেটে, রোমসর্বস্ব একটা বেজী 'ভেবেছিলো'। কতদিন বেজী দেখিনা বলে তারা যখন আলফেসানীর লেজের উপরে উঠে পড়ার উপক্রম 'করছে', তখনই সিগনালের লাইটটা একচোখা সাইক্লপের মতো লাল চোখে তাদের বাহনের পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়ে 'গেলো'।
উদ্ভট শুকরগুলো আর যাই হোক অমানুষ না। তারা একটা বেজীকে পিষতে রাজী আছে, কিন্তু সাইক্লপসের সাথে তাদের ভয়ানক দোস্তি। তাই লালচোখ সাইক্লপকে বাঁচাতে তারা লাফ দিলো রাস্তা থেকে আধাফুট মতন উঁচু নদীতে। যেখানে কয়েকটা পোকামাকড় ঘুমিয়ে থাকে অন্য ভোর গুলোতে।

আলফেসানী যখন দেখতে পেলো একটা মুশকো কালো গাড়ি তার পায়ের কাছে আসার পাঁয়তারা 'করছে' তখন সে সহজাত পাশবিক প্রবৃত্তির বশে একটা লাফ দিয়ে উঠে 'পড়লো' রাস্তার পাশের ফুটপাথ নামের জঙ্গলা জমিতে। এই জঙ্গলায় কিছু পোকামকড় (এইখানে আলফেসানী আর উদ্ভট শুকর গুলোর চিন্তা একই রকম) পলিথিনের পাতা মুড়ি দিয়ে সারারাত অবৈধ মেলামেশা করে, আর ভোরে এসে ভোঁস ভোঁস করে নিশ্বাসের কসরত করে।
আলফেসানী একবার পলিথিন মোড়া একটা পোকার সাথে রাত-বৌ 'খেলেছিলো'। সেদিন নিজেকে তার খুব পোকা-পোকা মনে 'হয়েছিলো'। আর যখন সে নিজের শরীরের উত্তপ্ত শুয়োপোকা গুলোকে ছেড়ে দিতে 'পেরেছিলো', তখনকার মতো আনন্দ আর কোনোদিনও পায়নি বলে তার মনে 'হচ্ছিলো'।

এখন আমরা এই দুই গ্রুপের কাছ থেকে একটু দুরে সরে যাই। সেখানে একটা ঝাপসা চশমা পড়া বুড়ো কুনো ব্যাঙ ড্যাবড্যাব করে যেই ঘটনাটা কেবলি ঘটে গেলো সেটা দেখছিলো। বহু বছর আগে ব্যাঙ টার বাড়ি ছিলো নদীর ধারের কোনো গ্রামে। একটা নৌকাও ছিলো। অবশ্য সে তখন ব্যাঙ হিসেবে পরিচিত ছিলোনা। তখন তার পরিচয় ছিলো তাগড়া মোষ হিসেবে। মোষ আর মোষনী সারাদিন নানা কাজে ব্যাস্ত 'থাকতো'। আর রাতের বেলা তৃপ্ত সঙ্গম সেরে সকালের জন্য প্রস্তুত 'হতো'।
সেই গ্রামে কিছু সাপ আর শেয়াল ছিলো। তারা ভরভরন্ত মোষনীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু কাছে আসার সাহস করে পারে নি মোষের জন্য। একদিন গ্রামে কয়েকটা গলাছিলা শকুন 'আসলো'। শকুন সাপ আর শেয়ালের মিলিত পরিকল্পনায় একটা মেয়ে বাছুর মারা 'পড়লো'। দোষ পড়লো মোষের উপর। মোষটাকে ধরে খোয়াড়ে পাঠানো হলো। মোষনীকে ছিবড়ে বানিয়ে দিলো শকুন, সাপ আর শেয়ালেরা।
মোষ খোঁয়াড় থেকে যখন তার গোয়ালে ফিরলো তখন আর সে মোষ নেই। হয়ে গেছে ঝাপসা চশমা পড়া কুনো ব্যাঙ।

ব্যাঙটা এখানে অনেক কিছুরই সাক্ষী। যেমন সাক্ষী আজকের ফুটপাথের উপর আলফেসানীর হুমড়ী খেয়ে পড়ে যাবার, একটা কালো গাড়ীর আলফেসানীর মাথার উপর দিয়ে চলে যাবারও।

হাতুড়ে গদ্য (দুই চোখে)

কালামপুর ছাড়িয়ে কিছুদুর এগিয়ে গেলেই আধা শহর আধা গ্রামের মতো একটা এলাকা। এখানে জলের দরে জমি কিনে না বাগানবাড়ি না পিকনিক স্পট ধরণের কিছু জিনিস দেখা যায়।

প্রতিমাসেই এখানে গাড়ি চড়ে কিছু ভদ্রলোক আসেন অলস সময় কাটাতে।
তাঁদের গা দিয়ে অপরিচিত সুগন্ধ, হাতের সিগারেটে আয়েশী টান দিতে দিতে তাঁরা বসে থাকেন গাছ ঘেরা লনের আরাম কেদারায়। তাঁদের ফর্সা দেহ যাতে গাছের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে ছলকে আসা রোদে কালো না হয়ে যায় সেজন্য এই আরাম কেদারা ঘিরে থাকে বাহারী রঙ এর ছাতায়। এখানে বসে তাঁরা একে অপরের সাথে আলোচনা করেন, হাসেন, দামী মোবাইলে কথা বলেন তাঁদের রেখে আসা জরুরী কাজগুলো নিয়ে।

এঁদের সাথে কিছু শিশু বা যুবক-যুবতী থাকে। তাদের হাতে থাকে দামী ক্যামেরা, মাথা ঢাকা থাকে বারন্দা-আলা টুপিতে, চোখ ঢাকা থাকে রোদ-চশমায়। এদেরও গা থেকে ভুরভুর করে বের হয় অদ্ভুত মাতাল করা সুগন্ধ। এরা পার্শ্ববর্তী গ্রামে ঘুরে বেরান, ছবি তোলেন। তারা গরীব শিশুদের ছবি তুলে তাদের হাতে চকলেট ধরিয়ে দেন। যে চকলেট গুলির স্বাদ তাদের মুখে অনেকদিন পর্যন্ত খেলে যায়।

তাঁদের সাথে আরো থাকেন ধবধবে সাদা শরীরের কিছু মহিলা। মুখে সুন্দর মেকাপ দিয়ে সাজানো। ফিনফিনে শাড়ীর জানালা দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দেয় ফর্সা পেট। যা দেখে আধা শহর আধা গ্রামের অবিবাহিত যুবকেরা ছোটে উপকন্ঠের বেশ্যাবাড়ীতে। আর বিবাহিত পুরুষগুলোর কালো বৌ গুলোকে আদর নামের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।

____________________________________________

হালারা রংচঙা বাড়ি বানাইছে। পেরতি মাসে হেগোর আইতেই হইবো। আইয়া হুমুন্দির পুতরা হেগো ধুমসা প্যাট দ্যাহায়, রইদে নাকি আবার হেগো গায়ে জ্বালা ধরে। ছাতা বানয়া রাখছে হালারা গাছের নীচে। তাও যদি হাউয়ার পোলারা দান-ধ্যান করতো তাইলেও হইতো। না হেরা আহে আরাম মারাইতে। কেনরে? তোগোতো ঠান্ডা মেশিন আছে বাড়িত, ঐহানে বইয়া আরাম সোগার মইদ্যে হান্দায় না?

পোলাপাইন লইয়া আহে। শয়তানের বাচ্চাগুলা নিজেগোরে যে কি ভাবে হালারা নিজেরাই জানে। রইদচশমা, টুপি পইরা নিজেগো বড়লোকি দেহাইতে আহস। আরে হালারা আমাগো পুলাপাইনের ফটো তুইলা লয়া লেবেনচুষ ধরায়া দিস, ক্যান টেকা দিতে শইল জইল্যা যায় নিকি? হায়রে টেকার মায়া।

তয় হেগোর লগে যেই ডবকা মাগীগুলান আহে, হেইগুলা একেক খান জিনিস। আহারে কি দুধের মত সাদা চেহারা! মাঝে মইধ্যে প্যাট দেহা যায় শড়ির ফাঁক দিয়া। মনেহয় মাখনের মতো তুলতুইল্যা হইবো। আমগো কালা ধুমসা বউ গুলারে হাজার বছর ধইরা তেল সাবান মাখাইলেও ঐরকম হইবোনা। কালা মাগী গুলানরে পিটানির উপর না রাখলে মাগীরা কথাই শুনবার চায় না। কেনরে মাগী বিয়া বওনের টাইমে মনে আছিলো না ভাতারে যখনি শুইতে চাইবো তখনি তোগো শোওন লাগবো?


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

অনেক দিন পর গদ্য লেখার প্রয়াস...

(শুক্রাণু ও ডিম্বাণু একবার প্রেমে পড়েছিলো)

অসুখের বসবাস
সেতো সবসময়ই লাল পিঁপড়ে অনুভুতি ছড়ায় মনের চামড়ায়
আলোরা অপেক্ষা করে অন্দ্ধকারের
প্রস্ফুটনে প্রকাশিত হতে থাকে একে একে
ভালোলাগা, ভালোবাসা
আর ঘুমিয়ে পড়ে একঝাঁক চোখহীন বেড়ালের ঘ্রাণ

শুক্রাণুও ভালোবেসেছিলো ডিম্বাণুর দেহকে
কিংবা ডিম্বাণুর সকল আশা ছিলো আনন্দময় ছলনায় উন্মুক্ত
ডোম নারীর ঘেমোগন্ধী ধুসর আঁচলে ছায়া
পড়েনা নীলাভ আকাশের

আধিপত্য লোভী রাতের সবটুকু প্রেম কিন্তু সূর্যেই উৎসর্গ
দুরবর্তী তারা আর নিকটবর্তী জোনাকিরা সূর্যালোকের
ভগ্নাংশগর্বিত শরীরে ছুটে ছুটে আসে রাতের কাছে

(খসে পড়া ধোঁয়ায় আঁকা)

আগুন থেকে খসে পড়া ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন
চোখের ভিতর চোখ,
তার ভিতর চোখ, তার মাঝে আরও
চোখ জল ছুঁয়ে ওড়াওড়ি করে যায় জলফড়িংএর
জালিকাটা পাখা।

ফুল ফোটে কিংবা ফোটেনা, তবু
পাতারা ঝরে যায় শীতার্ত বিকেলের ভালোবাসায়
তরুণ সূর্যগুলো আনমনে
হৃদয়কে জ্বালানী বানায়
অনার্য আগুনের নির্লোভ শিখায়।

ত্রিবেণী সংগমে অতৃপ্ত নদী পথ খোঁজে
উৎসমুখের, লাবণ্যমুগ্ধ শিশুর হাতে হেসে ওঠে মেঘনাদ,
বিদ্যুৎ ঝলকে চমকে ওঠে পাখি নীড়
চোখ জেগে ওঠে চোখের ভিতর
ভেসে ওঠে অবারিত স্বপ্ন।

একেশ্বরবাদী ধর্মের চৌর্য্যবৃত্তি মুলক আচরণ

একেশ্বরবাদী ধর্ম গুলো মুর্তিপুজারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনপ্রিয় আচার অনুষ্ঠান গুলি ছিনিয়ে নিয়ে নিজস্ব ধর্মে প্রবেশ করিয়েছে, শুধুমাত্র মুর্তিপুজারীদের কে নিজের ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য। পরবর্তীতে একসময় নিজেরাই এই সকল আচার অনুষ্ঠানের জনক বলে প্রচার করেছে।

এমনই একটি আচার বা অনুষ্ঠান হলো খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীদের ইস্টার উৎসব।

খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকে এপ্রিলের ২৫ তারিখের ভিতরে যীশুখ্রীষ্টের পুনরুত্থান(resurrection) উপলক্ষে ইস্টার উৎসব পালন করে থাকে।
এই উৎসবের অপরিহার্য Easter bunny বা colored eggs এর কথা
খ্রীষ্টধর্ম থেকে যেমন উদ্ভুত না তেমনি বাইবেলেও এসম্পর্কে কিছুই লেখা নেই।

খ্রীষ্ট বা ইহুদী ধর্মের অনেক আগে থেকেই ইস্টার উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

"ইস্টার" (Easter) নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, প্রাচীন স্যাক্সন শব্দ Eostre বা Oestre থেকেই ইস্টার নামটি উদ্ভুত। Eostre বা Oestre ছিলেন প্রাচীন উত্তর ইয়্যুরোপের বাসিন্দা স্যাক্সনদের সূর্যোদয়, বসন্ত এবং উর্বরতার দেবী।
Vernal/Spring Equinox এর সময় এই দেবীর আগমনোৎসব পালন করা হতো।

জ্যোতির্বিদ্যায় Vernal/Spring Equinox সেই সময় ঘটে যখন রাত এবং দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়। এই সময়টা মোটামুটি মার্চের ২১ তারিখের কাছাকাছি হয় এবং এর মাধ্যমে বসন্তের প্রথম দিনের আগমনী বার্তা ঘোষিত হয়।

ইস্টার উৎসবের প্রধান দুটো প্রতীক হলো ইস্টার বানি(bunny), যা উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়, এবং উজ্জ্বল রঙ এ বর্নীল ইস্টার এগ(egg), যা বসন্তের উজ্জ্বল সূর্যকিরণের প্রতীক।

মিশরীয় এবং পারসিকদের ভিতরেও বসন্তের শুরুতে বন্ধুদের রঙ্গীন ডিম উপহার দেবার রীতি ছিলো।
গ্রীকরাও ডিমিটারের কন্যা পৃথিবীর দেবী পার্সিফোনির পাতাল থেকে পৃথিবীর আলোতে ফিরে আসার আনন্দোৎসব হিসেবে বসন্তের আগমনে এরকম উৎসব পালন করে।

(বহুপঠিত জ্যামিতি, স্বাদান্ধ বালকেরা চলে যাবার পর )

ডিনার টেবিল ছেড়ে নয় জন স্বাদান্ধ বালক উঠে চলে গিয়েছে।

ধোঁয়া ওঠা বালিকাদের শারীরিক ত্রিকোনমিতির উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে রয়েছে বোন প্লেট, টেবিল ক্লথ,
ন্যাপকিন আর ফর্কের কারুকার্যময় জমিন জড়িয়ে।

কিছুক্ষণ আগেই যা ছিলো কমনীয় স্তনবৃন্তের সুষম গোলক
এখন তা পিরামিডাকৃতি ফর্কের দাঁতে বিন্দুচিত্র আঁকছে।

ন্যাপকিনের সমতলে দ্বিমাত্রিক অসম বহুভুজ হয়ে পড়ে রয়েছে চোখের মনি
যেখানে কেবল বেদনা ও আনন্দের ব্যাসার্ধ্য, সাইন ও কোসাইন কোনের সাংকেতিক আলোচনায় ভীতির ট্যানজেন্ট কোনে প্রকাশ পাচ্ছে।

বৃত্তাকার টেবিল ক্লথে উপবৃত্তাকার ও অধিবৃত্তাকার ভাঁজ গুলোর অনুসিদ্ধান্ত অনুসারে চেয়ারের কিউবিক পায়াগুলো পরস্পর ছেদ করেছে অসীম বিন্দুতে।

চট্টগ্রাম স্ট্যাডিয়াম থিকা ব্লগিং: ছাত্রলীগের শ্লোগান "ভোটচুরির নির্বাচন মানি না" লিখেছেন প্রতিদিন, ১৮ ই জুন, ২০১০ রাত ১:৪৩

আপনারা তো সবাই জানেন,
পরীরা সকালে প্রচুর নাস্তা খায় আর তাদের পা এত বড় নয়
যে, তারা সাত লীগ সাইজের জুতো পড়বে।
তবে জুতোটার সাইজ সাত লীগ না তেতাল্লিশ ফার্লং
তা নিয়ে তাদের ভেতর খুবই সাময়িক একটা মতবিরোধ দেখা দেয়।
এটাও তো সবারই জানা আছে
যে, পরীদের মতবিরোধ খুবই অল্প সময়ের ভিতর মিটে যায়।
এই মতবিরোধ মেটানোর জন্য ছোট্ট একটা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো।
তবে এখানে আরেকটা ছোট সমস্যা দেখা দিয়েছিলো, সেটা হলো সভাপতি কে হবেন সেই সংক্রান্ত।
সভাপতি নির্বাচনের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিলো তার সদস্য সংখ্যা নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলাই হয়নি, তবে এই কমিটির জন্য যে মন্ত্রণাপরিষদ গঠিত হয়েছিলো তার তহবিল কার দায়িত্বে থাকবে সেটা নিয়ে একটু ঝামেলা ছিলো।
পরী রানীর সময়োচিত বিজ্ঞ হস্তক্ষেপের ফলে এই ঝামেলাটা মাত্র আটষট্টি দিনের মাঝেই মিটে গিয়েছিলো।
যাই হোক; আমার গল্পটা যে জুতোটা নিয়ে, সেটা কিন্তু খালি পড়ে থাকেনি। সেখানে ঘর বেঁধেছিলো হাজার খানেক ইঁদুর আর কোটি খানেক উঁই পোকা।
শেষ পর্যন্ত জুতোর সাইজ বিষয়ক মতবিরোধের যখন অবসান হলো, মানে কমবেশী বছর পাঁচেক পর, ততদিনে জুতোটার যায়গাতে কচি কিছু গন্ধম গাছ গজিয়ে উঠেছিলো।
আর কিছু পরী আদি পাপে মত্ত হয়ে তাদের গ্রাম কিংবা শহরের মত এলাকাটা পরিত্যাগ করে মানব সমাজে এসে নিজেদের সমজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান বিতরন করছিলো।
যেহেতু সবাই জানে পরী সমাজ মানব সমাজের চাইতে উৎকৃষ্ট, তাই পরী সমাজের আত্মীকরণ প্রক্রিয়া মানব সমাজে শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

ধর্মের সো কল্ড সু-শীতল ছায়াতল থেকে গনগনে রোদেলা যুক্তির পথে আমার যাত্রা...

ক্লাস থ্রি/ফোরে পড়ি, খুলনার খালিশপুরে থাকি। প্রতিবেশীরা মোটামুটি সবাই বিহারী।

"এএএ মিস্টার...লাড্ডান ভাই...গুড্ডুউউউ"

বলে রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাবার সময় আমাদের আশপাশের কয়েকটা বাসার যুবক বয়সীদের নামাজ পড়ার জন্য ডাক দিতেন তাদেরই সমবয়সী একজন। ভোরবেলার ডাকটাই শুনতে পেতাম সবচে জোরে। এই ডাক শুনে আমিও কোনোকোনো দিন উঠে ফজরের নামাজ পড়তাম বাসাতেই। বাসার পরিবেশ কট্টর ইসলামী না হলেও ইসলামী। বুঝতে শেখার পর থেকে বাবাকে কখনও দেখিনি নামাজ কাজা করতে। মা, বোন সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। দাদা-দাদীকে দেখিনি। তবে নানা- নানু, মামা সবাইকে দেখেছি নামাজ পড়তে। নানা মৃত্যুর আগেও নামাজ পড়েছেন।

আমি শৈশব পার করেছি একই সাথে কোরান আর বিভিন্ন প্রকার বই পড়ে। এর মধ্যে সেবা, প্রগতি প্রকাশনী, শরৎচন্দ্র, বিভুতিভুষণ যেমন ছিলো তেমন ছিলো নানার ধর্মীয় বই এর কালেকশন।

বিভিন্ন ওলি আউলিয়াদের জীবনী পড়তে পড়তে মনে হলো তাদের মতো আমাকে হতে হবে। শুধু মনে খটকা লাগতো একটাই যে ওলি আউলিয়ারা সময়ে অসময়ে কিভাবে নানান মজেজা দেখান? আমার নানাও তো উনাদের মতো নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, আল্লা কে ডাকেন তাহলে নানা কেন কোন মজেজা পারেন না?
একটা সময় আসলো যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, কোরান তেলওয়াত করি, কোরানের মানে জানার চেষ্টা করি। এভাবে ক্লাস নাইনে উঠলাম।

ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলো এসময়। আমি প্রবল ভাবে একটা জিনিস চাচ্ছিলাম। যানতাম বারবার ইনশাআল্লাহ পড়লে আল্লা ভবিষ্যতের ব্যাপারে নিজে জিম্মাদার হয়ে যান। অগুনিতবার ইনশাআল্লাহ জপ করলাম, আল্লা সহায়তা করলো না। বয়ঃসন্ধিক্ষণে ঘটনাটা মনে খুবই তোলপাড় তুললো। তাহলে আল্লা নিজে যেটা বলেছেন সেটা তাহলে সব সময় কাজ করেনা। তবুও মনকে সান্তনা দিলাম এই বলে যে আমার পড়ায় মনে হয় কোন গলদ ছিলো। ছোট্ট ঘটনা তবে মনে দাগ কেটে আছে।

কোরান হাদীস পড়া বাড়িয়ে দিলাম। জানার আশায়। সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই পড়া তো আছেই। দেখলাম বিজ্ঞানের অনেক কিছুই কোরান হাদীসে যেভাবে বর্ণিত আছে তার সাথে ঠিক মেলে না। খটকা। নানার কাছে নেয়ামুল কোরান নামের একটা বই ছিলো, বাসায় ছিলো মকসুদুল মো্মেনীন। মকসুদুল মো্মেনীন পড়তাম আব্বু আম্মুকে লুকিয়ে। আমার যৌন বিষয়ক সুরসুরি জাগানিয়া প্রথম বই। নেয়ামুল কোরান, তাতে কোরানের বিভিন্ন আয়াত দিয়ে তার ফজীলত বর্ণনা করা ছিলো। সেগুলো বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা শুরু করলাম। কলেজে উঠেছি তখন। নেয়ামুল কোরানের কোন আয়াতেরই ফজীলত পাইনা। নামাজ পড়া চলছে পুরোদমে। কিন্তু মন উঠে গেছে অনেক খানিই।

কিছু সাধারন ধর্ম সম্বন্ধীয় প্রশ্ন মাথায় আসে। উত্তর পাইনা। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গেলাম একটা প্রশ্ন নিয়ে। যিনি আবার আমাদের স্কুলের ধর্ম স্যার।

খুবই সাধারণ প্রশ্ন; আল্লার হুকুম ছাড়া যদি গাছের একটা পতাও না নড়ে, তাহলে আমার পাপের জন্য কে দায়ী হবে? আমি না আল্লা?
স্যার উত্তর দিলেন- আল্লা তোকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন ভালো মন্দ আলাদা করে চলার জন্য। অতএব তোর পাপের জন্য তুইই দায়ী থাকবি।
আমি বললাম- তাহলে স্যার, আল্লা যদি এটুকু থেকেই তার সবচে প্রিয় সৃষ্টিকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে কিভাবে সে সর্ব শক্তিমান?
স্যার আমাকে মারতেই বাকী রেখেছিলেন।

দেখলাম ধর্মের সো কল্ড সু-শীতল ছায়া, রোদের ভিতর চোখে ঠুলি পরিয়ে একজনকে দাঁড়া করিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই না। যাতে সে ভাবতে বাধ্য হয় "চারদিকে যেহেতু আঁধার আঁধার লাগছে তাহলে নিশ্চয়ই ছায়ার ভিতরে আছি। রোদের উত্তাপ? সেটা আসলে আল্লা আমার পরীক্ষা নেবার চেষ্টা করছেন, আমার বিশ্বাস কতটা পোক্ত সেটা দেখার জন্য।"

ওহো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম গীতা, বাইবেল, মহাভারত, রামায়ন স্কুল জীবনেই পড়েছি ঐ ধর্মগুলো কতটা ভুল আর ইসলাম কতটা সঠিক তা প্রমানের জন্য।

আরো বেশি বেশি পড়া শুরু করলাম, যুক্তি প্রয়োগ শুরু করলাম, কার্যকারণ দেখা শুরু করলাম। দেখলাম তখনকার সময়ের হিসাবে বিচার করলে ধর্মগুলো যথেষ্ট আধুনিক ছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, এখন আর ঐসব উদ্ভট অলৌকিক কাহিনীতে পরিপুর্ণ ধর্ম গুলোর কোনো প্রয়োজনই নেই।
ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা/আল্লা/ভগবান/গড/ঈশ্বর/সুপ্রীম বিইং, স্বর্গ/বেহেশত, জাহান্নাম/নরক, পরকাল/পরজন্ম আসলে মানব মনের উইশফুল থিংকিং ছাড়া আর কিছুই না।

ধর্মের সু-শীতল ছায়ার ঠুলি খুলে ফেলে শুরু হলো যুক্তির গনগনে রোদেলা পথে আমার পথচলা...

(বিবিধ নীলনদ বিষয়ক)

বেড়িবদ্ধ ক্রীতদাসের ঘর্মিল পেশীতে ঠিকরে পড়ে নক্ষত্রের আকাংক্ষিত পীড়ন
খোজা প্রহরীর নিষ্কাম চোখের তারায় অক্ষত যোনী কিশোরী আকাশ
রথশাস্ত্র ছায়ালিপি আঁকে আনুভুমিক অথবা উল্লম্ব পরিসরে
চিতা থেকে গড়িয়ে যাওয়া ধোঁয়া মিলিত হয় স্বসুর বাঁশির
অখন্ড ছিদ্রসুখে।
লিলেন আবৃত নিশ্চল হাতের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ছিন্ন প্যাপিরাস মন্ত্র
শিশ্ন পুজারীনির স্তনের গভীর খাঁজে দাগ কেটে চলে
স্বেচ্ছা বা অনিচ্ছার নখবিলাসী আঙ্গুল
ক্লিওপেট্রার চর্চিত চুলের বাঁকে
জমা হয়ে থাকে ছলকে পড়া মধ্য দুপুর, মহাবীর টলেমীর কামজাত ভালবাসা।

(জোছনা বিক্রির লিফলেট)

এখানে জোছনা বিক্রি করা হয়

লেখা আছে পঁয়তাল্লিশ ফন্টে,
বোল্ড আর ইটালিক ফরম্যাটে,
ঝকঝকে সাদা রঙ এ,
এ ফোর সাইজের একটা কাগজে
আশি গ্রামের অফসেট কাগজটায় নীলাভ কালো ব্যাকগ্রাউন্ড আর ম্যাট ল্যামিনেশন করা।

হেডলাইনের নীচে
চব্বিশ ফন্টে লেখা

আমরাই সর্ব প্রথম নাগরিক জঙ্গলের মাঝে জোছনা দেখার সুযোগ করে দিচ্ছি আপনাদের।
আমরাই আপনাদের দিচ্ছি পুরোপুরি নির্ভেজাল জোছনার স্বাদ।

আঠারো ফন্টে লেখা

আপনার সীটটি সংরক্ষণ করুন
আমরা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে জোছনা বিক্রি করছি
তবে একটাই শর্ত
মাসে একবার জোছনা কেনার সুযোগ পাবেন
অন্য যারা জোছনা ক্রয়ে আগ্রহী তাদেরও সুযোগ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

(তিনি ও তাঁর লাঠি)

তিনি যাচ্ছিলেন।
সাথে ছিলো তাঁর প্রিয় লাঠিটি,
এ্যালুমিনিয়ামের; রূপালি নিকেল করা কালো রাবারের গ্রিপ ওয়ালা একটি শক্ত সমর্থ লাঠি।
আলো লেগে চকচক করছিলো লাঠিটা, তাঁর চোখ দু'টো যতটা ঘোলাটে ঠিক ততটাই প্রান্জলতা ঠিকরে পড়ছিলো লাঠিটার নিকেল করা গায়ে।
লাঠিটা হয়তো ভাবছিলো তার মালিকের কথা; হয়তোবা নিজের কথাও যখন মালিকের চোখের ঘোলাটে ভাব তার শরীরের নিকেলে ছায়া ফেলবে তখন তার সাহায্যকারীর কথা কল্পনায় আঁকার প্রচেষ্টায়
তাঁর সাথে দেহের কাঁপন মেলাতে মেলাতে চলতে থাকলো নিকেল করা এ্যালুমিনিয়ামের চকচকে যুবকটি।

বৃত্ত অতিক্রমণ-()

অতিক্রান্ত বৃত্তে থই থই জল
ছায়া ফেলে
দিগন্তে ক্রমশঃ স্বপ্নমগ্ন হতে থাকে
সূর্যস্পর্শী বৃক্ষদের ফুল।
কোষমুক্ত তরবারীর মসৃণ শরীর বেয়ে নেমে
ধারবাহী রক্ত
আল্পনা এঁকে চলে যায় পৃথিবীর কোমল দেহের
তপ্ত গহীন দোলাচলে।
নরকাধিপতির তাণ্ডব নৃত্যছন্দ
তরঙ্গ তোলে মন নদীর জল
আর জলজ প্রাণীদের দেহ নিসৃত ঘামের গন্ধে।

(শীতবন্দী ল্যাম্পপোস্ট)

শীতবন্দী ল্যম্পপোস্ট বেয়ে নামে
সোনালী সোডিয়াম অশ্রু
গরম তরলের স্পর্শ, কষাটে স্বাদে মাখামাখি করে দেয় জিহ্বা ও খাদ্যনালী
হাতের উপর জমতে থাকা মেঘেদের ভালোবাসা
আর শরীরের মায়া ফেলে চলে যেতে থাকা ধোঁয়ারা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় রাতের আবেশে। চারটি অথবা আটটি ছায়া দুলে দুলে চলে যায় অন্ধকারের দিকে। অন্ধকার মাঝে মাঝে ছলকে ওঠে হলদে আলোর ঢিলে, নৈঃশব্দ্যের কোলাহল থেমে যায় শাব্দিক নীরবতায়।

(ব্যবচ্ছেদ)

ক্ষুরধার স্কালপেল হাতে দক্ষ সার্জন
ব্যাস্ত নাগরিক
স্বপ্নের ব্যাবচ্ছেদ প্রক্রিয়ায়।
বয়ে যেতে থাকা রক্ত স্রোতের
অনূপুংখ বিশ্লেষণে
মত্ত জ্যোতিষী নস্ট্রাদামুস।
আর সম্পর্কের আধুনিকতা
সৃষ্টির রূপকল্প
আলোচনে মগ্ন মানব ও মানবী।
আমিতুমি
পার্মুটেশন্কম্বিনেশন
চালনায় সিদ্ধহস্ত সকলেই
প্রতিভাবান।

(ফুলের হাসপাতালে স্বপ্নের লাশ)

ফুলের হাসপাতালে পড়ে আছে বেওয়ারিশ স্বপ্নের লাশ

কিছুক্ষন আগেই বাস্তবতার বুলেট এসে খুন করেছে তাকে
বুলেট টা যখন স্বপ্নের শরীরে প্রবেশ করে তখন

আকাশ ছিলো

হয়তো কমলা রঙা মেঘের চাদরে পরিপুর্ণ যুবতী,

কিংবা হতেও পারে একাদশী চাঁদের নির্লজ্জ
দেহপসারীনী আচরনে বিরক্ত,

না হয় কুয়াশার আঁচলে মুখ ঢেকে রাখা কিশোরী
সুর্যের ছলকানো আলোয় উচ্ছসিত,

অথবা তারার চুমকি বসানো কালো বোরখার
রাতের মত ভীত।

আসলে,
স্বপ্ন মরে গেলে কি হয়?

(মাতাল বিরুপা)

দশম দরজায় অপ্রতিরোধ্য
সংকেত যখন ছায়া ফেলছিলো
তখন একজন নারী,
সুরা পাত্র হাতে একই সাথে ঢুকে পড়ে
দু'টি পান কক্ষে,
একবার ঢুকলে
বেরোবার উপায় নেই যেখানে।
দৃঢ় কাঁধের উপর বয়ে যাওয়া সহজিয়া বাতাস
আর দুপুরের রোদের খেলা একই সাথে
নিয়ে অনুপুংখ বিশ্লেষনে মাতে
মাতাল পৌরুষ।
তৃপ্তি কিংবা অতৃপ্তির দোলাচলে
বিবস্ত্র হয় অবশেষে একটি দোয়েলের লাশ।


______________________________________
সুপ্রাচীন চর্যাপদের কিছু পদ থেকে উৎসাহিত হয়ে লেখা।
এই পদ গুলোর লেখক ছিলেন বিরুপা।

(প্রেমিক কাহ্নপা)

কার না'য়ে আসা যাওয়া তোমার?

প্রেমিকের জন্য দাওয়ায় মাদুর বিছিয়ে
কার ঘরে যাও সুতো বুনতে?

যার জন্য নাচছো তুমি পদ্ম পাপড়ি চুমে; সে,
ঝুরি ভরে এনেছে সবুজ ঘাসের ফুল
সরোবর মন্থন করে ছিঁড়ে এনেছে পদ্ম শিকড়
গলায় দিয়েছে সাত শশ্মানের হাড়
গায়ে মেখেছে উদভ্রান্ত মনের অন্ধকার।

মুন্ডিত মাথার নগ্ন যোগীর কামস্পর্শে উদ্বেলিত বাগানকুঠিতে
ছুটে ছুটে যাও মৃত্যু সুখে বারবার।

জানো না?
এই আমিই একদিন তোমায় খুন করে
আত্মা টাকে ছিনিয়ে নেবো তোমার কাছ থেকে?

(টেরাকোটা স্বপ্ন)

স্বপ্ন গুলো এমনই হয়।
কেমন অবোধ্য সব কথামালা পরিয়ে দেয়
ছিঁড়ে নিয়ে হাইপোথ্যালামাস থেকে।
সাদাকালো মেঘ
লালনীল বৃষ্টি একরকম অধরাই থেকে যায়।

ব্যাখায় সারাবেলা কম পেয়েছি
স্বপ্ন ব্যাখায় তো আরো কম।
সোলেমানী খাবনামা হাতে বসে থেকেছি রাতের পর রাত
স্বপ্ন বাঁধতে পারিনি নিউজপ্রিন্টের হাতে,

চোখে জড়িয়ে এসেছে রাজ্যের গঁদের আঠা
বাঁশের কলমদিয়ে মুছেছি চোখ আর
আঁকিবুকি কেটেছি বুকের পাঁজরে
সবগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে ধাওয়া করে
আর ঘুম নেমে আসে সর্ষে ক্ষেতের আলপথে...

(চোখ নেই)

দেয়ালে লেখা দেখলাম চোখ নেই।

খুঁজে বের করলাম নিজের তাগিদে
আমার চোখ দুটো দান করে দেবো,
আর পরে নেবো রঙিন পাথরের দুটি চোখ।

ক্লিনিকে ঢোকার সাথে সাথেই খুব যত্নের সাথে আপ্যায়ন করা হলো।
প্লেটে করে একজন মানুষের মাথা দেয়া হলো
যার কান দুটোর জা'গায় হাতির কান আছে।
এ্যটেন্ড্যান্ট জানালো উনি মাথা বিসর্জনের আগে
কানদুটো প্রতিস্থাপন করেছিলেন।

কাঁটা চামচটা তৈরি করা হয়েছে কারো দাঁতের ভগ্নাবশেষ দিয়ে।

এখানে পশুর সাথে মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়
লেখা দেখলাম বুকলেটে।

আমিতো কেবলই নির্লিপ্তি চেয়েছিলাম।

বুঝিনি নির্লিপ্তির অপর নাম পাশবিকতা।

: ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০২

(অনন্য অনুভূতি)

কখনও কি দেখেছো
চৈত্রের ছোঁয়া মাখা রাজপথ,
কার্তিকের রোদেলা অ্যাসফল্ট,
কখনও কি দেখেছো?

কখনও কি শুনেছো

নৈঃশব্দ্যের সুতীব্র আর্তনাদ,
অসহ্য নীরব কোলাহল,
কখনও কি শুনেছো?

কখনও কি বুঝেছো

আলোছায়া লুকোচুরি খেলা,
পাতা ঝরা বিষণ্ন সাঁঝবেলা,
কখনও কি বুঝেছো?

কখনও কি জেনেছো

রতিক্লান্ত ভালবাসা,
অবসন্ন ফিরে আসা,
কখনও কি জেনেছো?




________________________________________

চারবছর আগে লেখা একটা কবিতা হঠাৎ দিতে ইচ্ছে হলো তাই ই

(P.O.S কাউন্টারে)

স্যার, আমরা কিন্তু এই স্পেশাল এডিশনের জন্য কার্ড এক্সেপ্ট করবোনা।
সে সরাসরি শেষ লাইন টেনে দিলো।


অমুক লো ফ্যাট দুধের প্যাকেটের পাশেই রয়েছে
তমুক দেশের তৈরী দামী পাম অয়েল
ক্যানড বীনের র‌্যাকে মনে হয় ভুলে রাখা হয়েছে
স্মোকড্ টুনা আর স্যামন,
হতেও পারে এটা ইচ্ছাকৃত ভুল।

নিচের র‌্যাকে দেখা যাচ্ছে কিছু সবুজ আভা।
ওহো ওটাতো পতাকা নয়, এক্সপায়ার্ড ডেটের ফেসওয়াশ।

বাঁয়ের র‌্যাকে, ঝাড়া, বাছা, প্যাকেটজাত চাল
তার কিছুটা ঐপাশে দু'দিনের টাটকা সব্জি।
ফিশ সেকশনের এ্যকুরিয়ামে
ছাল ওঠা মাগুর ঘুরে বেড়াচ্ছে সদর্পে।
মুখে কিছু রোচে না,
তাই মাগুরটাই চলুক,
হোকনা ছাল ওঠা।
শেষ পর্যন্ত ফ্রোজেন আইটেমের মাঝে
বিশেষ ভাবে তৈরী পতাকাটা পাওয়া গেলো।

আমি একটা সাধারণ পতাকা কিনবো ভেবে ঢুকেছিলাম সুপারস্টোরে।



________________________________________
P.O.S- Point Of Sales
এখানে বিল করা হয়।