মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

আত্মমগ্ন কথামালা ২০

জানুয়ারী ১২, ২০১৩ - ১০:০৯ পূর্বাহ্ন 


*
আসলে কিছুই লেখার নেই।
ছিলোনা কখনোই।
তবু এলোমেলো লিখে রাখি অবিন্যস্ত অনুভুতি গুলো।
হয়তো দিনশেষে, নিজেকেই বোঝার ইচ্ছায়...

৩১১৩

যদিও সীমানা জানা,
তবু মাঝেমাঝেই শখ জাগে অতিক্রমের...

৬১১৩

মাইগ্রেটরি প্রজাপতি এবং ফুল বিষয়ক আলোচনা...

৭১১৩

এখানে রিক্ত মাঠ পড়ে আছে।
সোনালী ফসলের ছোঁয়া ভুলে, অবিন্যস্ত কুয়াশায় ঢাকা।
একাকী ফিঙে,
কালো শরীরে ঢেউ তুলে ভেসে যাবার পথে
একটু কি সময় দেবে অতীতের কথা ভেবে...

৮১১৩

ইউনিকর্নের দেহাবশেষ
চিরসবুজ ঘাসের দেশে বয়ে আনে রক্ত ও ঘামের স্মৃতি...

১২১১৩

বিগত সকাল গুলো উত্তর মুখী।
বিগত নারীর ঠোঁটে দারুচিনি সুঘ্রাণ।
চুল বেয়ে নেমে আসা জোছনা ও কুয়াশার মসৃণ রেশম ছোঁয়া
হাতে মেখে নিতে নিতে
সহসাই হারিয়ে যায় সৃতিগন্ধ রোদ, মেঘ এবং অন্যান্য...

হাবিজাবি

জানুয়ারী ২, ২০১৩ - ১০:০১ পূর্বাহ্ন 

ক্যালেন্ডার দেখতাম ছোট বেলায়। বইয়ে মলাট দেবার জন্য "চায়না" নামের একটা ম্যাগাজিন ছিলো। দারুণ দারুণ সব ছবিতে ভরা। ভালো লাগতো খুব। দুইহাতের আঙুল দিয়ে ভিউফাইন্ডারের মত বানিয়ে ক্লিক ক্লিক শব্দ করতাম। ছবিতোলার প্রতি ভালোবাসাটা বোধহয় ঐ সময়েই ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলো। [সময়কাল ক্লাস ফোর ফাইভ সিক্স]
যা হোক, বড় হইতে থাকলাম। খালাতো ভাই এসেলার দিয়া ছবি তুলতো, তার কম্পোজিশনগুলো দেখে ইন্সপায়ার্ড হইতাম। নিজের ক্যামেরা ছিলোনা, ভাইয়ার ক্যামেরা ধরার সাহস পাইতাম না। এমনকি জিজ্ঞেস করবো ধরতে দিবে কি না, সেই সাহসও পাইতাম না। [সময়কাল ক্লাস নাইন টেন]
ঢাকায় আসার পর মুশফিকুল আলম পিয়াল ভাইয়ের সাথে পরিচয়। আমার একটু ডিস্ট্যান্ট মামাতো ভাই। উনার বিভিন্ন শখের ভেতর একটা ছিলো ফটোগ্রাফী। এবং যেই সময়ে উনার সাথে পরিচয়, তার কিছুদিন আগে উনি সার্ক ফটোগ্রাফার অফ দ্যা ইয়ার বা এরকম কোনো এওয়ার্ড পাইছেন। ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসাটা আবারো মাথাচাড়া দিয়া উঠলো উনারে দেইখা। উনি নিজের ছবি দেখাইতেন, আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতাম। [সময়কাল '৯৮-'০২]
একসময় টাকা জমায়ে নিজের প্রথম ক্যামেরা কিনলাম। যদিও ফ্যামিলি ফটোগ্রাফী করবার জন্যে। ক্যামেরাটা ছিলো কোডাকের কেবি টেন। ফিক্সড ফোকাস। সেইটা দিয়েই এক্টু আধটু চেষ্টা করতাম ছবি তোলার। [সময়কাল '০২-'০৫]
পড়াশুনার পাশাপাশি পিয়াল ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইমার হিসাবে কাজ করা শুরু করলাম। ফটোগ্রাফী নিয়ে পিয়াল ভাইয়ের সাথে অনেক কথাবার্তা হইতো। হয়তো উনি আমার প্যাশন ধরতে পারসিলেন। তাই একদিন নিজের দুইটা এসেলারের একটা আমার হাতে দিয়ে বললেন ছবি তুলে আসতে। আমি নিউমার্কেট থেকে একটা ব্লাক এন্ড হোয়াইট ফিল্ম কিনে চলে গেলাম রায়েরবাজার বধ্যভুমিতে... [সময়কাল '০৩-০৬]
এইতো আমার ফটোগ্রাফীর গল্প...

আত্মমগ্ন কথামালা ১৯

ডিসেম্বর ২৬, ২০১২ - ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

*
শুধু শেষটা ঠিক শেষের মত ছিলো না...
**
দিনগুলো উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে, পাখির কিংবা জেট প্লেনের ডানায় চেপে। বিভিন্ন ঘটনায় ভরা একের পর এক দিন। গাঢ় কুয়াশায় লাইটপোস্টগুলোকে গাছের মত লাগে, আর গাছ গুলোকে মনে হয় ভিনগ্রহের প্রাণী। কুয়াশা জমেই থাকছে মন মগজ চোখ এবং শহর জুড়ে।
***
অনেকের সাথে অনেক দিন কথা হয় না। দু'টো সবুজ সুতো গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছে আজকাল। একসময় হয়তো সবুজের স্থান ধীরে ধীরে দখল করবে খয়েরী রঙ; সুতো-পাতা-মনের। তবুও...
****
চেষ্টা করলেও অনেক কিছুই সরিয়ে রাখা যায় না। ঘুরে-ফিরে-ফিরে-ঘুরে আসে... কত কিছুই করছি আবার কিছুই করছি না, বেশ মজারই জিনিসটা। অনেক কিছু জমে উঠছে, আবার জমতে জমতে অনেক কিছুই গলে গলে যাচ্ছে।
*****
প্রথম...
******
বিষণ্ণ কুয়াশা জেগেছে খয়েরী পাতায়, মাঝবয়েসী গাছে
স্বর্ণলতার আলিঙ্গণে।
দূরে উড়ে যাও বর্ষামেঘ
বিষণ্ণ কুয়াশার ঝাঁকে হারিয়ে যাবে তোমার জলভরা চোখ।

র‍্যাপিং এ মোড়ানো এক বাক্স বিপ্লব

ডিসেম্বর ৩, ২০১২ - ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

এইতো বেশ!
মধ্যবিত্ত তরুণেরা ঘুরছে ফিরছে।
চা সিগারেট খাচ্ছে। আড্ডাবাজিতে মেতে উঠছে।
মৃদু খুনসুটি, ফোনকল,
হয়তো খানিক রঙীন নেশার আবেশ...
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।
এরই মাঝে অনেকেই নেতা হয়ে উঠছে।
শরীর-বেশভুষায় নেতৃত্বের কিংবা বৈচিত্রের ছাপ,
শুধু মনটা শেষতক সামন্ত'ই থেকে যাচ্ছে।
বিপ্লব প্রয়োজন।
দেশের স্বার্থেই, তৃণমূল থেকে।
"বিকেলে প্রতিবাদ"
ব্যানার হাতে দাড়াতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে,
মিছিল নিয়ে হাঁটতে হবে অতিপরিচিত রাস্তায়,
মেপে রাখা কদমের সংখ্যায়।
বন্ধুগোত্রীয় নেতৃবৃন্দ বা কমরেড সাথে নিয়ে।
রাত শেষে,
সবার হাতে রঙচঙে র‍্যাপিং এ মোড়ানো এক বাক্স বিপ্লব...

আত্মমগ্ন কথামালা ১৮

নভেম্বর ২৬, ২০১২ - ১০:১০ পূর্বাহ্ন 

*
মৃত্যু
ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি ভয়ানক বিষণ্ণ... কি ভয়ানক একাকীত্বের একটা শব্দ...
**
অনেকগুলো মানুষের মৃত্যু হ'লো গত ক'দিনে। বিভৎস, ভয়ংকর মৃত্যু। ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে, আগুনে পুড়ে। সেদিন চট্টগ্রামে যখন ফ্লাইওভারের গার্ডার খসে পড়ছিলো; তখন হয়তো আমি উত্তরার পথে, নির্মিয়মান ফ্লাইওভারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটার ভেতর বসা কিংবা দাঁড়িয়ে আছি...
***
অনেকগুলো বছর আগে প্রায় এরকমই একটা ঘটনা ঘটে গেছিলো চোখের সামনে। সাইন্সল্যাবের ওভারব্রীজটার একটা গার্ডার খসে পড়েছিলো, আর চাপা পড়েছিলো একটা পাজেরো গাড়ি... এখনো মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলে স্লো মোসান সিনেমার মত সেই ভয়ানক দৃশ্যটা চোখে ভাসে...
****
আরো অনেকগুলো বছর আগে, স্কুল শেষের বছরটায়, খুলনার একটা বস্তিতে আগুন লাগলো। আমরা দূর থেকে আগুনের শিখা দেখলাম, ধোঁয়া দেখলাম, আগুন নেভানোয় সাহায্য করতে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি সব শেষ। স্তুপ স্তুপ ছাই জমে আছে পোড়ার নিদর্শন হিসাবে। আমরা সেই ছাইয়ের ভেতর থেকে যদি কোনো সারভাইভার পাওয়া যায় এই আশায় খোঁজাখুঁজি করছিলাম। ছাই সরাতে গিয়ে একজন দগ্ধ মানুষের শরীরে বাঁশের খোঁচা দিয়ে ফেলেছিলাম...
এই বিভৎস দৃশ্যটাও আমি মাঝে মাঝে দেখতে পাই...
*****
শীত শেষমেষ এসেই পড়লো। এখনো ঠিক সেভাবে শীত পড়েনি, আর আমি ঠিক এভাবেই শীতকালটাকে চাই। কিন্তু আমার চাওয়াটায় কি আর হবে। দিনে দিনে শীত আরো বাড়বে, আর আমার এই ঋতুটার প্রতি অপছন্দের মাত্রাও বাড়তে থাকবে...


(মূলতঃ এটাই লিখবার কথা ছিলো আজ)
শীত এসেছে।
আমার অপছন্দের ঋতু।
এখন যেই শীতটা পড়ছে সেরকম যদি সারাটা শীতকাল জুড়ে থাকতো, তাহলে হয়তো শীত আমার প্রিয় ঋতুই থাকতো।
পরশু সন্ধ্যায় বছরের প্রথম কুয়াশা দেখলাম। গ্রাউন্ড লেভেলে যেইটা অদৃশ্য, ২৩ তলার উপর থেকে সেইটাই দেখলাম চাদরের মতো শহরটাকে জড়িয়ে ধরে আছে। দারুণ একটা সন্ধ্যা কাটলো সেদিন। রাত নামতে নামতে tipsy... অনেকদিন পর tipsy হতে আসলে খুব খারাপ লাগে নাই। এই অবস্থায় রিকশায় ঘোরা... আরও আরও আনন্দের...
আজ দেখলাম সকালের কুয়াশা। গাছের ডালে ডালে জড়িয়ে আছে। সুর্য উঁকি মারছে ডাল আর পাতার ফাঁক ফোকড় দিয়ে। সেই আলোগুলো ছায়াগুলো কুয়াশায় মিশে অপার্থিব একটা আমেজ ছড়িয়ে দিচ্ছে সকালে ব্যাস্ততার ভেতর।

ভুতুড়ে হাতের ছায়া

নভেম্বর ১০, ২০১২ - ১০:৩৭ অপরাহ্ন

জাস্ট একটা হাত, শরীর নেই, মাথা নেই...
হঠাৎ নেমে এলো ব্যস্ত রাস্তার ব্যস্ততা এড়িয়ে...
যেখানে ধাতব প্রজাপতি স্থির হয়ে...
যেখানে ধাতব প্রজাপতি স্থির হয়ে,
স্থির চোখে গিলে ফেলে
কালো ধোঁয়া, শব্দ দুষণ আর মানুষের শরীর;
ঠিক সেখানেই...
আধো অন্ধকার ভেদ করে নেমে এলো
শুধু একটা হাত
শরীর নেই, মাথা নেই, পা নেই
শুধু একটা হাত
প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত নেমে এলো,
আর নিমেষের জাদুতে
অদৃশ্য হয়ে গেলো হাতে থাকা মুঠোফোনের শব্দময়তা
বিস্মিত, দুঃখিত এবং ভীত চোখে তাকিয়ে থাকা সঙ্গিনীর
বিবিধ দুঃস্বপ্নের অনুষঙ্গে যোগ হলো
ভুতুড়ে হাতের ছায়া... 

আত্মমগ্ন কথামালা - ১৭

অক্টোবর ৩০, ২০১২ - ৮:১৪ অপরাহ্ন 


সেই কোন শিশুকাল কোনো একটা রূপকথায় পড়ছিলাম রাজকন্যারে পীরেনিজ পর্বতমালার ওইপাড়ের থিকা উদ্ধার কইরা নিয়া আসে রাজকুমার। সেই থিকাই মাথার ভিতর পীরেনিজ নিয়া একটা বিরাট ধরণের রোমান্টিসিজম লালন কইরা যাইতেছি। সাগরের জোয়ার-ভাটার মতো, এই রোমান্টিসিজম কখনো পিকে থাকে কখনো নাইমা যায়। সময়কালের কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই...

*
আলতো আদরে মাতে
পীরেনীজ ছুঁয়ে আসা সোনালী মেঘের দল...
*

আইজ সকালের আকাশ দেইখা কোনো ফিলিং হয়নাই মাথার ভিতর। দুপুরে বেরইলাম, আর আকাশ দেইখা মনে হইতে থাকলো একেবারে জলরঙে আঁকা। ঘুইরা ফিরা আবারো সেই শিশুকাল মাথার ভিতর ফিরা আসলো। যেই সময় আমরা সিএমওয়াইকে চিনতাম না, আরজিবি চিনতাম না। রঙগুলারে আলাদা আলাদা নামে চিনতাম। সেই পিওর আকাশী নীল রঙের আকাশ ছিলো দুপুরে। সাথে পেঁজা তুলো মেঘের ছোপ ছোপ...

রোদের টুকরাগুলা পইড়া ছিলো সেই পুরানো সরকারী বাগানের সবুজ কার্পেটের উপরে। আশেপাশের বড়বড় গাছগুলা মনে হইতেছিলো স্নেহের দৃষ্টিতে তাকাইয়া ঘাস আর রোদের খুনসুটি দেখতেছে...

বহুদিন লেখতে পারতেছিনা। চেষ্টা কইরা চলতেছি। কিন্তু কিছুই জমাট বাধতেছে না।
প্রথম প্রথম উপভোগ করতাম, এখন মেজাজ খারাপ হইতেছে নিজের উপরে...

একটা সময় শিলাজিত এর গান প্রচুর শুনতাম। মাঝে অনেক দিন গ্যাপ পইড়া গেছিলো। কেমনে কেমনে জানি একাধিক এলবামও মিস কইরা গেসিলাম। সেদিন কি জানি খুঁজতে গিয়া একটা গান পাইলাম। তারপর খুঁজতে খুঁজতে আরো কিছু এলবাম পাইয়া গেলাম যেগুলা শোনা হয়নাই। সেইগুলা থিকা এখন দুইটা এলবাম কন্টিনিউয়াস মুডে চইলা গেসে। মজাই লাগতেছে শুনতে...

পৌনঃপুনিক

অক্টোবর ১৬, ২০১২ - ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন 

মৃদুল প্রতিদিন তিনতলার সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে থাকে, একটা নীল বেলুন হাতে।

........................

শোভনা প্রতিদিন তিনতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে, কাঁধে থাকে একটা সাদা ব্যাগ।

........................

পুরোনো ধাঁচের তিনতলা এই বাড়ীটায় সিঁড়িগুলো অনেক উঁচু উঁচু আর অন্ধকার। অন্ধকার ঠিক না, আলো কম। তবে ঘন্টা খানেক দাঁড়ালে চোখ সয়ে আসে, সবকিছু দেখা যায়। শুধু রঙ আর আকারের কোনো থই পাওয়া যায় না।
মৃদুল অপেক্ষা করে শোভনার জন্যে।
শোভনা ক্লান্ত পায়ে এক একটা সিঁড়ি ভাঙ্গে, মৃদুল পায়ের শব্দ গোনে। শোভনার সাদা ব্যাগটা ঝলমল ঝলমল করে। মনেহয় এক খন্ড সুর্য নিয়ে সে ঢুকেছে অন্ধকার সিঁড়িঘরে। সেই সুর্যকে নীল মেঘ দিয়ে বরণ করে নিতেই মৃদুল দাঁড়িয়ে থাকে নীল বেলুন হাতে।
শোভনাও অপেক্ষা করে মৃদুলের সাথে দেখা হবার ক্ষণটার।
দু'জনে মুখোমুখি হয় তে'তলার ল্যান্ডিংএ। মৃদুল ঠোঁট আর চোখে হাসি নিয়ে শোভনার দিকে বেলুনটা বাড়িয়ে দেয়, শোভনাও চোখ আর ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে দুহাতে বেলুনটা ধরে।
আর বেলুনটা অদৃশ্য হয়ে যায়।
মৃদুল সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় নীচে, শোভনা নিজের বাসার দরজায় কড়া নাড়ে।

..................

..................

মৃদুল প্রতিদিন তিনতলার সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে থাকে, একটা নীল বেলুন হাতে।

........................

শোভনা প্রতিদিন তিনতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে, কাঁধে থাকে একটা সাদা ব্যাগ।

........................

আত্মমগ্ন কথামালা - ১৬

অক্টোবর ১২, ২০১২ - ১১:২০ অপরাহ্ন 

ঘুরেফিরে বার বার চলে আসি নিজের পাশেই। বসে থাকি চুপচাপ, হাতটা বাড়িয়ে একটা মশা মারি, ঠাস্‌! করে শব্দ হয়। নিজের তৈরী শব্দের প্রতি নিজেরই মুগ্ধতা তৈরী হয়। মৃত মশার প্রতি সহানুভুতি জাগে। হাতে বা পা'এ লেগে থাকা নিজের রক্তের রঙের দিকে ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। একটু ওপাশ থেকে কখনো ভেসে আসে বাঁশির শব্দ, কখনো ভেসে আসে সেতার বা গীটারের সুর, কখনোবা দ্রুততাল আর লয়ে ড্রামের বিট। এগুলোর সাথে সঙ্গত করে বিভিন্ন স্বর। ভালো লাগে বা লাগেনা...

উড়ে যাবার শখ ছিলো একটা সময়। বয়সের সাথে সাথে পিঠে গজানো ডানার পালকে ধুসর ছোঁয়া লাগে। হয়তো কিছুদিনের ভেতর মরে যাবে পালকের জন্মদাত্রীরা। সেখানে জমে উঠবে মৃত ঘাসের দঙ্গল। পিঙ্গল না আরো ফিকে কোনো রঙের?

একঝাঁক পাখি মরে গিয়েছে পার করতে থাকা সময় জুড়ে। তাদের জন্য একটা ব্যক্তিগত গোরস্থান তৈরী জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়তো তাদের এপিটাফের পদ্যে ভুল পালকের ছন্দ আঁকা হয়ে চলেছে প্রতিটা সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা-প্রহর-দিন-সপ্তা-মাস-বছর ধরে। স্মৃতি যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন, সেটাকে উপভোগ করার চাইতে অন্য কোনো উপায় জানা নেই যে...

চাঁদ-ফুল-পাখি-প্রকৃতি নিয়ে রোমান্টিসিজম এক পর্যায়ে নিহিলিজমের দিকেই ঠেলে দেয়...

আত্মমগ্ন কথামালা ১৫

 অক্টোবর ৪, ২০১২ - ১০:২৫ পূর্বাহ্ন 

রিসেন্টলি কক্সবাজারে ভয়াবহ কিছু ঘটনা ঘইটা গেলো। যেইটার কোনো লজিকাল কারণ খুইজা পাইতেছি না। মাথার ভেতর একাধিক হাইপোথিসিস ঘুরতেছে এই ইস্যুতে। কিন্তু সেগুলা নিয়া লেখতে গেলেই কই কই যানি হারায়া যাইতেছে। ভাবনাগুলা থাকতেছে, বাট, লেখায় প্রকাশ করতে পারতেছি না। ওয়ার্ড হারায় যাইতেছে, লাইন হারায়া যাইতেছে।
কবিতা আমার এত প্রিয় একটা বিষয়। কিন্তু সেই জিনিসটারেও ঠিকঠাক মত লিখতে টিখতে পারতেছিনা। শুধু ফেসবুকে একটা দুইটা কইরা লাইন দিতেছি। সেগুলাও আমার নিজের কাছে আপ টু দ্য মার্ক হইতেছে না। সেদিন দেখি এক ফ্রেন্ডও সেইম জিনিস কইলো। সে কইতেছে, "তোর লেখাগুলা শুধু শব্দের ভারে ভারাক্রান্ত হইয়া যাইতেছে। কোনো প্রাণ নাই, ইমোশন নাই। তুই বেটার কিছুদিন ব্রেক নে।" কথাগুলা শুনতে খারাপ লাগছে, কিন্তু বন্ধুটারে থ্যাংক্স জানাইতেই হয়। সে নির্মোহ থাইকা আমার সাম্প্রতিক লেখাগুলারে জাজ করনের চেষ্টা করছে।
অস্থিরতা বাড়ছে গত মাস দু'য়েক ধইরা। যদিও এইটা ক্রনিক ব্যাধি হইয়া গেছে সেই ৭/৮ বছর ধইরা। তবুও ব্যাধিটারে আয়ত্ত্বে আনবার কোনো উপায় বের কইরা আনতে পারি নাই।
মজার এক প্রোজেক্ট হাতে নিছি Smile কাজেও খাটতেছে বইলাই মনে হয়...
ছোট বেলায় স্লিপারে চড়তাম। প্রথমে পিছনের সিড়ি বাইয়া উপরে উঠতাম, সেইখান থিকা দুরুদুরু বুকে বইসা শাঁ কইরা নিচে নাইমা আসতাম। তারপর আরো বেশী দুরুদুরু বুকে পিছলা অংশটা দিয়া দৌড়ায়া উপরে চড়তাম। যখন এক্সপার্ট ছিলাম না, তখন খালিপায়ে দৌড়াইতাম। আর এক্সপার্ট হইয়া যাওনের পর একে একে কেডস, চামড়ার জুতা ইত্যাদি পইড়া ট্রাই দিতাম। কিন্তু দুরুদুরু ভাবটা রইয়াই গেছিলো এক্সপার্ট হইবার পরেও। ইদানিং সেই ভাবটা ফিরে আসছে। যদি পইড়া যাই, যদি পইড়া যাই...

হাবাজাবা বাবা কাহিনী

সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২ - ২:৪৪ অপরাহ্ন 

ওয়েল... আমরা সবাই মোবাইলে বিভিন্ন বাবা জাতীয় প্রতারণার কাহিনী শুইনা আসতেছি বেশ কিছুদিন ধইরাই। ফার্স্টহ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স বইলা একটা কথা আছে। সেই এক্সপেরিয়েন্স আমার হইছে প্রায় ৪/৫ বছর আগে। তো সেইবার জ্বীনের বাদশারে গালাগালি কইরা ভুত ছাড়ায়া দিসিলাম। আরেক ফার্স্টহ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স হইলো আইজ রাইত আড়াইটায়।
ইউজুয়াল্লি অফিস দিনগুলাতে ঘুমাইতে যাই রাইত একটা দেড়টার দিকে। আইজ রাইতেও তাই গেছিলাম। বিজ্ঞানীরা কইয়া থাকে ঘুমাইতে যাইবার ঘন্টা খানিক পর থিকাই আস্তে আস্তে ঘুম গাঢ় হইয়া আসতে থাকে, রেম (REM) ফেম ইত্যাদি কাজকার ঘটে। যাই হউক, বিজ্ঞান কপচাইতে বসি নাই এক্সপেরিয়েন্স কইতে বসছি।
তো রাইত আড়াইটার দিকে হঠাত ফোন বাইজা ঘুমটা ভাঙ্গাইয়া দিলো। অচেনা নাম্বার। ভাব্লাম পরিচিত কোনো দোস্ত বন্ধু হয়তো জরুরী দরকারে ফোন্দিসে।
রিসিভ কইরা হেলু কইলাম, পয়লা কিছু বলে না।
আবার কইলাম, কে বলছেন কারে চাইতেছেন?
এই বার খ্যানখ্যানা গলায় কেউ একজন কইতেছে, তোর সাথে জ্বীনের বাদশা অমুক (খ্যানখ্যানা গলার লাইগা কি বাবা কইছিলো ভুইলা গেছি) বাবা কথা বলতেছি।
এইবার আমার ঘুমের ঘোর মোর সব কাইটা গেলো। পুরা সজাগ আর বান্দ্রামীর লাইগা প্রস্তুত হইয়া ভক্তিগদ্গদ হইয়া কইলাম বলো বাবা (গলায় যতটা ভক্তি আনা যায় আর কি)?
অমুক বাবার গলা শুইনা মনে হইলো তারে তুমি কইরা বলায় একটু ভড়কাইছে। সে জিগায় আমি কি তোর লগে আগে কথা কইছি?
একটু ভুল ডিসিসনের কারণে আমিও কইয়া ফেলাইলাম হ তো বাবা।
সে জিগায় কবে কইছি?
আমি কইলাম বাবা সেইটাতো তোমারই ভালো মনে থাকনের কথা।
আমার কথা শেষ করতে দেরী, তার ফোন রাইখা দিতে দেরী নাই। এর্পরে আধাঘন্টা তার ফোনে ট্রাই দিসি বন্ধ... বন্ধ... বন্ধ...
একটু ভুল ডিসিসনের লাইগা আমার আর তার কথা রেকর্ড করা হইলোনা, তারে হুমকি দিয়া কওয়া হইলো না এই কল আর তোর অবস্থান ট্রেস করা হইয়া গেছে।
তুই আধাঘন্টার ভিত্রে সিম আর ফোন ফেলাইয়া পালা।
আগামী অন্তত ৬ মাসের লিগা এর ভন্ডামীও বন্ধ করা হইলো না Sad Sad
বাবার ফুন নং- ০১৭৫৯৭৯৩১৮৬। কেউ চাইলে ফুনাইতে পারেন

ফেরার গল্প

আগস্ট ২৫, ২০১২ - ১১:১৯ পূর্বাহ্ন 

এখানে একটা সত্যিকারের পুকুর ছিলো। আর কেউ না মনে রাখলেও আমি সেটা মনে রেখেছি। সেই পুকুর পাড়ে কত শত উদাসী দুপুর যে কাটিয়েছি ভাবলেই এই খড়খড়ে রোদের দুপুরটাও বেশ মায়াময় হয়ে ওঠে। আমি অনেকদিন পরে এই রাস্তায় ফিরছি। ঐ যে ওখানে একটা বিষণ্ণ আতাগাছ দেখছেন, ওটার পাশের গলিটা দিয়ে পঞ্চাশ গজ মত গেলেই আমার বাড়ী। কিংবা বলতে পারেন আমার বাড়ী ছিলো। এখন কেউ আছে কি না, সেটা জানা নেই।
একবিন্দুও বাড়িয়ে বলছিনা, আমি আসলেই ফিরে এসেছি। যদিও চেনা রাস্তাটা আর আগের মতো চেনা নেই। কালাম মামার চা সিগারেটের দোকানটা যেখানে ছিলো, সেখানে একটা কিম্ভুত আকৃতির হাইরাইজ দেখছি। কে জানে, কালাম মামাই এটার মালিক কি না।
এই যে লাল ইটের নোনাধরা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে, এখানে থাকতো রচনা'রা। তবে এই বাড়িটা এরকম ভাঙ্গাচোরা ছিলোনা তখন। এই পাড়ার সবচে' আধুনিক বাড়িটার এমন হতশ্রী দশা দেখে বুক হু হু করে উঠছে। একসময় রচনার সাথে একটু কথা বলতে পারলে তাদের বাসার লনে খানিকক্ষণ খেলাধুলা করতে পারলে পাড়ার কিশোরদের কাছে নিজেকে অনেক বড় লাগতো। কামরুল কিংবা নওশাদের সাথে যদি রচনা বেশী সময় কথা বলতো, তাহলে কিশোর বুকে চিনচিনে ব্যাথা হ'তো। সেই দিনগুলোও কতদুরে ফেলে এসেছি...
একদিন রচনার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো তার বাবার মতই এক ব্যবসায়ীর সাথে। তরুন আমি, কামরুল, নওশাদের জন্য সেদিনটা ছিলো অনেক কষ্টের। গাড়ি চেপে বরের বাড়িতে রচনা চলে যাবার পর আমরা তিন বন্ধু মিলে সারারাত একসাথে হেঁটেছিলাম। কেউ কোনো কথা বলিনি, শুধু একের পর এক সিগারেট পুড়েছিলো আমাদের হাতে।
কামরুলরা এই পাড়া ছেড়েছিলো তার কিছুদিন পরেই। আর কোনো খোঁজ পাইনি ওদের। নওশাদ এখানেই ছিলো। ঐ যে বাঁ পাশে টিনের চাল ওয়ালা ঘরগুলো উঠেছে, ওটা ছিলো নওশাদদের উঠোন। একটা বিশাল আমগাছ ছিলো উঠানে। নওশাদের মা এই আমগাছের আম দিয়েই প্রতি বছর আমসত্ত্ব বানাতেন। আমরা ছিলাম তার রাক্ষস কুল।
সময় অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিলো, সাথে নওশাদটাও অনেক যাযাবর হয়ে গিয়েছিলো। আমি চাকরী পাবার অল্প কিছুদিন আগে নওশাদ একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলো। কোন মেয়ে নাকি ওকে প্রত্যাখান করেছে তাই। সেই যাত্রা বেঁচে ওঠার পর, নওশাদের মা ওকে ধরে বিয়ে করিয়ে দিলো। কেয়া ভাবী দারুণ একজন মানুষ ছিলেন। নওশাদকে একটানে যাযাবর থেকে গৃহস্থ বানিয়ে ফেলেছিলেন। সব পাগলামি ঝেড়ে ফেলে নওশাদ নিজের ব্যবসা শুরু করলো, আর বছর না ঘুরতেই মিষ্টি একটা ছেলের বাবাও হয়ে গেলো।
আহ! আমার ফিরে আসার গল্প বলতে গিয়ে দেখি বিশাল কাহিনী ফেঁদে বসলাম। যাক্‌, আমিও মোটামুটি দু'-তিন বছর চাকরী করে মা-বাবার চাপে পড়ে লোপাকে বিয়ে করে ফেলি। নিজের স্ত্রী বলে বলছি না, লোপার মত মেয়েকে পাওয়া আমার সাত জনমের ভাগ্য ছিলো। অন্যের বাবা-মা কে কেউ এভাবে আপন করে নিতে পারে, আমার জানা ছিলোনা। আর আমার বাবা-মা? তারাও লোপাকে পেয়ে যেনো নিজের হারানো মেয়েকে খুঁজে পেলো। বলতে বোধহয় ভুলে গেছিলাম, আমার একটা বড় বোন ছিলো। আমার জন্মের পরপরই, মাত্র তিন দিনের জ্বরে ভুগে মারা যায়। যা হোক, লোপার কথা বলছিলাম।
লোপার সাথে আমার বিয়ের মাত্র সপ্তা দুই আগে পরিচয়। মুরুব্বীদের প্রাক বিবাহ কথা বার্তা শেষ হবার পরেই আমি মেয়েটাকে দেখি। দুই সপ্তাহে একটা মানুষকে আর কতটুকু চেনা যায়? সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই দেখি সাজগোজ করা একটা শ্যামলা মেয়ে আমার ঘরে বসে আছে। নিতান্ত ছাপোষা আমি আরো বেশী গৃহী হয়ে গেলাম। এরপরের সাতটা বছর কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারিনি। লোপার সাথে কখনো কথা কাটাকাটি, মন কষাকষি হয়নি সেটা বলবোনা। কিন্তু প্রতিবারই কিভাবে কিভাবে জানি সব কিছু মিটে যেতো।
এই সাত বছরে লোপা আর আমার একটা মেয়ে হয়েছিলো। দুজন মিলে অনেক আলোচনা-ঝগড়াঝাটি করে নাম রেখেছিলাম শ্যামা। মেয়েটার মায়াময় মুখের কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসলো। আমার শ্যামা যদি বেঁচে থাকে, কেমন দেখতে হয়েছে? কি করছে? কিছুই জানিনা। আর জানবোও বা কিভাবে? কতদিন পর ফিরছি এই রাস্তায়, আমার বাড়ীর রাস্তায়।
এইযে, সুশীল কাকুর সেলুন পার হচ্ছি। আরে! এখানেতো সেলুনই নেই এখন। একসময় বাবার হাত ধরে আসতাম চুল কাটাতে, বড় হয়ে ওঠার পর একা একাই। আবার শ্যামার প্রথম চুল কাটানোর জন্য সুশীল কাকুকেই ধরে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভয় পেতাম, এত নরম চামড়া, যদি কেটে ছড়ে যায়? সুশীল কাকু থাকতেন আরেকটু সামনে গিয়ে ডানের বাড়িটায়। বাবার সাথে উনার ছিলো বন্ধুর মত সম্পর্ক, পুজো পার্বণে উনাদের বাসায় কত নাড়ু সন্দেশ খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।
আমাদের বিয়ের চার বছরের মাথায় বাবা মারা গেলেন হঠাৎ করেই। মা ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। সাজানো পৃথিবী অনেকটাই এলোমেলো হয়ে পড়লো। এর ভেতরেই বাবার মৃত্যুর পাঁচ মাসের মাথায় মা ও চলে গেলেন বাবার সান্নিধ্যে। নিজের নাতনীর মুখ দেখে যেতে পেরেছিলেন এটাই স্বান্তনা। আমি মনে হয় একটু বদলেও গিয়েছিলাম তখন। অনেক দিনের ছায়া মাথার উপর থেকে সরে যাওয়ায় অনেকটা অবিন্যস্ত। তবুও সামলে নিচ্ছিলাম নিজেকে আস্তে আস্তে।
এইতো বিষণ্ণ আতা গাছটার কাছে চলে এসেছি। এবার বাঁয়ে মোড়, তিনটা বাড়ী পার হ'লেই আমার বাড়ী। আহা কতদিন আমার মেয়েটাকে দেখিনা, লোপাকেও। মেয়েটা মনেহয় অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এতদিন পর আমাকে দেখে কি চিনতে পারবে? যে হারে মুখ ভর্তি সাদা সাদা দাঁড়ি-গোঁফ হয়েছে! লোপার চুলেও মনেহয় পাক ধরেছে। কিন্তু আমি ঠিকই চিনতে পারবো ওদেরকে। নিশ্চই চিনতে পারবো আমার হৃদপিণ্ডের ধুক ধুক শব্দগুলোকে।
সেবার, শ্যামার তিন বছরের জন্মদিন সামনে চলে এসেছে। আমি আর লোপা ঠিক করলাম মেয়েটাকে সাগর পাহাড় এগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। লোপা আর শ্যামা'র সে কি উচ্ছাস। মহা উৎসাহে শ্যামাকে নিয়ে লোপা বেড়ানোর প্রস্তুতি নিতে থাকলো, আর আমি ব্যাস্ত থাকলাম ছুটির আগে শেষ মূহুর্তের কাজ গুলো নিয়ে। রওনা দেবার আগের দিন দুপুরে, অফিস থেকে বেরোবো বেরোবো করছি, এমন সময় আমার ফোনটা বেজে উঠেছিলো। জরুরী কোনো একটা খবর ছিলো, যেটা এখন আর মনে নেই, শুনে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম অফিস থেকে।
এইতো আমার বাড়ীতে পৌছে গিয়েছি।
কিন্তু... এরকম ময়লা জমে আছে কেন গেটের সামনে? ঘরের দরজা জানালাগুলো একটাও আস্ত নেই কেন? লোপা শ্যামা ওরা কি আমার উপর রাগ করেছে গত আঠারো বছর ধরে যোগাযোগ নেই বলে?
আহ! সব কথা মনে পড়ায় এত এত কষ্ট লাগে কেনো। সারাবছরই তো ভুলে থাকি, মেয়েটার জন্মদিন কাছিয়ে আসলেই মনে পড়ে কেন সব কিছু...
আমার শ্যামা... আমার লোপা... বাসায় ফিরছিলো টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনে। পথে ওদের রিকশাটাকে ধাক্কা দিয়েছিলো একটা কার। মেয়ে কোলে লোপা ছিটকে পড়েছিলো রাস্তায়, আর একটা বাস চলে গিয়েছিলো ওদের কোমল শরীর দু'টোকে পিষে দিয়ে।
সারা বছর পথে পথে ঘুরি আমি। সেই বাসটা আর কারটাকে খুঁজি। অন্য কিছু মনে থাকে না। শুধু শ্যামার জন্মদিনের আগে আগে মনে পড়ে ওদের সাগর আর পাহাড়ে নিয়ে যাবো বলেছিলাম। ফিরে আসি এই রাস্তায়...

অসংলগ্ন

আগস্ট ৬, ২০১২ - ১১:৪১ অপরাহ্ন

একটা নদীর মৃত্যু হয়েছে সেদিন...
আলফেসানী দাঁড়িয়েছিলো একটা রিকশা কখন এসে টুনটুন নুপুর বাজাবে সেই অপেক্ষায়। সেই রিকশাই এলো, সাথে করে নুপুরের ছন্দের বদলে নিয়ে এলো নদীর মৃত্যু সংবাদ। নদীটার সাথে আলফেসানীর পরিচয় ছিলোনা। শুধু ঢেউয়ের ছন্দটা সে দেখেছিলো কোনো এক আর্ট গ্যালারীর আলো আঁধারীতে।
ঝাঁক বেঁধে দানবেরা ছুটে এসেছিলো মৃত নদীর দৃশ্যমান সম্পদ ছিঁড়ে খুঁড়ে নেওয়ার জন্য। যেটা আলফেসানীর একেবারেই পছন্দ হয়নি। তাই সে জবথবু হয়ে বসে পড়লো গ্যালারীর অন্ধকার সিঁড়ির নীচে। যেখানে তৈলচিত্রদের বৃদ্ধাশ্রম। হঠাতই অন্ধকার ভরে উঠলো ফিসফিস স্বরে। শুনবেনা শুনবেনা করেও আলফেসানী শুনে ফেললো বৃদ্ধ তৈলচিত্রদের একান্ত গোপন কথাগুলো। এর ভেতর কোনো একটা তৈলচিত্র আবার সানাই বাজিয়ে চলেছিলো অবিরাম।
মাথার ভরা সানাইয়ের সুর নিয়ে আলফেসানী যখন জেগে উঠলো, তখন তৈলচিত্রদের কথাবার্তা তার কিছুই মনে নেই। শুধু সকাল সকাল নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার তাগিদ আর পাগল করা সানাই। কোন ভোরে জানি একটু বৃষ্টি নেমেছিলো, তার পরশ রয়ে গেছে এবরোথেবরো রাস্তায়। তাই সাবধানেই হাঁটছিল আলফেসানী, তবু কাদারা পরম মমতায় জড়িয়ে ধরছিলো তার জুতো। অনেকটা দূর হেঁটে এসে পার্কের বেঞ্চিটাকে সে জিজ্ঞাসা, করলো এখানে বিশ্রাম নেওয়া যাবে নাকি? খুব পুরোনো বন্ধুর মত পার্কের বেঞ্চিটা একটা অশ্লীল রসিকতা করে বসলো। আলফেসানীর মাথা থেকে সানাইয়ের সুরগুলো দ্রুতপায়ে ছুটে গেলো পার্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা থাকা পাতাদের আশ্রয়ে। আর ভারমুক্ত আলফেসানী বসে পড়লো বেঞ্চিটার শরীরে শরীর লাগিয়ে।
চোখের নাগালেই শাড়ি ছড়িয়ে নগ্ন শুয়েছিলো লেকটা। আলফেসানীকে এতো কাছাকাছি দেখেও তার ভেতর কোনো বিকার দেখা গেলোনা। বরং সে আলফেসানীর কাছে জানতে চাইলো, গত সন্ধ্যায় তৈলচিত্ররা তার নগ্নতা নিয়ে কিছু আলাপ করেছিলো কি না? লেকটা কষ্ট পাবে জেনেও আলফেসানী সত্যি কথাটা গোপন করতে পারলোনা। সে বলে দিলো, গতরাতে তৈলচিত্রদের আলোচনার বিষয় যদিও নগ্নতা ছিলো কিন্তু তাতে পরিচিত কোনো লেক বা নদীর প্রসঙ্গ ছিলোনা। অনেক দূরের কোনো এক সবুজ বনের নগ্নতায় বারবার উত্তেজিত হয়েছিলো বৃদ্ধ তৈলচিত্রেরা। আলফেসানীর কথা শুনে লেকটা তাড়াতাড়ি নিজের শরীর শাড়িতে ঢেকে নিলো। এর পরপরই পার্কটা কেমন জানি ধুসর হয়ে উঠতে থাকলো। শালিক, কাক আর চড়ুইগুলো উড়ে আসতে লাগলো সারা শহর থেকে। আর টপাটপ একের পর এক দালান তৈরী হয়ে গেলো।
সময় বয়ে চললো, কিন্তু আলফেসানীর নদী-লেক-তৈলচিত্র জনিত বিভ্রান্তি কাটলো না...

আত্মমগ্ন কথামালা ১৪

জুলাই ২৯, ২০১২ - ১:৪৮ অপরাহ্ন 

সরলতা

মানুষের সরলতা সবসময় আচরণে লেখা থাকে না,
কখনো কখনো ওপরের ঠোঁটের কোনায়ও তাকাতে হয় পেছন থেকে।
সরলতার আচরণ, সে তো চর্চিত অভিনয়;
কৈশোরিক সারল্য ফুটে ওঠা ঝলমলে ঠোঁটের কার্ণিশে যে দৃষ্টি রেখেছে
সে ঠিকই চিনে নিয়েছে অভিনয় আর স্বতঃস্ফুর্ততার পার্থক্য...

সবুজ

বিস্তৃত সবুজের মাঝে লুকানো অন্ধকার দেখে ভয় জাগে
আলোর উপস্থিতি স্বস্তি আনে না মনে...

ঠোঁট

আমাদের ঠোঁটে আঁকা থাকে বিবিধ আবেগের গ্রাফ
সময় এবং অসময়ে ওঠানামা করে নিয়মহীন...

ম্যাজিক বিষয়ক কয়েকছত্র...

জুলাই ২, ২০১২ - ১০:৩০ অপরাহ্ন 

▄▌মঙ্গল▐▄
পকেট ভরা ম্যাজিক নিয়ে হেঁটে গিয়েছিলাম পূবের পাহাড়ে,
চোখে রেখেছিলাম চিতার ক্ষিপ্রতা,
পায়ে, সরীসৃপ মসৃণতা।
দু'হাতে ধরা ছিলো ছিন্ন হৃদয়, বনদেবতার অর্ঘ্য...
▄▌বুধ▐▄
ম্যাজিক হ্যাটে বন্দী থাকা খরগোশের মনোবেদনা
স্পটলাইটে ঢাকা পড়ে যায়,
দর্শকের হাততালিতে চাপা পড়ে লুকোনো পায়রার কান্না;
নিজের দুঃখ গুলো পামিং করে দস্তানায় লুকিয়ে রাখে চৌকষ ম্যাজিশিয়ান,
আলোকজ্জ্বল মঞ্চে হাত নেড়ে সুখাভিনয়, পৌনঃপুনিক...
▄▌বৃহস্পতি▐▄
ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যেকে জাগাবো বলে
শিখে নিয়েছি তিনশ পনেরটা ম্যাজিক ট্রিক্স
বিনিময়ে হারিয়েছি অন্তর্গত জাদুকাঠির অধিকার
শুধু সেকারণেই
রাজকন্যে জেগে উঠলো অন্য জাদুকরের ছোঁয়াতে...
▄▌শুক্র▐▄
একটা ম্যাজিক মিরর কিনে দিয়েছিলাম তোমাকে
হয়তো সস্তা ছিলো, তাই তোমার চেয়ে সুন্দরী কারো ছবি ভেসে ওঠেনি
প্রতারক ভেবে সরিয়ে দিয়েছো দূরে
বোঝোনি সহজ সত্যটা, তুমিই আমার সুন্দরীতমা এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে...
▄▌শনি▐▄
বিভ্রান্ত ম্যাজিসিয়ানের দিনলিপি লেখা মেঘের পরতে পরতে
বৃষ্টি হলেই নেমে আসবে মাটির বুকে
কিংবা, রোদের আঁচে ভেসে যাবে অন্য ঠিকানায়...
▄▌রবি▐▄
চাঁদের সাম্রাজ্যে প্রয়োজন নেই কোনো ম্যাজিকের।
জোছনার নিজস্বঃ ম্যাজিকে ভেসে যায় ম্যাজিসিয়ান,
ভুলে গিয়ে সকল জাদুসুত্র...
▄▌সোম▐▄
ম্যাজিক বাক্সটা বন্ধ করে দিতেই
ঝলমল জ্বলে উঠলো আলো
নিশ্চুপ হলঘরে উড়লো হাজার পায়রা...

আত্মমগ্ন কথামালা ১৩

মে ৩১, ২০১২ - ১২:৪৫ অপরাহ্ন 


অনেকদিন ধরে কিছু লিখতে পারতেছি না। ব্লগেও লগিন করতে আলসি লাগে Sad ফেসবুকে পইড়া পইড়া ঝিমাই, আর হাবিজাবি স্ট্যাটাস দিয়া থাকি। লেখালেখি করতে যেহেতু পারতেছিনা, সেহেতু এই হাবিজাবি স্ট্যাটাসগুলাই একত্র কইরা রাখি আর কী Sad
মে ১২
█▓▒░
পথের ধুলো কাদা পা'য়ে জড়িয়ে ফিরে আসা সেই
প্রতিদিনের নিজস্ব কোণে। পরিচিত দরজায় পরিচিত পিপহোলে নজর রেখে
কড়া নাড়া প্রতিবার, একই ছন্দে; আধো অন্ধকার, নয়তো আলোকজ্জ্বল গহ্বরের
গিলে নেয়া নিয়মিত রুচিবোধে।
চিরচেনা কথাগুলো নতুন নতুন রূপ ধারণে খুবই পারঙ্গম,
এড়াতে চেয়ে, মুখগুজে পড়ে থাকা নীলচে কল্পনায়...
হয় কিংবা হয়ে ওঠেনা সবসময়।
তীক্ষ্ণধার কথারা, ফালাফালা করে দেয় চিন্তার নরম বুক;
অভ্যস্ত হয়েও কোথায় জানি অনভ্যস্ততা রয়েই যায়।
সিদ্ধান্তের দোলাচলে ক্রমশঃ
দিনান্তে জমা হয় ঘর বাঁধার অসুখ।
মে ১৪
█▓▒░
এসো, আজ কিছু কথা আঁকি কাগজের ক্যানভাসে
সেই পুরোনো দিনের মতো।
চোখ বুজে ভুলে যাই না পাবার ক্ষত;
এসো, রঙীন আবীর ছুঁড়ে হেসে উঠি উচ্ছল
কালো মেঘ সরে গিয়ে রোদ্দুর ঝলমল...
মে ১৫
█▓▒░
কিছু স্থান সবসময়েই শূন্য রয়ে যায়, কিছু পথে কেউই হেঁটে যায় না, কিছু গল্প কখনোই বলা হয়ে ওঠে না আর কিছু বেদনা আজীবন রয়ে যায় অব্যক্ত...
মে ২১
█▓▒░
আকাশী ফিতে বাঁধা স্কুল বালিকারা হেঁটে যাবার পর,
এলোমেলো কিছু দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে নগরের বৃক্ষরাজি মন দেয় নিজেদের প্রাত্যহিক প্রস্বেদনে,
টুংটুং বেজে চলা রিকশার ঘন্টিতে ঘন্টিতে ছড়িয়ে যায় আলস্যের সপ্তসুর;
পথচলতি মানুষের চুল ছুঁয়ে নেমে আসা সন্তাপ
ছায়া হয়ে পিছু নেয় অবিরাম।
অপেক্ষারত স্কুল বালক ধুলোমাখা শার্টে সযতনে জড়িয়ে রাখে নিরুত্তাপ সকালগুলো সব
আর ভবিষ্যতের ছবি আঁকে বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে, শুকনো ফুলের পাপড়িতে...
মে ২৪
█▓▒░
রাত গভীর হ'লে;
অনভ্যাসে মেলে রাখা চোখে লাল আলো প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে দেয়,
ফিকে হয়ে আসা অন্ধকারের মাঝে
মিহি শব্দেরা পাহড়ের মত বিশাল হয়ে ওঠে,
ছটফট করতে থাকা ভাবনাগুলো আরো ছটফট করে যায়,
ডানা মেলবার আকাঙ্ক্ষায় থাকা কথার শবদেহ দেখি ভোরের আলোতে এসে...
মে ২৭
█▓▒░
ক্লান্ত নগরের রাজপথে ভেসে বেড়ায় অচেনা ফুলের সৌরভ, কিশোরী বৃষ্টির ঘ্রাণ;
ধুলোরাও থিতিয়ে আসে ক্রমশ...
মে ২৭
█▓▒░
রাতের জানালায় ঝুলে ছিলো একটা ঘোলাটে রক্তাভ চাঁদ,
ভেবেছিলাম, সব কিছু বলে দেবো,
একবারের জন্যে হলেও;
সুর্য জেগে ওঠার সাথেই শুকিয়ে গেলো নৈশচিন্তার কোমল শিশির...
মে ২৯
█▓▒░
ভাবনাগুলো ঘুরপাক খায় ভুলে যেতে চাওয়া কেন্দ্রের আকর্ষণে...
মে ৩০
█▓▒░
পংক্তিরা মৃতপ্রায় পড়ে রয় পদতলে...
মে ৩১
█▓▒░
মেঘলা বিভ্রম ভরা বাতাসে সময় বয়ে গেলে,
ভাবনারা রক্ত ঝরায় অবিরাম
ভুলে যাওয়া স্মৃতীরা ভীড় জমায় মনের কার্ণিশে
পদচিহ্ন মুছে দেওয়া ফসফরাস ঢেউ আছড়ে পড়ে বেলাভুমি জুড়ে।
ও নিষ্ঠুর চন্দ্রালোক,
তুমি খুলে দাও সেই প্রিয়তম দ্বার,
কোমলতা ভরা দিনগুলো ঘুম ঘুম চোখে আবার ফিরে আসুক এই অস্থির নগরে...

[৪] শিরোনামহীন

মে ১৭, ২০১২ - ১:০৭ পূর্বাহ্ন 

একটুকরো অন্ধকারের অপেক্ষায় কেটে যায় হাজার দুপুর
দু'হাতের রেখায় জমা হতে থাকে শৈত্যপ্রবাহের ছাপ
মুখের বলিরেখায় অবিরাম কথা বলে ওঠে লু'হাওয়ারা।
সময় পার হয়ে গেলে,
ওড়ার অপেক্ষায় থাকা জোড়া শালিক;
চলে যায় নিজ নিজ পথে।
বিদায়?
বুঝে নেই পড়ে থাকা পালকের গানে,
ভেসে যাওয়া মেঘেদের রঙে।

এবং দরজা...

জুলাই ১৯, ২০১২ - ১১:০৫ অপরাহ্ন 

দরজা খুলে দিলে উড়ে আসে ধুলোমাখা মেঘ, পাখিদের পালক;
কার্ণিশে বসে থাকা ঘুম, দুদ্দাড় ছুটে যায় আকাশের দিকে,
ভুলে যাওয়া কবিতারা ভীড় জমায় কিবোর্ড ঘিরে..
সাদা-কালো স্মৃতিগুলো জড়িয়ে থাকে দরজার চৌকাঠে,
বেরোতে কিংবা ঢুকতে, স্বর্ণলতা হয়ে ওঠে।
আদতে,
স্মৃতিরা ফেরেনা ঘরে
হারায়ও না অচেনা রাস্তার ভীড়ে।
চৌকাঠে, দরজায়,
যাপিত দিনের তলানি জমতে থাকে নিরন্তর..
মেঘের দরজা খুলে দেখি বৃষ্টির পদধ্বনি, ভেজা রোদের গান;
সারিবদ্ধ চোখে পলক পড়ে মিলিটারি শৃংখলায়
কাজের ফিরিস্তি লিখে আগামীর খাতায়।
ভয় ঘিরে থাকা আংগুল গুলো গিলে ফেলে নিজেদের অনুভূতি,
ভেসে যাই গতানুগতিক স্রোতে...
দরজার এদিকে পরিচিত দীর্ঘশ্বাস, ওদিকে অপরিচিত...
ব্যাক্তিগত দরজাগুলো যতটাই এঁটে রাখা যাক না কেন,
হাট হয়ে খুলে যায় বাতাসের মৃদু স্পর্শেই...
গল্পপাখিটা মনমরা, উড়ে চলে গেলে
শব্দরা ধীরে ধীরে ফিরে আসে চেনা বারান্দায়।
কেউ কেউ দরজা পার হয়ে ঢুকেও পড়ে অগোছালো বেডরুমে
যেখানে স্মৃতিবুড়োর কাঁপা হাতে ব্যাস্ততা, হারানো শব্দ খোঁজার...
দরজা বন্ধ করে দিলে আড়মোড়া ভাঙ্গে ঘুম
অধরা স্বপ্নেরা ফিরে আসে ঘোর এবং অঘোরের সীমান্তে...

ভাস্কর'দার সাথে কথা বার্তা

মে ৯, ২০১২ - ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন 

রায়েহাত শুভঃ- রাত জেগে জেগে ক্লান্ত চাঁদটা যখন ঘুমিয়ে পড়ে পশ্চিমের কামরায়
তার কিছুটা আগে থেকেই শুরু হয় পথ চলার গান...
ভাস্কর'দাঃ- প্রতি দিন তার ঘুমের রুটিন পাল্টে গেলে
পথ চলা কিম্বা গানের রুটিনো কি তবে পাল্টে যায়?
রায়েহাত শুভঃ- গানের রুটিন পালটায় ঋতুচক্রের পালাবদলে
পথচলাও বদলে যায় সময় বদলানোর সময়ে...
ভাস্কর'দাঃ- যখন দিবস দীর্ঘ হয় তখন পথের দৈর্ঘ্য
কার সাথে তবে যাতায়াত করে‍! নাকি পথের সীমানা
অন্ধকার চাঁদ অথবা পথিক কারো নিয়ম মানে না...
রায়েহাত শুভঃ- পথিকেরই সব দায়,
পথ থাকে পথেরই মতো।
পথিক নিয়ম ভাঙে এবং গড়ে
পথ তার রুক্ষ্ম বুকে ধারণ করে রাখে পথিকের হাসি কান্না দুঃখ সুখ...
ভাস্কর'দাঃ- তবে ইতিহাসে শুনিয়াছি পথের আরম্ভ কিম্বা শেষ
কেবল পথিক নিজেই সাজায়, পথের আসলে কোনো
অস্তিত্ব থাকে না পথিকের পদছাপ ছাড়া...
রায়েহাত শুভঃ- পথিকের প্রতিটা পদছাপে লেখা থাকে তার
দুর্বিনীত অনুভব, পথই হয়ে ওঠে লেখবার খাতা।
রোদ এবং ধুলোরা ছড়িয়ে পড়ে বিষণ্ণ ঘরের কোনায় কোনায়
যেখানে শ্বাস ফেলে নীলচে আলো আর সেতারের সুর...
ভাস্কর'দাঃ- মাঝে মাঝে পথিকের না লেখার অভিমান থাকে
তখন পথের ঠিকানায় পথ শব্দ লেখা অপরাধ
রোদ্দুর পড়েছে মাটির দলায় আর সেতারের সুর
উড়িয়ে নিয়েছে কিছু ধুলো...অলস পথিক বাস্তবিক
পথের অস্তিত্ব বেধে দিয়ে ঈশ্বরের মতো ছেলেখেলা খেলে...
রায়েহাত শুভঃ- অপরাধ জেনেও পথিক লিখে যায় পথ শব্দ
অভিমানে, ঈর্ষায় আর বোকা বোকা রাগে
ছলছল মেঘের কার্ণিশে বাসা বাঁধা রঙধনু,
নতুন সুরের সুচনা করে পথিকের অন্ধ চোখে।
গানগুলো সব পদাবলী হয়ে ওঠা সাময়িক সন্ধ্যালোকে
পথিক চলতে থাকে পথ...
পূর্ণ যুবতী চাঁদ উঠে আসে পূর্বের সিড়ি বেয়ে
রাতের শরীরে জড়িয়ে নিয়ে জোছনার আঁচল...
______________________________________
শুরুটা ফেসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে।
সেখান থেকে দুজনেই উৎসাহী হয়ে কথাবার্তা চালিয়ে গেলাম। সবশেষে ব্লগে পূর্ণ আকারে রেখে দেওয়া...

৩* শিরোনামহীন

মে ৭, ২০১২ - ১২:০৬ অপরাহ্ন

হুড়মুড় বাতাসে ভিজে যায় স্বপ্নহীন সময়;
হলদেটে দুপুর, অট্টালিকার কার্ণিশে হাঁটে উদাস পায়ে।
বিষাদের রঙ ছড়িয়ে গেলে,
আটপৌরে শাড়িও ছোপ ছোপ অশ্রুময়।
পেরিয়ে যাওয়া সীমানার দিগন্তে অপেক্ষা করে থাকে আরো সীমানা প্রাচীর
এবং আরো আরো অনেক প্রতিবন্ধক
এগুতে চেয়েও হয়না এগিয়ে যাওয়া।
বুকপকেটে জমিয়ে রাখা একাধিক অদৃশ্য ফুলের গন্ধে
চিন্তারা ভারী হয়ে আসে ক্রমশ
দেখবার চোখ, শুনবার চোখ আর বলবার চোখে জমা হয় বিবিধ ঘষা কাচের আস্তর।
জলফড়িঙেরা কখনো ছুঁয়ে যায়না গড়িয়ে যাওয়া অশ্রু
প্রজাপতিরা উড়ে বেড়ায়না অদৃশ্য ফুলের আকর্ষণে।

আত্মমগ্ন কথামালা ১২

মে ৪, ২০১২ - ১০:১৩ অপরাহ্ন 

কাইল্কা শাহবাগ থিকা ফিরনের পথে ঝড়ে আর বৃষ্টির ভিত্রে পড়লাম। রিক্সায়। উরে মা রে মা। কি যে ঠান্ডা পানি। এক্কেরে গুলির মত বিধতেছিলো। পকেটের ম্যাচ গেছে ভিজা। লগের জনের থিকা বিড়ি লইয়া বিড়িও ধরাইতে পারিনা। লগের জনের কাছে আছিলো লাইটার সেইটাও ঠান্ডা হইয়া গেসে। শেষ্মেষ বাসার নিকটে যখন পৌছাইলাম দুইহাতে কোনো সাড় নাই, থরথর কইরা কাপ্তেছি। রাস্তা পার হইতে গিয়া দেখি পায়ের উপ্রেও কন্ট্রোল নাই।

কয়দিন হইলো কি জানি হইছে বাল। ঝিমাইতে বেশী ভাল্লাগে Confused ব্লগে সবার লেখা পড়তেছি। ভালো লাগতেছে। কিন্তু লগিন কইরা কইতে মন চাইতেছে না Sad নিজেরে নিয়া বড়ই হতাশ।

অঞ্জন দত্ত বুইড়ায় ভালোই গান টান গাইতেছে। ইদানীং তার গানাবাজনা শুনতেছি। এই ব্যাটার গান শুনলে অল্টাইম নিজের ভিত্রে বিশাল বিশাল সাইজের ডিপ্রেসনের মেঘ জমা হইতে থাকে। সেই মেঘগুলারেই ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখি নিয়মিত।

ছবি তুলার চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছি পুরাদমে। মাগার কেরাম জানি ভজঘট পাকায়া যাইতেছে।
ইদানীং মনে হইতেছে আমি আসলে কিছুই পারিনা। পারতেও ইচ্ছা করতেছে না।
ধুর্বাল ধুর্বাল ধুর্বাল...

আত্মমগ্ন কথামালা-১১

মে ১, ২০১২ - ১২:১৮ অপরাহ্ন 

আমি অনেক বড় ফটোতোলক। আমার বিরাআআআট সাইজের একখানা ক্যাম আছে, লেটেস মডেল। লেন্সও আছে গোটা পাচেক, যুম, ম্যাক্র, টেলি, প্রাইম, ফিস আই। সবরকমের। আমার একটা নীতি আছে। কষ্ট কইরা ছবি তুলুম না কখনই। ছবি কি কষ্ট কইরা তোলনের জিনিস? আরামে আরামে গিয়া অল্প হাঁটাহাটি করমু। পায়ে ধুলা বা কাদা যাতে না লাগে সেইদিকে খেয়াল রাখমু বেশি। উত্তর-দক্ষিন-পুর্ব-পচ্চিম-ইশান-বায়ু-নৈঋত-অগ্নি-উধ্ব-অধ সবদিকে বিভিন্ন লেন্স তাক কইরা ফটাফট শাটারে চাপ দিমু। ধরেন শ-ছ্যেকক ছবি তুইলা নিমু দেড় ঘন্টার ভিত্রে। কম হইলো মনেহয়। আরো কিছু বেশিই তুলমু, আপনাদের বলুম কেন কয়টা তুলছি? এই দেড় ঘন্টায় একশ আশিবার রুমাল দিয়া ঘাম মুছুম, পরিশ্রম হইতেছে না? এই খটখটা রোইদের ভিতরে কি ভালো ছবি উঠে? আমি আবার গোল্ডেন লাইট ছাড়া ছবি তুল্বার পারি না। পারি না বলা ভুল হইবো, আমি আসলে তুলিই না। খটখটা রোইদে মাইনষে ঘামায়া উঠে, ছবি জ্বইলা যায়। এইসব ছবি তুলা হুদাই পরিশ্রম। সো আমি ঐ ছবি তুইলা ডিলিটের ঝামেলায় যাইতে চাই না বইলা গোল্ডেন লাইট ছাড়া ছবি উঠাইনা।
ছবি তুলা শ্যাষ হইলে পরে বেশ আয়েশ কইরা ভালো একটা রেস্টুরেন্টে খানাদানা শেষ কইরা পেট আর ক্যাম ভরা আত্মতৃপ্তি লইয়া বাড়ীত ফেরত যামু। এরপর আমার ডিজিটাল ডার্করুম তো রইছেই।

অনস্তিত্ত্ব বিষয়ক রেললাইন

এপ্রিল ২২, ২০১২ - ১০:৫২ অপরাহ্ন 

*
এইসব লাল-নীল-হলুদ
এইসব আদিগন্ত সন্ধ্যা,
সবার ভালোলাগায় সিক্ত হয়ে উঠে এসো চাঁদ
বিষণ্ণ রাতের আঁধার জোছনার চাদরে ঢেকে দিয়ে।
দূরে মিলিয়ে যাওয়া মেঘ ও মাঠের দিকে যতই এগিয়ে যাওয়া হয়
তারা সরে যেতে থাকে দূর থেকে দূরে।
শহরের সীমারেখা আঁকা ক্লান্ত কাকের দল ডানায় রোদ্দুর মেখে
বিশ্রাম নিতে শুকনো গাছের আশ্রয়ে নামে, স্বরে মিশে থাকে করুণ আর্তি।
দূরাগত ট্রেনের হুইসেলের উদাস
ভর করে পথিকের চোখে এবং মনের চিলেকোঠায়।
বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে যাওয়া দুই জোড়া পা
অনস্তিত্ত্ব বিষয়ক রেললাইন ধরেই চলে যেতে থাকে বহুদূরে
পাশাপাশি, তবু একজীবনের ব্যবধান রয়ে যায় মাঝে...

মুক্তগদ্যঃ বর্ষানগর

এপ্রিল ২০, ২০১২ - ১:১২ পূর্বাহ্ন

*
বর্ষানগরের কৃষ্ণচুড়ারা একে একে ফুটে চলেছে।
**
দুপুরের ঝলমলে রোদ ভেঙ্গে ছুটে যাওয়া রিকশার টুনটুন শুনে বুকের ভেতর চাপচাপ ব্যাথা জমা হতে থাকে। এমনই টুনটুন রিকশা ছুটে গিয়েছিলো যেদিন তুমি চলে গিয়েছিলে শহর থেকে। আমার নিজস্ব নগর থেকে। ভাঙা চুড়ির মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো শব্দগুলো এসফল্টের রাস্তা জুড়ে।
***
দূর আকাশের কোনে, একপাল কাফ্রী মেঘের মিটিং জমায়েত ছিলো সেদিন। তাই বুঝি বিদ্যুতের চাবুক হাতে নেমেছিলো সোনালী সন্ধ্যা। নিঃশব্দ চাবুক চমকাচ্ছিলো সুর্যকে ঘিরতে উদ্যত মেঘেদের পিঠে। নির্যাতনে অভ্যস্ত কাফ্রী মেঘেরা আনন্দে খলখল হেসে উঠছিলো থেকে থেকেই। আর বেড়ে চলছিলো সংখ্যায়।
****
শোঁশোঁ করে কাফ্রী মেঘদলের বন্ধু, বাউল বাতাস ছুটে এসেছিলো তখন। গাছের পাতায় কাঁপন তুলে উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলো তারা। মেঘদলের সাথে সংগত তুলছিলো রাস্তায় নানা শব্দের ওড়াওড়ি। বাউল বাতাসের বাঁশি শুনে চারদিক থেকেই দলে দলে ছুটে আসছিলো কাফ্রী মেঘের ঝাঁক। সুর্যের বিদায় নেবার আগেই তাকে ঘিরে ফেলেছিলো। স্বৈরাচারী সুর্যের দাপট কমিয়ে দিয়েছিলো এক লহমায়। শুধু সুর্যের বরকন্দাজেরা রয়ে গিয়েছিলো চাবুকের বিদ্যুৎ হাতে নিয়েই।
*****
চাবুকের আঘাত বেড়েই চলছিলো সময়ের সাথে সাথে। মেঘেদেরও ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে পড়ছিলো একটু একটু করে। তাই তারা মৃদু লয়ের গান শুরু করেছিলো বৃষ্টিছন্দের আড়ালে। বিদ্যুতের শপাং শপাং চাবুকের সাথে সাথে বাতাসের বাঁশি বেজেই চলেছিলো, আর জোর গলায় নামছিলো মেঘেদের উত্তাল গান।
******
কৃষ্ণচুড়ারা কাফ্রী মেঘদলের গান শুনে বদলে নিয়েছিলো নিজেদের চরিত্র। আর ঝুম বৃষ্টি নেমেছিলো সেদিন। এই বর্ষানগরের রোদজ্বলা পথ গুলো নিমেষেই হয়ে উঠেছিলো থই থই নদী...

হাবিজাবি পংক্তি১

এপ্রিল ১৫, ২০১২ - ১:০৬ পূর্বাহ্ন 

নীলবর্ণ সুড়ঙ্গে হারায় সৌর লিরিক।
*
যেখানে লুকানো ছিলো তারাদের জমাট আলো,
সেখানে কৃষ্ণগহ্বরের হাতছানিতে জেগে ওঠা একাধিক বৃক্ষশাখা
কোলাহলে মেতেছে।
*
কালো পাখি আলো চোখে উড়ে গেছে সাগরের দিকে
ফেননিভ ঢেউয়ে চেপে বাতাসটা গেছে পিছে পিছে।

▀▄ দুঃখ বিলাস ▄▀

এপ্রিল ৮, ২০১২ - ১১:০২ অপরাহ্ন 

█▀▄█
গ্রীলের ফাঁক গলে হুড়মুড় করে
ঘরে ঢুকে গেলো একরাশ দস্যি হাওয়া
পিছুপিছু এলো কিছু
বৃষ্টিকণা।
█▀▄▀▄█
ক্ষুদে বারান্দায় পড়ে থাকা, জালিকাটা জোছনাও
পালিয়ে গেলো হুট করেই।
ফেলে রেখে গেলো শুধু
মেঘের কার্ণিশে, নীলাভ আঁচল।
█▀▄▀▄▀▄▀▄█
হাওয়ার দস্যিপনায় তাল দিয়ে
আড়মোড়া ভেঙ্গে
জেগে উঠলো দুঃখবিলাসী মন।
█▀▄▀▄▀▄▀▄▀▄█
ভুল করে,
টেবিলে একমুঠো আনন্দ ছড়িয়ে রেখেছিলাম।
মিনিটের কাঁটা একপাক ঘুরে আসার আগেই
আনন্দগুলোয় এক পরত মিহি বেদনার ধুলো,
আর ঘন্টার কাঁটা ন'টার ঘর না পেরোতেই
বিষণ্ণ শ্যাওলায় ঢাকা পড়লো আনন্দের চকমকে শরীর...
█▀▄▀▄▀▄▀▄▀▄▀▄▀▄█
আহা বিষণ্ণতা!
আমার স্নিগ্ধ সবুজ বিষণ্ণতা
আমার মখমল কোমল বিষণ্ণতা
আমার জোৎস্না ধোয়া নীলাভ বিষণ্ণতা
আমার বৃষ্টি মাখা উত্তাল বিষণ্ণতা...

আত্মমগ্ন কথামালা- ১০

এপ্রিল ৭, ২০১২ - ১১:০৭ পূর্বাহ্ন 

নিজেরে নিয়া বড়ই ত্যাক্ত আছি।
পরিবেশ পরিস্থিতি গ্রহনযোগ্যতা স্পেশালি গ্রহনযোগ্যতা না বুইঝাই কাজ ঘটায়া ফেলি। পরে সেইটার ফলাফল দেইখা মাথা যায় আউলায়া।
যাহ শালা, আইজকা থিকা কোনোখানে কুনু কিছু কইবার আগে নিজের গ্রহনযোগ্যতা লইয়া ভাবতে হইবো। এই ভাবনাটা সবার আগে মাস্ট। সবচাইতে ভালো হয় কুনু কথা ইত্যাদি না কইয়া চুপচাপ থাকা। সেইটাই কর্মু (আশারাখি কর্তে পার্মু) আগামী সময় গুলাতে।
এক্কেবারে চুপ, বোবার মত নিশ্চুপ, কব্বরের মতো নিশ্চুপ।

আত্মমগ্ন কথামালা ৯

এপ্রিল ৬, ২০১২ - ১:২৮ অপরাহ্ন 

মানুষ কি তার কামনা বাসনার উর্ধ্বে আদৌ যাইতে পারে?
আমার মনে হয় না। যতভাবেই চেষ্টা করা হউকনা কেন, মাইনষের ভিত্রে সুপ্তভাবে কামনা আর বাসনা নামের দুই ভাই কিংবা বইন (লিঙ্গভেদে!) বইসাই থাকে। সুযোগ পাইলেই চেহারা দেখায়া দেয়।
কাইল দুফুর বেলা সুন্দর একটা টাইম পাস করলাম অত্যন্ত পছন্দের কিছু মানুষগো লগে। শুধু দুঃখ থাইকা গেলো, পুরাটা টাইম পাস না করতে পারায়। ডিউটি কলড। কি আর করা।
সন্ধ্যার পর সেমি রাইতের দিকে আরো কিসু পছন্দের মাইনষের সাথে টাইম পাস করার সুযোগ হইলো। কিন্তু রাইত ঘনায়, টাইম দৌড়ায়। ভাল্লাগেনা।
রাস্তার সাইডে বইসা আড্ডাইতেছি আর হু হু কইরা বইয়া যাওয়া বাতাসের ছোঁয়া মাখতেছি এই টাইমে হঠাৎ কইরা মন খারাপ হইয়া গেলো। হুদাই। সেই জিনিস মাথার ভিত্রে এখনো বইসা বইসা টুংটাং কইরা একতারা বাজাইয়া যাইতেসে। এই মনখারাপের চাপেই কোনদিন জানি মইরা ফুটুস হইয়া থাকমু। বেল বেল বেল।
নিজের লগে কথা কইতেও আইজকাইল ভাল্লাগেনা, আবার অন্য কারো লগে ফোনে? ধুশ। তার উপর আবার কথা কইয়া সেই কথার উপর মন খারাপ হইলে কেরম লাগতে পারে? ধুশ
একলা অনেক দূর গানটা বহুত সুন্দর লাগতেছে ইদানীং, মনে হয় সোমলতা'র গাওয়া।
আর অনুপম রায়ের একবার বল, নেই তোর কেউ নেই গানটাও।

২- শিরোনামহীন

মার্চ ২৭, ২০১২ - ১২:৫১ অপরাহ্ন 

ভীতি
ডুবে যাবার ভয়ে মৃতপ্রায় বেড়ালের কথা কেউ ভাবেনি ঝড় ওঠার আগে।
যখন তীব্র টর্ণেডো তার সশব্দ আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলো নৌকার পাল, কাতর আর্তনাদে মাতোয়ারা হলো অসুর প্রকৃতি। তখনো কেউ শোনেনি বিষাদগান। নৃত্য সুধার উন্মত্ততা যখন তুঙ্গে, তখনই কেবল মানুষ আর বেড়ালের কান্নার সুর একই অনুরণন তুলেছিলো।
বিষাদ
সেই উচ্ছল দু'টি চোখে ভর করেছে রাজ্যের বিষাদ। সমাপ্তির শুরুতেই জীবনের গানে বিষণ্ণতার ছোঁয়া। নিতান্ত কৈশোর ধুয়ে গেছে লাল শাড়িতে ভর করা ঝড়ে।
দূরাগত যুবকের অচেনা স্পর্শ ধারাপাত হয়ে শরীরে শরীরে ছড়িয়ে যাবার অপেক্ষায়।
মৃত্যু
বাস্তবতার অপেক্ষামরণের পর, বেঁচে ফিরবার স্বপ্নেরাও মরে যায় কামজ পীড়ণে। দিনভর জেগে থাকার শুরু হয় মৃত্যুর ভেতর দিয়ে। সুখের কিংবা দুঃখের।

শিরোনামহীন

মার্চ ২৫, ২০১২ - ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

অন্য কোথাও
আলতো করে ছুঁয়ে দিতেই ফুটে উঠলো সহস্র অপরাজিতা
পৃথিবীর সবটুকু নীল বুকে নিয়ে।
এই নগরে
এখনো বিকেলের মৃত আলো বিশ্রাম নেয় হাতেগোনা জানালার কপাটে।
আর, কিছু অবিন্যস্ত চোখের কার্ণিশে জমা হয় জলফড়িঙের বৃষ্টিগান
রাত জাগা তারার ছায়া পড়ে অন্য তারার বুকে...

আত্মমগ্ন কথামালা- ৮

মার্চ ২৩, ২০১২ - ১১:২০ অপরাহ্ন

কোনো কিছু ভুইলা থাকার সবচাইতে ভালো উপায় হইলো নিজেরে ব্যস্ত কইরা ফেলা। মাথার ভিতর গাদা খানিক উলটা পালটা চিন্তা ভাবনা দৌড়াইতেছে বেশ কিছুদিন ধইরা। তার উপর কালকে বাংলাদেশের হাইরা যাওন। যতই ভাব ধইরা এই সেই ইত্যাদি বলতেছি, হাল্কা হাল্কা মন খারাপের ভাবটা যাইতেছে না। সো, সারাদিন নিজের অগোছালো ঘরটারে (কি কায়দা! নেট জগত এইভাবে ঘিরা ধরছে বুঝি নাই। এইখানে ঘর লিখতে গিয়া পয়লা লিখে ফেলছি ব্লগ Laughing out loud) আরো অগোছালো কর্লাম Wink তারপর সেইটারে নাম দিলাম ঘর গুছানি। প্রত্যেকবার ঘর গুছাইলে প্রায় আট-দশ কেজি ধুলা বাইর হয়। আর হাজার খানেক পুরানা স্মৃতিমাখা জিনিস খুইজা পাই। তখন গুছানি থামাইয়া স্মৃতি রোমন্থনে নামি। ভালাই লাগে। ফাইনালি ঘর থাকে আধা-গুছানি আধা-লন্ডভন্ড Smile আম্মু দেয় ঝাড়ি Wink সেই ঝাড়ি খাইয়া দৌড়ের উপ্রে বাকি কাজ সারি। ফলাফল? দর্কারী জিনিস পাতি একবারে খুইজা পাওনের বারোটা। তয়, যেই হেল্পটা হয় সেইটা আনবিলিভেবল। সাম্প্রতিক মন খারাপের মেঘটা পাতলা হইয়া ওঠে। সেইখানে পুরানা দিনের আনন্দ, দুঃখ গুলা জায়গা লয়।
তো একখানা সিরিজ শুরু করবো বইলা যেই ভাবটা মাথার ভিতরে আছিলো, সেইটায় কোনো উৎসাহ পাইতেছি না।
কালকে একজনেরে কইতেছিলাম জীবন মানেই হইলো কম্প্রোমাইজ। সেই কম্প্রোমাইজের বিষণ্ণতা কাটাইতে নিজের সাথে অভিনয় করা জরুরী। যাতে অন্য কেউ বুঝতে না পারে তুমি বিষণ্ণ Smile যদিও অভিনয় জীবন উপভোগ করি না, তবুও কি আর করা? শুরু হউক অভিনয়। কাইটা যাউক দিন গুলা Smile

ভুলে থাকা কালো বেড়ালের লোম কিংবা না পেয়েই হারাবার গল্প

 মার্চ ১৯, ২০১২ - ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন 

"তার" একটা ভুলে থাকা কালো বেড়াল আছে। যার বসবাস তার মনের অনেক ভেতরের একটা রোদক্লান্ত ব্যালকনিতে। বেড়ালটা বারবার ভুলে যায়, "সে" যে তাকে ভুলে থাকতে চায়। তাই আড়মোড়া ভেঙে সে উঠে আসতে চায় রোদক্লান্ত ব্যালকনি থেকে। তার অস্থির ছটফটানিতে রোদের দেয়ালে কোনো ছায়া পড়ে না। শুধু বাঁকা হয়ে পড়ে থাকা দৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে কিছু বেড়ালের লোম ভেসে যায় এদিক সেদিক।
আলফেসানীর হাত ফস্কে পড়ে গিয়েছে অনেকখানি রঙ মাখা সময়। এই হারিয়ে ফেলা সময় গুলোকে সে রাখতে চেয়েছিলো নিজস্ব বাগানের ঘাসপাখিলতাপশুফুলে। বোঝেনি, নিজস্ব যে বাগানের ছবি সে এঁকেছিল, সেই ছবিটাতে বাস্তবতার তুলির আঁচড় দেবার কথা যে শিল্পীর সে আর তুলি হাতে নিতে অনিচ্ছুক। অনেক আগে শিল্পীর তুলির রঙ কেড়ে নিয়েছিলো যে তরুণ, তার কাছেই বাঁধা আছে শিল্পীর রঙীন রেখা গুলোও।
"তার" ভুলে যাওয়া কালো বেড়ালটা কিভাবে জানি আলফেসানীর রঙমাখা সময়ের দেখা পেয়েছিলো। উটকো দুধের পাত্র থেকে পড়ে যাওয়া দুধ ভেবে চেটেপুটে খেয়েও নিয়েছিলো সবগুলো সময়, রঙীন সময়। এরপরেই বেড়ালটা স্বভাবসুলভ ভাবে চলে গেলো "তার" কাছে। "তার" পায়ে গা ঘষটাতে ঘষটাতে আদুরে মিয়াও ডাক ছাড়তেই বদলে গেলো তার গলার সুর। "তার" চোখের তারাতেও পড়লো সেই রঙের ছায়া। আর রঙীন রেখার বিচ্ছেদের ফসল হিসাবে কালো বেড়ালটার স্থান হ'লো রোদক্লান্ত ব্যালকনিতে।
আলফেসানীও চাচ্ছে ভুলে থাকতে ফস্কে যাওয়া রঙ, সেই উটকো দুধ খাওয়া কালো বেড়াল আর সেই রঙীন রেখার বিচ্ছেদাক্রান্ত শিল্পীকে। ভুলে থাকার পথ ভেবে অস্থিরতা চাপা দিতে সে মিশে গেলো জনস্রোতে। উড়িয়ে দিলো হাজার হাজার ধোঁয়ার কবুতর। ছেঁটে ফেলে দিলো এলোমেলো বেড়ে ওঠা স্বপ্নের ডালপালাগুলোকে। জনস্রোতে তার চোখ ঝলসে যেতে থাকলো বহুবর্ণীল জামার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা বিবিধ রঙের ঝলকানিতে। কবুতরের পালকে পালকে খুজে পেতে থাকলো "তার" ভুলে থাকা কালো বেড়ালের লোম। স্বপ্নের ডালপালাগুলো বাড়তেই থাকলো অবিরাম।
"তার" ভুলে থাকা কালো বেড়ালটা অনভ্যাসে ভুলে গেছে আদুরে মিয়াও ডাকটা। শুধু রোদের দেয়ালে গা ঘষে, সে শুন্যে ছুড়ে দেয় তার গায়ের লোম। যেই লোম গুলো বাতাসে ভেসে "তার" রোদেলা মনের গহন থেকে উঠে আসতে আসতে বারবার রঙ বদলিয়ে চলে। একসময় হারিয়ে যায় নাগরিক জঞ্জালের সাথে। "তার" চোখে সেই রঙীন লোমের ছায়া পড়লেও ভুলে থাকার সর্বময় প্রচেষ্টা নামের ভুতটাই জিতে যায়।
আলফেসানী জানেনা তার সাথে রঙীন রেখার বিচ্ছেদাক্রান্ত শিল্পীর সাথে আবার কখনো হবে কি না হাঁটা, আবার কখনো দেখা হবে কি সেই উটকো দুধ খেয়ে নেয়া কালো বেড়ালের। তাই সে মনোযোগী হয়ে ওঠে একটা আয়নাঘর বানাবার প্রক্রিয়ায়। যে ঘরের নয়টি দিকেই থাকবে আয়নার কুহেলিকা। যাতে চোখ রেখে একা একাই সে ভেসে যাবে জনস্রোতে। যাতে দেখা যাবেনা কোনো রঙ, আর তাই মুহুর্তের অসাবধানতায়ও হাত ফস্কে রঙ পড়বেনা ছলকে। সেই ঘরে কোনো বেড়াল বা বিচ্ছেদাক্রান্ত শিল্পীর থাকবেনা প্রবেশাধিকার। আলফেসানীই কেবল কথা বলবে নিজের সাথে নাহয় অগুনতি আলফেসানীর সাথে।

ভাবনার ডানায় ভেসে

মার্চ ১৪, ২০১২ - ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

 নীলচে ভাবনা গুলো ভাসে এলোমেলো বাতাসে
ধোঁয়াশা সীমানায়।
জানবেনা কেউ কোনোদিন, ধুসর মেঘের উড়ুক্কপনার কারণ
হলদে ঘাসের বিরহ সংবাদে গড়িয়ে যাওয়া অশ্রু উপহার।
উড়তে থাকা পুরোনো খবরের কাগজে
সংবাদের দায় একান্ত নিজস্ব সুখানুভুতির বিশ্লেষ।
ছিন্ন করতে করতেও, আবার গড়বার প্রচেষ্টায় সম্মোহনী ভাবনার অনুবাদে
তোমার অতৃপ্তি থাকতেই পারে;
তবুও, চিলতে বারান্দায়
ঘর বোনা চড়ুইয়ের গানে যেটুকু মাধুর্য্য থাকে,
তাতে ভর করেই ছুড়ে দেই তীব্র মন্ত্রপুত তীর।
লক্ষ্যভেদের আশঙ্কা কিংবা ইচ্ছা ছাড়াই...

আত্মমগ্ন কথামালা- ৭

 মার্চ ১৩, ২০১২ - ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

সবকিছুতেই কেমন জানি অস্থিরতার ছাপ পইড়া গেছে। কিছুই ঠিকঠাক মতো হইতেছে না।

কাঁচের দেয়ালে সাজানো দৃশ্যাবলী

মার্চ ৭, ২০১২ - ২:০৭ অপরাহ্ন 

নয়টা নিতান্ত অবহেলা মিলেমিশে ঝগড়া করছিলো দরজার ওপাশে।

লক্ষী বেড়ালছানার মতো পায়েপায়ে হেঁটে এলো একরাশ ধ্বনি ও শব্দ
ধানমন্ডির লেকে ভেসে বেড়ানো টুকরো চাঁদের আলোরাও
ভীড় জমালো জানালার গ্রীলঘেঁষে।

স্তুপমেঘে রঙতুলির আঁচড় শেষে চোখ ফেরালেন উদাস শিল্পী,
জন্ম নিয়েছে ছবি, একই সাথে মৃত্যু নীল শিল্পীসত্ত্বা।

।।চুপ।।

বলতেই ভেঙে পড়লো আয়নায় সাজানো প্রতিফলন
একঝাঁক রোদের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে গেলো বৃষ্টির হাত ধরে
ছায়ামাখা বিষাদ গানে মুখরিত হ'লো বনজ কিশোরের চোখ...

চিন্তার মৃত্যুচিন্তা

মার্চ ৫, ২০১২ - ১২:০৯ অপরাহ্ন 

ভাবনারা নেমে এলে, কংক্রীটের পথটা নদী হয়ে যায়
উথাল পাথাল ঢেউ।

ছলোছলো জল
চোখে নিয়ে জেগে ওঠে সূর্যমুখী সাগর
সুদূরের অপেক্ষায় থাকা সাম্পান ছুঁয়ে বেড়ানো সুনির্দিষ্ট কুকুর
খুঁজে পায় কাঁকড়ার খোলস আর মরে যাওয়া স্টারফিশ।

গ্রাফিটি জুড়ে আনন্দ আঁকা হয় মানুষগুলোর
রাংতায় গড়িয়ে আসা ধোঁয়াময়তা, ছড়িয়ে পড়ে ওদিকে।

টুপটাপ শব্দে চেতনা, চিন্তা ও ভাবনা এলোমেলো ছড়িয়ে পড়ে মাটি লেপা মেঝেতে।

মাঝরাতে মৃত্যুর শব্দ, শাঁ শাঁ দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়
ধরা হয়ে ওঠেনা, ছোঁয়া হয়ে ওঠেনা,
মৃত্যু নিজেই মরে যায় মৃতদের রাজ্যে...

একাকীত্ব এবং মুখোশ পড়া দুঃখ বিষয়ক

ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১২ - ১১:২৬ অপরাহ্ন 

ধুয়ে ফেলি রক্তাভ পাপ, সবুজাভ পূণ্য।
এলোমেলো পদচিহ্ন পড়েছিলো যেই কার্ণিশে, একাকী;
সেখানে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে শৈবাল কোরাস,
অশান্ত চড়ুইয়ের দল প্রতিদিন মেতেছে ঐকিক নিয়মের পাটিগণিতে।
সামাজিক বোধের জল থৈথৈ পুকুর
উপচে গেছে অসামাজিক সান্ধ্য আইনের পেয়ালাতে।
ঘুমন্ত নারীর স্বপ্ন
ছড়িয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন পংক্তিমালায়
বইমেলার ধুলার আভরণ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
জড়িয়ে নিয়েছে নির্ভরতার সীসার দেয়াল, বিভ্রান্ত আচরণ।
রঞ্জন রশ্মি ভেদ করে গেলো
প্রথমতঃ কাপড়
তারপরে একে একে
ত্বক
পেশী
অস্থি
মজ্জা।
নিখুঁত ছবি ভেসে উঠলো সীসার দেয়াল ভেদ করে
অদৃশ্য অক্ষিগোলকের স্নায়ু তন্ত্রী জুড়ে।
বসন্তের উদাস হাওয়াসুলভ চপলতায় মসৃণ, ভেসে এলো কাগজের প্লেন
সুখে ও যাপিত জীবনের অন্দর মহল পেরিয়ে।
দুঃখেরা অস্থির, ছটফটিয়ে উঠলো ছদ্ম সিন্দুকের আলিঙ্গনে, হাসির মুখোশ পরে।

শিরোনামহীন এলোমেলো

ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০১২ - ১২:১৫ পূর্বাহ্ন 


ঘুড়িটা হঠাৎ কাগজের প্লেন হয়ে গেলো
সুতো কেটে। উড়ে যেতে যেতে
চকিত স্বপ্ন দেখে নিলো পর্বত ও বনভুমি পেরুবার।

দেখতে দেখতে কাগজ বদল হলো ইস্পাতে
ঝুপ করে বেড়ে যাওয়া ভর নিয়ে নেমে এলো নদীর বুকে।
একা প্লেনটা।
নৌকা হয়ে তরতর
কেটে গেলো কালো,লাল ও নীল পানি।

মেঘের ছায়া পড়া চোখে হয়ে গেলো অশ্রুকণা।
গাঢ় হলুদ অশ্রু, নেমে এলো মেটে শরীর বেয়ে।
ছড়ানো বীজেরা, নতুন পাতার জীবন নিয়ে
এলোমেলো উড়িয়ে দিলো পতঙ্গের সুখ।

আত্মমগ্ন কথামালা- ৬

ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১২ - ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

নিজেরে কোনোদিনই এক্সপ্রেসিভ রোমান্টিক হিসাবে ভাবি নাই। রোমান্টিকতা কেমনে দেখাইতে হয় সেইটাও জানি না। তয় মাঝে মাঝে নিজের একটা আচরণের পর যখন আরেকজনের আচরণ ব্যাকফায়ার করে তখন বুঝি আসলে কি করা উচিত আছিলো। কিন্তু তখন আর সেইটা শুধরানির কোনো উপায় নাই। মইধ্যে দিয়া চেহারা, মন ইত্যাদি ভেচকাইয়া যায়। এই টাইপের রোমান্টিকতার অসুখ ছুইড়া ফালায়া রাখছিলাম বহুতদিন ধইরাই। কিন্তু, কিছুদিন হইলো সেই রোগ আবার ফেরত আসছে। নিজেরে নিয়া কিছু উচ্চাশা তৈরী হইছিলো, সেইটা পুরাই ধুলিস্মাৎ হইয়া গেছে। একসপ্তা হইয়া যাইতেছে এই গ্লুমি ভাবটা কাটতেছে না। যারে লইয়া এই ভাব চক্কর, সেও ভীষণ ভাবে চুপচাপ হইয়া আছে। এইটা আরো বেশী প্রদাহ দিতেছে...
সেদিন ভাস্করদার লিংক থিকা পটা'র গাওয়া কলঙ্কিনী রাধা গানটা নামাইছি। এত সুন্দর ভাবে কেমনে মানুষ গান গায়, খালি শুনতেই ইচ্ছা হইতেছে। লগে জাগরনে যায় বিভাবরী...
একজন একটা লেখা লিখতে কইছিলো। সেইটাও প্রেস রিলিজ টাইপের লেখায় পর্যবসিত হইয়া গেছে। সেই ভাইজানের কাছে সরি আছি। এত্ত বেশী পেইন নিয়া প্রেস রিলিজের বাইরে কিছু লিখতে পারতেসিনা বইলা।
আইজকা রাইতে ভাবছিলাম টিএসসি এলাকায় ছবি টবি তুলমু, কিন্তু কোনো টান পাইতেছিনা ভেতর থিকা। মনেহয় হইবো না। মনেহয় কী, আসলেই হইবো না। যাউজ্ঞা। অনেক বেশী হাবিজাবি হাবিজাবি লিখা ফেললাম...

বিষণ্ণতায় ঘেরা কতিপয়...

ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০১২ - ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন 

১.
কুয়োর গভীর থেকে উঠে আসা প্রতিধ্বনি;
টেনে আনে কুয়াশা জমা মেঘলা দুপুর,
জোনাকীর বিচলিত ওড়াওড়ি...
২.
ভোকাট্টা ঘুড়ির ভালোবাসা ছড়িয়ে থাকে
নাটাই জড়ানো হলদে সুতোর দঙ্গলে...
৩.
বর্ণহীন।
তবুও অশ্রুজল খেলা করে,
রঙধনু নিয়ে
রক্তের স্তিমিত চলন শিরা ও ধমনী জুড়ে...
৪.
দারুচিনিগন্ধী বাতাস ছুঁয়েছে আমের মুকুল।
বসন্ত, অস্থির বসন্ত...
টগবগিয়ে ছুটে গেছে সময়ের ঘোড়াতে,
আষাঢ়ের রাজপ্রাসাদে।
৫.
ছায়া ফেলছে ছায়াশরীর ছায়াময় ছায়াপথে
অপসৃয়মাণ অবয়বে রুপালি ঝিলিক
মুছে ফেলার প্রচেষ্টা সর্বান্তকরণ...
৬.
আগুনের ফুলকিরা ছড়িয়ে যায় নয়দিকেই
ছাই আর কয়লা রয়ে যায় বর্তমানের আনাচে কানাচে।
৭.
স্বপ্নেরা সব স্বপ্ন জমায়
স্বপ্ন খাওয়া স্বপ্নজুড়ে
শুকনো পাতা মেলছে ডানা
শেষ বিকেলের আঁধার ঘিরে।
৮.
বিবিধ অনুভূতির ধারাপাতে ভরা মনের শ্লেট,
মুছে ফেলার চেষ্টায় এক জীবন পার হয়ে যায় অকারণেই...
৯.
ছোট্ট অবহেলার ফলাফল যে শৈলপ্রপাত,
তার
হিসাবে গরমিল
সময়ে গরমিল
আর গরমিল
দুরত্বের ভবিষ্যদ্বাণীতে...

শিরোনামহীন (এক্সপেরিমেন্টাল)

ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১২ - ১২:৫৪ অপরাহ্ন

আমি কখনও বোগেনভিলিয়ার ছবি তুলি নাই। কেউ কেউ ভালোবেসে তুলতে পারে বোগেনভিলিয়ার ছবি। না, কোনো ঘৃণা নেই ফুলটার প্রতি। কেমন গালভরা নাম। বাগানবিলাস। খুব কাছে থেকে দেখতেও ভালো লাগে, ঐ পর্যন্তই। গাছটাতে আবার কাঁটাও আছে। দুর থেকে তাকিয়ে ঝোপাঝোপা ফুলের রঙগুলোও খারাপ লাগে না দেখতে। গাঢ় বেগুনী-লালচে বেগুনী- মৃদু বেগুনী- সাদা।
________________________________________________________
________________________________________________________
একটা এক্সপেরিমেন্ট করবার চেষ্টা করলাম।
প্রতিটা বাক্য ধরে লেখাটা শুরু থেকে শুরু করা বা শেষ থেকে শুরু করা, একান্তই পাঠকের ইচ্ছা।



পুরোনো এক্সপেরিমেন্টটা এইখানে
http://www.somewhereinblog.net/blog/0shuvoblog/29024363

জলপাই বনের আখ্যান

ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১২ - ১১:৪১ পূর্বাহ্ন 

*
ধুসর গুবরেপোকাটা সেজেছিলো ফিরোজা সোনালী ডোরাকাটা রঙের সাজে।
**
জলপাই বনের স্নিগ্ধ সবুজে ঘুরতে এসেছিলো একটা নীল প্রজাপতি। সবুজগুলো আরো বেশী সবুজ হয়ছিলো সেই নীল প্রজাপতির আগমনী গানে। জলপাই বনের পাখিরা, কেউই দেখেনি গুবরেপোকার আনন্দ। শুধু রঙ মাতাল বসন্ত তার দারুচিনিগন্ধী হাওয়া ছড়িয়ে দিয়েছিলো এদিক ওদিক।
***
কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়াটে চাঁদের আলো ঈর্ষায় খয়েরী হয়ে যায়। জলপাই পাতাগুলি জড়োসড়ো হয়ে ওঠে সেই খয়েরী চাঁদের ঈর্ষায়। মৃদু আলোমাখা পথ ধরে ফিরে যেতে থাকে আনন্দের দল, আর অস্ত্র সজ্জিত বিষাদেরা এক এক করে দখল নিতে থাকে দারুচিনীগন্ধী হাওয়ার।
****
কাঠবাদামের হাল্কা সবুজ পাতাগুলোয় জমা হওয়া শিশিরবিন্দুরা একটা দু'টো করে ঝরে পড়তে থাকে লালচে ধুসর মেঠোপথে। বিষাদের দল শিশিরবিন্দুর ছোঁয়ায় বদলে যায় বিষণ্ণতায়। চাঁদের খয়েরী আলো ধীরে ধীরে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়। গাঢ়তর থেকে গাঢ়তম হয়। একসময় বুকভরা ঘনঘোর খয়েরী ঈর্ষা নিয়ে ডুবে যায় চাঁদ। রাত ঢেকে যায় অন্ধকারে।
*****
ঠিক, রাত তিনটা বেজে চব্বিশ মিনিটে খয়েরী ঈর্ষান্বিত চাঁদ চেপে ধরে গুবরেপোকার নাকমুখ।
******
জলপাই বনের আখ্যান, সমাপ্ত হবার একটা অনিবার্য কারণ আঁকা হয়ে গিয়েছিলো সেই সময়ের অনেক আগে থেকেই...

ভুলে যাওয়া রুম নম্বর

ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১২ - ১১:৪৭ অপরাহ্ন 


***
ঘাসফড়িঙের দল পাখায় বয়ে নিয়ে আসে ভেজা মাটির দুঃখবোধ, ধুলো ওড়া দুপুর
অপেক্ষারা ফিরে ফিরে আসে সিগারেটের ধোঁয়া, এসফল্ট পথ আর ধুলিময় জুতোজুড়ে
সন্ধ্যা নামে। শালিকের হলুদ কাজল আঁকা চোখে আঁধারের সরোদ
হাসি আর কথাগুলো ছড়িয়ে যায় সাতমসজিদ রোডে, আলো ও আঁধারে
ভুলে যাওয়া মুঠোফোন সংকেত ও সংবাদ
নিরব পথের খুনসুটি টেনে নিয়ে যায় সিঁড়িঘরে, বিদায়ের ক্ষণ।

...ইতি, আব্বু। [১]

ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১২ - ১:১৮ অপরাহ্ন 

শুদ্ধ,
মা আমার, তুই ভালো আছিস তো?
তোর বোকাতম আব্বুর এই লেখাটা কি আগ্রহ নিয়ে পড়ছিস, নাকি অনিচ্ছায় পড়ছিস সেটা একমাত্র তুই ই জানিস। একটা জিনিস সবার আগে জানিয়ে রাখি; তোকে লেখা চিঠিগুলোতে আমি যে কথগুলো বলবো সেগুলো কোনো আদেশ না। বরং এগুলো তোর বোকা আব্বুর উপলব্ধি। যেগুলোকে তুই অনায়াসে ইগ্নোর করতে পারিস, আবার ভালোবেসে আপন করে নিতে পারিস। একেবারেই তোর ইচ্ছা। এখান থেকে তুই যদি জীবন পথের কিছু পাথেয় পেয়ে যাস, সেইটাই আমার সবচে বড় প্রাপ্তি হবে।

প্রথম চিঠি বলে,সততা নিয়ে আমার ভাবনাটা তোর সাথে শেয়ার করা উচিত বলে মনে করছি। আমার কাছে সততার সংজ্ঞা যেমন, সেটা অন্য অনেকের সাথেই হয়তো মিলবে না।
আমার কাছে সততা হলো এক্কেবারে পার্সোনাল একটা ব্যাপার। অন্য কে কী ভাবলো সেটা নিয়ে আমার চিন্তা নেই। প্রতিদিনের শেষে বিছানায় ঘুমুতে যাবার সময় সারাদিনের করা সবকিছু যদি নিজের কাছে বলার মতো সৎসাহস কারো থাকে, সেটাকেই আমি সততা হিসেবে দেখি। নিজের কাছে কনফেস করার সময় একবিন্দু মিথ্যা না মিশিয়ে বলার মতো অভ্যাস গড়ে উঠাই একজন আল্টিমেটলি সৎ মানুষ তৈরী করে।

এখন আমি আমার কথা বললাম, তোরা আমাদের নেক্সট যুগের মানুষ, পরিপ্রেক্ষিত বা পয়েন্ট অফ ভিউ আলাদা হতেই পারে। তুই নিজেকে কেন সৎ বলবি সেইটার ব্যখ্যাও অন্যরকম হতে পারে। আমাকে যদি লজিকালি বুঝাতে পারিস আমিও মেনে নেবো।

প্রথম চিঠিতেই অনেক বেশী ভারি কথা বলে ফেললাম। রাগ করিস না বা বিরক্ত হোস না। বোকা আব্বুর এই বোকামী সহ্য করে নিবি বলেই আমার আশা।

ভালো থাকিস মা। অনেক অনেক আদর তোর জন্য।
...ইতি, আব্বু।
[০৪।০২।২০১২]

আত্মমগ্ন কথামালা-৫

জানুয়ারী ২৯, ২০১২ - ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন 

সারাদিন খুব ভালো কেটেছে। আজকেই প্রথম আমার নয়া সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামেরা নিয়ে হাটাহাটি করছি। মন মেজাজ ভালই ছিলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ, ধরা যাক ৪৫ মিনিট, আগে পর্যন্তও মন খুবই ভালো ছিলো। হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো। কিছু ছোটখাট ব্যাপারে মাঝে মাঝে আমার মন খুব বেশী খারাপ হয়ে যায়। যেমন হয়তো লাইটের কাছে একটা পোকা বসে আছে তার বসে থাকার ভঙ্গীটা বিষণ্ণ মনে হয় বা কোন কবিতার একটা শব্দ পড়ে সেই শব্দটাকে দুঃখী দুঃখী লাগে কিংবা কোনো গল্প পড়ে বুকের ভেতর থেকে কান্নার মতো কিছু একটা উঠে আসতে চায়। হঠাৎ করেই ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করার সময় একটা লিংক শেয়ার পেলাম, সেখানে একটা গল্প অপেক্ষা করছিলো। সেই গল্পটা পড়লাম আর মনের ভেতর কিছু একটা হয়ে গেলো...
কয়দিন এরকম থাকে কে জানে?

...ইতি, আব্বু। [শুরুরও অনেক আগে]

জানুয়ারী ২৪, ২০১২ - ৯:৩৯ অপরাহ্ন 

অনেকদিন ধরেই ভাবছি। আমার মনের ভেতরে চুপটি করে বসে থাকা আমার শিশুকন্যাটা, যার নাম আরো দু'বছর আগেই রেখেছি শুদ্ধ শুচিস্মিতা, তাকে উদ্দেশ্যে অনেকগুলো চিঠি লিখে রাখবো ব্লগে। যার ভিতর দিয়ে সে তার বাবাকে জানতে পারবে। তার মা কে চিনতে পারবে। তার জন্য বাবার আবেগ কেমন ছিলো, তাকে ঘিরে তার বাবার স্বপ্নগুলো কেমন ছিলো, কিভাবে সেই স্বপ্নগুলোর বিবর্তন হ'লো। সব... সব... কিছু জানিয়ে রাখবো ওকে অকপটে। ও যেদিন বারো'তে পা দেবে, সেদিন ওকে ব্লগে বসতে বলবো। পড়তে বলবো ওকে লেখা বাবার লেখা চিঠিগুলো।
ভাবছি, ওর মা'এর সাথে পরিচয়ের আগে থেকেই ওকে ঘিরে যেই আবেগ গুলি তৈরী হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলো জানবার অধিকারও আমার শুদ্ধ'র আছে। ও যে শুদ্ধ হবে। সব দিক থেকেই শুদ্ধ, ওর হাসি হবে পবিত্র। ও যেনো বাবার সবকিছু জেনেই বেড়ে ওঠে, বাবাকে ভালো-খারাপ সব ভাবেই দেখতে শেখে। তাহলেই আমার শুচিস্মিতার মুখে পবিত্র হাসি ফুটে উঠবে, আমার শুদ্ধ'র মন হবে পরিশুদ্ধ। আমার শুদ্ধ শুচিস্মিতা'র উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা শুরু করবার আগে এই ভুমিকা লিখে রাখলাম। যাতে চিঠি গুলো বুঝতে মেয়েটা কোনোরকম বাধার মুখেই না পড়ে। সাথে ব্লগে যারা টাইম টু টাইম এই সিরিজের লেখাগুলো পড়বেন তারাও যেনো বিভ্রান্ত না হন সেটাও একটা মেজর কনসার্ন...

আত্মমগ্ন কথামালা-৪

জানুয়ারী ২২, ২০১২ - ৭:৪৩ অপরাহ্ন 


স্বর্গফর্গ ইত্যাদি লইয়া চিন্তা ভাবনা বাদ্দিছি বহুদ্দিন হইলো। অনেক দিন আগের চিন্তায় স্বর্গটা বেশ রইদ ঝলমলা আছিলো।
আইজ সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে অফিস থেকে ফিরার পথে সংসদের পিছনে গ্লাডিওলা ফুলবাগান দেইখা সবার আগে মাথায় যেই শব্দটা আসলো, সেইটা হইতেছে স্বর্গীয়। প্রায় সবগুলা গ্লাডিওলা গাছে ফুল ধইরা আছে বিভিন্ন রঙ এর (মেজরিটি পার্পল রঙ)। সেই ফুলের বেডের উপরে পাশের ল্যাম্পপোস্ট থিকা হ্যালোজেন লাইটের ঝকঝকা নীলচে আলো ছড়াইয়া আছে। পাশের ডেকোরেশন গাছ টাইপের উপর হাল্কা হাল্কা আলোর ছোঁয়া পড়ছে, কেমন নীলচে-কালচে-সবুজ একটা রঙ দেখা যাইতেছে। চোখ পড়লো, আর মাথায় স্বর্গীয় শব্দটা লাফ দিয়া চইলা আসলো। মনে হইতে থাকলো, যদি আসলে স্বর্গ নামের কোনো স্থান থাইকাই থাকে তাইলে সেইটা বেশ চন্দ্রালোকিত গ্লাডিওলার বাগান টাইপের হইলে মন্দ হইতো না। একটু দূরে গাছের আড়ালে একটা বাংলো টাইপের বাড়ি থাকবো। সেইটা হইবো ঘুমানির যায়গা। যখনই ঘুম আসবো শুইয়া ঘুমায়া যামু।
বিষণ্ণ থাকলে আমার বেশি সিগারেট টানতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু অন্যান্য রিস্কি কাজ করতে খুব বেশী ভালো লাগে।
আজকে পলাশীর দিকে গিয়া আড্ডা দিতে ইচ্ছা হইতেছিলো। কিন্তু যার লগে আড্ডামু, সে পাগলের মতো বিজি। বিরক্ত করতে ইচ্ছা হইলো না। তাই সময় কাটানির লাইগা হাইটা বাসায় ফিরলাম।
ফেসবুক নামের জিনিসটা আইজকা বেশ পেইনের মতো লাগতেছে। কিন্তু কষ্ট কইরা ডিএক্টিভও করতে ইচ্ছা হইতেছে না। থাকুক বেটা নিজের মতো, আমি না ঢুকলেই হইলো। দেখি নিজের ইচ্ছায় কতটুকু জোর।
বাচ্চাকাচ্চাদের দেখলেই মনটাতে কেমন প্রশান্তি আসে। একঝাঁক বাচ্চাদের সাথে গল্প-খেলাধুলা করতে ইচ্ছা করতেছে এখন।

শুকনায় লেখা

জানুয়ারী ২১, ২০১২ - ৩:১১ অপরাহ্ন 

প্রথমে শুরু হ'লো নাম পড়া দিয়ে।
তারপর নামের উপর মাউসপয়েন্টার ধরে ইউয়ারএল দেখা।
তারপর ইউয়ারেলের নাম দেখে, সেই নাম নেবার সময় ইউজারের মানসিক অবস্থা কেমন চিন্তা করা। তারপর ইউজারের চেহারা কেমন তা নিয়ে চিন্তা করা।
তারপর নাম নেবার মুহুর্তে এরকম মানসিক অবস্থা কেন ছিলো তার কারণ অনুসন্ধান।
তারপর বাসা-বাড়ি ছোটবেলা-বড়বেলা, প্রেমিক-প্রেমিকা......... এভাবেই শুরু আগামী গল্পের।


কনফেশন- শুকনা খায়া, সামুতে ঢুইকা অনলাইনে লিস্টি দেখতে দেখতে মাথায় কথা গুলা আইলো। আর চরাচর যেহেতু স্লো হইয়া গেছে। চিন্তার দৌড়ঝাঁপও সেরকমই স-ল-ল-ল-ল--ল--ল---ল---ল-ও----ও---------ও হইয়া গেছে। এইরকম অনুভুতির উপর এক্সপেরিমেন্টের জন্য এই লেখার ড্রাফট.................................

আত্মমগ্ন কথামালা-৩

জানুয়ারী ২১, ২০১২ - ১০:০৬ পূর্বাহ্ন 

অস্থিরতাটাকে কেমন জানি উপভোগের পর্যায়ে নিয়া চইলা গেছি। অস্থির না থাকলেই শালার কেমন কেমন লাগে। কে জানে? হয়তো সাইকোলজিতে এইটারও কোনো গালভরা নাম আছে। যখন অস্থির থাকি ভিতরে, তখন বাইরে বাইরে খুব স্থির কুউউল একটা ভাব ধইরা থাকার চেষ্টা করি। মজাই লাগে। বেশ মজা।
বহুতদিন ভিক্ষুকদের গ্রুপ ধইরা ভিক্ষা করতে দেখিনা। সবার মধ্যেই এখন ইন্ডিভিজ্যুয়ালিজম চইলা আসছে। দুইদিন আগে, হঠাৎ এক রাস্তায় দেখলাম তিনচার জন ভিক্ষুক সেই পুরানো স্টাইলে ভিক্ষা করতেছে। তবে আগের ভিক্ষুক গ্রুপের ভিতর যেই বৈচিত্র থাকতো, সেইটা এদের ভিতর নাই। সবাই একই রকমের। ভালোলাগলেও আসলে সেরম ভালোলাগেনাই।
মাথার ভিতর ঘুরঘুর করতেছে। ভাল্লাগতেছে না। এই কথাগুলা এখন পুরানা হইয়া গেছে। নতুন কিছু ভাইবা নেওয়া দরকার। আলসিতে সেইটাও হইতেছে না।
কয়দিন পর মন আবার ১৮০ ডিগ্রী ঘুরান দিবো কে জানে।
ঐ মানুষটা আসলে একজন পুরুষই। আগেও বুঝছি, আজকে লিখাই রাখলাম। যতই মুক্তমনের দাবী করুক, ভিত্রে ভিত্রে টিপিক্যাল মানসিকতাই ধারণ করে। হাসি আসে, মুখের উপ্রে হাসলে কস্ট পাইবো ভাইবা আর হাসি না। হয়তো একটা ইনসিকিওরিটি কমপ্লেক্সও কাজ করে। যদি ফ্রেন্ডশীপ নস্ট হইয়া যায়???

রাতের রেশম অন্ধকার

জানুয়ারী ১৮, ২০১২ - ৯:৪১ অপরাহ্ন 

আজ সন্ধ্যায়, চায়ের কাপেরা অনেক বেশিই ব্যাস্ত ছিলো
হাতে-হাতে
ঠোঁটে-ঠোঁটে
স্পর্শে এবং অবহেলায়।
বহমান নদী, পথভুলে, নাগরিক যানজটে হারিয়েছিলো
জীবনের অনেকটা গান।
টেলিভিশনের রঙচঙে পর্দায়,
মুখোশের আড়ালে, শত শত চোখ, লোলুপ তাকিয়েছিলো
রেশমী কিংখাবে ছড়ানো ছিটানো তারাদের দিকে।
রাত নেমে আসে শহরের শরীরে
নদীর ভেজা বাতাসে
কুয়াশা ছোঁয়া নিঃশ্বাসে এবং প্রশ্বাসেও।
ক্লান্ত আমি,
অন্ধকারের রেশম রেশম আবেশে ভিজিয়ে নেই দু'টি পা।

আত্মমগ্ন কথামালা-২

জানুয়ারী ১৮, ২০১২ - ১২:৪০ পূর্বাহ্ন 

কোনো ভন্ড মানুষরে কেন যে ভন্ড বলতে পারি না, সেইটা একটা প্রবলেম। একান্ত নিজস্ব প্রবলেম। একবার বলে এইটা আমার পছন্দ না, আবার ঠিক তার পরের মিনিটেই সেই অপছন্দের জিনিস করবার স্বপক্ষে যুক্তিও মারায়। তার চোখে এইটাই জগতের সেরা যুক্তি। উদাস দৃষ্টিতে তাকাইয়া তার ভন্ডামী দেখি। আসলে উদাসী হইয়া যাওনের ভিতর মনেহয় মহান টাইপের ঝিলমিলি আছে। একেবারে রাইতের বেলা দূর থিকা বিয়াবাড়ির মরিচ বাতি গুলা দেইখা যেমন উৎসবের আমেজ আসে সেরকমই।
লোকজন যখন বুঝতে ভুল করে, সেইটা বড়ই পেইনদায়ী। ফল? বিটকেলে টেস্টের কোনো একটা হইবো, যেইটা আমার ভাল্লাগেনা। যেরম- এলাচ কিংবা কাঁচা পিয়াজ কাঁচা রসুনের মিক্সড একটা ফ্লেভার আর টেস্ট।
খুব কইরা চেষ্টা করতেছি একটা জিনিস খুঁজার, কিন্তু সবদিকেই কংক্রীটের দেয়ালে মাথা ঠুইকা যাইতেছে। নগরায়নের কুফল আর কি। তারপরেও চেষ্টা জারি রাখতেছি। দেখি কি হয়।
সময় বড়ই অস্থির, একটু আগে একজন এসেমেসে গালি দিয়া গেলো। মানুষ মইরা গেলে পইচা যায়, বাইচা থাকলে বদলায় কইয়া।
মানুষে আল্টিমেটলি বদলায় না, তার পুরান সেলফেরই ম্যাচিউরিটি আসে।
বারুদে যতক্ষণ ঘষা দেয়া না হইতেছে, সে বুকের ভিতর আগুন জমাইয়াই রাখে। ঘষা দিলেই ফাঁৎ কইরা জ্বইলা ওঠে।

আত্মমগ্ন কথামালা-১

জানুয়ারী ১৭, ২০১২ - ১২:৪১ পূর্বাহ্ন 

নিয়মিত অসামজিক হয়ে উঠি। শিরায় শিরায় ছুটে চলা রক্তে আবার নতুন করে ছড়িয়ে যাইতেছে অসামাজিকতার আমেজ। পৌনঃপুনিক দিনযাপন কইরা চলি। সকাল দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত। যে কাজগুলা না করলেই না সেগুলা নিয়েই বিজি। অফিস-বাসা-অফিস। একই রুট, একই লাইটপোস্ট, একই চেহারা। এই বৃত্ত থিকা বেরইতে ইচ্ছা করতেছে বড় বেশী কইরা। সময়টাই মনে হইতেছে হঠাৎ প্যাঁচ খাইয়া গেছে। মাথার ভিত্রে লেখা-টেখা কিলবিল করতেছে। এয়ার টাইট কৌটার মত আটকায়া রাইখা দিতেছি। বাতাসের অভাবে অভাবে একদিন ঠিকই মইরা যাইবো। আমি সেই মইরা শুটকি লাগা লেখা গুলারে দেইখা বিভৎস আনন্দ পামু। আহ! ভাবতেই কেমন মজা লাগতেছে। কি জানি? এইটারো মনেহয় কোনো সাইকোলজিকাল নাম আছে। সাইকোলজি বড়ই মজার একটা জিনিস। একটা বয়েসে পড়নের খুব শখ হইতো। শখ মিটাবার জন্য পড়ছিও কয়েকদিন। তারপর চিরাচরিত চ্রিত্রে ফিরা আসতে সময় লাগে নাই। এখন মাইনষের মুখের দিকে চাইয়া তাদের এক্সপ্রেশন বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করতে খুব ভালো লাগে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়। তয় এইটারও একটা প্যাটার্ণ আছে, যেইটার ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করনের ট্রাই দিতেছি বাট হইয়া উঠতেছে না।
যাউক হাবিজাবি অনেক গেজাইলাম নিজের লগে। দেখি কোনো উন্নতি হয় নাকি।

জোনাকীর অভিমানে পুড়ে যাওয়া রজনীগন্ধা

জানুয়ারী ১১, ২০১২ - ১১:০২ পূর্বাহ্ন 

*
ওয়ালেট ভর্তি অস্থিরতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এদিক ওদিক
মাঝে মাঝে ছড়িয়ে রাখা টেবিলের বার্ণিশড সমতলে
অস্থিরতা বিলাস পালিত হলো আজ সারাদিন ধরে।
উইন্ডশীল্ড জুড়ে সারাক্ষণ ছবি এঁকে চলেছে
রাগী রাগী চেহারার বৃষ্টি সাপের দল।
উল্লিখিত উপাত্তটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়
সাইনবোর্ড নিয়ে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে পুলিশ এবং ওরা। তাই,
উড়ে গেছে পরিযায়ী বালিহাঁস
ঠোঁটে মেখে নিয়ে ধুলোবালি আর সবুজের গান।
সযত্নে সাজিয়ে রাখি ভঙ্গুর সময়ের ঘ্রাণ
আর, জোনাকীর অভিমানে পুড়ে যাওয়া একটা রজনীগন্ধার ঝোপ।

বৃষ্টিপাপ অথবা দৃষ্টিপাপ

জানুয়ারী ১০, ২০১২ - ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

*
উত্তুরে বাতাসে বৃষ্টিক্ষত ছড়িয়ে যায় ক্যান্সারের দ্রুততায়
টুপ টাপ টুপ টাপ টুপ
জলেদের ছন্দপতন জমা হয় নাগরিক পাপোষে।
অস্থির সন্ধ্যা, মুখ গুঁজে দেয় রাতের কনুইয়ের ভাঁজে
কপাল জুড়ে আলো ছড়াতে থাকা চাঁদের টিপটা বার বার ঢেকে যায়
মেঘেদের এলোচুলে।
বৃষ্টিপাপ অথবা দৃষ্টিপাপ আটকা পড়ে যায়
ছড়ানো ছিটানো স্পাইডার ওয়েবের শ্যেন প্রহরায়।
হাসির উচ্ছল পায়রা ওড়ে চতুর্দিকের কোলাহল সাথী করে
যেখানে কংক্রীট পথ, দু'হাত ছড়িয়ে থাকে আলিঙ্গনের আকাঙ্ক্ষায়।
অশান্ত গাড়িগুলো দ্রুতলয়ে দলে যায় পথের কোমলতা
তখন, বাড়ি ফেরার তাড়া জেগে ওঠে মহাশুন্যবাসী নক্ষত্রদের মাঝে। 

বদলি বিষণ্ণতার শব্দ

জানুয়ারী ৮, ২০১২ - ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন 

*
চোখ দুটোতে কাজলের বদলে বিষণ্ণতা মাখা।
আয়নায় কি দেখেছিলে নিজেকে আজ?
চুলে চিরুনী বোলাবার সময়?
নয়তো পথে আসতে তাকিয়েছিলে কি কোনো চকচকে সারফেসে?
আমি জানি,
যতবারই তুমি নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেছিলে,
ততবারই নিজেকে লুকিয়েছিলে নিজের কাছ থেকে।
কেন,
বিষণ্ণতার সাথে এমন লুকোচুরি খেলে যাওয়া?
নিজের সাথে নিজের মিথ্যাচার?
আমি বুঝিনা তোমাকে,
আসলে বুঝতে চাইনা।
শুধু জানি তোমার বিষণ্ণতা আমাকেও স্পর্শ করে।
কুয়াশা যেভাবে আলতো স্পর্শে জড়িয়ে থাকে হলদে খড়ের স্তুপ
ভিজিয়ে দেয় নিজের অশ্রুতে।
তোমার বিষণ্ণতাও আমাকে ঘিরে ফেলে মন খারাপের কুয়াশায়।
মাঠ ফেলে রেখে আসি পিছনে,
বিষণ্ণতা লেপ্টে নিয়ে আমার দু'চোখে।

এলোমেলো রক্তছোপ

ডিসেম্বর ২৮, ২০১১ - ৩:২২ অপরাহ্ন

ইদানিং এসফল্টের রাস্তায় ছোপছোপ রক্ত দেখতে পাই। কুয়াশা মাখা সোডিয়াম সোনালী আলোয় হাঁটতে হাঁটতে যতবারই এগিয়ে যাই, রক্তের ছোপ গুলো দূরে সরতে থাকে। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় ঘিনঘিনে পোকারা।
কি খবর হে? দিনকাল কেমন যায়।
কে যেনো পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে পাইনা। এমনকি ঘিনঘিনে পোকাগুলোও নেই পায়ের আশে পাশে। শুধু দু’টো চালক ছাড়া ভ্যানগাড়ি সাঁতার কেটে যায় কুয়াশার সরোবরে। তাদের পিঠে হাতির শুড় আর গন্ডারের শিং দিয়ে বোঝাই করা ঝুড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোনালী অন্ধকারে হারিয়ে যায় ভ্যানগুলো। এসফল্টের নদীতে ডুবসাঁতার দিতে থাকা একটা ছিপছিপে কিশোরী হঠাৎ মাথা তোলে। তার চোখে লাল রঙের কাজল, ঠোঁটে গাঢ় নীল লিপস্টিক। যে কেউই সেটাকে কালো বলে ভুল করবে। কিন্তু আমি ভুল করি না। আমি লাল কে লাল, আর গাঢ় নীল কে গাঢ় নীল হিসেবেই সনাক্ত করতে পারি। শাঁই শাঁই করে চাবুকের শব্দে মাথা তুলে দেখি শেরাটনের সামনের ঘোড়ার গাড়িটা নেমে এসেছে পথে। লাল কাজল আর গাঢ় নীল লিপস্টিক দেয়া কিশোরীটা চেপে বসে সেই ঘোড়ার গাড়িতে। তাকে নিয়ে গাড়িটা প্রবল গতিতে ছুটে যায় মিন্টো রোডের সবুজ অন্ধকারের দিকে। আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। বারডেমের কাছে পৌছুতেই ওভারব্রীজটা আড়মোড়া ভাঙ্গতে থাকে আর ব্যাথাতুর শব্দ করতে থাকে।
এবার আমিই ব্রীজটাকে জিজ্ঞেস করি
- কি খবর হে? দিনকাল কেমন যায়?
ব্রীজটা তিন-ছয় ফোঁটা লুব্রিকেটিং অয়েল (পরে বুঝেছি ওটা ছিলো ব্রীজের অশ্রু) ঝরিয়ে বলে
= না হে, পেটে বড় যন্ত্রনা।
আমি উৎসাহী প্রশ্ন ছুঁড়ে দেই
- কেনো কেনো?
ব্রীজটা উত্তর দেয়
- বালের ছোটোলোকদের জ্বালায় কি আর সুখ থাকে? সারারাত ধরে আমার পেটের ভিতর শুয়ে শীতে কাঁপাকাপি করে।
আমার মেজাজটা কেনো জানি খারাপ হয়ে যায়।
‘একটা হাড়ের ছুরি’
‘একটা হাড়ের ছুরি’
চিৎকার করতে করতে ছুটে যাই সামনের দিকে।
বামে মোড় নিতেই দেখি আরেকটা ওভারব্রীজ আমার পথ আটকাবার পাঁয়তারা করছে। আমি কান্নি মেরে বেরিয়ে যাই, পিছনে ওভারব্রীজটার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠার শব্দ শুনি। আমার এখন মেজাজ খারাপ। কারো কান্না শুনার সময় হাতে নাই। সামনে এগিয়ে হাঁফাতে থাকি। এই সব দৌড়ঝাঁপের বয়স কি আর আছে? তারপর আবার হাঁটা শুরু করি।
শিশুপার্কের ফেরিস হুইলটা দেখলাম খুব ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
‘থাক না বেটা ভাব নিয়ে, তোর ভাবে আমার বয়েই গেছে’
ভাবতে না ভাবতেই দেখি ঢাকা ক্লাবের গেটে দাঁড়িয়ে আছে সেই ঘোড়ার গাড়িটা।
ঐ যে যেই গাড়িটা দিনের বেলা দাঁড়িয়ে থাকে শেরাটনের সামনে, রাতের বেলা লাল কাজল আর গাঢ় নীল লিপস্টিক মাখা কিশোরীদের নিয়ে ছুটে যায় মিন্টো রোডের সবুজ অন্ধকারে। গাড়িটা সুস্থ্যই আছে, কিন্তু ঘোড়া দু’টোকে দেখলাম টলতে টলতে বেরিয়ে আসছে ক্লাবের গেট দিয়ে। বেশ স্যুট টাই পড়ে নিয়েছে কখন জানি। তাদের সাথে আছে এসফল্টের নদীতে সাঁটার কাটা লাল কাজল আর গাঢ় নীল লিপস্টিক মাখা সেই কিশোরীটা। দু’টো ঘোড়াই তাদের চারটে পা কিংবা চারটে হাত দিয়ে কিশোরীটাকে ধরতে চাইছে। এ যদি কিশোরীর উঠতি স্তন ধরছে, তো ও ধরছে নিতম্ব। এরকম হেঁচড়াহেঁচড়িতে একজন হ্যান্ডসাম ঘোড়ার সম্পত্তি হ’লো কিশোরীর স্তন, আরেক জনের কাছে জমা হ’লো কিশোরীর নিতম্ব। ঘোড়া দু’টো, সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে মনোভাব নিয়ে সেই লাল কাজল আর গাঢ় নীল লিপস্টিকের কিশোরীটাকে ছুঁড়ে দিলো লেজের ঝাপ্টায়। সে মুখ থুবড়ে পড়লো আমারই পায়ের কাছে। আমার ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় নীল হাসি হাসতে হাসতে কিশোরী আমাকে বলল
‘সব লইয়া গ্যাছে দেইখা মন খারাপ কইরোনা। রাইতে আইসো সোনা, সব নয়া পাইবা...’
বলেই খিল খিল শব্দের সাথে সে একটা ঘিনঘিনে পোকা হয়ে গেলো।
তারপর সব শুনশান।
শুধু রমনার লেকটা আমাকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য পরম মমতায় ডাকতে থাকলো। কেনো জানি না আমারো মনে হচ্ছিলো, রমনার লেকটাই আমার মা। আর আমার এখন মায়ের কোলেই ঘুমুতে যাওয়া দরকার।
 

পাঠ প্রতিক্রিয়া : রশীদ করীম

ডিসেম্বর ২৬, ২০১১ - ৫:১০ অপরাহ্ন 

রশীদ করীমের উপন্যাস সমগ্র পড়া শেষ করলাম।
সেই ১৯৬১ এ লেখা প্রথম উপন্যাস “উত্তম পুরুষ” থেকে ১৯৯৩ এ লেখা শেষ উপন্যাস “লাঞ্চবক্স” পর্যন্ত। প্রথমেই বইলা রাখা ভালো, আমি কোনো সমালোচক নই। যার জন্য এই উপন্যাস সমগ্র নিয়া যা যা লিখতেছি তা সবই আমার নিজস্ব ভাবনা।
উপন্যাস সমগ্র পড়বার একটা সুবিধা আছে। বিভিন্ন সময়ে লেখকের বিভিন্ন রকম ভাবনা-চিন্তা গুলারে এক মলাটে পাওয়া যায়। তাতে লেখকের চরিত্র সম্পর্কেও মোটামুটি বেশ পরিষ্কার ধারণা জন্মায়। যাক এইসকল কথাবার্তা, পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আসি।
রশীদ করীমের উপন্যাসে যেই দিকটা প্রথমেই আমার নজরে আসলো সেইটা হইলো, তাঁর উপন্যাসের শুরুটা সবসময়েই একই রকম। প্রথমতঃ শুরুটা খানিক আটপৌরে ভাব নিয়া করার চেষ্টা করা হয়, যেইটারে তিনি একটা বাদে কোনো উপন্যাসেই বদলাইতে পারেন নাই বা ইচ্ছাকৃত ভাবে বদলান নাই। দ্বিতীয়তঃ তাঁর উপন্যাসের দরজা দিয়া ভিতরে ঢুকতে একটু বেশিই মনোযোগ দিতে হয়। এইটা আমার কাছে বেশ ইরিটেটিং লাগছে। কিন্তু একবার ঘটনার ভিতরে ঢুকে গেলে পুরাই ঘোরগ্রস্ত হইয়া পইড়া যাইতে হয়, এই ব্যাপারটা আবার বেশ ইন্টারেস্টিং। যেন নদীতে নৌকা নিয়া বেশ দাঁড় বাইয়া ঘুর্ণিপাকের কাছে গিয়া দাঁড় ছাইড়া দেওয়া। এই দাঁড় বাইতে গিয়া শক্তি হারাইয়া ফেললে ঘূর্ণির কাছে যাওয়াও হইবো না আবার সেই ঘূর্ণিতে ডুবার আনন্দও নেওয়া হইবো না। অদ্ভুত একটা বৈপরীত্য। এই বৈপরীত্য কি একজন ভালো ঔপন্যাসিকের লক্ষণ? আমার তরফের উত্তর হইলো “না”। আমার মতে উপন্যাসের প্রবেশ দ্বারটা হইবো সহজ, যাতে পাঠকের কষ্ট কম হয়। যত বৈপরীত্য বা টুইস্ট সেগুলা ভিতরের ব্যাপার। কারণ একবার ভিতরে ঢুইকা গেলে সেই টুইস্ট গুলা গ্রহনের ক্ষমতা এমনিতেই পাঠকের ভিতর চইলা আসে।
উনার উপন্যাসে আমারে সবচাইতে বেশী আকর্ষণ করছে যেই জিনিসটা সেইটা হইলো তাঁর ঘটনার সময় নিয়া খেলার প্রবণতাটা। উনার লেখায় কখন বর্তমান, কখন দূর-অতীত, কখন নিকট-অতীতের ঘটনা বিবৃত হইতেছে সেইটার ট্র্যাক রাখাটা খুবই কঠিন। এবং এই ব্যাপারটা বেশ মজার। প্রথম দুইটা উপন্যাসের পর আমি এই ব্যাপারটা নিয়া মাথা ঘামানো ছাইড়া দিছি, আর এতে আমার লেখার রস আস্বাদনে তেমন কোনো ঝামেলাই হয় নাই। বরং লেখার হ্যালুসিনেটিং আবহটা উপভোগ করার আলাদা মজা পাইছি।
এইবার আসি তাঁর লেখার চরিত্র গুলার দিকে। উনার ভিতর আভিজাত্যের প্রতি একটা ভালোবাসা সর্বদা লালিত আছিলো সেইটা অনায়াসেই বুঝা যায় তাঁর চিত্রিত চরিত্রগুলারে দেখলে (বই শেষ করার পর ব্যাক কভারে উনার বায়োগ্রাফি পইড়া দেখলাম উনার বাইড়া উঠা কলকাতার অভিজাত পরিমণ্ডলে)।
পুরুষ চরিত্রগুলায় অভিয়াসলি তাঁর নিজের চরিত্রের ছায়া পাইছে। যেইখানে সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা একটা স্বাভাবিক ব্যাধি। চরিত্রগুলার সেই সন্দেহবাতিকগ্রস্ততারে কখনো জাস্টিফাই করা বা কখনো সেই বাতিকগ্রস্ততারে নিয়া অনুশোচনা বোধ করার ভিতর দিয়া আসলে লেখকের মনের একটা দিকই ফুইটা উঠছে বইলা আমার ধারণা। পরস্ত্রী বা নারীর প্রতি দেহজ আকর্ষণ বোধ মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। রশীদ করীমের পুরুষ চরিত্র গুলো এই বোধ মুক্ত না, এবং তার প্রকাশ একটা সততার আমেজ দেয়। এই প্রকাশ একই সাথে লেখক পাঠকের যোগসুত্র স্থাপনে যেমন সহায়তা করে তেমনই লেখক পাঠকের মধ্যে একটা মোটা দাগ দিয়া তাদের পার্থক্যটাও নির্ণয় কইরা দেয় বইলাই আমার ধারণা।
তাঁর নারী চরিত্রগুলা, প্রথম উপন্যাসের “নীলা-নীহার” ভাবি থিকা শুরু কইরা শেষের আগের উপন্যাসের “রেখা” পর্যন্ত সবাই, চিত্রিত হইছেন কিছুটা সুক্ষ্মদাগের ছলনাময়ী হিসাবে। যেখানে নারী চরিত্রগুলা অপ্রয়োজনীয় মাত্রায় শারীরি কুহক বিস্তার করেন, এবং এক পর্যায়ে পুরুষ চরিত্রগুলা সেই কুহক কাটাইয়া উঠতে সক্ষম হন বা নারী নিজেই সেই কুহক প্রত্যাহার কইরা নেন। এই কুহক সংক্রান্ত বিষয়গুলি যে খুবই মুন্সিয়ানার সাথে এক্সিকিউট করা হইছে তা কিন্তু না। কিছুটা হেলাফেলার সাথেই বিষয়গুলি আসছে, কিন্তু এত বেশীবার আসছে যে সেইটারে অবহেলা করার উপায় নাই।
লেখকের নারী শরীরের একটা বিশেষ অংশের প্রতি আকর্ষণ ভালোভাবেই চোখে বাধছে। আর এক্কেবারে শেষের লেখায় উনি এইটাকে জাস্টিফাই করার একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাও চালাইছেন। যদিও স্বীকার করতে দোষ নাই, আমার নিজেরো এই বিশেষ আকর্ষণ খুব একটা কম না।
কতগুলা উপন্যাস পইড়া কারো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়া কথা বলাটা খানিকটা ঔদ্ধত্য হইয়া যায়। তবুও এই ক্ষেত্রে আমার মনে হইতেছে এই ব্যাপারটা আলোচনায় আসা উচিত, কারণ এইটা না বললে আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া সমাপ্ত হয় না। উনার একটা কি দুইটা বাদে প্রত্যেকটা লেখায় জিন্নাহ এর কথা অনিবার্য ভাবে উইঠা আসছে। এবং উনি জিন্নাহ সাহেবের কর্মকান্ডের প্রচ্ছন্ন সমর্থক ছিলেন এইটাও বেশ বুঝা যায়। উনার চরিত্রগুলার ভিতর যে মুসলিম জাত্যাভিমান বেশ প্রবল শিকড় গাইড়া ছিলো, এইটাও উনার লেখায় দেখা যায়।
সবশেষ, রশীদ করীমের উপন্যাস গুলা পড়বার পরে আমার ব্যক্তিগত ভালোলাগার ক্রম খানিকটা এই রকম...
১. মায়ের কাছে যাচ্ছি
২. আমার যত গ্লানি
৩. বড়ই নিঃসঙ্গ
৪. সাধারণ লোকের কাহিনী

আনটাইটেলড-১

ডিসেম্বর ১২, ২০১১ - ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

ধরি,
আগামী রোববার আমাদের হাতে কোনো কাজ থাকবে না।
সেদিন সূর্যের আলো থাকবে গাঢ় কুয়াশায় ঢাকা,
বছরের প্রথম শৈত্য প্রবাহে থরথর কাঁপবে হলদেটে পাতার দল
বুড়িগঙ্গা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো
হাঁসের মত পালক গুটিয়ে জবুথবু সদরঘাট,
মোটা মাফলার জড়িয়ে অপেক্ষাক্লান্ত হয়ে পড়বে মুদি দোকানীর,
চা'য়ের কাপ ছেড়ে ধোঁয়ারাও উড়বেনা ছাদ কিংবা আকাশের দিকে,
কোনো কাজই হবেনা সেদিন।
কারণ, আমরা প্রথমেই ধরে নিয়েছি আগামী রোববার আমাদের হাতে কোনো কাজ থাকবেনা।

হাবিজাবি... হাবিজাবি...

নভেম্বর ২৭, ২০১১ - ১:৪৫ অপরাহ্ন 

╙╜ ইদানিং... না ঠিক ইদানিং না, বেশ কিছুদিন হইলো আমার কি জানি হইছে। লেখালেখি করতে পারি না। ঘন্টার পর ঘন্টা নেটে ঢুইকা বইসা থাকি, ব্লগে ঢুইকা ঝিমাই, ফেসবুক ওপেন কইরা রাইখা দেই। লিখতে পারি না। ব্লগে লগিন করি না, অফলাইনে বইসা মন্তব্যের ঘরে একটা দুইটা শব্দ লেখার চেষ্টা করি কী-বোর্ডের কী গুলা মনে হয় লাফাইয়া লাফাইয়া সইরা চইলা যায়। পড়ছিলাম, ডিস্লেক্সিয়া হইলে মানুষ পড়তে পারেনা, অক্ষরগুলা মনে হয় দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি করতেছে। কিন্তু অনেক খুইজাও আমার রোগের কোনো ব্যখ্যা পাইলাম না Sad
╙╜ মাথার ভেতর কয়েকজন মানুষের নাম নিয়া ঘুরতেছি অনেক অনেক দিন ধইরা। কেউ বাইরে আসতে চায়না Sad
╙ মেটালিক গ্রে ডিসটেম্পার করা একটা গরের ভিতর রাজীব মিত্র বইসা আছে একটা খটখটে কাঠের চেয়ারে, সামনে একটা ন্যাড়া টেবিল। আর কোনো ফার্নিচার নাই ঘরে। তার শরীরে ফর্মাল ড্রেস। ডার্ক রঙের প্যান্ট, সেমি ডার্ক শার্ট, লাইট রঙের টাই, ব্রাউন বেল্ট আর জুতা।সে ঐ ঘরে ভেতরেই মাঝে মাঝে হাঁটাহাটি করে, তার প্যান্ট শার্ট টাইয়ের রঙ বদলায় কিছুদিন পরপর, ব্রাউন বেল্ট আর জুতা বদলায় না। রাজীবও ঐ ঘর থেকে বের হতে পারে না...
╙ সুস্মিতার জীবন বাঁধা পড়ে গেছে আন্ডারকন্সট্রাকশন স্কুলটার সাথে। স্কুলটা দোতলা, তৃতীয় তলার কন্সট্রাকশন চলছে। একটুকরা মাঠ আছে, মাঠে একটা দোলনা, দুইটা সী-স, আর একটা স্লীপার। মাঠের ঘাসগুলা উজ্জ্বল সবুজ। সেই মাঠে নীল-সাদা স্কুল ড্রেসে বুক হুহু করা দুপুর সাড়ে তিনটায় ঘুরে বেড়ায় সুস্মিতা। কখনো দোলনায় দোল খায়, কখনো ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে থাকে, কখনো স্লীপারের সিঁড়িতে বসে থাকে। স্কুলের ঘন্টা বাজে, টিচাররা বিভিন্ন ক্লাস থেকে বের হয়, কেউ সুস্মিতার দিকে তাকায় না, কেউ তাকে ক্লাসে ঢুকতে বলে না...
╙ আলফেসানী থাকে একটা দরজার ওইপাশে। দাঁড়িয়েই থাকে, দাঁড়িয়েই থাকে...
╙ লিওনার্দ ইদানিং বেশ আসছে। তার মা ফ্রেঞ্চ, বাবা বাংলাদেশি। একটা বোতাম খোলা সাদা শার্ট আর মসগ্রীন গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট পড়ে সে কুয়াশা ঘেরা ভোরে দাঁড়িয়ে থাকে এসফল্টের রাস্তায়...

শূন্যে ছুঁড়ে দেয়া কয়েনের দিকে তাকিয়ে

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১১ - ১:১৯ পূর্বাহ্ন 

ব্যাকস্টেজেঃ
প্রৌঢ় দড়াবাজ দাঁড়িয়ে।
জীবনের শেষ দড়াবাজির খেলা দেখাবে বলে
রং মেখে লুকানো, ভাঁজ পড়া চেহারায়
মঞ্চ ফাঁকি দিয়ে আসা টুকরো আলোরা আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে,
বুঝিবা সান্তনার হাতে।
মঞ্চেঃ
চড়া তালে বেজে চলেছে বাজনা
উদ্দাম ড্রাম বিটের সাথে ছন্দ মিলিয়ে এগিয়ে আসছেন প্রেজেন্টার
তার চকচকে জুতোয় পিছলে যাচ্ছে স্পট লাইট
ধাঁধিয়ে দিচ্ছে চোখ, দর্শকদের।
ভরাট গলায় ঘোষিত হচ্ছে খেলা এবং খেলোয়াড়ের নাম।
বাইরেঃ
কুয়াশার মৃদু গন্ধ মাখা রাতের চাদরে
থিতিয়ে আসা ধুলোরা জমছে ধীরে
একঝাঁক রাতজাগা পাখি
নড়েচড়ে বসছে দূরবর্তী গাছের ডালে
নৈশব্দ এবং কোলাহল হাতধরে চলছে এসফল্টের রাস্তা জুড়ে।
আবার ব্যাকস্টেজেঃ
দড়াবাজের কাঁপা হাত খুঁজে নিয়েছে
জীবনের প্রথম রোজগারের কয়েনটাকে, যেটা
বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনীর মিলিত প্রয়াসে উড়ে গিয়েছে শূন্যে।
হেডস মানে মৃত্যু। টেলস মানে জীবন।
প্রৌঢ় দড়াবাজ অনন্ত প্রতীক্ষায়
শূন্যে ছুঁড়ে দেয়া কয়েনের দিকে তাকিয়ে...

বিচ্ছিন্ন পংক্তিগুলো

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১১ - ১:৪০ অপরাহ্ন 

বাতাসের দেওয়াল তৈরী হয় অগোছালো নদীতীরে
স্পর্শপাপ বাঁচিয়ে বেড়ে ওঠা ফুলেরা
এলোমেলো হয়।
অস্ফুট আবেগ এবং শরীরের গান মিলেমিশে একাকার
কুয়াশাঘোর মাখা চোখ জুড়ে ছেঁড়াখোঁড়া ছবি
একই নিঃশ্বাসে মিশে থাকা অনাকাংখিত উত্তাপ
আর, অতৃপ্তির ছোপছোপ দাগ।
শিরোনামহীন সম্পর্কের দায় জুড়ে থাকে বর্তমানের সবটা
দৃশ্যতঃ ঘোরাক্রান্ত হই নানাবিধ সম্পর্কে
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাস্তবতা
ঘোর ঘোর ঘণঘোর...

জেগে থাকা এবং বিবিধ...

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১১ - ১২:২৪ পূর্বাহ্ন 

*
জেগে থাকি, জেগে থাকি
অনিবার্য মৃত্যুর মতন জেগে থাকি।
মন বিবশ করা সৌন্দর্যের মতন জেগে থাকি।
হৃদয় বিদীর্ণ করা বেদনার মতন জেগে থাকি।
শিশুর প্রথম হাসির মতন জেগে থাকি।
ফেলে আসা অতীতের মতন জেগে থাকি।
ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে জেগে থাকি তারই প্রতীক্ষায়...
**
অন্ধ উইপোকা জানেনা জীবনের মানে
দিনভর বাসা বেঁধে যায় ধ্বংস হবার জন্য।
তেমনি তোমারও জানা নেই ভালোবাসার গান
চোখ বুজে আশ্রয় খুঁজে ফেরো কোমল হৃদয়ে।
***
সীমান্তে, কাঁটাতারের বেড়ায় বাঁধা পড়ে থাকে বিবিধ স্বপ্নাবলী,
সচরাচর বাঁধা পড়ে যাই ব্যাক্তিগত দুঃখের ঘেরটোপে।
স্বপ্নাবলী, সীমান্তে পৌছুবার আগেই আশ্রয় নেয় ক্লান্তি ও বাস্তবতার ওয়েস্ট বাস্কেটে।
****
চাঁদের ঝলমলে পোশাকে অভিজাত রাত
ঘৃণার দৃষ্টি ফেলে ফুটপাথে,
টুকরি বিছানায় গুটিসুটি মেরে থাকা নোঙরা জীবগুলোর পানে।

বিপ্রতীপ সম্পর্কের জ্যামিতি

আগস্ট ২৩, ২০১১ - ১২:৩৩ অপরাহ্ন 

*
দেয়াল ঘেঁষে নেমে আসে বোকাটে রোদ,
সাময়িক শ্যাওলার ভেলভেটে আয়েশী হামাগুড়ি দিয়ে।
দেয়ালের ওপাশে থাকা বিষণ্ণ গাছটিও জেনেছে বোকাটে নেমে আসা গান।
বোঝেনি তারা,
বোকাটে গানের সুরটা লেখা হয়েছে বিষণ্ণ গাছটাকে ভেবেই।
শ্যাওলা বেছে নিয়েছে আধো আলো আধো ছায়ার সম্পর্ক,
সে ভাবতে পারেনি উজ্জ্বল রোদ তাকে দিতে পারে বৃক্ষের স্বাধীনতা।
বিষণ্ণ গাছটিও রয়ে গেছে দেয়ালের ওইপাশে, যেখানে ছিটেফোঁটা রোদ উঁকি মারে অনভ্যাসে।
রোদের সাধ্য ছিলো দেয়ালটাকে ভেঙ্গে ফেলে
বিষণ্ণ গাছটাকে আলিঙ্গনের,
তার মনের অশ্রুগুলোকে এক নিঃশ্বাসে পান করার,
দু’জন মিলেমিশে জীবনের গানে মেতে ওঠার।
বোকা রোদ,
বরাবরের অনভস্ততায় বাঁধা পড়ে রইলো দেয়ালের কার্ণিশে,
আর লিখতে থাকলো বিপ্রতীপ সম্পর্কের সংখ্যাতত্ত্ব।


_________________________________________________________
*আলসেমীর জং কাটানোর চেষ্টা

এক ছিলো গূড় আর অনেক ছিলো পির্ফা

জুলাই ১৯, ২০১১ - ১২:০১ অপরাহ্ন 

তো একজন কইলো
: মনে হইতাছে, ___ ভাই আবারো কাঠির আগায় গুড় লাগাইয়া গেছেন! সব পিপড়া এক লগে হাজির হইতাছে এইখানে!!
ভাব্লাম, জুকার্বার্গের এত্তবড় একটা সাইট্রে কাঠি কইতেছে বেপার্টা কি?
জিগাইলাম কে গুড় আর কেডাইবা পির্ফা?
আসলেইতো???
আসল কাঠি কুনটা, গুড় কুন্টা আর পির্ফাই বা কারা...
আসলে ভেজাল হইছে কি, ইদানিং লুকজন খালি ঝিমায়।ঝিমায় আর জুকার্বার্গের সাইটে গিয়া একটা ঘরের ভিত্রে ঢুইকা ঝিমাইতে ঝিমাইতে আড্ডা মারে। এদিকে মাঠ খাখা করে। কেউ কস্ট কৈরা মাঠে আসে না, সবতে মিল্যা ঠিকঠাক মতো খেলাধুলাও করে না। এইটা আসলে ঠিক না। মাঠে নাম লেখাইয়া সেই মাঠে না আইসা ঘরের ভিত্রে বৈয়া বৈয়া আড্ডা দেওনটা আসলে একটু কেরাম কেরাম জানি লাগে।
যাই হৌক, ঘটনা হৈলো একজনে কইলো যে মাঠে না আইসা ঘরে বৈসা আড্ডা দেওন উচিত না, লগে লগে ঘরে ভিত্রে হাজির হয়া গেলাম আম্রা সবতে। পুলাপান সব খ্রাপৈয়া গেছেগা। কলিকাল ঘোর কলিকাল...
আপসুস...
তো, কথা হৈলো এই কথা লৈয়াই আসলে সব কথা।
কেডায় গুড় আর কেডায় পির্ফা...

মুক্তগদ্যঃ আমার পা'য়ে পা'য়ে জড়ায় ঘাসে জমা মেঘেদের অশ্রু

জুন ২৭, ২০১১ - ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন 

*
আমার পা'য়ে পা'য়ে জড়ায় ঘাসে জমা মেঘেদের অশ্রু।
**
তুমি অবাক তাকিয়েছিলে জানালার শিক ধরে। মেঘেদের ঘনকালো ছায়া পড়েছিলো তোমার চোখে। বিষণ্ণ আকাশের শোকে, তোমার চোখের কোলেও জমেছিলো জল। ছিটে ফোঁটা বৃষ্টিরা, ঠিকানা খুঁজে খুঁজে হয়রান। দু' দণ্ড বিশ্রামে তোমার গালের শ্যামলা মাঠে নিয়েছিলো আশ্রয়য়। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, গাঢ় বৃষ্টির কিংবা তোমার জানালা ছেড়ে চলে যাবার।
কে বলবে, পাওয়াতে বেশী সুখ? না কি হারানোতে?
***
দুরের বটগাছটাতে উথাল পাঠাল বাতাসের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। তরুণ গাছটার বুড়োটে হলুদ পাতাগুলো এলোমেলো ছুটছে মুক্তির আনন্দে। পিচ ঢালা পথটা যেন নদী। বর্ষায় ভরভরন্ত যৌবন। ওই বাঁকে, এলোমেলো ওড়না নিয়ে ব্যাস্ত কিশোরী। আমি হেঁটে চলেছি... না... না... আমি নৌকা বেয়ে চলেছি পিচ ঢালা নদীতে। বাতাসের মাতলামিতে বারবার নিভে যাচ্ছে হাতের ম্যাচ, তবুও চেষ্টা করে চলেছি।
****
এখনকার সব বাড়িতেই মেঝে গুলো টাইলসের হয়। কেমন যেন কৃত্রিমতা। আগেকার শান বাধানো মেঝেতে পা রাখলেই পুকুরে পা ডুবানোর অনুভব পাওয়া যেতো। মনে হ'তো পুকুরের পানিতে ছায়া ফেলেছে একশের কালো মেঘ, এই বুঝি বৃষ্টি নামবে।
*****
সেদিন হাঁটছিলাম রাস্তায়, না থেকেও তুমি ছিলে পাশে। আবোল তাবোল এটা সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম। হাসছিলাম হো-হো করে। হঠাৎ তুমি বললে, "দেখো দেখো, আকাশের মন আজকে অনেক খারাপ"। আমি মুখ তুলে তাকালাম, দূরে মেঘের কাজল লেপটে আছে আকাশের চোখে। তুমি আবার বললে, "আকাশের মনে আজকে অনেক অ-নে-ক কষ্ট, দেখো ও আজকে চিৎকার করে কাঁদবে"। আমি সাথে সাথে শুনলাম মেঘেদের চাপা বিলাপ। আমি বিষণ্ণ হাঁটি একা একা
******
এমন কখনো হয়নি, বৃষ্টি আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমি খোলা আকাশের নীচে, আর বৃষ্টি আমার কপালে তার প্রথম চুমু দেয়নি? এরকম ঘটনা আমার মনে পড়ে না। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করতে ছুটে যাই।
*******
তুমি কি কখনও ভিজেছিলে আমার সাথে? বৃষ্টিতে? ভালোবাসায়?
আমি... আমরা, দাঁড়িয়েছিলাম জবুথবু, ঝাঁপ আধাখোলা দোকানের সামনে। তুমি শাঁই শাঁই চলে গিয়েছিলে পর্দা ঢাকা রিকশা চেপে।
আমি... আমরা, বোকাবোকা চেহারা করে দোকানীর কাছ থেকে চা খেয়েছিলাম।
********
এক রোদ ঝলমল দুপুরে তুমি নীল শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ পড়ে, হেঁটে গিয়ছিলে পথ ধরে। রোদের চোখ রাঙানী থেকে বাঁচতে মাথায় তুলে দিয়েছিলে আঁচল। তোমার ঠোঁটের উপর আর নাকের ডগায় বৃষ্টি বিন্দুর মত ঘাম জমেছিলো। হঠাৎ কোত্থেকে এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া দৌড়ে এলো তোমাকে সঙ্গ দিতে। সাথে করে নিয়ে এলো মেঘেদের। একটু আগের খা খা রাস্তাটা নিমেষেই ঠাণ্ডা নদী হয়ে উঠলো। তুমি হেঁটে চলেছিলে, আর মেঘেরা তোমাকে ছায়া দিতে ঢেকে ফেলেছিলো সূর্যকে। তোমার ঘামের বিন্দু গুলোর সাথী হ'তে নেমেছিলো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাস আঁচল নামিয়ে দিয়েছিলো তোমার মাথা থেকে। আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তোমার চুলে সাজিয়ে দিয়েছিলো মুক্তো।
*********
সুযোগ পেলে আমি একটা বৃষ্টিঘর বানাবো। যার ছাদ হবে টিনের। সামনে এক চিলতে বারান্দা থাকবে আর থাকবে এক টুকরো উঠোন। মেঝেটা হবে শান বাঁধানো। আমি ঘরের জানালায় বসে টিনের চালে বৃষ্টির গান শুনবো। উঠোনের সবুজ ঘাসে দেখবো বৃষ্টির নাচ।

স্মৃতির নরোম রোদমাখা গলিপথে


 মে ৩১, ২০১১ - ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন


গত পনের দিন যাবত অফিসে উদভ্রান্ত কাজের চাপ যাচ্ছে। বেশ ভালই দৌড়ের উপরে আছি। কাজের চাপ বা দৌড়ের উপর থাকাটা উপভোগই করি মোটামুটি। আবার মাঝে মাঝে মন বিদ্রোহ করে বসে, তখন মনকে সুস্থির করার জন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকেই ঘুরে বেড়াই স্মৃতির রাজপথ থেকে গলিপথে গলিপথে।
শিশুবেলার স্মৃতির গলিটা মাখামাখি করে আছে সকালের নরোম রোদে। গলির দু'পাশে সারি সারি দাঁড়ানো ঘর গুলোর জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে এই স্মৃতি ওই স্মৃতি আমাকে ডেকে চলে। আমি আনন্দিত হই। আমার রক্তে কাঁপন ওঠে শিশুবেলার স্মৃতিদের দেখতে পেয়ে। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই গলির প্রায় শেষ মাথার একটা ঘরে। যেখানে আমার অনেক পুরোনো স্মৃতিগুলোর বসবাস। এই ঘরটার অনেক বাসিন্দাই চলে গেছে সময়ের সঙ্গী হয়ে, আবার কেউ কেউ রয়ে গেছে আমারই মায়ায়।
তাদের ভেতর থেকেই খুঁজে পাওয়া কিছু স্মৃতির সাথে...
*
কেজিতে পরতাম। বাসায় আব্বু মাঝে মাঝে গুন গুন করে গাইতো
"বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের এই বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রুপসী বাংলা রূপের যে তার নাইকো শেষ"
শুধু এই লাইনটাই। আমি কখনো যদি এর পরের লাইন গুলো শুনতে চাইতাম, আব্বুর স্বর আরো নিচু হয়ে যেতো। আব্বু বলতো এখন এই গান গাওয়া ঠিক না, তোমার এখন এই গান শেখার দরকার নেই। বিস্নিত হতাম, কৌতুহলী হতাম, কিন্তু কৌতুহল চাপা দিয়ে রাখতাম।
*
আমার দাদু, মানে আমার বড় বোনের সাথে আমার বয়সের পার্থক্য ছয় বছরের। কিন্তু সেটার কোনো ছায়া আমাদের দু'জনের দুষ্টুমিতে বাধা হয়নি। ছুটির দিন আমাদের প্রায় অবধারিত খেলা ছিলো বাসার বারান্দায় পানি ঢেলে পিছলা পিছলা খেলা। কখোনো সেই পানির সাথে যোগ হ'তো জেট ডিটারজেন্ট পাউডার, আরো বেশি পিচ্ছিল হয়ে উঠতো বারান্দা। আরো বেশি উচ্ছাস আনন্দ যোগ হ'তো আমাদের খেলায়।
*
একবার প্রচুর বৃষ্টিতে বাসার উঠোন, পাশের বাসার শিরিন আন্টিদের জঙ্গল টাইপের বাগানে হাঁটু পানি জমে গেলো। সন্ধ্যার মুখোমুখি সময়, আম্মু তখনো ভাতঘুম থেকে ওঠেনি। আমি আর দাদু একটা গামছা নিয়ে নেমে পড়লাম সেই পানিতে। মিশন মাছধরা। যদিও মাছ কোত্থেকে আসবে সেই ধারনা নেই। মাছ ধরার আশায় আশায় চলে গেলাম শিরিন আন্টিদের বাগানে। শেষ অব্দি মনেহয় দুইটা না তিনটা পুঁটি মাছ পেয়েছিলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার। আম্মু এদিকে রেগে অগ্নিগিরি। মার পড়েনি পিঠে, তবে নিয়ম ভঙ্গের শাস্তি হিসেবে বিকেলের দুধ বিস্কুট থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম।
*
বাসায় কয়েকটা মুরগী পালা হ'তো। একদিন দাদু দুইহাত মুঠ করে নিয়ে এসে আমাকে বলছে দেখ দেখ কি নরোম। আমি দেখি যে দাদুর হাতের মুঠোয় একটা ডিম, আর কি আশ্চর্য!!! ডিমের খোলসটা আসলেই নরোম। একটু পর দাদুর কাছ থেকে সবিস্তারে জানতে পারলাম যে কিছুক্ষণ আগে, আমাদের কালো মুরগীটা ঠিক দাদুর সামনেই ডিম পেড়েছে। দাদু সেটা তুলতে গিয়ে টের পেয়েছে যে এট তুলোর মতো নরোম।
*
বাসায় যখন দাদু আর এলাকার মেয়েরা মিলে রান্না-বাটি খেলতো, নিশ্চিত ভাবে আমি বাজার সরকারের দায়িত্বটা পেতাম। আমারই সমবয়েসী ছেলেদের কেউ পেত বাসার চাকরের দায়িত্ব, কেউ পেত কোনো একজনের বাচ্চা হবার দায়িত্ব। এরকমই একদিন বাজার সরকারগিরি করছি, মাথায় কি ভুত চাপলো বাজারের ব্যাগ হাতে ঢুকে গেলাম আমাদের স্টোর-রুমে। সেখানে একটা পুরোনো টেবিল ল্যাম্প ছিলো, যেটার বাল্ব লাগানো ছিলোনা। আমি আধুনিক শপিংয়ের আনন্দে টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অন করে হোল্ডারের ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছি, খেয়াল আর করি নি যে ল্যাম্পের পাওয়ার কানেকশন দেয়া আছে। তো, আঙ্গুল হোল্ডারের ভেতর দেবার সাথে সাথেই হোল্ডার আমাকে আকর্ষণ করে বসেছে। আমি ভয়ে হাত ঝাড়ি দিচ্ছি, কিন্তু হোল্ডার আর আমাকে ছাড়ে না। কোন সময় জানি একটা চিল্লানি দিয়ে সর্বশক্তিতে হাত ঝাড়ি দিয়েছি, তারপর আর কিছু মনে নাই। পরে দেখি যে আমার তর্জনী আর মধ্যমায় ছয়খানা ফোস্কা পড়ে আছে...
*
আমাদের একটা বুড়ো টিয়াপাখি ছিলো। নিয়ম করে দুইবেলা চা বিস্কুট খেতো। খাঁচাবন্দী পাখিটাকে দেখলে আমার পাখিটার সাথে নিজেকেও ভীষণ অসহায় মনে হ'তো কেনো জানিনা। একবার কোনো এক ছুটিতে খুলনা গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরে সবাই দেখে পাখির খাঁচা খালি। সবারই মন খারাপ। এতদিনের পোষা পাখিটা এভাবে ঠোঁট দিয়ে খাঁচার দরজা খুলে উড়ে চলে যাবে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছিলো সবারই। আমি কিন্তু উপরে উপরে কষ্ট কষ্ট ভাব দেখালেও ভিতরে ভিতরে খুব খুশি, কারণ বাসা থেকে বের হবার আগে আমিই পাখির খাঁচার দরজাটা খুলে দিয়েছিলাম। এই কথাটা আমি সবার কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম প্রায় এক বছর।

পৌণপুণিক গন্তব্যের অপেক্ষা

এপ্রিল ২০, ২০১১ - ১:০২ পূর্বাহ্ন 


সশব্দ সন্ধ্যা নেমে আসে নাগরিক রাজপথে।
কালো ধোঁয়া, সাদা ধোঁয়া
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে গুমোট চারদিক।
ঘাম জড়ানো জুলফি আর কপালে
চটচটে ধুলো।
কর্মক্লান্ত শরীর মনের আবর্জনায়
সহযাত্রীদের জড়িয়ে নেবার প্রচেষ্টায় ব্যাস্ত সকলে।
অন্যের ঘামে ঘাম ছুঁইয়ে বসে থাকা মানুষগুলোর
মৃতপ্রায় চোখ থেকে স্বপ্ন ছুটি নিয়ে চলে গেছে বহুদুরে।
অপেক্ষা তাই পৌণপুণিক গন্তব্যে পৌছোনোর।

ফোনালাপ

 এপ্রিল ১৮, ২০১১ - ১:০৬ পূর্বাহ্ন

অনেক রাত। প্রায় আড়াইটা তিনটা হবে। পরিশ্রান্ত নায়ক গভীর ঘুমের রাজ্যে। উনি শুধু এই গল্পেরই নায়ক নন, উনি টিভি বা চলচ্চিত্রেরও নামকরা একজন অভিনেতা। তার বেড সাইড টেবিলে রাখা ফোন গুলোর একটা বেশ সুরেলা ভাবে গেয়ে উঠলো। রাতের শীতল নীরবতায় সুরেলা শব্দটাকে কর্কশ শোনালো। ঘুম ঘুম চোখে নায়ক ফোনটা হাতে নিলেন। কলারের নামটা দেখে নিমেষেই চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাবটা দূর হয়ে গেলো। শরীর ঢেকে রাখা কম্বলটা সরিয়ে তিনি সন্তর্পনে নেমে আসলেন বিছানা থেকে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা গাউনটাকে জড়িয়ে চলে আসলেন পাশের ঘরে। আবছা আলোতে ঢেকে থাকা সোফাটাকে এড়িয়ে গেলেন বেড়ালের মত।
রিসিভ বাটনে চাপ দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো নায়লার অস্থির কণ্ঠ-
- হ্যালো। হ্যালো। কি হলো, কথা বলছো না কেনো? হ্যালো?
= কি হয়েছে জান? এখন কয়টা বাজে খেয়াল করেছো?
- কিজানি কয়টা বাজে, তুমি কি করছিলে? ঘুমাচ্ছিলে?
= অন্য কি করবো? তুমি কি পাশে আছো?
- যাও। সবসময় ফাজলামি
= কি হয়েছে বলতো? তোমার গলা কেমন অন্য রকম লাগছে।
নায়ক নিজের অভিনেতাসুলভ আচরণ এবং শব্দচয়নে মন দিলেন।
- কি হয়নি তাই বলো? ফারুক এসে উপস্থিত হয়েছে।
= ফারুক?
গলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিস্ময় ঢেলে নায়কের প্রশ্ন।
= ও কিভাবে তোমার ঠিকানা পেলো?
এবার বিস্ময়ের সাথে উৎকণ্ঠা যোগ করা হলো।
- কিভাবে পেলো সেটা আমি কোত্থেকে জানবো? শুধু জানি রাত একটার সময় কলবেলের শব্দ শুনে, তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছো ভেবে দরজা খুলে দিয়ে দেখি ফারুক দাঁড়িয়ে। দাঁড়িয়ে বলা ভুল হবে, ও আসলে টলছিলো। মুখ থেকে ভুরভুর করে বেরোনো মদের গন্ধ নিয়ে টলছিলো।
= বলো কি?
- প্রথমেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুঁকে গেলো। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না। আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না। আবোল তাবোল। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে, আরো কত কি বলছিলো।
= তারপর?
- তারপর আর কি? যখন আমি বললাম যে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। শুনে খেপে উঠলো। তারপর শুরু করলো আমাকে মারা।
= কি বলো? তোমার গায়ে হাত তুলেছে? এতবড় সাহস ওর?
কিছুটা উষ্মা যোগ হলো নায়কের কণ্ঠে।
- হু। মেরে কালশিটে ফেলে দিয়েছে।
= এখন? এখন কি করছে সে?
- হাতের সুখ মিটিয়ে এখন জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে আছে মেঝেতে। আমি এখন কি করবো? যার ভয়ে শহরের এই মাথা থেকে ঐ মাথায় চলে আসলাম, তাই হ’লো।
নায়কের মাথার ভেতরের কলকব্জা গুলো পুরোদমে চালু হয়ে গেলো। সে যখন পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতো তখন নায়লার সাথে পরিচয়। নায়লার ক্যারিয়ার তখন একেবারে মাঝ আকাশে। এই মেয়েটাকে জড়িয়েই তার নায়ক হিসেবে উত্থান। এই মেয়েটার সাহায্য না পেলে হয়তো তাকে এখনও পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা হিসেবেই থেকে যেতে হ’ত। মেয়েটা যেমন তাকে সাহায্য করেছে উপরে উঠে আসতে তেমনই দেহমন উজাড় করে ভালওবেসেছে। কিন্তু তাকে সাহায্য করতে গিয়ে মেয়েটার নিজের ক্যারিয়ারে লেগেছে ভাটার টান, সংসারে জ্বলেছে আগুন। তারপরও সে নায়কের পাশে থেকেছে। এখন মেয়েটার ভয়াবহতম দুঃসময়ে তারে পাশে থাকা তো নৈতিক কর্তব্য।
- এই কি হ’ল? কিছু বলছো না যে?
= নাহ। আমি আসলে ভাবছিলাম কি করা যায়। আসলে কি করা উচিত।
- কিছু পেলে?
= পেয়েছি। কিন্তু তোমাকে বলতে ভয় হচ্ছে। তুমি মনেহয় আমার কথামত কাজ করতে পারবে না।
- বলেই দেখোনা। তোমার জন্য আমি সব করতে পারি স-অ-ব।
= তুমি কি পারবে ফারুকের মুখের উপর একটা বালিশ চেপে ধরতে? তাহলে সারা জীবনের জন্য আমাদের পথের কাঁটা দূর হয়ে যাবে।
- কি বলছো এসব?
= আগেই বলেছিলাম পারবে না, আমাদের মনেহয় এভাবেই দূরে দূরে থাকতে হবে।
এবার নায়কের গলার স্বর থেকে বেদনা গলে গলে পড়লো।
- না। এভাবে বলোনা। তোমাকে না পেলে আমি মরেই যাবো।
= কিন্তু ফারুক বেঁচে থাকতে সেটা কি সম্ভব? কখনই সম্ভব না।
নায়কের গলা প্রায় কাঁদো কাঁদো।
- কিন্তু...
= এই দেখো, এখনও তুমি নিজের মনকে স্থির করতে পারছো না।
- আমার হাত কাঁপছে তোমার কথা শুনেই।
= থাক তাহলে।
নায়কের গলায় হতাশার সুর বাজলো।
- না...না... তুমি বলো কিভাবে কি করতে হবে।
= তোমার বিছানা থেকে বালিশটা তুলে নিয়ে গিয়ে ফারুকের মুখের উপর চেপে ধরো। মাত্র পাঁচ মিনিট। ব্যাস।
- কিন্তু... তুমি কি এরপর আমাকে আগের মত ভালবাসবে?
= কেন বাসবো না? আমি তো তোমার সাথেই আছি। আগেও ছিলাম, এখন এই কাজের সময়েও আছি।
নায়কের গলায় এবার ভালোবাসার বন্যা।
- এরপর ফারুকের লাশটা নিয়ে কি করবো বললে না যে?
= কম্বল দিয়ে লাশটা মুড়িয়ে তোমার গাড়িটায় তুলবে। তারপর গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যাবে পূর্বাচলের দিকে। ওখানকার ব্রিজটার উপর থেকে লাশটাকে নদীতে ফেলে দেবে। তারপর বাসায় চলে এসে সব কিছু ভুলে যাবে।
- আমি পারবো না। আমার হাত পা সব কাঁপছে।
= ঠিক আছে তাহলে, আমার কথা ভুলে যাও।
- না, না। আমি পারবো। আমাকে পারতেই হবে।
= এইতো লক্ষী মেয়ে। যাও আমি ফোন ধরে আছি।
এক দুই তিন চার এভাবে পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেলো। এই সময়ে নায়কের চেহারায় নানা রকম অনুভূতি তাদের ছাপ রেখে গেলো।
- হয়ে গেছে জান।
= তুমি আমার ঐ ফোনটাতে একটা রিং দাও। এটার চার্জ প্রায় শেষ।
নায়কের দ্বিতীয় ফোন এবার বেজে উঠলো। এবার নায়ক আগেই সেটার রিংগার অফ করে রেখেছিলেন।
- আমি... আমি ফারুককে মেরে ফেলেছি।
= এবার কি করবে?
- এবার লাশটাকে কম্বলে মুড়িয়ে গাড়িতে করে পুর্বাচলের ব্রিজের কাছে ফেলে আসবো।
= ভোর কিন্তু হয়ে আসছে।
- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাচ্ছি।
= আমি ফার্স্ট ফ্লাইটেই চলে আসবো।
নায়ক এবার আরেকটা নাম্বারে ডায়াল করলেন।
= হ্যালো। গুলশান থানা? ওসি সাহেব বলছেন?
_ জ্বি বলছি।
= দেখুন আমি অভিনেতা মাহির হুসাম বলছি। কিছুক্ষণ আগে আমাকে আমার বন্ধু ফারুক এর স্ত্রী ফোন করেছিলেন। উনি বলছিলেন উনি নাকি আমার বন্ধু ফারুক কে খুন করেছেন। এখন নাকি নিজের গাড়িতে করে তার লাশ ফেলতে যাচ্ছেন পুর্বাচল ব্রিজের ওখানে। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমি ব্যাপারটা আপনাকে জানানো কর্তব্য মনে করছি।
_ ঠিকাছে স্যার, আমি ব্যাপারটা দেখছি। আপনি আমাকে শুধু বাসার ঠিকানাটা বলুন।
অনেক দিনতো নায়লার সাথে কাটলো। এবার তার এগিয়ে যাবার পালা, কে পুরোনো গ্ল্যামারলেস নায়িকার সাথে বাকি জীবন কাটাবে?
নায়ক কথা শেষ করে আগের সেট থেকে সিম বের করে ভেঙ্গে ফেলে বাথরুমে গিয়ে ফ্ল্যাশ করে দিলেন। তারপরে শোবার ঘরে ফিরে গাউন খুলে আবার কম্বলের তলে ঢুকে পরলেন।
পাশ থেকে মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলো “কে ছিলো মেয়েটা?”
নায়ক বললেন “মেয়ে না তো, এক প্রযোজক। উনার সাথে একটা সিনেমার ডিল পাকা করলাম”।
মেয়েটা মৃদু হাসির সাথে বললো “এই না, না। ওখানে না। যাহ।”
ধীরে ধীরে দুজনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসলো।

মুক্তগদ্যঃ- বৃষ্টি ও চিঠি বিষয়ক

 এপ্রিল ৩, ২০১১ - ১১:৩৯ অপরাহ্ন

*
আমি এখন আর কারো কাছে থেকে চিঠি পাই না। সেই অর্থে কারো চিঠির জন্য যে উদগ্র প্রতীক্ষা, সেরকম কেউ আসলে কোনদিনই ছিলোনা। পাতাবাহারের সবুজে ছড়ানো ছিটোনো বিবিধ রঙের মত আনন্দ নিয়ে আসা বর্নিল চিঠি বন্ধ হ'য়ে গিয়েছে এক যুগ আগেই। তবু, বৃষ্টি যখনই নামে; হোক সে মাঝ দুপুরে, হোক ভোর সকালে কিংবা নিওন সন্ধ্যায় নাহয় নিশুতি রাতে। আমার খালি মনে হয় একজন পোস্টম্যান, তার বুড়োটে সাইকেলে চেপে ভিজতে ভিজতে আমার জন্য একটা চিঠি বয়ে আনছে। সারাটা বৃষ্টিক্ষণ আমি অপেক্ষায় থাকি কলবেল বেজে ওঠার...
**
রোদ ঝলমল দুপুরের একটা উদাসী মাদকতা আছে। তার সাথে যদি যোগ দেয় মফস্বলের একাকী রাস্তা আর রাস্তায় এলোমেলো ছড়ানো ছায়ারা... সেই দুপুরের উদাসী মাদকতায় আমি মরতে পারি।
এমনই এক দুপুরে, সাইকেলে টুনটুন ঘণ্টি বাজিয়ে খাকি জামার পোস্টম্যান একটা চিঠি এনেছিলো আমার জন্য।
***
রাত জাগা আমার হয়ে ওঠেনি তেমন। আঙ্গুল গোনা যে কয়টা রাত জেগেছি, মনের পর্দা সরিয়ে আসল নিজেকে খুঁজে বেড়াতেই কেটে গিয়েছে। চিঠির লাইনে লাইনে বসিয়ে দিয়েছি আমার আমিকে। আসলে রাতের আঁধার সবকিছু ঢেকে দিয়ে নিজেকে সমর্পন করে নিজের কাছেই। ভোরের আলোয় সেই চিঠি গুলোকে বড় বেশি নগ্ন লাগে। আমার আর চিঠি পোস্ট করা হয়ে ওঠে না। উঠোনে ছড়ানো শিউলি ফুলের মত, চিঠির টুকরো গুলো ঠাঁই নেয় জানালা আর দেয়ালের সীমান্তে।
****
আমার আর চিঠি লেখা হয়না। পোস্ট অফিসের পেট-মোটা লাল পোস্টবক্স গুলো বুড়ো হ'তে হ'তে একসময় তাদের পায়ের কাছে থাকা মাটিকে বন্ধুত্বের আলিঙ্গনে জড়ায়। আমার চিঠি পোস্ট করা হয়না।
*****
দূরে কোথাও কেউ হয়তো আমার মতই অপেক্ষা করে থাকে চিঠির...

মিক্স মশল্লা-১

এপ্রিল ৩, ২০১১ - ১:৫৮ পূর্বাহ্ন 

*
মানুষের ভিতর দায়িত্ববোধ নামের জিনিসটা কবে কিভাবে জন্মাবে ভাবতেই থাকি। আর মাঝখান দিয়ে সময় যেতে থাকে। একটা সো কল্ড দায়িত্বশীল মানুষের কাছ থেকে বারবারই দায়িত্বহীনের মত আচরণ পেতে থাকলে টার দায়িত্বশীলতা নিয়ে আমার ভিতরে প্রশ্ন জাগে। সেই মানুষটার উপর কোনো কাজের ভার দিয়ে আদতেই কি রিলাই করা যাবে কি না এরকম একটা চিন্তা কাজ করতে থাকে।
ভণিতা বাদ দিয়ে আসল কথা বলি। শুক্রবার সারাদিন অফিস করে, কুষ্টিয়া ব্রাঞ্চের জন্য কিছু জিনিসপাতি কেনাকাটা করলাম। সেগুলোকে প্যাকিং করালাম, এস এ পরিবহনে বুকিং দিলাম। তারপর কুষ্টিয়া ব্রাঞ্চের দায়িত্ব(!!??) যার উপর, সেই জনাব কে সব কিছু বিস্তারিত ভাবে এস এম এস করলাম। সবশেষে এস এম এস বুঝতে যদি অসুবিধা হয় তাই ভেবে আবার ফোন করে সেটা কনফার্ম করলাম। হিসাব অনুযায়ী শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটার ভিতর জিনিসগুলা পৌছিয়ে যাবার কথা। ধরি রাস্তাঘাটের জন্য তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরী হতে পারে। সেই হিসেবে বিকাল চারটা নাগাদ জিনিসগুলো দায়িত্ব(!!??) প্রাপ্ত অফিসারের হাতে পৌঁছুবে। সেগুলো সেট আপ করতে আরও ধরি আধ ঘণ্টা। বিকাল সাড়ে চারটা। অফিস টাইম শেষ হতে আধ ঘণ্টা বাকি। অন্ততঃ একটা ফোন দিয়ে তিরিশ সেকেন্ডেও তো বলা যায় "হ্যাঁ। জিনিসগুলো আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।" আমাদের ভিতর সেই সংস্কৃতিটা আসলে মনেহয় এখনও গড়ে ওঠেনি। দেখি রবিবার দায়িত্ববান(!!??) জনাব কি করেন। ওহো, এর আগেও তাকে কিছু জিনিস পাঠানো হয়েছে যার প্রাপ্তিস্বীকার আমার নিজেরই ফোন করে জানতে হয়েছে, তাও এক সপ্তা পর Steve Steve Steve
**
মধ্যবিত্তের আর কিছু না থাক ইগো সংক্রান্ত প্রব্লেমটা খুব চওড়া। ধরা যাক কোনো কাছের মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন; ওখানে কেনো যাবো, আমাকে কি কার্ড দিয়েছে?
কার্ড দেয়ার পর; এত দেরী করে কার্ড কেন দিলো? আসলে আমার উপস্থিতির কোনো গুরুত্ব নেই ওদের কাছে।
যাওয়ার ডিসিশন নেবার পর; এত আগে কেনো যাবো? ওরাতো শুধু বিয়েতে যাবার জন্য কার্ড দিয়েছে, গায়ে হলুদের কথাতো বলেনি, অ্যাটলিস্ট মুখেও বলতে পারতো।
শালার মিডিলক্লাস সেন্টু Puzzled Puzzled Puzzled
***
এক বন্ধু। যে আমার এক বিশাল বিপদের সময় নিস্বার্থ ভাবে হেল্প করেছে। সেই তাকেই এখন চিনতে কষ্ট হয়। ছয়মাসে-বছরে কোনো যোগাযোগ নেই। যখন তার নিজের কোনো কার্যসিদ্ধির প্রয়োজন, ঠিক তখনই তার উদয় হয়। মিলাতে কষ্ট হয়। ছেলেটা খাটতে পারে খুব। কিন্তু তার লক্ষ্য কিভাবে কম খেটে বেশি আর্ণ করা যায়। এই কম খাটনি করতে গিয়ে সে যেই এফোর্টটা দেয়, সেইটা যদি কোনো চাকরী বা প্রচলিত ব্যবসার পিছনে দিতো তাহলে এতদিনে সে একটা ভালো পজিশনেই থাকতে পারতো। অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি। বুঝবেনা। যাঃ শালা গাড়ল বলে ছেড়ে দিয়েছি Sick Sick Sick
****
বৃষ্টি হবার পর কই রোমান্টিক টাইপের কিছু লেখব, তা না নিজের মেজাজ খারাপের কিছু অংশ লিখে ফেললাম...