শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

আবারো তোমাকেই, শ্রীময়ী... (৩)


প্রিয়তম শ্রীময়ী,

আজ একটা অসম্ভব সুন্দর দিন হবে...

অন্যান্য দিনের মত ঘুরতে থাকা মেঘেরা কেন জানি আজ দাঁড়িয়ে পড়েছে এভারেস্টের কোল ঘেঁষে...

বারান্দায়, মৃদু গাঁদা ফুল আর অপরাজিতার দল আজ ঘুমিয়ে যাবেনা বলে পন করেছে। তুমি স্পর্শ করবে তাদের, এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জেগে রবে প্রথম প্রহর থেকেই। জল ছুঁয়ে থাকা কুয়াশার ঝাঁক পাখি হতে চাইছে থেকে থেকেই...

কৃষ্ণচুড়া গাছটা এখন ন্যাড়া। ওখানে তোমার আলতো ছোঁয়া দেবে কি আজ? কুয়াশা ছুঁড়ে ফেলে হয়তো বসন্ত এঁকে দিতে পারতো সে। জল থেকে ভেসে ওঠা কুয়াশার উপর রোদের চাহনি  পড়েছে হয়তো, সেখান থেকে আলো ঠিকরে আসবে তোমাদের বারান্দায় অল্প কৃষ্ণচুড়ার রঙ নিয়ে...

এখানে দিনগুলো খুব মেলাঙ্কোলিক। সকালে রোদ আসেনা সহজে এই বারান্দার দোলনায়। দূরে তাকালে পাহাড়ের সিল্যুয়েট। কুয়াশা শুধু রাস্তা জুড়েই রাজত্ব করেনা, চোখ আর মন জুড়ে তার রাজধানী। খোঁড়া পা আর নিকোটিনগ্রস্ত ফুসফুস ঘুরেফিরে তোমায় খোঁজে। কালচে ঠোঁট দু'টো হাসি মেখে রাখে অনভ্যস্ত...

জলের ওপাড়ে, তোমার সহজিয়া ঘুম। শ্রান্ত শরীরের ছায়া নামে শান্ত মেঝের আশ্রয়ে। সাদাকালো জবা ফুলের দল তোমার প্রতিমা ছুঁয়ে অপার্থিব আনন্দে মাতে। দীপাবলির আলো ছুঁয়ে যায় তোমার পা। একটা ড্রিমক্যাচার খুজছিলাম, তোমাকে উপহার দিবো বলে। বলতে পারো কেনো?

তুমি কত দূরে। বন্ধু আর পরিবার হয়তো তোমায় ঘিরে আছে এখন। হয়তো মোমবাতি জ্বলছে। হয়তো চকোলেট কেকের উপর লেখা আছে তোমার নাম। জেনে রেখো... এখানে, এই পাহাড়ি শহরে, কেউ বসে মৃদুস্বরে গাইছে তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা। সে হয়তো জানেইনা, তোমার বুক জুড়ে কার শব্দ বাজে। শুধু এটুকু জানে, নিজের বুকের ছন্দ। যেখানে প্রতিনিয়ত শ্রীময়ীর নাম বেজে চলে...

শুভ জন্মদিন শ্রীময়ী... অবচেতনকে অবজ্ঞা কোরোনা। সারা দিও হৃদয়ের ডাকে। যেই ডাক আমি শুনি নিভৃতে বসে...

ইতি,
তোমারই আমি...

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬

গ্রাফাইট রাত্রির শুরুতে...

অপেক্ষার পথগুলো বিভ্রান্ত কুয়াশাময়...

এলোমেলো নর্দান হাওয়া
গাল রেখে নাগরিক জানালায়
খুঁজে ফেরে রাতের আশ্রয়...

দিনমান বয়ে চলা দ্বিধা
আর বিবিধ স্মৃতির দোলাচলে থাকা
দেয়ালবন্দী চোখের জমিনে ক্লান্তি...


গাঢ় হয়ে এলে গ্রাফাইট রাত
নিষ্পাপ ঘুম জমে বিবিধ নৈশব্দের আবডালে...

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আবারো তোমাকেই, শ্রীময়ী... (২)

প্রিয়তম শ্রীময়ী,


ভালো নেই জানি। মনে রেখো, পাখি শরীরেও জমে মেঘের অসুখ। শরতের ঝকঝকে আকাশ পারেনা আড়ালে লুকিয়ে থাকা বৃষ্টিদাগ ছুঁড়ে ফেলে দিতে। তবু হাসিভরা নীল নিয়ে ঝলমলে করে দেয় অনেকের মন...

সেইযে সেদিন, অল্পেই ফিরে গেলে অতীতে। সহসা বর্ষায় উচ্ছল তুমি, যার ছিটেফোঁটা আমিও পেলাম এপাড়ে বসে থেকেও। জানো, সেদিন খুব চেয়েছিলাম এপাড়েও বৃষ্টি হোক ঝুমঝুম। আমিও নেয়ে উঠি আনন্দে, গেয়ে উঠি হেঁড়ে গলায়। প্রকৃতি খুবই রুঢ়, তাই আমার এদিকে ঝলমলে রোদ পাঠিয়ে দিলো হাসিমুখে...

স্রোত ভরা নদীটার বুকে দিনদিন জমা হতে থাকা অভিমানের পলি একসময় স্রোতটাকেই স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু স্রোতটা বড় বেয়াড়া। জানোইতো। সে জোর ধাক্কায় অভিমানের বাঁধ ভেঙ্গে আপন পথে ছুটতে চায়। এমন সময়গুলোতে কখনও কখনও অভিমানের পলি ছিটকে গিয়ে পড়ে পায়ের কাছে। কাদা এড়াতে গিয়ে নদী আর পথিকের মাঝে দুরত্ব বাড়ে। পলি জমা হয় নদীর বুকেই...

মনে আছে কিনা জানিনা, আমরা কোথাও যাবো বলে ভাবছিলাম বেশ কিছুদিন ধরে। হঠাৎ তোমার ব্যাস্ততা বেড়ে গেলো। আমরা গেলাম না সেখানে, অন্যমনস্কতা তোমায় ঘিরে ফেলবে তাই। তবু, আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় রইলাম ব্যাস্ততা কমবার। সেদিন জানলাম সেইখানে তুমি ঘুরে এসেছো ব্যাস্ততা আর অন্যমনস্কতার চিন্তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। হাসিমুখে কষ্ট লুকোলাম। তুমি ঘুরে এসেছো এজন্য না, তুমি আমাকে জানাবার দরকারও বোধ করোনি, তাই। আরও মজাটা কি জানো? এই কষ্টটা আমি তোমাকে জানাবার অধিকারও রাখিনা...

সবকিছু পৌণপূণিক নয় শ্রীময়ী। দেখতে এক লাগলেও ভিতরে সুপ্ত থাকে বিচিত্রিতা। হাসিমুখের মুখোশে চোখের বিষাদ লুকোনো যায়না জেনো...

ইতি,
তোমারই "কোনোসময়ের" আমি...

রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

আবারো তোমাকেই, শ্রীময়ী... (১)

প্রিয় শ্রীময়ী,

জানতে চাইবোনা কেমন আছো। জানি, হাসিমুখের আড়ালে।কান্না লুকিয়ে বেশ আছো এমন অভিনয় করে যাচ্ছো এখনও...

কখনো কাকতাড়ুয়া দেখেছো শ্রীময়ী? হাড়িপনা মুখে দেঁতোহাসি ঝুলিয়ে রেখেই দিগন্তে চোখ রাখে একাকী। কখনো নিজের ছায়া দেখে নিঃসঙ্গতা ভুলে থাকে, কখনো কালপেঁচা বা ফিঙের দ্বিধাবিভক্ত লেজ দেখে অনিশ্চয়তায় ভুগে...

শ্রীময়ী, যেদিন সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে দিলে। ভেবেছিলাম সাময়িক উষ্মার মেঘ কেটে যাবে সহসাই। কালবোশেখি শেষে গোধূলি যেমন সাজে, তেমনই হয়ে উঠবে সমগ্র চরাচর...

আমি যেমন জানি, তুমিও তেমনি জানো শ্রীময়ী। আমাদের অহংবোধ অত্যন্ত চড়া সুরে বাঁধা। পৃথিবী ভেঙেচুড়ে গেলেও আমাদের কষ্ট কাউকে দেখাবার চাইতে মৃত্যুই বরং আলিঙ্গন করবো আমরা দুজনে, ভালবেসেই...

সর্বান্তকরণ দিয়ে চাই খুব ভালো থেকো তুমি। আমার মতো নিঃসঙ্গ কাকতাড়ুয়া না হয়ে বরং জোড়া শালিকের জীবন হোক তোমার...

ইতি,
তোমারই "কোনোসময়ের" আমি...

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিদায় শ্রীময়ী...

প্রিয়তম শ্রীময়ী,

তোমায় ভাবলেই নিষ্কলুষ...

সারাদিনের পর যখন তোমাকে দেখতাম, এক লহমায় সব অন্ধকার দূর হয়ে যেতো। একটু হাসলে সরলতার বিচ্ছুরণ হ'তো। দুর্ভাগা আমি, নিজে হাতে সেই মরূদ্যান ধ্বংস করে দিয়েছি...

কখনো চাইনি, আমার কারণে তোমার মনে একটুও ছায়া জমুক। কি ভাগ্য আমার দেখো, তোমার মনের মেঘ বাড়িয়েই গেছি না চাইতেই। বারবার। তুমি কষ্ট পেলেও সহ্য করে গিয়েছো আমার অপরিণামদর্শিতা। পৌণঃপূণিক সুযোগ দিয়েছো আমাকে শুধরাবার...

ডুবে গিয়েছিলাম শ্রীময়ী...
তোমাতে...
এখনো ডুবেই আছি...
ডুবে থাকবোও...
সারাটাজীবন...

সবাই বলে সময় সব ক্ষত সারিয়ে তুলে। হয়তো কথাটা সত্যিও। কিন্তু ক্ষত যত গভীর হয়, তার দাগ ততটাই গভীর রয়ে যায়...

ভবিষ্যৎ জানিনা শ্রীময়ী। তাই তোমাকে আবারো কখনও লিখবোনা সেই প্রতিজ্ঞা করছিনা। আপাতত হয়তো ফিরে যাবো নিজের বৃত্তে। কখনো কখনো ভালোবাসার মানুষটাকে চলে যেতে দেওয়াটাও আসলে তাকে ভালোবেসে যাওয়া...

শুভেচ্ছা নিও শ্রীময়ী। নতুন একটা বছরের। আর...

বিদায়...

ইতি,
তোমারই আমি

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

পুনঃশ্চ, শ্রীময়ী... [৩]

প্রিয়তম শ্রীময়ী,

মানুষ কিভাবে বদলায়, তাইনা! কি দ্রুততার সাথে বদলে যায়...


উপেক্ষা জিনিসটা কষ্টের। দুই তরফেই। যাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে আর যে উপেক্ষা করছে দু'জনেই ক্লিষ্ট হয়ে থাকে উপেক্ষার ভারে...

আসল সত্যটা কি তেমনই, যেমনটা সেদিন বলেছিলে? সেদিনের পর থেকেই যে তোমাকে বদলে যেতে দেখলাম...

অপ্রয়োজনে কথা বললে তোমার সাথে, তুমি কি খুব বেশী বিরক্ত হও? ভাবো, আঙুল গোনা কটা দিন আগেই অপ্রয়োজনে কত কত কথা বলতাম আমরা দু'জন। সবই অতীতের গল্প মনে হয়...

কিছুমাস আগে তুমি কাগজে লিখে দিয়েছিলে "ওয়ান ডে ইউ'ল গেট লস্ট"। হিডেন মেসেজটা কি এমন ছিলো? "ওয়ান ডে আই'ল আস্ক ইউ টু গেট আউট অফ মাই লাইফ অ্যান্ড ইউ'ল গেট লস্ট ফর এভার"...

ভালো থাকো শ্রীময়ী, সারাজীবন। অনেক বেশী ভালো থেকো প্রাচুর্যের খাঁচায় বসে...

...অসীম প্রাচুর্য ঘিরে রাখুক তোমাকে সারাটা জীবন। আমার মতো ওয়ার্থলেস মানুষের সাথে এতদিন ছিলে, এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া... 

ইতি,
তোমারই আমি...

বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৫

শ্রীময়ী, তোমাকে... [১৫]


প্রিয়তম শ্রীময়ী,

কেমন আছো তুমি? কতদিন লিখিনা তোমায়! উঁহু, ভুলেও ভেবোনা যে ভুলে গিয়েছি। তোমাকে ভুলে যাওয়া মানেতো নিজেকেই ভুলে যাওয়া...

সময়ের মোর্স কোডে আটকে যাওয়া সময়টাকে নিয়ে হেঁটে চলি দুজনেই। ডট ড্যাশ ডট ডট ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ ডট ডট ডট ড্যাশ ডট...

তুমি ওপারে দাঁড়িয়ে বুঝেও না বোঝার ভাণে, এঁকে রাখো দুর্বোধ্য গ্রাফিতি। আমি এপারে অনুবাদ করি হায়ারোগ্লিফ...

জানো শ্রীময়ী, তুমি পাশে আছো জেনে চোখ বুঁজে পাড়ি দিই অনিশ্চয়তার হিমালয়। নিশ্চিত জানি পেরোতে পারবোনা, তবুও...

উপেক্ষার আলিঙ্গনে জোছনারা মরে যেতে থাকে নৈমিত্তিক রাতের প্রহরে। আবার সকাল হলেই পূর্ণ চাঁদের আসা যাওয়া...

পাখিমাত্রই অভিমানি...

আস্থা রেখো শ্রীময়ী, আমাদের যুক্তিহীন স্বপ্নের উপর। স্বপ্নেরা সত্যি হয় ওঠে আস্থার আবরণে...

ইতি,
তোমারই আমি...