সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩

*
ছন্দবদ্ধ কার্ণিশ বেয়ে নেমে আসে হলদে রোদ। ঘাম জমে ওঠে শরীর সমতল জুড়ে। ঘোলাটে মনের আনাচ কানাচে ঘাসের বসবাস, কিছুটা আলোড়িত হয়।

মুক্তগদ্য- পাপের পাপেট শো

সাধারনতঃ যা হয়ে থাকে, মৃত জোনাকীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু তার পাখায় লেপ্টে থাকা পাপের ব্যসার্ধ মাপতে গিয়ে কম্পাস গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে বারবার। কারণ? কম্পাসে বাঁধা সুতোগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিলো লক্ষীপেঁচার চোখের গভীর তলদেশে।

পেঁচাটা উড়ে বেড়াচ্ছিলো, সতর্ক। ঘাসের আড়ালে ঘুরে বেড়ানো ইঁদুরের খোঁজে ব্যস্ত ছিলো হালকা বাদামী চোখ দু'টো। মাকড়সাদের নানা পাপ এবং ছড়িয়ে রাখা সুতোয় জড়িয়েছিলো আঁধার। সতর্ক পেঁচার চোখদু'টো কখন যে দখল হয়ে গেল মাকড়সার আটপায়ে নিয়ন্ত্রিত সুতোয়, সেটা জেনে ওঠা হয়নি।
চন্দ্রলোপা,
কত সহজ পায়ে হেঁটে পার হয়ে গেলে বারো অয়নান্ত। মনে হয় এইতো সেদিন, বাসার দরজা থেকে ফিরে এসেছিলাম বিষণ্ণ আকাশকে সঙ্গী করে। তুমি তা কোনোদিনও জানতে পারবে না।
মনে আছে? প্রথম দেখার দিনটা? তোমার শরীর জড়িয়ে ছিলো নীল ওড়না, হঠাৎ করে অপরাজিতা আমার প্রিয় ফুল হয়ে উঠলো। কালো চুলের ব্রাকেটে তোমার ডিমের মতো মুখ, সারাজীবনের জন্য আঁকা হয়ে গেলো চোখের তারায়।

একটা পলাশ ফুলের মৃত্যু সংবাদ

একটি পলাশ ফুলের মৃত্যু ঘটেছে।
শত ক্রোশ দুর থেকে ফুলটি
এসেছিলো এই শহরের বুকে,
পাপড়ির শত-কোটি স্বপ্নেরা নিপাট ভাঁজে
জমা ছিলো বুক পকেটে।
এখন...
কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
বাসের চাকায় পিষে গেছে পীচ ঢালা রাজপথে।
কাল...
অথবা
পরশু...
কেউ খোঁজও করবেনা রাজপথে মিশে যাওয়া পলাশের লাল।
_________________________________________________
.
.
.
.
.
.
.
.
_________________________________________________
বাই দ্য ওয়ে :- গতরাতে রোড এ্যকসিডেন্টে মারা যাওয়া মামাতো ভাইটা যখন বেঁচে ছিলো, সবাই তাকে পলাশ নামেই চিনতো।

নির্লিপ্তির গভীরে ডুবে যাই

এপ্রিল ১৭, ২০১০ - ৮:২৫ অপরাহ্ন 

শিশুরা নির্যাতিত হয়। কাগজে বড় বড় অক্ষরে খবর ছাপা হয়। আমি অসীম নির্লিপ্তির সাথে এড়িয়ে যাই। মানুষেরা অমানুষের মত আচরণ করে, আমি নির্লিপ্ত হাতের ইশারায় জানালার পর্দা টেনে দেই। মানুষের দুঃখ-কষ্টগুলো আমাকে আর স্পর্শ করতে পারে না। কেমন যেনো একটা কুয়াশা ঢাকা চোখে তাকিয়ে থাকি। চোখের দরজা পার করে ঘটনাগুলো মনের ঘরে পৌছুতে পারে না।
আমি কি কোন রকমের মানসিক ডিসএ্যাবিলিটিতে ভুগছি? অনেকদিন ধরেই ভেবে চলেছি...
উত্তরের আশায় নিজের স্মৃতির দিকে একটু নজর দেই...
ঘটনা-১:-
‘৮৭/৮৮ সালের কথা, হাফপ্যান্ট পড়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাই। খুলনার বেশিরভাগ রাস্তার পাশে দিয়েই ২/২.৫ ফুট চওড়া ড্রেন। ওই ড্রেনগুলো লাফিয়ে পার হওয়া আমাদের বয়েসীদের কাছে ছিলো বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ খেলা। যাহোক, স্কুলে যাবার পথেও এমন ড্রেনের পাশ দিয়ে যেতে হত। একেবারে স্কুলের কাছে গিয়ে ড্রেনের পানিতে কচুরীপানা জমে থাকত। মাঝে মাঝে কচুরীপানার ফুল দেখে আনন্দে মনটা ভরে উঠত। কখনো সেই ফুল তুলে স্কুলে নিয়ে যেতাম, কখনো বাসায় নিয়ে আসতাম। একদিন স্কুলে যাবার পথে সবুজ কচুরীপানার ভিতরে হালকা বেগুনী আর হলুদের মিশেল দেয়া ফুল তুলতে এগিয়ে গিয়ে বেশ ধাক্কা খেলাম। সবুজ আর বেগুনীর ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা গোলাপী একটা পুতুলের মত শরীর আধা-ডোবা হয়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম আসলেই বুঝি পুতুল। পরে ড্রেনের পাশে পড়ে থাকা গাছের ডাল দিয়ে খোঁচা দিয়ে দেখি শরীরটা ফুটো হয়ে ডাল ঢুকে যায়। আমার আর কচুরীপানার ফুল তোলা হয়না। স্কুল থেকে ফিরে আসার পথে ওই শিশুর শরীরটা দেখিনি। বাসায় এসে অনেককেই জিজ্ঞাসা করায় মোটামুটি যে ধারণা পেলাম, ঐ বয়সের জন্য সেটা খানিকটা ভয়াবহ। শুনেছিলাম ঐ খানে নতুন একটা মা ও শিশু ক্লিনিক হয়েছে। মৃত বাচ্চাগুলোকে ওই ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়। এই ব্যাপারটা মাসে দুই-তিনবার দেখতাম। প্রথম দিকে যেমন উত্তেজনা হত, পরে সেটা মিইয়ে গিয়েছিল। এখনও কচুরীপানার ফুল আমি ভালোবাসি। কিন্তু তুলতে যেতে পারি না।
অনেক বড় হয়ে ওঠবার পর জেনেছিলাম, আসলে স্বাভাবিক ভাবে মৃত নবজাতকদের না, ওই ড্রেনটা ছিল এ্যাবর্শন করা শিশুদের ডাম্পিং ড্রেন।

আত্মমগ্ন কথামালা- (একটা মিছিলের স্টিল ফটোগ্রাফ)

মার্চ ২৪, ২০১০ - ৬:৩৭ অপরাহ্ন 

একটা ছবি তুললাম|
মিছিলের ছবি|
বরাবরের মতই,
এই ছবিতেও আমি মিছিলের অদৃশ্য আগুনটাকেই ধরতে চেয়েছিলাম|
তন্নতন্ন করে খুঁজেও, কোথাও আগুন পেলাম না|
ফোকাসে যাদের দেখা যাচ্ছে,
তাদের মুঠি বাঁধা হাতের কোথাও আগুন নেই|
কারো আঙ্গুলের ফাঁকে বাজারের ব্যাগের ক্লান্তি,
কারো হাত বেয়ে ঘামের সাথে নামছে নির্জীবতা,
কারো হাতে জমে আছে পাশবিকতা|
ছবির চোখগুলোর দিকে তাকাই|
কারো চোখের কোণে জমা বিষন্নতা,
কারো চোখের মনিতে মসৃন অস্বাভাবিকতা,
কেউ চোখের জিভে চেটে নিচ্ছে
পার্শ্ববর্তিনির আপাত দৃশ্যমান কামিজ ছোঁয়া বুকের বাঁক|
শ্লোগান আঁকা মুখগুলোর দিকে তাকাই|
কারো মুখ থেকে ভেসে আসছে খালি পেটের গন্ধ,
কারো মুখের ইজেলে লালসার রঙ,
কারো মুখের ভেতর জড়াজড়ি করছে অপ্রাপ্তির লালা|
আমি সেদিন একটা ছবি তুললাম|
আগুন বিহীন একটা মিছিলের ছবি|

আত্মমগ্ন কথামালা (পাখিসূত্র)

মার্চ ২২, ২০১০ - ১:০০ পূর্বাহ্ন 

.
.
একঝাঁক পাখি উড়ে যাবে জমাট বরফের ভিতর দিয়ে
ছন্দহীন ডানায় বয়ে নেবে সুখ ও দুঃখের সকল বিশ্লেষণ
পায়ের নখে ছিঁড়ে দেবে ফুলেদের রঙিন সঙ্গম
সূর্যদেবতার পাপ ছড়িয়ে দেবে মঠের দেয়ালে জানালায়
গৃহত্যাগী সন্যাসীরা কোষ মুক্ত তরবারি হাতে হত্যায় নিবিষ্ট হবে
সদ্যজাত শিশুদের রক্ত পানের উত্সব শেষে ঘরে ফিরবে কিষাণীর এলোমেলো পা
পাখিসুত্র লেখা হবে স্বর্ণকারের কষ্টি পাথরে|

আত্মমগ্ন কথামালা (কিছু দ্বিধান্বিত পংক্তি)

মার্চ ৯, ২০১০ - ১০:১০ অপরাহ্ন

*

পরিযায়ী পাখার বিস্তারে জমাট অসুখের বিকি-কিনি

কসমোপলিটন পতঙ্গের সুপার-শপের কাউন্টারে
**

ক্লান্তির ট্যালকম পাউডারের অবাধ ব্যবহার

শৈল্পিক রাত এঁকে দেয় অধরা মৌমাছির প্রতিটি চোখের নিচে
***

বিয়ার কিংবা কফি ফ্রথে একটু আধটু হিসেবী চুমুকে

নির্ণয় হয় আপেক্ষিক মূল্য পার্থক্য
****

স্ট্রাকচারাল গাইড লাইন ব্যতিরেকে গড়ে ওঠা সম্পর্ক

মুহুর্তেই ধুলিসাত হয় শেয়ার সূচকের দর পতনের শব্দে
*****

কালো গাইয়ের দুধ দিয়ে চাঁদ মামাকে ভুলানো হয়ে ওঠে না

এখানে এখন এক পেগ শ্যাম্পেন অনেক বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে
******

আলোকবিন্দু খুঁজে ফেরা জোনাকিরা ঘরে ফেরে

অনিচ্ছুক অন্ধকারের সওদা নিয়ে
*******

সন্দেহের আলো বিশ্বাসের অন্ধকার চিড়ে চিড়ে যায়

আর ঢালু পথ বেয়ে উঠে আসে সম্পর্কের অনাস্থা
********

লাশপথে মিছিল করে আসে জীবনের সৈনিকেরা

এদিকে কম্পোস্ট সারে উর্বরা হয়ে ওঠে সবুজ পতাকার বুক
*********

ঘাসের উপর শিশির জমে থাকা না থাকে কিছু এসে যায় না অনেকেরই

শুধু চোখের কোণে জমলেই মাথা তুলে দাঁড়ায় আমার যত পাপ
**********

বিশ্যল্যকরণী বৃক্ষের শেকড় খেয়ে গেছে কর্পোরেট ইঁদুর

এবার দুনিয়া কাঁপানো কয়েক মিনিট অভিনয়ের পালা

মেয়েটা নদীকে “মা” ডাকতো

মার্চ ৮, ২০১০ - ২:২৫ পূর্বাহ্ন 

_________________________________________________________
অনেকদিন আগে এপু যখন কবিতাটা লেখে, আমি কথা দিয়েছিলাম এটাকে ভিত্তি করে আমি একটা গদ্য লিখব। নানা কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। কালকে ওর কবিতাটা আবার দেখে, দেয়া কথাটা রাখার কথা মনে হ’লো। জানিনা কতটা এক্সেপ্টেবল হবে। তবে এপু যদি বলে গদ্যটা তার কাছে আপ টু দ্য মার্ক হয় নি, তাহলে আমি এটাকে ড্রাফট করে ফেলব।
কারণ, গল্পের ভিত্তি হচ্ছে তার কবিতা।

_________________________________________________________
মেম্বার বাড়ির উঠোন ঘেঁষে ঋজু দাঁড়িয়ে
থাকা শিমুল গাছটা থেকে তুলো বাতাসের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে ভেসে যাচ্ছে। ত্বকে পলিমাটির মাধুর্য নিয়ে তুলোর পিছু পিছু ছুটছে মেয়েটা। গেঁয়ো পথটা পার হয়ে একটা
পেঁজা ঘুরে গেল, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকা কাশবনের ডাক উপেক্ষা করার উপায় জানা নেই তার। কিংবা তার সাথে উচ্ছসিত ছুটে বেড়ানো কিশোরীর মনের সাথে তার অলৌকিক
যোগাযোগ ঘটে গেছে। কিশোরী চোখে জেগেছে অতীতের ঘোর।
কত বয়স হবে মেয়েটার? দশ? নাকি এগার? বয়স যাই হোক, এখনই সারা দুনিয়ার সব দুঃখকে চিনে নিয়েছে সে। ভুল হ’লো। সব দুঃখ কষ্ট না, যেহেতু শরীরের বাঁক গুলো এখনো ভরাট হয়ে ওঠেনি, সেহেতু নারী জন্মটা নিয়ে বিতৃষ্ণা জাগা অভিজ্ঞতা হয়নি তার।
বাবার কথা তার মনে তেমন ভাবে মনে নেই। শুধু মনে আছে; যখন তাদের একটা ঘর ছিলো, একচিলতে দাওয়ায় বসে মা কাঁথার জমিনে সুঁই সুতোয় নকশা ফুটিয়ে তুলতো প্রতি বিকেলের রোদে হেলান দিয়ে, সে সময় একজন এসে দাঁড়াতো মায়ের সামনে। এক হাতে খলুই নিয়ে এঁটেল মাটি রঙের লোকটা যখন নিজের শরীরের দ্বিগুন লম্বা ছায়াটা ফেলত
মায়ের পায়ের উপর, মায়ের মুখে অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠতো কোনো কারণ ছাড়াই। মনে আছে, কোন এক পরবে বাবা নামের লোকটা তার জন্য টুকটুকে লাল জামা কিনে এনেছিলো যা যখের ধনের মত আগলে রেখেছিলো সে। একদিন বিকালে লোকটা তার শরীরের দ্বিগুন ছায়াটা আর মায়ের পায়ের উপর ফেলেনি। আরো কয়েকজন মিলে তার শরীরটাকেই এনে রেখেছিলো তাদের উঠোনে, সেদিন আর তার শরীর এঁটেল মাটির রঙ ধরে রাখতে পারেনি, হয়ে গিয়েছিলো রাতের মত কালো। মায়ের মুখের অদ্ভুত আলোটা মরে গিয়েছিলো সেদিন থেকেই।
মা......মা......মা......
ডাকতে ডাকতে মেয়েটা ছুটে চলেছে নদী তীরের কাশবন ধরে।
মা ই ছিল তার জীবন, আর ছিলো বাবাই। বাবা মারা যাবার কিছুদিনের ভিতরেই বাবাই বের হয়ে এসেছিল তার মায়ের ভিতর থেকে। মা যখন কাজে যেত, বাবাই কে দেখে
রাখার দায়িত্ব দিয়ে যেত তাকে। আস্তে আস্তে সে নিজে হয়ে উঠতে থাকে বাবাইয়ের আরেক মা। তার ছোট্ট জীবন্ত পুতুল ছিলো বাবাই। রাতে মায়ের দু’পাশে ঘুমাতো দু’জন। ঘুমের
ঘোরে মায়ের হলুদ-নুন গন্ধী আঁচলটাকে সে আঁকড়ে ধরত বারেবার। গন্ধটা তাকে নির্ভরতা এনে দিতো। মেম্বারের বাসায় কাজ সেরে মা যখন খাবার নিয়ে ফিরত, সারাদিনের গল্পের খই
ফুটতো তার মুখে। চাহিদা খুব বেশি ছিলো না তার। সকালে নুন-পান্তাতেই মন ভরে যেতো, কখনও মায়ের কাছে আবদার করতো ট্যাংরা মাছের চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খাবার। বিলাসিতা, বলা
যেতে পারে। বাবাইকে কাঁখে নিয়ে সে মাঝে মাঝেই ছুটে যেতো নদীর ধারে। দাঁতে একটা কাশের ফুল কামড়ে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকত। এঁটেল মাটিতে আঁকিবুকি কাটতো পায়ের
বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে। কখনো ফুল, কখনো মাছ, কখনো হিজিবিজি। আকাশে উড়ে বেড়ান পাখিও আঁকার চেষ্টা করেছে অনেকবার। একবার বাবাইয়ের পা বেয়ে উঠে এসেছিলো একটা জোঁক। একটুও ভয় পায়নি সে। হাতে থাকা বড়ই খাবার নুনটা জোঁকের মুখে দিয়ে দিতেই টুপ করে খসে
পড়েছিলো জোঁকটা।
আজকেও গিয়ে বসেছে সে নদীটার ধারে। কাশবন ধরে আসার পথে তার নির্ভরতার গন্ধে মনটা মৌ-মৌ করে উঠছিলো। নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে তার মনে হচ্ছে মায়ের আদর মাখা স্পর্শ তার পা দু’টো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। অনেকদিন আগের মত করে সে নদীর কাছে আবদার করছে তার প্রিয় বিলাসিতার। চোখ বেয়ে নামছে আষাঢ়ের বৃষ্টি।
এমনি এক বৃষ্টির রাতে। ঝুম বৃষ্টি। মায়ের ফিরে আসতে দেরি হচ্ছে দেখে বাবাইকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে চলছিলো মেয়েটা। আকাশের বুক ফেঁড়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো আর বাবাই বারবার কেঁপে উঠছিলো। মেয়েটারও বুকের ভিতর দুরুদুরু করছিলো কি জানি কি আশংকায়। মা ফিরে এসেছিলো অনেক দেরি করে। ভিজে একশা। মেয়েটাকে বলেছিলো “জাইগা থাকিসরে মা, আইজকা রাইতে আকাশ মাডি ভাইঙ্গা বান আইতে পারে”। মেয়েটা জেগেই ছিলো। কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি তার মা কে জেগে থাকতে দেয় নি। বাবাইকে বুকে
জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। অনেক রাতে গুমগুম করে শব্দ শুনে মেয়েটা বিছানার কোনায় বসে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মা কে ডেকে তুলেছিলো ঘুম থেকে। কাঁচা ঘুম থেকে জেগে উঠে মা কোনো দিশে খুঁজে পাচ্ছিলো না। একহাতে বাবাইকে জড়িয়ে আরেক হাতে মেয়ের হাত ধরে দৌড়
দিয়েছিলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। মাটিও কাঁপছিলো, যেনো ভয়ে। হঠাৎই পিছল রাস্তায় মায়ের পা হড়কালো। বাবাই ছিটকে পড়েছিলো মায়ের হাত থেকে। মেয়েটাকে মা হিজল গাছটার
কাছে ঠেলে দিয়ে আকাশ চেড়া বিদ্যুতের আলোতে দেখতে পেলো বাবাই একটু দূরে মাটির উপর শুয়ে আছে। দৌড়ে সেখানে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে হিজল গাছটার দিকে পা বাড়াতেই কড়কড় শব্দে কাছে কোথাও বাজ পড়ল, তার আলোতে চারদিক দিনের মত উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আর তার সামনেই হাঁ করে বাবাই আর মা কে গিলে নিলো নদীটা।
মেয়েটা এখন নদীকেই মা বলে ডাকে। কিন্তু মা সাড়া দেয় না।

হাতুড়ে গদ্য (সাদা-কালো-লাল-নীল)

ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০১০ - ২:৪২ অপরাহ্ন 

লাল
টেলিফোনটা
বেজে উঠল। লাল টেলিফোন। সবে লাল রঙ জমে উঠছিল চোখের তারায়, এর ভেতরেই লাল
টেলিফোনটা বেজে উঠে সব ভজঘট বাধিয়ে দিলো।
অভিজাত
লেকটার পাড়ে অস্তরাগের সব লাল শরীরে মেখে পড়ে আছে একটা কিশোরী। তার পরিধেয় জুড়ে
ফুটে রয়েছে একঝাঁক লাল ফুল। গলা ঘিরে লাল লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য ভাবে
তার ঠোঁট দু’টো একেবাররেই অক্ষত আছে, সেখানে জ্বল জ্বল করছে টুকটুকে লাল লিপস্টিক।
আকাশের
লাল রঙ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। ইষৎ লাল আকাশের নীচে গাঢ় লাল টেইল লাইট
জ্বেলে শাঁ শাঁ করে ছুতে যাচ্ছে একাধিক গাড়ি।

সাদা
সকালটা শুরু হয়েছিলো ধবধবে সাদা মন নিয়ে। মনের রঙের সাথে জামার রঙটাও
মিলে গিয়েছিলো জুঁই নামের কিশোরীর। প্রতিদিনকার মতই সে হেঁটে গিয়েছিলো বহুচর্চিত
পথ ধরে। শুভ্র সকালের আনন্দে সে ভুলে গিয়েছিলো গত বিকেলের স্মৃতি।
দুপুর হয় হয়, ঝকঝকে রোদে বড় বড় বাড়িগুলো থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো
অলৌকিক সাদা আলো। সব শুভ্রতাকে নিজের সাথে নিয়ে জুঁই পথ চলছিলো। একটা ধবধবে সাদা
গাড়ি হঠাৎই এসে থেমেছিলো তার পাশে। সেই সাদা গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে এসেছিলো
দুপুরের অলৌকিক শুভ্র আলোতে।

নীল
আকাশে একটুও মেঘ নেই। জানালা দিয়ে একটুকরো নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে। যে
ঘরে সে আছে, সেই ঘরের দেয়াল, আসবাব সবই নীল। নীল ঘরের এক কোনায় আতংকে নীল হয়ে বসে
আছে মেয়েটা।
নীলচে লাইটের আলোতে তিনটে নীল শরীর দেখা যাচ্ছে বসে আছে নীচু একটা
টেবিলকে ঘিরে। নীল বেডকভার ঢাকা বিছানাতে একজন শুয়ে আছে। যার হাতের সিগারেট থেকে
নীলচে ধোঁয়া পাক খেতে খেতে উড়ে যাচ্ছে নীল সিলিং এর দিকে। দু’জন উঠে দাঁড়াল।
মেয়েটা নীলতর হয়ে উঠলো। আতংকের সাথে যোগ হয়েছে বেদনার নীল।

কালো
ছেলেটার মনে ছিলো মহাবিশ্বের অন্ধকার। যখন যেদিকে সে দৃষ্টি দিয়েছে,
সেদিকেই ছড়িয়ে গিয়েছে কালো রঙ। মেয়েটাকে সে উপহার দিতে চেয়েছিল কালো র‌্যাপিং মোড়া
অন্ধকার। কালো উপহারের প্রত্যাখ্যান তার ভেতরের কালোর উপর আরো কয়েক পোঁচ কালির পরত
ছড়িয়ে দিয়েছিলো।
মনের অন্ধকার কোণে জেগে উঠেছিলো কালো দানবেরা।

সাদা-কালো-লাল-নীল

গাঢ় আঁধারে ডুবে যাওয়া জুঁইগুলো
সকল সুগন্ধ অতিক্রম করে ঝরে পরে
এলোমেলো হয় জোছনাবিলাসী একদল যুবকের পদক্ষেপ
বিভ্রান্ত নীলাভ ছড়িয়ে পড়ে বিরাজমান সন্ধ্যার লালে।

আত্মমগ্ন কথামালা (নৈর্ব্যক্তিক সময়ের শব্দ)

ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১০ - ১:৪৬ অপরাহ্ন

কয়েকটা টেলিফোন বেজে উঠেছিল কোথাও
আর, রাতজাগা ঘুমেদের আস্ফালনে চাপা পড়ছিলো
বিবিধ আগুনের তাপ
ত্রিধাবিভক্ত জিহ্বা নিয়ে উল্লসিত সাধুগোত্র
অন্যের রক্তে পানপাত্র ভরে নিচ্ছে অবিরাম
পাথর চোখের কার্নিশে ঘর বাঁধা প্রজাপতি, তোমরা উড়ে চলে যাও
এখানে স্বপ্নের বলি দেয়া হবে কিছুক্ষণ পর
বেজে উঠবে বিকলাঙ্গ নর্তকীর কাঁচের চুড়ি
হাড়ের গভীরে হেঁটে যাওয়া ঘুন পোকা, তুমি কেঁদে উঠোনা
এখনি প্রস্তুত করা হবে রাজকীয় সিংহাসন
অভিষেক হবে ক্লীব জনকের যৌনাচার
কর্মীরা ফিরে চলে গেছে মেঠোপথ অসমাপ্ত রেখে
দায়ভার একা অবিরাম সময়ের ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
______________________________________________________________
কবিতায় পাদটিকা দেবার অর্থ কবিতাকে নগ্ন করে ফেলা...
তবে অনেকেরই অভিযোগ আমার কবিতা নাকি দুর্বোধ্য Sad
যার জন্য বাধ্য হয়ে পাদটিকা দিচ্ছি Sad Sad Sad
এটা একটা রাজনৈতিক/বর্তমান নষ্ট সময়ের নির্দেশক
কবিতা...
কারো কোনো কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন হিসেবে রেখেন আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমার এই কবিতাটাকে নগ্ন করে দেবার Sad

হাতুড়ে গদ্য (বারেকের টিভি)

ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০ - ১২:১৭ অপরাহ্ন

বাজারের ঠিক শেষ মাথায় বারেকের চা’র দোকানটা। মৃত্যুর দিন গুনতে থাকা বুড়ো বাবলা গাছটা দাঁড়িয়ে এতদিন ধরে কিছু মানব শিশুর বিভিন্ন উচ্চতার অত্যাচার সহ্য করে আসছিল। তার চিরল পাতার ছায়ার নাগালের ভিতরেই বারেক দোকানটা শেষ পর্যন্ত বসিয়েই ফেলল। মফস্বলের এই মৃতপ্রায় বাজারে দোকান বসানোর মত নির্বুদ্ধিতা নিয়ে বাজারের লোকেরাও বারেককে কম খোঁচায়নি, সে নিজ সিদ্ধান্তে অনড়। সাধারন চা’র দোকানগুলো যেমন হয় বারেকের দোকান তা থেকে উন্নত কিছুই না। বরং খরচ কমানোর জন্য কেরসিন স্টোভের বদলে মাটির চুলা বসিয়েছে, যেটা ধরাতে তাকে প্রতি ভোরেই নাকাল হতে হয়। তবে একটা বিশেষত্ব আছে তার দোকানে। সেটা আর কিছুই না, একটা ১৪ ইঞ্চি সাদা-কালো টিভি। যার এন্টেনাটাকে একটু কায়দা করে, পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ডিশের তারের সাথে প্যাঁচ খাইয়ে দেয়া হয়েছে।
অলস দুপুরের বাবলার চিরল ছায়ায় হেলান দিয়ে অনেকেই বসে থাকে। এককাপ চায়ের সাথে একটা টোস্ট বা একটা বন নিয়ে মুলতঃ টিভির অনুষ্ঠানই সবাই খেতে পছন্দ করে। হয়ত কখনো কোন নায়কের রিকশা চালাতে চালাতে শিল্পপতির মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তাদের হাতে থাকা শুকনো বিস্কুটকে ক্রীমের নরম আবরণে ঢেকে রাখে। নয়ত কোন গানের দৃশ্য দেখে পাশে বসা জনের পিঠে থাবা দিয়ে “মাগীর দুধ দুইটা দেখছোস? শালার অক্করে গাছপাকা আমের লাহান” বলে উত্তেজনা প্রশমণের ব্যর্থ চেষ্টায় জোরে জোরে চায়ের কাপে চুমুক দেয় কেউ। এই চুমুকের সময়ই অনেকে খেয়াল করে তাদের কাপে আর তলানি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। ফের জমিয়ে বসে লুঙ্গির খুট থেকে কেউ কেউ বিড়ি বের করে, কেউ বের করে খুচরো টাকা।
মাঝ সকালে আসেন কিছু বয়স্ক মানুষ। তাদের কারো মুখে তৃপ্তির আলো ঝলমল করে, কারো মুখে ভরসা হারানো আঁধারের ছোঁয়া। তাঁরা বসেন, এক বা দুই কাপ চা খান। টিভিতে দেখায় মিছিল, নাটক, রাস্তায় জ্বলতে থাকা আগুন কিংবা দেখায় রাজধানীর কোনো বড় দালানে ঢুকতে বেরোতে থাকা মানুষ। বয়স্ক চা প্রেমীরা তাকিয়ে থাকেন চুলোয় জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে টিভিতে দেখাতে থাকা বিবিধ সাদাকালো আগুনের সাথে বাস্তবের রঙ্গিন আগুনকে মিলিয়ে দেখেন। কখনো কাশির দমকে বাঁকা হতে হতে বারেককে আরেকটা আদা চা’র অর্ডার দেন কেউ। কেউ বা বাবলার শরীরে, মধ্যমায় লেগে থাকা চুনের শেষাংশ মুছতে মুছতে রক্তের মত পানের পিক ছুড়ে দেন রাস্তার ধুলোর দিকে।
নানা বয়েসী শিশুরা প্রায় সারাটা দিনই আশেপাশে খেলা ধুলা করে। আর বড়দের উচ্চারিত নানান শিক্ষা জমা রাখতে থাকে মগজের বিভিন্ন কুঠুরীতে। মাঝে মাঝেই সেগুলোর সফল প্রয়োগ চলে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির অধিকারীর উপরে। কখোনো সখোনো দোকানে আসার উপলক্ষ্য পেলে মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকে সাদাকালো শিশু বা বয়স্ক লোকেদের দিকে। কচি মনে হয়তো সাদাকালো আর রঙ্গীন বাস্তবের পার্থক্য করতে পারে না। তাদের বিস্ময় হয়ত এতটুকুই যে, এত সুন্দর করে সেজে থাকা মানুষ গুলোর মুখ বা জামা-কাপড়ে আমাদের মত রঙের ছোঁয়া নেই কেন?.
সন্ধ্যায়, দোকানীরা তাদের পসরা বন্ধ করে ঘরে ফেরার আগে, পারস্পরিক বিকি-কিনির তুলনা মূলক আলোচনার জন্য আসে। আসলে প্রতক্ষ্য আলোচনার থেকে বেশি প্রাধান্য পায় চা’র সাথে সাথে টা’র বিল দেবার সময়কার পরোক্ষ লাভ-ক্ষতির বিবরণ। এখানেও স্পষ্টতঃ দু’টো শ্রেণী দেখা যায়। যাদের সামর্থ কম তারা বেশী সময় নষ্ট না করে কোনোমতে এককাপ চা খেয়ে চলে যায়। যাবার আগে অবশ্য টিভির সাদাকালো ছবির সাথে নিজেদের সাদাকালো জীবনের মিল দেখে একটু হাসির রঙ মনের ভিতর নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। আর দ্বিতীয় শ্রেণীটা বেশ আয়েশ করে অনেক সময় নিয়ে চা খায়। সাথে টিভির সাদাকালো রঙ এর দিকে খানিকটা উপহাস নিয়েই তাকিয়ে থাকে।
রাত অনেকখানি গভীর হলে ঝলমলে গাঢ় রঙ এর জামা-কাপড় পরা কিছু মেয়ে দোকানের আশপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করে। তাদের কেউ কেউ এসে বসে দোকানে। তবে তারা শুধু চা’ই খায়। শুন্য দৃষ্টিতে তারা সাদাকালো টিভির মানুষ গুলোর সাথে সাথে নিজেদের কৃত্রিম রঙ্গীন সাজ আর তাদের ক্রেতাদের ভেতরের কালো চাহিদাটাকে মেলাবার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।
বারেক নিজে কখনো আগ্রহ নিয়ে তার সাদাকালো টিভির দিকে তাকায় না। সে বরং তার খদ্দেরদের মনের ভিতরের নানা রঙের খেলা যেভাবে মুখের পর্দায় ফুটে ওঠে তা নিয়েই মগ্ন থাকতে ভালবাসে। দোকানের ঝাঁপ নামাতে নামাতে বারেক ডাক দেয় “আয় আয়... তু তু তু”। কোথা থেকে জানি একটা কুকুর ছুটে আসে, বাসি বনরুটি গুলো সামনে নিয়ে কৃতজ্ঞতার রঙ ছড়িয়ে দেয় রাতের অন্ধকারে। দোকানের ভিতরে শুয়ে বারেক অনুভব করতে থাকে সাদাকালো জীবনে রঙের খেলা গুলো।

আত্মকথন...

ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১০ - ৯:৩০ অপরাহ্ন 

ইংরেজি গান শোনার অভ্যাস ওভাবে ছিলনা কখনো। মূলতঃ ইন্টার জীবন থেকে একটু একটু ইংরেজি গানের জগতে হাঁটা চলা। তবে এখনও ইংরেজি গানের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ গড়ে ওঠেনি। আর আমার টেস্টও খানিকটা ভেজাইল্যা। কোনো স্টেশন নাই। গান শোনা শুরু জ্যাকসন দিয়ে। বন্ধুর পাল্লায় পড়ে মারকস, এডামস, বোল্টন, ডেনভার, ম্যাডোনা, টয়াইন, মেটালিকা, মেগাডেথ, এমিনেম ব্লা ব্লা ব্লা... সবরকম হাবিজাবিই শুনি। ভালো লাগে কিংবা লাগে না।
৯৭ বা ৯৮ এ মনেহয় একুশে টিভিতে একটা অনুষ্ঠান হ’ত এমটিভি কাউন্টডাউন বা এমটিভি টপ টেন নামে। ইউকে বা ইউএস টপ চার্ট দেখান হ’ত অনুষ্ঠানটাতে। সেখানেই প্রথম এই গানটার মিউজিক ভিডিও দেখি। এবং দেখেই পুরা তব্ধা। এরপর খোঁজাখুঁজি করে গানটা রেকর্ড করাই। লিরিক্স জোগাড় করি। এখন পর্যন্ত এই গানটা আমার কাছে সবরকম প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। যখনই আমি হতাশায় ডুবে যেতে শুরু করি তখনই এই গানটা আমাকে সেই নিমজ্জমান অবস্থা থেকে বের করে আনে। যখনই আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিকুলতার সম্মুখীন হই এই গানটাই আমাকে নিজের পথে অটল দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করেছে। আশা রাখি এবারও গানটা আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
গানটা জন বন জোভি এর ইট’স মাই লাইফ। আমার আজীবনের জন্য প্রিয় একটা গান।
This ain't a song for the brokenhearted
No silent prayer for the faith departed
And I ain't gonna be just a face in the crowd
You're gonna hear my voice when I shout it out loud
It's my life
It's now or never
I ain't gonna live forever
I just wanna live while I'm alive
(It's my life)
My heart is like an open highway
Like Frankie said, "I did it my way"
I just wanna live while I'm alive
'Cause it's my life
This is for the ones who stood their ground
For Tommy and Gina who never backed down
Tomorrow's getting harder, make no mistake
Luck ain't even lucky, gotta make your own breaks
It's my life
And it's now or never
I ain't gonna live forever
I just wanna live while I'm alive
(It's my life)
My heart is like an open highway
Like Frankie said, "I did it my way"
I just wanna live while I'm alive
'Cause it's my life
You better stand tall
When they're calling you out
Don't bend, don't break
Baby, don't back down
It's my life
It's now or never
'Cause I ain't gonna live forever
I just wanna live while I'm alive
(It's my life)
My heart is like an open highway
Like Frankie said, "I did it my way"
I just wanna live while I'm alive
(It's my life)
And it's now or never
I ain't gonna live forever
I just wanna live while I'm alive
(It's my life)
My heart is like an open highway
Like Frankie said, "I did it my way"
I just wanna live while I'm alive
'Cause it's my life!

হাতুড়ে গদ্য (ক্যাকফনি)

জানুয়ারী ৩০, ২০১০ - ২:১৮ পূর্বাহ্ন 

সন্ধ্যার ঝিম ধরানো সিগন্যালে; এলোমেলো কিন্তু সারিবদ্ধ ঝিঁঝিঁ পোকাগুলোর চিৎকার শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ আলফেসানী, কানে ইয়ার-প্লাগের হোসপাইপ লাগিয়ে মগজের শুকনো জমিতে কিছু শব্দ আর ছন্দের চাষে ব্যাস্ত ছিলো। হঠাৎই রিয়ার ভিউ মিররে তাকিয়ে স্মৃতির কলসি ভেঙ্গে একঝাঁক কোমল ছবি ছড়িয়ে ফেলল এদিকে সেদিকে।
-----------
চন্দ্রলোপার ছিপছিপে শরীরটা জড়িয়ে আছে দুধসাদা কামিজ যার উর্বর জমিন জুড়ে অসংখ্য সীমের ফুল। আংগুলের সকল মমতা দিয়ে ধরা কালো কালির একটা বলপয়েন্ট। একচিলতে বিকেলের রোদ তার চুল আর চোখের কার্ণিশ বেয়ে নেমে এসে খাতার এক কোণে লক্ষী বেড়াল হয়ে বসেছে।
------------
বেশ অনেকদিন ধরেই হাল্কা ধুসর মনখারাপের ধুলো জমা হচ্ছে আলফেসানীর ঘরের মেঝেতে। আজকে সেখানে ঢুকে দেখলো আনন্দের পায়ের ছাপ গুলো প্রায় অদৃশ্য হয়ে এসেছে। কোনায় কোনায় বাস্তবতার মাকড়শার ঝুলে ছেয়ে গিয়েছে। চোখ বন্ধ করে এগুলোই দেখছিলো সে। হয়ত ঘরে ঝুলিয়ে রাখা কোমল ছবিগুলোও খুঁজে ফিরছিলো।
-----------
সন্ধ্যাভিমুখী মৃদু আলোর রাস্তায় চন্দ্রলোপা আর তার সাথীদের সামনে দিয়ে উদাসীন ভঙ্গীতে হেঁটে যেতে যেতে; সদ্য যৌবন ছোঁয়া ঠোঁটে, শো-অফের চিন্তায় উদ্বিগ্ন ধোঁয়ার আড়াল তৈরী করা। সাথে আড়চোখে চন্দ্রলোপার চোখের কুঁড়ির পূর্ণাঙ্গ ফুলে পরিণত হয়ে ওঠা উপভোগ।
------------
আলো-আঁধারীতে যে আবছা বয়েসের আদল ফুটে উঠেছে তাতে মেয়েটার চন্দ্রলোপা না হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিছুক্ষণ আগের অবস্থান থেকে পেটমোটা রিকশাটা এগিয়ে আসাতেই এই বিপত্তিটা দেখা দিয়েছে। আলফেসানীর তখনকার মোলায়েম মাটির হৃদয়ে যেই কোমল ছবিগুলো আঁকা হয়েছিলো সেগুলোর বয়েস একবিন্দুও বাড়েনি। রিকশায় বসে থাকা চন্দ্রলোপাও সেই সদ্য যৌবনের সবটুকু গৌরব নিয়ে অবিচল।
আলফেসানীর একই সাথে খুব ইচ্ছে হচ্ছে পিপড়ের পেটের ভিতর থেকে বের হয়ে এই চন্দ্রলোপার সাথে পরিচিত হতে, আবার মনের গহীণ কুয়ার ভেতর থেকে পুরোনো চন্দ্রলোপার প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। যেই শব্দের প্রতিটা ছোঁয়া মনখারাপের ধুলো পড়া ঘরের কোমল ছবিগুলোর স্পটলাইট এক এক করে জ্বালিয়ে তুলছে।
________________________________________________________________
**cacophony -
1. harsh discordance of sound; dissonance: a cacophony of hoots, cackles, and wails.
2. a discordant and meaningless mixture of sounds: the cacophony produced by city traffic at midday.
3. Music. frequent use of discords of a harshness and relationship difficult to understand.
_________________________________________________________________

আত্মমগ্ন কথামালা (মৃত্যু)

জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:১৬ অপরাহ্ন 
 
আয়নাতে দেখি দু'টো অপরিচিত চোখ তাকিয়ে রয়েছে
সকালের জুতোগুলো চিত্কার করে বলে চিনি না তোমাকে
শার্ট বা টি-শার্টেরা, মনিবের গন্ধ ভুলে যাওয়া কুকুরের মতো
দূরে দূরে সরে যেতে চায়
গলার স্বরে শুকনো পাতাদের প্রতিধ্বনি
চমকে দেয়
দুপুরের রোদ-বিকেলের প্রলম্বিত ছায়া-রাতের নৈঃশব্দ ঘেরা অন্ধকার
ধূলিকণার চুমুতে শিহরিত, মৃত এবং উত্থানরহিত দেহের প্রতিটি কোষ |