সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

ধর্মের সো কল্ড সু-শীতল ছায়াতল থেকে গনগনে রোদেলা যুক্তির পথে আমার যাত্রা...

ক্লাস থ্রি/ফোরে পড়ি, খুলনার খালিশপুরে থাকি। প্রতিবেশীরা মোটামুটি সবাই বিহারী।

"এএএ মিস্টার...লাড্ডান ভাই...গুড্ডুউউউ"

বলে রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাবার সময় আমাদের আশপাশের কয়েকটা বাসার যুবক বয়সীদের নামাজ পড়ার জন্য ডাক দিতেন তাদেরই সমবয়সী একজন। ভোরবেলার ডাকটাই শুনতে পেতাম সবচে জোরে। এই ডাক শুনে আমিও কোনোকোনো দিন উঠে ফজরের নামাজ পড়তাম বাসাতেই। বাসার পরিবেশ কট্টর ইসলামী না হলেও ইসলামী। বুঝতে শেখার পর থেকে বাবাকে কখনও দেখিনি নামাজ কাজা করতে। মা, বোন সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। দাদা-দাদীকে দেখিনি। তবে নানা- নানু, মামা সবাইকে দেখেছি নামাজ পড়তে। নানা মৃত্যুর আগেও নামাজ পড়েছেন।

আমি শৈশব পার করেছি একই সাথে কোরান আর বিভিন্ন প্রকার বই পড়ে। এর মধ্যে সেবা, প্রগতি প্রকাশনী, শরৎচন্দ্র, বিভুতিভুষণ যেমন ছিলো তেমন ছিলো নানার ধর্মীয় বই এর কালেকশন।

বিভিন্ন ওলি আউলিয়াদের জীবনী পড়তে পড়তে মনে হলো তাদের মতো আমাকে হতে হবে। শুধু মনে খটকা লাগতো একটাই যে ওলি আউলিয়ারা সময়ে অসময়ে কিভাবে নানান মজেজা দেখান? আমার নানাও তো উনাদের মতো নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, আল্লা কে ডাকেন তাহলে নানা কেন কোন মজেজা পারেন না?
একটা সময় আসলো যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, কোরান তেলওয়াত করি, কোরানের মানে জানার চেষ্টা করি। এভাবে ক্লাস নাইনে উঠলাম।

ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলো এসময়। আমি প্রবল ভাবে একটা জিনিস চাচ্ছিলাম। যানতাম বারবার ইনশাআল্লাহ পড়লে আল্লা ভবিষ্যতের ব্যাপারে নিজে জিম্মাদার হয়ে যান। অগুনিতবার ইনশাআল্লাহ জপ করলাম, আল্লা সহায়তা করলো না। বয়ঃসন্ধিক্ষণে ঘটনাটা মনে খুবই তোলপাড় তুললো। তাহলে আল্লা নিজে যেটা বলেছেন সেটা তাহলে সব সময় কাজ করেনা। তবুও মনকে সান্তনা দিলাম এই বলে যে আমার পড়ায় মনে হয় কোন গলদ ছিলো। ছোট্ট ঘটনা তবে মনে দাগ কেটে আছে।

কোরান হাদীস পড়া বাড়িয়ে দিলাম। জানার আশায়। সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই পড়া তো আছেই। দেখলাম বিজ্ঞানের অনেক কিছুই কোরান হাদীসে যেভাবে বর্ণিত আছে তার সাথে ঠিক মেলে না। খটকা। নানার কাছে নেয়ামুল কোরান নামের একটা বই ছিলো, বাসায় ছিলো মকসুদুল মো্মেনীন। মকসুদুল মো্মেনীন পড়তাম আব্বু আম্মুকে লুকিয়ে। আমার যৌন বিষয়ক সুরসুরি জাগানিয়া প্রথম বই। নেয়ামুল কোরান, তাতে কোরানের বিভিন্ন আয়াত দিয়ে তার ফজীলত বর্ণনা করা ছিলো। সেগুলো বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা শুরু করলাম। কলেজে উঠেছি তখন। নেয়ামুল কোরানের কোন আয়াতেরই ফজীলত পাইনা। নামাজ পড়া চলছে পুরোদমে। কিন্তু মন উঠে গেছে অনেক খানিই।

কিছু সাধারন ধর্ম সম্বন্ধীয় প্রশ্ন মাথায় আসে। উত্তর পাইনা। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গেলাম একটা প্রশ্ন নিয়ে। যিনি আবার আমাদের স্কুলের ধর্ম স্যার।

খুবই সাধারণ প্রশ্ন; আল্লার হুকুম ছাড়া যদি গাছের একটা পতাও না নড়ে, তাহলে আমার পাপের জন্য কে দায়ী হবে? আমি না আল্লা?
স্যার উত্তর দিলেন- আল্লা তোকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন ভালো মন্দ আলাদা করে চলার জন্য। অতএব তোর পাপের জন্য তুইই দায়ী থাকবি।
আমি বললাম- তাহলে স্যার, আল্লা যদি এটুকু থেকেই তার সবচে প্রিয় সৃষ্টিকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে কিভাবে সে সর্ব শক্তিমান?
স্যার আমাকে মারতেই বাকী রেখেছিলেন।

দেখলাম ধর্মের সো কল্ড সু-শীতল ছায়া, রোদের ভিতর চোখে ঠুলি পরিয়ে একজনকে দাঁড়া করিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই না। যাতে সে ভাবতে বাধ্য হয় "চারদিকে যেহেতু আঁধার আঁধার লাগছে তাহলে নিশ্চয়ই ছায়ার ভিতরে আছি। রোদের উত্তাপ? সেটা আসলে আল্লা আমার পরীক্ষা নেবার চেষ্টা করছেন, আমার বিশ্বাস কতটা পোক্ত সেটা দেখার জন্য।"

ওহো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম গীতা, বাইবেল, মহাভারত, রামায়ন স্কুল জীবনেই পড়েছি ঐ ধর্মগুলো কতটা ভুল আর ইসলাম কতটা সঠিক তা প্রমানের জন্য।

আরো বেশি বেশি পড়া শুরু করলাম, যুক্তি প্রয়োগ শুরু করলাম, কার্যকারণ দেখা শুরু করলাম। দেখলাম তখনকার সময়ের হিসাবে বিচার করলে ধর্মগুলো যথেষ্ট আধুনিক ছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, এখন আর ঐসব উদ্ভট অলৌকিক কাহিনীতে পরিপুর্ণ ধর্ম গুলোর কোনো প্রয়োজনই নেই।
ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা/আল্লা/ভগবান/গড/ঈশ্বর/সুপ্রীম বিইং, স্বর্গ/বেহেশত, জাহান্নাম/নরক, পরকাল/পরজন্ম আসলে মানব মনের উইশফুল থিংকিং ছাড়া আর কিছুই না।

ধর্মের সু-শীতল ছায়ার ঠুলি খুলে ফেলে শুরু হলো যুক্তির গনগনে রোদেলা পথে আমার পথচলা...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন