মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০১০

গন্ধপূরাণ

মানুষের স্মৃতিতে কোন অনুভুতিটা সবচে প্রথম মনেহয় স্পর্শ। এর পরপরই যে অনুভুতিটা ছাপ ফেলে সেটা হ'লো, অন্ততঃ আমার ধারণায়, গন্ধ। শিশুবেলা থেকে একটা মানুষ তার আশপাশের মানুষদের সাথে তাদের গন্ধ দিয়ে পরিচিত হয়। আমি অবশ্য এখানে এসব নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসিনাই। আমি আসলে শিশুবেলার যেসব গন্ধগুলো আমি এখনো ভালোবাসি সেগুলো নিয়ে স্মৃতিচারণ টাইপ কিছু লেখার চেষ্টা করছি। যদিও আমার কাঠখোট্টা লেখার ধরন কারো ভালো লাগবে কিনা জানি না।

আম্মুর গায়ের গন্ধ

যখন কিছু কিছু বুঝতে শিখেছি তখন থেকে আম্মুর গায়ের গন্ধকে আমি খানিকটা পোলাওয়ের চাল সাথে খানিকটা অন্য কিসের জেনো মিক্সড একটা গন্ধ হিসেবে ডিফাইন করি। এখনও মাঝে মাঝে আম্মুর গন্ধটা নিতে ভালোবাসি...

নেইলপলিশের গন্ধ

দাদু (বড় বোন) যখন নেইলপলিশ দিতো। আমি দাদুর পাশে বসে থাকতাম শুধুমাত্র নেইলপলিশের গন্ধটা নেবার জন্য। পাঁচ বা দশ পয়সার কয়েন দিয়ে রাখতো বোতলটার উপর যাতে তাড়াতাড়ি না শুকিয়ে যায়। আর আমি সেই কয়েনটা সরিয়ে নাকের কাছে বোতল ধরে প্রাণভরে নিতাম নেলপলিশের গন্ধ। কিছু গন্ধ আছে যেগুলো আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। নেলপলিশের গন্ধ তার ভিতর একটা।

শিশুদের মুখের গন্ধ

যেই পিচকিরা মায়ের দুধ খায় তাদের মুখে একটা অলৌকিক গন্ধ পাওয়া যায়। আমার ছোটবোনটা যখন ছোট ছিলো তখন তাকে কোলে নেবার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো এই গন্ধটা। এখনো পিচ্চিদের কোলে নিয়ে আমি প্রথমেই গন্ধটা খুঁজি। দুঃখের কথা হ'লো যে আমি এখন খুব কম পিচকির মুখেই এই গন্ধটা পাই।

ফিডারের গন্ধ

আমার একটা ফিডার ছিলো। কাঁচের। দুই পাশে নিপল ওয়ালা। সেইটায় একটা মজার গন্ধ পেতাম। এখন ঐ গন্ধটাকে খুবই মিস করি।

বার্নিশের গন্ধ

কাঠে যখন বার্নিশ করা হয় তখন মিথাইল এ্যলকোহলের একটা অন্যরকম গন্ধ পাওয়া যায়। এটাও আমার খাবার ইচ্ছা জাগানো একটা গন্ধ।

ওষুধের গন্ধ

ফাইমক্সিল বলে একটা সিরাপ। এখন বুঝি ওটাকে নাকি ভ্যানিলা ফ্লেভার বলে। শিশুবেলায় ওটাকে কলা ওষুধ বলতাম। গন্ধটা কলার মতো না, কিন্তু এখনো ওটাকে কলা ওষুধ বলতেই বেশি ভালো লাগে।

এছাড়াও ভালোলাগা গন্ধের ভিতর আছে কেরোসিনের গন্ধ, পেট্রলের গন্ধ, শুকনো পাতা পোড়ানোর গন্ধ।

এটা একটু বয়স্ক বয়সে যে গন্ধটার প্রেমে পড়েছি সেটা হ'লো

মাটির গন্ধ

ঠিক মাটির গন্ধ না। দুই-চার দিন কড়া রোদে রাস্তাঘাট ঝলসে যাবার পর যখন কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে তখন মাটি থেকে যেই মিষ্টি গন্ধটা আসে সেটার প্রেমে আমি এখন দিওয়ানা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন