মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০১০

বইয়ের নাম স্মৃতি .:::. চ্যাপ্টারঃ- শিশুকালের ঈদ

স্মৃতির বইটা খুলে শিশুকালের ঈদ লেখা চ্যাপ্টারে ঢুকে একটু নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে হ'লো। কেমন ছিলো তখনকার ঈদের দিন গুলো? কেমন ছিলো ঈদের আগের রাত গুলো???

পৃষ্ঠা উল্টোতে উল্টোতে দেখলাম এক দু'টো স্মৃতি ছাড়া আর সবগুলোতেই সময় বা বয়সের ময়লা জমতে জমতে এমন হয়েছে যে পড়ারই উপায় নেই নইলে টুকরো টুকরো বাক্যাংশ উঁকি দিচ্ছে সর্বগ্রাসী বয়সের থাবা এড়িয়ে...

খুলনায় যখন ছিলাম। ভুলবোনা প্রতি ঈদের আগের সন্ধ্যায় নিউমার্কেটে যাওয়া। আব্বু, আম্মু, দাদু, আমি। কিচ্ছু কেনার জন্য না। কারণ যা যা কেনার আব্বু আম্মু আগেই কিনে এনেছে। আজকের সন্ধ্যাটা শুধু ঘুরবার জন্য। মনে পড়ছে চিস্তীয়া কনফেকশনারীতে থাকা একমাত্র কোন ম্যাশিন থেকে দাদু আর আমাকে দু'টো কোন কিনে দেয়া। কখনো আব্বুর কোলে চড়ে কখনো আম্মুর হাত ধরে গুটু গুটু করে হেঁটে বেড়ানো নিউমার্কেটের এ-প্রান্ত থেকে সে-প্রান্তে।

ক্লান্তি জমতো না তখন। বাসায় এসে হয়তো পাশের বাসায় যেতাম, টিভিতে পুরোনো আনন্দমেলা দেখাতো সেটা দেখতে। হয়তো ঈদের জামা গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া, বারবার করে নাক ডুবিয়ে গন্ধ নেয়া। জুতোটাকেও হয়তো কখনও বুকে জড়িয়ে ধরতাম।
ঈদের কিছুদিন আগে চুপিচুপি ঘুমের ভিতর আব্বু পায়ের মাপ নিতো কাগজে এঁকে।

সেই ঈদের আগের রাতের কথা ভুলবো না, যে রাতে আমরা সন্ধ্যা বিহার সেরে এসেছি নিউমার্কেট থেকে। এরপর পাশের বাসায় টিভি দেখতে গিয়েছি, হঠাৎ নওশাদ এসে বলছে যে শুভ তোমাদের বাসায় টিভি নিয়ে এসেছে। শুনে সব কিছু ফেলে দে দৌড়...
নিক্কন ১৭ ইন্চি সাদাকালো টিভি ছিলো সেটা। "বিমুর্ত এই রাত্রি আমার" গানটা গাইতো আবিদা সুলতানা আর এই টিভিটার এ্যড দিতো। ১৮ বছর আমাদের সাথেই ছিলো টিভিটা।

সেবার ঢাকায় চাচী বাড়িতে ছিলাম। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে থাকতো তখন চাচীরা। আব্বুর সাথে মাঠে গিয়েছি ঈদের নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় আব্বুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমি ছোট ছোট হাত দিয়ে সেই পানি মুছিয়ে দিচ্ছি। দৃশ্যটা এখনও সময় অসময়ে আমার চোখে ভেসে ওঠে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত (নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও) কোনো ঈদের নামাজ আব্বুর সাথে ছাড়া কখনো পড়িনি। কেন জানি মনে হয় হয়তো কোনো ঈদে আবার আব্বু মোনাজাতের সময় কাঁদবে, আর আমি আব্বুর চোখের পানি মুছিয়ে দিবো...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন