মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০১০

হাতুড়ে গদ্য- (স্বপ্ন | রঙীন | অন্ধকার)

স্পষ্টতঃই তামা তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী...

বিজ্ঞান বইয়ে কথাটা দেখেছিলো। তাই শামায়লা যখনই নিজেকে নিয়ে ধ্বংসাত্মক কিছু চিন্তা করে তখনই চোখে ভেসে ওঠে লাইনটা।

দুপুরের বিষণ্ণতায় বসে হাতে একঝাঁক রোদ নিয়ে তাতে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে ছিলো সিকান্দ। তাকিয়ে ছিলো বললে ভুল হবে, সে আসলে গভীর ভাবে দেখছিলো স্বপ্নগুলো কিভাবে রোদের স্পর্শে বেনীআসহকলা রঙ ছড়িয়ে দেয়। শরীর ও মনের ভিতরে। কিংবা আশেপাশের পরিবেশে।

শামায়লা ঝাঁ চকচকে বিকেলের উদ্দাম রোদকে ফাঁকি দিয়ে নিজের বিছানায় বসে তাকিয়েছিলো ঘরের কৃত্রিম অন্ধকারের দিকে। চোখের পরতে পরতে জমিয়ে নিচ্ছিলো উন্মনা ভাবনাগুলোকে। এগুলোকেই সে খেলনা হিসেবে সাজিয়ে নেবে অঘুমো রাতের আনাচে কানাচে। পাশের টেবিলে দু'গ্লাস পানি। যার ভিতরে সে ভিজিয়ে নিচ্ছিলো মনের অন্ধকারটাকে।

যে স্বপ্নগুলো চুপটি করে রঙ ছড়াচ্ছিলো এতক্ষণ, তাদের ভিতর থেকে কালো কালো ছায়া উঁকি দিতে দেখে ভুরু খানিকটা কুঁচকে ওঠে সিকান্দ’র। এমন তো হয়নি কখনও। তবে কি তার দুপুর হরিয়ে যাবার পাঁয়তারা করছে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে? ভাবতে ভাবতে সিকান্দ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। ভুরু দু'টো আরো বেশি কুঁচকে উঠতে থাকে তার। চোখে এসে জমা হ'তে থাকে রাগ।

বামের গ্লাসটা থেকে এইমাত্র তিনটা ভাবনা তুলে খানিকটা হকচকিয়ে গেলো শামায়লা। কখনও তো এমন হয়নি। পানিতে ডুবে থাকা অন্ধকারগুলো, সময় বয়ে যাবার সাথে সাথে আরো অন্ধকার হয়েছে; এমনই দেখে এসেছে সে সবসময়। কিন্তু এবারের অন্ধকারটা কেমন জেনো ফিকে লাগছে। কেমন জেনো রঙ এর ছোপ দেখা যাচ্ছে। চোখের কোনাটা কুঁচকে আসে শামায়লার। ডানের গ্লাস থেকে আরো কিছু অন্ধকার হাতে নিয়ে নির্বাক বসে থাকে সে। চোখের কোনে জমা হতে থাকে বিষাদ।

সিকান্দ’র স্বপ্নগুলো আরো বিবর্ণ হয়েছে। আরো রঙীন হয়েছে শামায়লার গ্লাসের অন্ধকারগুলো।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা; সন্ধ্যা চুপিচুপি চলে এসেছে রাতের গভীরে। আমাদের সিকান্দ আর শামায়লার ঘরে অনেক তামার তৈরী তার জমা রয়েছে।

মাতৃত্ব আর পিতৃত্ব। শব্দ দু'টো সময় আর পারিপার্শ্বিকতার বিচারে ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতির জন্ম দেয়।

সিকান্দ গত পরশু ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো। শব্দটা তার জন্য রঙীন কোনো স্বপ্ন নিয়ে আসেনি। যেটাকে সে হাতের তালুতে নিয়ে রোদের আলোয় বেনীআসহকলা নাচের ছন্দে দেখতে পারে।

মাতৃত্ব শব্দটা শামায়লার শরীর মনে বিচিত্র কিছু অন্ধকার জন্ম দিতে পারতো। কিন্তু সেটা হয়নি। কিছু অন্ধকার কিছু রঙ নিয়ে শব্দটা তার শরীর মনে যায়গা করে নিচ্ছিলো গত সপ্তাহ থেকেই।

তামার তৈরী একটা ব্রেসলেটের সাথে যখন সিকান্দ তামার তারটাকে পেঁচিয়ে নিচ্ছিলো, তখনও তার হাতের তালুতে রাখা স্বপ্নগুলোর রঙ অন্ধকারের দিকে চলে যচ্ছিলো।বিদ্যুৎ ও তাপ সুপরিবাহী তামার তার দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের মধ্য দিয়ে অন্ধকার থেকে স্বপ্নগুলোর আগের রঙ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ছিলো সে। বিদ্যুৎ যখন বাধাহীন ভাবে তামার ব্রেসলেট বেয়ে তার শরীরে আসছিলো তখন তার স্বপ্নগুলো আরো অন্ধকার হ'য়ে গিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়েছিলো।

শামায়লা তার মনের রঙীন অন্ধকারকে পূর্ণ অন্ধকারে ফিরিয়ে আনার জন্য মুখের ভিতর বিদ্যুৎ ও তাপ সুপরিবাহী তামার তার ঢুকিয়ে নিয়েছিলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন