*
অস্তিত্ব ঘিরে জলের দেয়াল ভেঙ্গে গড়ে ওঠা চলে অবিরাম।
**
মাঠের মাঝখানটায় আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকে আলফেসানী। স্মৃতির প্রজাপতিরা উড়ে উড়ে বেড়ায় তার চোখের তারায়। রঙ ছড়িয়ে যায় অন্ধকার রাতের আকাশে আকাশে। তরুণ অতীতের রঙগুলো গাঢ় আর গ্লসি, ওদিকে বৃদ্ধ অতীত হালকা রঙের সাজে। স্মৃতির সাথে টুকটাক কথা বিনিময়, ভাব বিনিময় করে চলে বর্তমান আলফেসানী।
কুকুরেরা ঘুরে ঘুরে আসে, কানে কানে কিছু বলতে চায়। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সোনালী রুপালী পাখিদের দরদাম জানায় দুর্বোধ্য ভাষায়। ঘাসের সমুদ্রে প্রাণপনে হাত নেড়ে আলফেসানী কুকুরদের সান্নিধ্য থেকে সাঁতরে চলে যেতে থাকে দূরে, কিন্তু কুকুরগুলো জেলে হয়ে ছুঁড়ে দেয় জাল। তাদের খলুইয়ে রাখা রুপালী ইলিশ কিংবা তেল চকচকে সোনালী আভা মাখা মাছগুলো বিক্রি করতে উদগ্রীব।
***
হইহই করে, মিছিলের মত বর্তমান এসে হামলে পড়ে কাঁচের জানালায়। ভেঙ্গে পড়া জানালা দিয়ে রঙ্গীন প্রজাপতিরা উড়ে পালায়। ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোয় আলতো পা ফেলে আসে সোনালী রুপালী রঙের পাখি কিংবা মাছেরা। কষ্টার্জিত স্ব-ইচ্ছায় খুলে ফেলে পালকের কিংবা আঁশের আভরণ। তাকিয়ে থাকে মৃত চোখ নিয়ে, নিভন্ত শরীর নিয়ে।
****
সস্তা চুনকামের গন্ধ নিয়ে দেয়ালের গায়ে লেপ্টে থাকে চাঁদ। ঘোলাটে জোছনা ঢেকে রাখে পাখি কিংবা মাছেদের ঠেলে ওঠা হনু, বহু ব্যবহারে জীর্ণ স্তন। অনিবার্য অভ্যস্ততা পাখি কিংবা মাছেদের দ্রুততার সাথে চলতে বলে। আলফেসানী জাগিয়ে তুলতে চায় বহুদিনের ঘুম পাড়িয়ে রাখা পশুটাকে। জাগেনা পশুটা, ভোরের মিস্টি গান গেয়ে জেগে ওঠেনা সূর্যটাও।
এক-এক ফোঁটা করে জল জমেছিলো অস্তিত্বের চৌহদ্দিতে। প্রজাপতির ডানা থেকে খসে পড়া রঙগুলোকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিলো দেয়াল। অগুনিত দেয়াল। টোকা দিলেই ভেঙ্গে পড়ে, আবার নতুন করে গড়ে ওঠে নিমেষেই। দেয়ালের ধার ঘেঁষে চুপকরে বসে থাকে চন্দ্রলোপা। দেয়ালের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দী পশুটার দিকে। চন্দ্রলোপার চোখে চোখ পড়লেই ঘুমিয়ে পড়ে সে।
*****
চন্দ্রলোপার দূরে থাকা, অস্তিত্ব জুড়ে জলের দেয়ালের ভাঙ্গা-গড়াতেই আলফেসানীর সুখ।