বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১০

মাকড়সার পা থেকে খসে পড়া বিষাদ

মাকড়সার আটটি পা থেকে বিষাদের ক্ষরণ
জড়িয়ে নেয়
আপোষকামী সুড়ঙ্গের তৎসম আবেগ,

যেখানে উন্মুখ চাঁদেরা হামাগুড়ি দেয় আলোচিত
প্রশ্নের ভাবালুতায়,

শাশ্বত রাতে অন্ধ কাঁচপোকার সীমান্ত ভাঙ্গার
আহ্বানে, ভেসে আসে সারি বাঁধা পুরোহিত---
জোনাকীরা আলো হাতে
উৎসর্গ গ্রহন করে চলে নিরুত্তর প্রশ্নের।

ঝিঁঝিঁ পোকা ঘুরে ঘুরে ঢুকে যেতে থাকে নিরন্তর পাতালের অভিমুখে......

কোলাহলের নৈঃশব্দ্য-৪

সুতো ছেঁড়া ঘুড়িরা
সুখী হয় কি হয়না সে প্রসঙ্গ তোলা থাক ভাঁড়ার ঘরের বহু চর্চিত দৈনিক উপাচারে
বরং আলোচনা করি কিছু ল্যাম্প পোস্ট আর নতুন ফুটপাথের শহর ঘিরে
যেখানে দেয়াল ঘেঁষে চলে গেছে কিছু ছায়া আর কিছু ধোঁয়া
যার কখনই
বাঁধা পায়নি দেয়ালের ওপর শিকারীর ব্যাগ্রতায় বসে থাকা পেরেকের লোলুপ শিশ্ন উত্থানে।

কোলাহলের নৈঃশব্দ্য-৩

রোদ ছায়া শাড়ি জড়িয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে মাঝ দুপুরের দেয়াল,

চিলেকোঠা, জানালা চোখে
চকিতে দেখে নেয় মেঘ ভাসমান রাজপথ,

অনিবার্য রাতের প্রতীক্ষায়
শরীর শুঁষে, জীবন খেলে অবিরাম স্বর্ণলতা,

নীলাভ রাত
রোদ গলিয়ে ভরে নেয় চাঁদের পানপাত্র।

কোলাহলের নৈঃশব্দ্য-২

অভ্রভেদী শীৎকার তাড়িত মেঘদল, সোনারোদ
ভেঙ্গে উড়ে চলতে চলতে
ছড়িয়ে যায় রক্তাভ অশ্রু দানার আবেশ
পথ শেষে ধুয়ে যায় কামনার খড়িমাটির লেখা।

অনন্ত রাতের মহাবিশ্ব, আগুনের খেয়ায় ভাসিয়ে দেয়
ডোম নারীর নাভীমূল চর্চিত সুবাস।

নৈঃশব্দ্যের কোলাহল ১০ থেকে ১৮

দশ.

সোনালী পরিধেয় দ্বার ছাড়িয়ে প্রবেশ ভিতরের দিকে
অধরের জেব্রা-ক্রসিং এ অহেতুক সময় ক্ষেপন
অন্তর্বাসের পেঁয়াজ খোসা খুলে নিরাভরণ শরীরে অতৃপ্ত হাত।

এগারো.

পঞ্চচক্রাবদ্ধ জীবন টুপটাপ ঝরে যায় দু'হাতের আরাধনা থেকে
চাঁদের পানপাত্র ভরে ওঠে রৌদ্রস্নাত জোছনার
আঁধারে অনুদিত আবেগের তৃষা লোলুপ জিহ্বায় ছাপ ফেলে আলোকিত অপরাধী মন।

বারো.

ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের কার্ণিশ বেয়ে নেমে আসা জলবিন্দু
জনারণ্যে গৃহী সন্ন্যাসীর আজীবন সাধনা। তিলেক সময় ব্যবধানের ছায়া
মিলিয়ে যায় চেতনার গহীন সুড়ঙ্গ পথের ধুলোয়।

তের.

ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের চোখ বেয়ে নেমে আসা জোছনা জলে স্নান করে
সনাতন বোধিবৃক্ষের শিকড়, ছড়িয়ে যায় মাটির গভীরতম প্রদেশে,
বালুকাবেলায়,
মৃত ইকারুসদের পূনর্জন্ম হতে থাকে মোমের শহরে,
জ্বলন্ত আগুনের ফুলকি হয়ে ওঠে একেকটি ফিনিক্স।

চৌদ্দ.

রোদ দুপুরে ডুবে যাওয়া চাঁদের পেলব দেহ
আলতো ছোঁয়া ভোর জ্বেলে দেয় বিভ্রমের আয়না মশাল
ছায়ার কাঁপনে দেয়ালচিত্রে উদ্ভিন্ন যৌবন।

পনের.

চোখের মার্বেল নেমে যায় সুর্যের অভিমুখ
অন্ধ চিত্রকরের তুলি ভেসে যায় চাঁদমাখা রাজপথের রক্তে

প্লাবণ, শ্রাবণ, গ্রহণ একাকার হয়ে মিশে যায় হৃদয়ের অলিন্দে অলিন্দে

ষোলো.

জোৎস্নার শরীরে জড়ানো যতটুকু উত্তাপ, আমাদের সম্পর্কের ভিতর তারও অনুপস্থিতি
তবু,
নারকোলের পাতা বেয়ে নেমে যায় বৃষ্টিজল
আর,
আমি বরফের দিকে তাকিয়ে বলি,
দেখো দেখো............
কতটা ধোঁয়া উড়ছে বরফ খন্ডটা থেকে।

সতের.


পথ-বেদে লেখা রয়েছে যাবতীয় দুপুর রৌদ্রের কান্না আর ইতঃস্তত ঘুরে বেড়ানো চন্দ্র-বালিকাদের জীবন গাঁথা।

আঠারো.


চোখের মণিতে লিখে রাখি বিবিধ শ্যাওলাশাস্ত্র
ট্রান্সপারেন্ট রাত নেমে আসে মসৃণ কিংবা অমসৃণ উপত্যকা বেয়ে
ঠোঁটের কিনারায়

সূর্যের অশ্রুতে জন্ম উল্কা পিন্ডের পাপ...

কোলাহলের নৈঃশব্দ্য-১

অষ্টম মৃত্যুর পর নবম জীবনের তাড়নায় নেচে ওঠে বাস্তুসাপ
নিখুঁত সাপুড়িয়ার সূরহীন বীণের ছন্দে
ভেঙ্গে ফেলে দেয় সকল সামজিকতার বাকল
আর তৃপ্ত সঙ্গমের বরাভয়
নিয়ে কেঁদে উঠে চাঁদকপালি রাত
তার অশ্রু জমা রাখে দেউলিয়া ব্যাংক লকারে
আপন অন্ধকার কোলে শুয়ে দেখে
নতুন শিশুর আজন্ম পাপ

নৈঃশব্দ্যের কোলাহল ১ থেকে ৯

এক.

ক্ষণিক নিরানন্দ ক্ষণিক আনন্দ বেঁধে দেয় সীমারেখা
খুলে যায় অযুত পথে হতাশার উচ্ছল মিছিল

দুই.

গাছ বলেছিলো যাবো আর পাখি বলেছিলো এসো
নদী নেমেছিলো সাগরে আর সাগর চুমু দিয়েছিলো বেলাভুমিকে
মাঝখান দিয়ে তুমি কি পেলে?

তিন.

দেয়ালের ওপাশে দেয়ালের গায়ে জমে থাকা তত্ত্বের শ্যওলা
খুটে খাওয়া পিঁপড়া ও শুঁয়োপোকা একসাথে বাসা বাঁধে তৃতীয় চোখের দৃষ্টিতে, অপরপক্ষে দেঁতো হাসি হাসে মরা গাছের শুকনো পুস্পরাজি।

চার.

রাত কড়াইয়ে পুড়তে থাকে চাঁদের পরাটা
দুধের বাটি উপচে দুধে ভেসে যায় চরাচর
চন্দ্রভুকেরা পরাটা এবং দুধের নেশায় মাতাল থাকে সারাজীবন।

পাঁচ.

নষ্টবীজের গায়ে শুভ্রতার অশেষ ইতিহাস জাগে, চোখ থেকে ঝরে পড়ে আরেকটা চোখ, সেখান থেকে আরো একটা, পৌণঃপুনিক ইতিহাসের চলা ফেরা সর্পিল পথের বৃত্তে, সিনথেসিস শুরু হয় কিংবা হয়না।

ছয়.

ঘুড়িতে ভর করে উড়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ
বর্তমানের সুতো দিয়ে বাঁধা থাকে অতীতের লাটাইয়ের সাথে
আধোরাতে
সুতো ছিঁড়ে গেলে কল্পনায়
ভেসে যায় বাস্তবতার মেঘদল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
অপারগ সূর্য স্পর্শের মানসে

সাত.

অন্ধ চোখে খেলা করে বহুমাত্রিক রঙমহল আর খোলা মনে জাগে আঁধারের উল্লাস
ভেঙ্গে যাওয়া পথে নেমে আসে বৃষ্টির খরতাপ সাথে নতুন রিকশার উদ্দাম যৌনজীবন।

আট.

জ্যা অংকিত বৃত্তচাপে খেলা করে জলফড়িং এর জীবনাচরণ
মে-ফ্লাই উড়ে গেছে সাময়িক মরণের আকর্ষণে
তুমি হেসে জানতে চাইলে দিন শেষে, কেমন থাকবো পাখিদের আলিঙ্গনে।

নয়.

কালপুরুষের কোমরবন্ধ ছুয়ে ছুটে যায় অন্ধকার
আগুন নদীর মাঝে ঘুমিয়ে
রাতচরা জেলেদের নৌ-যান আলেয়ার চোখের তারায় আল্পনা আঁকে,
অনন্ত পৌষী হাওয়া খেলা করে নিঝুম মাঠের শুকনো ঘাসে
ইকারুসের আর উড়ে যাওয়া হয়না সূর্যের কাছে।