শাহবাগ আন্দোলনের আজ ১৩ তম দিন চলছে। প্রথম দিন আমি অত্যন্ত হতাশ ছিলাম। সেই হতাশা কেটে যেতেও সময় লাগেনি। ৫ তারিখেই লিখেছিলাম আমরা বন্ধু ব্লগে প্রতিবাদে উত্তাল শাহবাগ। গণজাগরণে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন দেখে, আমার আজীবনের পেসিমিস্ট অনুভূতি দূরে পালিয়ে গিয়েছিলো। প্রতিদিন অংশ নিয়েছি শাহবাগের গণজোয়ারে। কোনোদিন অফিস ফাঁকি দিয়ে, কোনোদিন অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে, কোনোদিন অফিস শেষে।
একসপ্তাহ শেষেও একটা লেখা লিখেছিলাম,গত মঙ্গলবার থেকে আজ... যেখানে আমার আশার কথা গুলোই লেখা ছিলো। তারপরে আর লিখিনি। কারণ কিছু লেখবার থেকে আমার মনে হয়েছিলো ওখানে গিয়ে জনতার একজন হিসাবে থাকাই বেশী জরুরী। কিন্তু গতদিন আবার লিখতে হলো। গত শুক্রবারে মহাসমাবেশ হয়েছিলো শাহবাগে, আমি সেদিন উপস্থিত থাকতে পারিনি। কিন্তু অনলাইনে যখন জানতে পারি আন্দোলনের সময়সুচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা, একেবারে প্রথম দিন কাদের মোল্লার ফাঁসির বদলে যাযজ্জীবন হওয়ায় যতটা হতাশ ছিলাম তার থেকেও বেশী হতাশা ঘিরে ধরেছিলো মনটাকে। একটা সফল আন্দোলনের বদলে পোকায় খাওয়া ফলের মতো একটা ছবি ভেসে উঠেছিলো চোখের সামনে। যদিও বিভাজন, বিক্রয়, হুমকী ইত্যাদি জিনিস সম্পর্কে জানতাম বুধ বৃহঃ বার থেকেই, তবুও ভেবেছিলাম একটা প্রশ্নে হয়তো কোনো না কোনো পক্ষ স্যাক্রিফাইস করবে। কিন্তু...
হতাশ মন নিয়ে ফেসবুকিং করতে করতে হঠাৎ একটা স্ট্যাটাস দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের বন্ধু, থাবা বাবা নামে ব্লগিং করতো ছেলেটা, তাকে জবাই করে ফেলে যাওয়া হয়েছে তারই বাসার কাছে। প্রথমেই ভাবলাম, এই স্ট্যাটাসটা হয়তো টাইম ফ্রেইমড আন্দোলনকে স্যাটায়ার করে লেখা হয়েছে। এদিক সেদিক ফোন দিয়ে জানলাম ঘটনাটা সত্যি। আতংকিত হয়ে পড়লাম।
এর কয়েকটা কারণ রয়েছে-
১# থাবা ছেলেটা নাস্তিক ছিলো
২# শাহবাগ আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনের কেউ ছিলো না
৩# আমাদের বন্ধু ছিলো
৪# জামাত শিবিরের রাজনীতি নিয়ে উচ্চকিত ছিলো
৫# শাহবাগে থাকা কালীন সময়ে একটু পর পর অনলাইনে আপডেট দিতো
এরকম একজন কে যদি তার বাসার কাছেই কুপিয়ে মেরে ফেলে রাখা হয়, তাহলে নিজের জীবনাশংকায় আতংকিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তার উপর গত দু'বছর আগে থেকেই সামু ব্লগের একটা পোস্টে আমাদের কিছু ছবি প্রকাশ করার পর সেগুলো শিবিরের একটা পেজেও শেয়ার করা হয়েছিলো। তখন কিছু ভাবি নাই, কিন্তু এখন আতংকিত হয়ে পড়েছি...
আগের লেখা গুলোতে সামষ্টিক অনুভূতি ধারণ করবার চেষ্টাটাই বেশী করেছিলাম। কারন কমিউনিটি ব্লগে ব্যক্তিগত অনুভূতি তাও আবার এরকম একটা গণজাগরণ নিয়ে... একটু স্বার্থপরের মতই মনে হয়েছিলো। কিন্তু দিনের পর দিন ধরে একেবারে ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতিও জমা হয়েছে। সেগুলো লিখে ফেলাটা জরুরী।
ব্যাক্তিগত অনুভূতিমালাঃ-????
১# সে আবার তার এক্সের সাথে ঘুরাফেরা শুরু করলো। সেইটা আমারে যেদিন জানালো, সেদিন পুরো মেজাজ মাথা গরম হয়ে গেলো। সেইদিন থেকে মেজাজ চরম গরম হয়ে আছে। অফ এনি আদার পার্সনস, হিম এগেইন? সেইদিন আসছিলোও, কিন্তু আমার মেজাজের হালত দেইখা সে আমার সাথে পরিচয় করায়ে দেয় নাই। আমিও আসলে এর সাথে মিট করতে চাইতেছিলাম না। না সেইদিন, না কোনোদিনই।
২# পরেরদিন ছবির হাটে গেলাম অফিস ফাঁকি দিয়ে। গিয়ে বসলাম। আমারে পরিচয় করায়ে দিলো, এইযে অমুক। ঠাস কইরা মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। যাস্ট কান্ট স্ট্যান্ড ইট। যদিও সেদিন আমার সাথেই ঘুরাফেরা করছে বাকিটা সময়।
৩# গতকাল, এমনিতেই থাবা'র মৃত্যু নিয়া মাথা খারাপ অবস্থা। তার উপরে গিয়া দেখি, দুইজনে পুনঃপ্রেমভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াইতেছে। এবং আমার আশেপাশে আসার থেকে তার সাথে গায়ে গা ঠেকাইয়া বইসা থাকাটাই এর জরুরী লাগছে। কষ্ট পাইতেছি। অনেক বেশী কষ্ট...
৪# সেদিন রাতের বেলা চারুকলায় বসে কয়েকজনের সাথে পান করলাম। আমার হাত বেশ মাতাল হয়েই গেসিলো। কিন্তু, পরবর্তীতে সাথের জনের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এর জন্য আরো কিছু হওয়া থেকে বেঁচে গেলাম...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন