সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

হাতুড়ে রূপকথা- সমুদ্রবাজের ডানায় আন্ধার মুক্তা

সমুদ্রবাজের ডানায় লাগে রঙধনুকের আলো।


যেই আলো ধরার জন্য সোলেমান সদাগর গিয়াছিলো। দুই সমুদ্দুর পাড়ি দিয়া সাত আলোর জংলায়। ফিরা আসার সময় মনে ছিলো না তার বউ এর লাগি আন্ধারের মুক্তা নিয়া আসার কথা।
শরীফা সুন্দরীর নাকের নথ খসিয়া যাওনের উপায় হয়াছিলো। সোলেমান তারে স্বপ্ন দিয়াছিলো মিশমিশা আন্ধারের মুক্তার। সমুদ্দুরের নীল পানিয়ার ভিতর দিয়া নিজের বজরা দেখতে দেখতে সোলেমান সদাগরের বুকে বউ এর লাগিয়া দুঃখ ঢেউ আছড়াইয়া পড়লো।


দুঃখের ঢেউয়ের অথবা সমুদ্দুরের দোলায় তার গলা দিয়া গান বাইর হইলো


বাজের ডানায়
সমুদ্দুরের আলো
খেলা করে, ও মন
দেখতে লাগে ভালো

শরীফার সুন্দরীরও নথেরও লাগিয়া
সোলেমান ফেরে কালা পানিয়া ||


সোলেমান সদাগর তার মাঝি মাল্লাদের কইলো বজরা ঘুরাইতে। কালাপানিয়ার ধুসর শহরে যাইতে হ’বে তার। সেইখানে বেগমের মদের দোকান। মদের দোকানে আসে অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ। যার কাছে ঠিকানা রইছে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা।

——————————————————————————–

শরীফা সুন্দরী সেগুন কাঠের তক্তপোষের উপর বইসা, আবলুস কাঠের জলচৌকি তে গোলাপী পা ছড়া’য়া রাখছে। খাস দাসী কামেলা বানু সেই পায়ে চন্দনের গুড়া লাগায়া দেয়। আরেক দাসী শরীফা সুন্দরীর কুঁচ বর্ণের কেশে সুগন্ধী লাগায়। শরীফা সুন্দরী আয়নায় নিজের মুখ দেখতে দেখতে অপেক্ষা করে সোলেমান সদাগরের। সে তারে স্বপ্ন দিছে। মিশমিশা আন্ধার মুক্তার নথ বানায়া আনবো।

——————————————————————————–

অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ সবেরে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা দেয় না। তারে সন্তুষ্টি দিতে হয়। সাত’শ বরজের পান, দুই’শ বাগানের সুপাড়ী, এক’শ নদীর কালাবাউস মাছ আর আট’শ রকমের মসল্লা।

সমুদ্রবাজের ডানার রংধনুকের আলোর ব্যবসায় ভালো লাভ ছিলো। সোলেমান সদাগরের পেটিতে বান্ধা ছিলো থোক সোনার মোহর, চান্দির গয়না। সেগুলা দিয়া অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণের সন্তুষ্টি মিটানো হইলে তার কাছে আসে মিশমিশা আন্ধার মুক্তার দিশা।

সেই দিশাও বড়ো কঠিন দিশা। এক’শ সতের ক্রোশ দুরে সমুদ্দুরের সীমানা। সেই সীমানা দিয়া পানি ঝর ঝর কইরা পড়ে। এই পানির আব্রুর ভিতর দিয়া যাইতে হ’বে আঠারো ক্রোশ গুহার কোলে। এইখানে ঝিনুক রানী মিশমিশা আন্ধার মুক্তা বিছায়ে রাখছে।

“সাবধান”
অদ্বৈত্য ব্রাহ্মণ কইয়া দিসে।
ঝিনুক রানীর মেজাজ বড় চড়া, তার নজর খুব কড়া।
প্রয়োজনের বেশি মুক্তা লইলে তারে নজরানা দিতে হয়।
নিজের চক্ষু দিয়া নজরানা।



———————————————————————————

সোলেমান সদাগর আর কখনই শরীফা সুন্দরীর চেহারা দেখতে পারে নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন