গুড়িয়া বসে ছিলো রাস্তার ঐপাড়ে। তার সবসময়ের সাথী তুলোর পুতুলটাও ছিলো সাথে। শীত শীত লাগছিলো তার। কিন্তু ছয় বছরের এই ছোট্ট জীবনেই সে জেনে ফেলেছিলো বেঁচে থাকার রূঢ় কিছু নিয়ম। যেমন বলা যায় ক্ষুধার কথা। তার আম্মি যে বাসায় কাজ করে সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসলেই তবে সকালের নাস্তা হবে। নইলে সারা সকাল 'হালুয়া রোটি খায়েঙ্গে তো নিন্দিয়া সাতায়েঙ্গে' জপে পার করতে হবে।
এ গুড়িয়া...কাঁহা গিয়ারে লাড়কিঠো... ইধার আ তো জারা...
আম্মির ডাক শুনে গুড়িয়ার শিকনি শুকানো নাকের নীচে একটা নিষ্পাপ হাসি ফুটে ওঠে। আম্মি জরুর কুছ খানেকো লেকর আয়া ভাবতে ভাবতে সে ছোট ছোট পায়ে ছুটে যায় বস্তির ঘরটার দিকে।
ওরা থাকে হাউজিং বাজারের একটু ঐপাশে যে ঈদগা মাঠটা আছে সেখানে। কিছু গোলপাতার তৈরী ঘর আছে। তাদের সমগোত্রীয় কিন্তু কিছু পয়সাওয়ালারা থাকে পাকা বাড়িতে। ডি লাইন, ই লাইন, ডাব্লু লাইন, আর লাইন, জে লাইন এখানে তাদের ঘনত্ব বেশী। অন্য গুলোতে বাঙ্গালীরা বুধানকি বাপ, নইলে শাহিনুরকি আব্বু লোগ যাব পাকিস্তান চলা যা রাঁহা তব খরিদকে রেখেছে।
তাদের এক কামরার বাড়ির পাশে যে ঘর টা আছে তাতে আনখীরা ছয়জন থাকে। উসকে বিঁচোমে আনখী কো ছোটা জো ভাই হ্যায় হিরা, উসকো সাথ ফির নাগমাকো খুব মিলমিশ হ্যাঁয়। ওদের দুজন কে হাত ধরাধরি করে হোটেলের দিকে যেতে দেখে গুড়িয়ার ছোটো মাথায় এই চিন্তা এসেই হারিয়ে গেলো। কারণ রাস্তা দিয়ে অনেক বেশি রিকশা চলছে। অবশ্য নিউজপ্রিন্ট, প্লাটিনাম, হার্ডবোর্ড, জুবিলী মিল গুলোয় পুরোদমে উৎপাদন চলছে যে, লোকজনতো যাওয়া আসা করবেই।
গুড়িয়া একটা ফাঁক ফোঁকড় খুজতে থাকলো রাস্তা পার হবার জন্য।
বাসার কাছে আসতে তার মা বললো, চল তুঝকো তেরে নানী বুলায়া।
নানী হ'লো গুড়িয়ার মা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার মহিলা।
গুড়িয়া বেশ খুশী মনেই চললো আম্মি কো সাথ।
নাগমা আর হিরা, থাকে পাশাপাশি দুটো গোলপাতার ঘরে। বয়স কতো আর হবে? ১০ আর ১২। কেন জানি তাদের শৈশব পালিয়ে গিয়েছে নিউজপ্রিন্ট মিলের ছাল কুড়াতে কুড়াতে। এই ছাল কুড়িয়ে তারা বিক্রি করে মিলের বাইরের ছালের ব্যবসায়ীর কাছে। প্রতি সের একটাকা করে। এতে দুপুর নাগাদ যে টাকা হয় তা দিয়ে হিরা নাগমাকে রুটি আর কলা কিনে খাওয়ায় বা নাগমা হিরা কে চা আর রুটি কিনে খাওয়ায়। এভাবেই দিন চলে ওদের। মনে মনে স্বপ্ন দেখে লাড্ডান ভাইরা য্যাঁয়সে রুপিয়া জমাকর আওর ঘর বেঁচকর পাকিস্তান চঁলা গ্যায়া ওঁয়াইসেহি হামলোগ ভি একদিন পাকিস্তান চলা যায়েঙ্গে।
ফিরে আসছিলো দু'জন, সন্ধ্যার মুখে। ঘন হয়ে পড়া কুয়াশার ভিতর দিয়ে। কচি দু'টো হাত ধরাধরি করে শীতের প্রকোপ কমাবার চেষ্টা ছিলো দু'জনের ভিতরেই।
কুয়াশার ফাঁদ থেকে হঠাৎ করেই বেরিয়ে আসলো যন্ত্রদানবটা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন