"চলে যাও আলফেসানী?"
পিছু ডেকেছিলো সুভদ্রা। আলফেসানী ফেরেনি। আসলে হাতে সময়ও ছিলো কম, ঐ দুরে এ্যসফল্টের নদীগুলোর পাশে একটা বিল্ডিংএর পেটের ভিতর ঢুকে পড়ার তাড়া ছিলো। সুভদ্রার শেষ কথা গুলো সারাদিনই অনুরণন তুলেছিলো কানে, মনে। বার বার ইচ্ছে হয়েছে রিনিক ঝিনিক শব্দে সুভদ্রার ফোনটা বাজাতে। সেটাও চাপা পড়ে গিয়েছে কাজের নীচে।
রিনিক ঝিনিক... সুভদ্রার ফোনটা নাচতেও জানে উদাস করা ছন্দে। সেও অপেক্ষায় ছিলো হয়তো, আলফেসানী ফোনের সাথে সাথে তার হৃদয়কেও কিছুটা নৃত্যছন্দ উপহার দেবে।সকাল চলে যায় দুপুরের হাত ধরে বিকেলের দিকে। সুভদ্রা অপেক্ষার মস-গুল্মের পরিচর্যা করে চলে। বিকেল সন্ধ্যার গালের লালিমা নিয়ে খেলতে শুরু করেছে যখন, তখন জল ভাসা সুভদ্রার চোখেও সন্ধ্যার আলো ছায়া ফেলেছে। ফোনটাকে হাতে নিয়ে সুভদ্রা জীবনের সবচে' বড় ভুলটার দিকে পা বাড়ায়।
মেঘমন্দ্রের ফোনটাও মেঘমন্দ্র ডাক দিতে পারে। হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো ফোনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে সুভদ্রার নামটা। যেটা দেখে তার বুকের ভিতর মেঘেরা গুড়গুড় করা শুরু করে। এতদিন... এত্তদিন পর সুভদ্রা তাকে ডাকছে। চকিতে ফোনটা রিসিভ করে মেঘমন্দ্র। মেঘে ঢেকে যাবার প্রক্রিয়া শুরু হয় সুভদ্রার জীবনের আকাশে।
শিশু রাতের নরম ছোঁয়ায় আলফেসানী বেরিয়ে আসে বিল্ডিংএর গর্ভ থেকে। মখমল সুরে বেজে ওঠে আলফেসানীর বাম পকেটে রাখা ফোন। হাঁটার ঝোঁক বুঝে উঠতে দেয় না সে মখমল সুর। যেটুকু সম্ভাবনা ছিলো, সুভদ্রার আকাশে আলফেসানীর রোদ জড়ানো রঙধনূ তৈরী করার তাও ডুবে যায় নাগরিক কোলাহলে।
আলফেসানী সুভদ্রার রিনিক ঝিনিক নাচের ছন্দ ভোলে।
মেঘমন্দ্র সুভদ্রার রিনিক ঝিনিক নাচের ছন্দ তোলে।
সুভদ্রা মেঘমন্দ্র ডাক তোলে।
সুভদ্রা মখমল সুর তুলতে বেসুরো সুর বাজায়।
আলফেসানীকে ডাকে সুভদ্রা
"তোমারই ভুল ছিলো, পিছু ডাকলাম, ফিরলেনা কেনো?"
আলফেসানীর কোনো শব্দ খুজে আনতে পারে না মনের গহন সমুদ্র থেকে।
"এখন বলে দাও আমি কি করবো?"
আলফেসানী শব্দ ঝিনুক হাতড়ে ফেরে মুক্তার খোঁজে।
"মেঘমন্দ্র দেহের বাঁকে বাঁকে বাঁশি বাজায়, মনের পথে বসারও সময় নেই তার"
আলফেসানী মন সাগরে গহীন থেকে গহীনতর ডুব দেয়।
সুভদ্রা তোমায় এখনও ভাবি।
সারাটা সময়।
যখন রাত হেঁটে যায় ভোরের পথ ধরে, সকালের দিকে।
যখন দুপুর হেসে ওঠে রোদে বা কেঁদে ওঠে বৃষ্টিতে।
যখন বিকেল সান্ধ্য উপাসনায় মাতে।
সুভদ্রা বুঝিনি তুমি এতো অভিমানীনী। সুভদ্রা ওহ সুভদ্রা।
আলফেসানী আবার চলে যায় এ্যসফল্টের নদীতে সাঁতার দিতে, পৃথিবীসম শুণ্যতায় চাপা পড়তে।
সুভদ্রা যায় মেঘমন্দ্রের দেহের বাঁশির সুর শুনতে, মেঘমন্দ্রকে মনের পথে বসতে আহ্বান জানাতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন