মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

বিবিধ বই বিষয়ক হাবিজাবি...

জানুয়ারী ২১, ২০১১ - ১:২৪ পূর্বাহ্ন

এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে স্মৃতিকাতরতা ঘণ মেঘের মত ভর করে আছে মনে। তার উপর গতকাল মীরের পোস্ট আর সেই পোস্টে নুশেরান্টির দেয়া দু’টো লিংক পুরোই প্রাচীন যুগের শ্রাবণ মাসের মত করে স্মৃতির বৃষ্টি নামিয়ে দিলো। দুজনকেই তীব্র মাইনাস দিয়ে এই পোস্টের শুরু করলাম।
শিশুকালে সবাই কমিক্স-টমিক্স বেশী পড়ে, কিন্তু আমার এগুলা খুব কম পড়া হৈছে। তয় বই পড়া হৈছে প্রচুর। ঈদ-চান্দে রংপুর থিকা খুলনা যাইতাম ট্রেনে। সেই সুবাদে শরতাংকেলের বহুত বই পড়া হৈছে। দেবদাস, শুভদা, রামের সুমতি, কৃষ্ণকান্তের উইল এইসব পড়া হয়া গেছিলো ক্লাস থ্রি’র আগেই। আরো পড়া হইছিলো সেক্সপিয়ার সাবের হ্যাম্লেট, ম্যাকবেথ, রোমিও-জুলিয়েট, মার্চেন্ট অফ ভেনিস এগুলাও। ট্রেনেই একবার কেনা হৈছিলো হিটলারের জীবন কাহীনি। সেইটা পৈড়া আমি হিটলারের ফ্যান হয়া গেছিলাম। ভিত্রে ভিত্রে নাতসীবাদ লালন কর্ছি সেই ইন্টার পর্যন্ত।
প্রগতি প্রকাশনীর বইগুলার লগে ছিলো ভয়াবহ প্রেম। সবগুলার নাম মনে নাই, তয় কিছু কিছু বইয়ের নাম চোখ বন্ধ কর্লে এখনও সামনে ভাসে। এরাম একটা বই হৈল “শিশু” লেখকের নাম হিসাবে লেখা ছিলো “লেভ তলস্তয়” আমি এখনও কনফিউজড যে ওইটা ‘লেভ’ হৈবো না ‘লিও’ হৈবো। দারুণ স্কেচ ইলাস্ট্রেশন ছিলো বইটায়। গল্পগুলাও ছিলো বিচিত্র। হঠাত কৈরা গল্পের মাঝকানে পাঠকরে ছুঁইড়া ফালায়া দেয়া হৈতো বৈলা মনে পড়ে। অদ্ভুত আকর্ষণীয় ইলাস্ট্রেশন অলা আরেকটা বই ছিলো আমার। নামটা এখন আর মনে নাই। তয় বইটার থিম আছিলো সোভিয়েট ইউনিয়নের উন্নয়ন গাঁথা। ঐ বইটা থিকাই জানছি হাইড্রফয়েল, গ্রীন হাউজ, অটমেটিক ওয়াটারিং সিস্টেম এরাম অনেক কিছু সম্পর্কে। এখন বুঝি যে এই বইটাই আমার বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার সম্মপর্কে জাননের আগ্রহটা গইড়া দিছে।
প্রগতির বই “মালাকাইটের ঝাঁপি” “সাগরতীরে” “মুমু” এত্ত এত্তবার পর্ছি, গুইনা বলার মতো না।
মালাকাইটের ঝাঁপির মালাকাইট ঠাকরুন, গুমেশকি খনি, ভুমিদাস, গোমোস্তা, দানিলা-কাতিয়া আরো আরো কত্ত চরিত্র...
সাগরতীরের সাশুক-আনুশ্যা; সাশুকের শৈশব থিকা হঠাত বাস্তবতায় ছিটকায়া পড়া...
মুমুর কুকুরটা; যারে কেন্দ্র কৈরা বইটার পুরা ঘটনা...
সব স-অ-ব কিছুর লগে নিজের কিছুনাকিছু মিল খুইজা পাইতাম। সত্য বলতে এখনও পাই...
সবচে বড় দুঃখ হৈতেছে যে বইগুলার একটাও আমার কালেকশনে নাই। রংপুর আর খুলনার একঝাঁক কুলাঙ্গার উঁইয়ের পেটে চইলা গেছে।
আব্বুর কালেকশনেও ছিলো অনেক বই। যেগুলার ভিতরে মনে পড়ে নিমাই ভট্টাংকেলের মেমসাহেবের কথা; লরেন্স সাবের লেডি চ্যাটার্লিজ লাভারের কথা। মজার বিষয় হৈলো ক্লাস থ্রীর ভিত্রেই বইগুলা পড়া শেষ কৈরা ফেলছিলাম। কিচ্ছু বুঝিনাই, পরেও আর পড়নের আগ্রহ পাইনাই। ছিলো হুমায়ুন আহমেদের নির্বাসন বইটা। শিশুবেলায় পড়া বইটা কিছুদিন আগে আবার পর্লাম। আবেদন সেইরকমই পাইছি। আরেকটা বই ছিলো আমি রাসেল বলছি নামে। ১৫ অগাস্টের ঘটনা আর ছবি ছিলো বইটায়। আমি খালি ছবিগুলা দেখতাম, আর শিশু রাসেলের লাইগা মন খারাপ করতাম।
ক্লাস ফোর ফাইভে একটু বড় হৈয়া সেবা প্রকাশনী ধর্লাম। প্রথম বইটা ছিলো কিশোর ক্লাসিকের “লাস্ট ডেইজ অফ পম্পেই”। খুলনায় আমাগো বাসার কাছে ছিলো মিল্লাত লাইব্রেরী। পড়ার বই-খাতা-কলম-পেন্সিল বিক্রির পাশাপাশি গল্পের বইও ভাড়া দিতো তারা। আমি বেশিরভাগ টাইমেই লাইব্রেরীতে দুইটা র্যানকের মাঝখানে বইসা এক-দুইটা বই শেষ কৈরা ফালাইতাম। লাইব্রেরীটা চালাইতো মিরণ আর কিরণ নামের বিহারী দুই ভাই। গত বছর খুলনা গিয়া দেখি মিরণ ভাই আর কিরণ ভাই আলাদা হইয়া গেছে। দুইজনই বুইড়া হইয়া গেছে সাথে সাথে ভাগ হইয়া গেছে আমার মিল্লাত লাইব্রেরীও। সেবার কিশোর ক্লাসিক পড়ায় ডুইবা ছিলাম। অলিভার টুইস্ট, গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স, থ্রী মাস্কেটিয়ারস, কাউন্ট অফ মন্টেক্রিস্টো গোগ্রাসে গিলতেছিলাম এই সময় এক খালাতো ভাই গিফট দিলো তিন গোয়েন্দার কাকাতুয়া রহস্য। মাছের মুখের সামনে লোভনীয় টোপ। পুরা পাগল হইয়া গেলাম। আহা তিন গোয়েন্দা !!! আহা কিশোর-মুসা-রবিন-জিনা !!!
নতুন নেশা কুয়াশা সিরিজ। সেমি সায়েন্স ফিকশন। একটানা মনেহয় ৭৫টা বই বের হইছিলো। সব খুইজা খুইজা পড়ছি।
ক্লাস সিক্সে আবার রংপুর। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচী। বড় বৈনের কলেজ পর্যায়ের বই পড়া কর্মসূচী। মনে আছে ক্লাস সেভেনের বইয়ের লিস্টে দেখছিলাম দীপু নাম্বার টু এর নাম। বড় বৈনরে বলছিলাম ইশ আমি যদি সেভেনে থাকতাম তৈলে এই বইটা পর্তে পার্তাম। বঐন আমারে ঝাড়ি দিয়া বলছিলো সামনের বছরতো পর্তেই পারবি। পরের বছর কোনো কারণে স্কুল পর্যায়ের কর্মসূচী বন্ধ হইয়া গেছিলো। আমার এখনও দীপু নাম্বার টু পড়া হৈলো না। আমার বই পড়া শেষ কৈরা বৈনের বইয়ে হামলা দিতাম। ঐ সময়েই পড়ি ক্রীতদাসের হাসি। বৈনের ম্যাট্রিকের র্যা পিড রিডারে আব্দুল্লাহ উপন্যাসটা ছিলো, বৈনের পাশাপাশি আমিও পইড়া ফেলছিলাম।
আমাদের টাইমে বাচ্চাদের লাইগা পত্রিকা ছিলো দুইটা। “শিশু” আর “নবারূণ”; নিয়মিত পড়া হৈতো। নবারূণের থিকা শিশুর বেশি ফ্যান ছিলাম। কৈশোরে আইসা ধর্চিলাম “কিশোর পত্রিকা” মাঝে মাঝে “কিশোর তারকালোক”। রহস্য পত্রিকা অবশ্য চালু ছিলো শিশিকাল থিকাই।
আস্তে আস্তে বই পড়ার টেস্ট চেঞ্জ হৈতে থাক্লো, আর আমিও বড় হইয়া গেলাম...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন