মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

মেহেরজানঃ একাধিক বিয়েপাগলের সমাহার ও একটি প্রেমের ফোক ফ্যান্টাসি (মুক্তিযুদ্ধের গোলমরিচের গুড়া ফ্রি)

জানুয়ারী ২৮, ২০১১ - ১১:২৫ পূর্বাহ্ন 

পরিচালকের দাবী এইটা একটা ফোক ফ্যান্টাসী।
.
তইলে আমরা সিনেমার ভিত্রে ঢুকনের আগে টিপিকাল ফোক ফ্যান্টাসীগুলানের মোটামুটি টেমপ্লেটটা দেইখা লই-
১. নায়কের বাপ অত্যাচারী সামন্ত প্রভু।
২. নায়কে আদর্শবাদী, প্রজাগো উপ্রে বাপের অত্যাচারে ত্যাক্ত; চান্স পাইলেই বাপের বিরোধীতা করে।
৩. নায়কে নাইকারে বাপের পুষা গুন্ডাগো আক্রমণের থিকা বাঁচায়। ফলশ্রুতিতে নাইকার লগে পেরেম।
৪. নাইকার বাপ/চাচা এলাকার প্রজাগো লিডার টাইপের, যার নায়কের বাপের লগে বনেনা। আবার সেয় অই অত্যাচারের এগেইন্সটেও অ্যাকশনে যাইবার চায় না তার ফলোয়ারগো কথা ভাইবা।
৫. দুই মুরুব্বীরে ফাকি দিয়া বিদ্রোহী নায়কের লগে নাইকার আগানে বাগানে পেরেম চলে। তাতে হেল্প করে এক/দুইজন ভাঁড় টাইপের লোক। যেইটা আবার নাইকার “জেনুইন” প্রেমিকের চউখে ধরা পইরা যায়।
৬. নাইকার সখি টাইপের কেউ একজন থাকে, যার উপ্রে নায়কের বাপের পাইক পেয়াদা কুনো না কুনো ভাবে জবর্দস্তি করে। আর এই জবর্দস্তির লাইগা সেই সখি নায়কের বাপের পাইক পেয়াদার উপ্রে চেইতা ফায়ার, পাইলেই ছিড়া ফেলে এরাম।
৭. এলাকায় গ্যাঞ্জাম বাধে/প্রজারা জাইগা উঠে, নাইকার বাপ/চাচার মিত্যু ঘটে, নায়কে প্রজাদের লগে মিল্যা বাপের বিরুদ্ধে খাড়ায়।
৮. শ্যাষে গিয়া নায়ক নাইকার মিল। নায়কের বাপের মিত্যু/ পরাজয়/ নিজের ভুল স্বীকার।
.
.
.
ব্লগে ব্লগে আলুচনার মাথায় থাকা “মেহেরজান” সিনেমাটা দেখতে গিয়া ৭নং পয়েন্টের অপভ্রংশ আর ৮নং পয়েন্ট পুরাই বাদ দেওয়া একটা সিনেমা দেখলাম।
.
এইখানে পরিচালকে ফোক ফ্যান্টাসীরে একটু উপ্রের লেভেলের দর্শকের কাছে পৌছানির লাইগা অন্য রকম একটা ফ্লেভার এড করছে। সেইটা হইলো আমাদের “মুক্তিযুদ্ধ”। তয় তরকারীতে লবন বেশি হইলে যেরাম বিস্বাদ হয়া যায়, সেরামই পরিচালক ছাগ্লামী টাইপের চউখ দিয়া মুক্তিযুদ্ধের লবন টেস্ট করতে গিয়া বিস্বাদ কৈরা ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধের টাইমের কিছুই এই সিনামায় ফুটায়া তুলতে পারে নাই পরিচালকে।
.
আমার নিজের কাছে সবচাইতে ইরিটেটিং পার্ট হৈলো সিনামার নাইকার এক দলত্যাগী পাকি মতান্তরে বেলুচ সৈনিকের প্রেমে নাজেল হওয়া। আরো বড় ব্লান্ডার করছে পাকি সৈন্যরেই সবচাইতে বেশি মানবিক গুনের ধারক হিসাবে আর মুক্তিযোদ্ধাগোরে যুদ্ধবিমুখ বা যুদ্ধের ভিত্রে থাইকা অন্য ফায়দা লুটনের ধান্দায় থাকা মানুষ হিসাবে দেখানির চেষ্টা কৈরা।
.
আমার কথা হইলো হালায় ফ্যান্টাসীই যখন কর্বি তখন ভালা মতই কর। পাকি/বেলুচরে দিয়া মুক্তিযুদ্ধ করা। নায়ক নাইকার হ্যাপি এন্ডিং না দেখাইতে চাস তো হেরে মাইরাও ফালা। তা না কৈরা তার ফ্যান্টাসীর দৌড় থাইমা গেসে নায়কেরে পলাইয়া যাওন আর নাইকার একা জীবন যাপনে। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সিনামা নামটারে জায়েজ করনের লাইগা, আর কিছু পাবলিক সিম্প্যাথি ক্রিয়েট করনের লাইগা ফর্নাথিং সিনামার ভিতরে ১৯৭১ আর একজন যুদ্ধশিশুরে আইনা ফালায়া দিসে।। মানি, সিনামায় বাস্তবের বাইরেও অনেক কিছু বানানি জিনিস থাকে। কিন্তু আমাগো মুক্তিযুদ্ধটাতো বানানি কিছু না।
.
পরিচালকের সাক্ষাতকারে পড়লাম সে নাকি এই সিনামা বানানির আগে প্রচুর গবেষণা ইত্যাদি কর্ছে মুক্তিযুদ্ধ, বীরাঙ্গনা, যুদ্ধশিশু লইয়া। কিন্তু সেই গবেষণার প্রডাক্ট যদি হয় এই আইটেম, তাইলে আমাগো গবেষণা ছাড়াই বানানি লুতুপুতু প্রেমের সিনামাগুলা এরচাইতে অনেক গুনে ভালা। আরো একটা জিনিস পড়লাম যে সে নাকি প্রপার প্রমাণ পায় নাই যে ঠিক কত সংখ্যক নারীর উপ্রে পাকিরা নির্যাতন কর্ছে, এই প্রসঙ্গে সে বলছে সে নাকি মাত্র ১১ জনের সাক্ষাতকার পাইছে যারা তাদের উপ্রে যৌন নির্যাতনের কথা সরাসরি বলছে। এই ১১ জনের কথার থিকা তার বিচারে বেশি মূল্যায়ন পাইলো মাত্র একটা রেফারেন্স, যেইখানে আছে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীরে আর্মি ক্যাম্প থিকা পালায়া যাইতে কোন পাকি মেজর সাহায্য কর্ছে সেইটা।
এই রেফারেন্স যদি তার কাছে বেশি মূল্যায়ন না’ই পাইতো তইলে সে এটলিস্ট মুখফুইটা যৌন নির্যাতনের কথা বলা ১১ জন বীরাঙ্গনার একজনরে লইয়াই সিনামা বানানির চেষ্টা কর্তো।
.
ওভারঅল পরিচালকের পয়লা এটেম্পট হিসাবে ফোক ফ্যান্টাসী সিনামাডি কোনোমতে চলে। কিন্তু পরিচালক এই ফ্যান্টাসির লগে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা ইতিহাসের সময়রে জুইড়া দিয়া জিনিস্টারে পুরাই গান্ধা একটা রূপ দিয়া ফেলছে সেই সাথে নিজের গ্রহণযোগ্যতারেও প্রশ্নবিদ্ধ কৈরা ফেলছে।
.
উপসংহারের আগে-
খাজা সাহেবের অভিনয় সবচাইতে ভালো হৈছে। বাকি বয়স্ক যারা আছিলো, তারাও উত্রায়া গেছেন। তরুন লেভেলের যারা আছিলেন তারা বর্তমানে প্রচলিত কথ্যরীতিতে কথা কইছেন। সবচে বিটকেলে লাগছে কথার ভিত্রে ঠুসঠাস ইঞ্জিরি মাইরা দেওন। আমার জানামতে অইটাইমে এরম ব্যাপকহারে ইঞ্জিরি ফুটানি একটু কমই হইতো। এইখানে আমি পরিচালকের ব্যর্থতা দেখি। আরো ব্যার্থতা দেখি চরিত্রগুলার পোশাক চয়েজে, এইখানে একটু সচেতন হইলেই ব্যাপারটা এমনে কাইচা যাইতো না।
.
পুরা সিনামায় আমার সবচাইতে প্রিয় সিন হইতেছে সেইটা, যেইটায় পাকি/বেলুচ ছাগল্ডি আরেকটা জেনুইন ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের বাচ্চারে কোলে লইয়া আদর করে।
.
ফাইনালি সব্বাইরে কই, একটু ধৈর্য ধরেন, পাইরেটেড কপি নেটে বা ৩০টাকার ডিভিডিতে আসলে সিনামাটা দেইখেন। সেই খরচটাও বেশি হইয়া যাইবো বইলাই আমার ধারণা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন