মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

মুক্তগদ্যঃ আমার পা'য়ে পা'য়ে জড়ায় ঘাসে জমা মেঘেদের অশ্রু

জুন ২৭, ২০১১ - ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন 

*
আমার পা'য়ে পা'য়ে জড়ায় ঘাসে জমা মেঘেদের অশ্রু।
**
তুমি অবাক তাকিয়েছিলে জানালার শিক ধরে। মেঘেদের ঘনকালো ছায়া পড়েছিলো তোমার চোখে। বিষণ্ণ আকাশের শোকে, তোমার চোখের কোলেও জমেছিলো জল। ছিটে ফোঁটা বৃষ্টিরা, ঠিকানা খুঁজে খুঁজে হয়রান। দু' দণ্ড বিশ্রামে তোমার গালের শ্যামলা মাঠে নিয়েছিলো আশ্রয়য়। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, গাঢ় বৃষ্টির কিংবা তোমার জানালা ছেড়ে চলে যাবার।
কে বলবে, পাওয়াতে বেশী সুখ? না কি হারানোতে?
***
দুরের বটগাছটাতে উথাল পাঠাল বাতাসের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। তরুণ গাছটার বুড়োটে হলুদ পাতাগুলো এলোমেলো ছুটছে মুক্তির আনন্দে। পিচ ঢালা পথটা যেন নদী। বর্ষায় ভরভরন্ত যৌবন। ওই বাঁকে, এলোমেলো ওড়না নিয়ে ব্যাস্ত কিশোরী। আমি হেঁটে চলেছি... না... না... আমি নৌকা বেয়ে চলেছি পিচ ঢালা নদীতে। বাতাসের মাতলামিতে বারবার নিভে যাচ্ছে হাতের ম্যাচ, তবুও চেষ্টা করে চলেছি।
****
এখনকার সব বাড়িতেই মেঝে গুলো টাইলসের হয়। কেমন যেন কৃত্রিমতা। আগেকার শান বাধানো মেঝেতে পা রাখলেই পুকুরে পা ডুবানোর অনুভব পাওয়া যেতো। মনে হ'তো পুকুরের পানিতে ছায়া ফেলেছে একশের কালো মেঘ, এই বুঝি বৃষ্টি নামবে।
*****
সেদিন হাঁটছিলাম রাস্তায়, না থেকেও তুমি ছিলে পাশে। আবোল তাবোল এটা সেটা নিয়ে কথা বলছিলাম। হাসছিলাম হো-হো করে। হঠাৎ তুমি বললে, "দেখো দেখো, আকাশের মন আজকে অনেক খারাপ"। আমি মুখ তুলে তাকালাম, দূরে মেঘের কাজল লেপটে আছে আকাশের চোখে। তুমি আবার বললে, "আকাশের মনে আজকে অনেক অ-নে-ক কষ্ট, দেখো ও আজকে চিৎকার করে কাঁদবে"। আমি সাথে সাথে শুনলাম মেঘেদের চাপা বিলাপ। আমি বিষণ্ণ হাঁটি একা একা
******
এমন কখনো হয়নি, বৃষ্টি আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমি খোলা আকাশের নীচে, আর বৃষ্টি আমার কপালে তার প্রথম চুমু দেয়নি? এরকম ঘটনা আমার মনে পড়ে না। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করতে ছুটে যাই।
*******
তুমি কি কখনও ভিজেছিলে আমার সাথে? বৃষ্টিতে? ভালোবাসায়?
আমি... আমরা, দাঁড়িয়েছিলাম জবুথবু, ঝাঁপ আধাখোলা দোকানের সামনে। তুমি শাঁই শাঁই চলে গিয়েছিলে পর্দা ঢাকা রিকশা চেপে।
আমি... আমরা, বোকাবোকা চেহারা করে দোকানীর কাছ থেকে চা খেয়েছিলাম।
********
এক রোদ ঝলমল দুপুরে তুমি নীল শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ পড়ে, হেঁটে গিয়ছিলে পথ ধরে। রোদের চোখ রাঙানী থেকে বাঁচতে মাথায় তুলে দিয়েছিলে আঁচল। তোমার ঠোঁটের উপর আর নাকের ডগায় বৃষ্টি বিন্দুর মত ঘাম জমেছিলো। হঠাৎ কোত্থেকে এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া দৌড়ে এলো তোমাকে সঙ্গ দিতে। সাথে করে নিয়ে এলো মেঘেদের। একটু আগের খা খা রাস্তাটা নিমেষেই ঠাণ্ডা নদী হয়ে উঠলো। তুমি হেঁটে চলেছিলে, আর মেঘেরা তোমাকে ছায়া দিতে ঢেকে ফেলেছিলো সূর্যকে। তোমার ঘামের বিন্দু গুলোর সাথী হ'তে নেমেছিলো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাস আঁচল নামিয়ে দিয়েছিলো তোমার মাথা থেকে। আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তোমার চুলে সাজিয়ে দিয়েছিলো মুক্তো।
*********
সুযোগ পেলে আমি একটা বৃষ্টিঘর বানাবো। যার ছাদ হবে টিনের। সামনে এক চিলতে বারান্দা থাকবে আর থাকবে এক টুকরো উঠোন। মেঝেটা হবে শান বাঁধানো। আমি ঘরের জানালায় বসে টিনের চালে বৃষ্টির গান শুনবো। উঠোনের সবুজ ঘাসে দেখবো বৃষ্টির নাচ।

৩টি মন্তব্য:

  1. সুযোগ পেলে আমি একটা বৃষ্টিঘর বানাবো। যার ছাদ হবে টিনের। সামনে এক চিলতে বারান্দা থাকবে আর থাকবে এক টুকরো উঠোন। মেঝেটা হবে শান বাঁধানো। আমি ঘরের জানালায় বসে টিনের চালে বৃষ্টির গান শুনবো। উঠোনের সবুজ ঘাসে দেখবো বৃষ্টির নাচ।

    উত্তরমুছুন