আলফেসানীর ভঙ্গুর মাথাটা যখন ফুটপাথ নামের উলুবনে মগজ, হাড়ের টুকরো আর চোখদু'টো ছড়িয়ে দিয়ে ছিলো, তখন পুরো শরীরের ভিতর সবচাইতে জীবন্ত ছিলো কোটর ছাড়া চোখ দু'টোই। তা দিয়েই সে দেখছিলো সহস্র কাঁচের টুকরো মগজের বিভিন্ন স্মৃতিগুলো।
কালচে সবুজ রংএর গামছাটার উপর যে অংশটুকু বিশ্রাম নিচ্ছে সেখানে আলফেসানীর ছোট বেলার মাছ ধরার একটা দৃশ্য মাখামাখি করে আছে-
ঘরে বানানো ছিপ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে প্রায় হেঁজে ওঠা পুকুরের পাশে বসে থাকা, পিঁপড়ার বাসা ভেঙ্গে নিয়ে আসা ডিম বা কাদা মাখামাখি করে তুলে আনা কেঁচো গুলো পাশে কচুর পাতায় জড়িয়ে রাখা। আট আনা দিয়ে কেনা ঝাঁ চকচকে কালো কালো বড়শী, নাইলনের সুতায় পাটকাঠির ফাতনা, নড়ে উঠার সাথে সাথেই হ্যাঁচকা টান, ফলাফল, কেঁচোটা হারানো। বা হঠাৎ একটা পুঁটি মাছ।
এককোনায় আধশোয়া হয়ে থাকা এনার্জী ড্রিংকসের বোতলের কোনায় যে টুকু মগজ মাছরাঙার স্থিরতা নিয়ে বসে আছে (তফাত হলো ষে, সে কখনোই উড়বে না) তাতে আলফেসানীর নিষিদ্ধ কিছু স্মৃতি আঁকা-
সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ সে বৈশাখী মেলায় গিয়েছিলো, কিছু নারী, যারা তার পরিচিতদের মতো না,অন্য রকম আহ্বান। পরিপুর্ণ যুবক সে শহরে পুরোদমে বসবাসের যোগাড়যন্ত্রে ব্যাস্ত। বন্ধুদের সাথে এক সাথে কোন বস্তিতে সবাই মিলে সাদা পাউডারের আকর্ষণে। তবে একবারই। অন্য আকর্ষণ, সাধু সন্তদের প্রিয় ভেষজ। আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাওয়া। মফস্বলে থাকা বাবা-মার কাছ থেকে প্রয়োজনাতিরিক্ত.................
এপাশে অনেকবার পদদলিত জন্মনিরোধকের উপর শুক্রাণুর অস্থিরতায় পিছলে যাওয়া খন্ডটুকুতে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্মৃতি-
একটা কোমল মুখ, কপালে ছোট্ট করে টিপ, চোখে কাজল, নাকফুল সজ্জিত নাকের ডগায় মুক্তোবিন্দু ঘাম। গাঢ় নিশ্বাস, ঘরের আলোআঁধারী। তারো খানিক আগে হ্যালোজেন লাইটে উজ্জ্বল অনুষ্ঠান, রেজিস্টার খাতায় সিগনেচার, দু-তিন দিনের ভীষণ ব্যাস্ততা।
এবার আলফেসানীর কোটরবিচ্ছিন্ন চোখ দু'টোয় বুঝিবা কিছুটা জলের ছোঁয়া...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন