সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন-৩)

কেনো সে সাবউফারের বিট গুলোকে নিজের হৃদস্পন্দনের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিলো, সেটা জেনে ওঠার আগেই একদিন ঢিপ করে সাবউফার অন করার ভোঁতা শব্দে সাথে চন্দ্রলোপার হার্টবিট থেমে গেলো।

'চন্দ্রলোপা' নামটা তার নিজের খুবই পছন্দের ছিলো। কিন্তু নামটার মানে জানা ছিলো না। রাস্তার পাশের টং-দোকান থেকে সিগারেট কিনতে এসে গৃহী আলফেসানীর খুব মন খারাপ হচ্ছিলো। খুলি কামড়ে ধরে থাকা চুলগুলোর ওপর কিছু খাড়া আর কিছু কৌণিক রোদের মনখারাপ করা ঝিকিমিকি সে নিজের মনেও অনুভব করছিলো। আলফেসানীর হাতে একটা রোদেলা রঙ এর দেশলাই। একটা কাঠি জ্বালিয়ে, সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রলোপার গালের উপর আলোর খেলা ভেসে উঠছিলো তার নিউরনে।

বাবা, মা আর দু ভাই নিয়ে চন্দ্রলোপার সংসার ছিলো। থাকতো গ্রামের মত মফস্বলে কিংবা মফস্বলের মতো গ্রামে। ভালোই তো দিন গুলো কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন খালার সাথে আলফেসানী এলো। কালো, লম্বা, চিকন, উস্কোখুস্কো আলফেসানী। ওর ভিতর কেমন একটা উদ্ধত ভাব। আধা গ্রাম-আধা মফস্বল কিংবা আধা মফস্বল-আধা গ্রামের চন্দ্রলোপার অভিভূত হবার শুরু। রাতে খাবার পর, যখন সে দেশলাই চাইলো, চন্দ্রলোপার খারাপ লাগেনি। মনে হয়েছিলো এরকমই তো হবার কথা। কিছুটা শান্ত, কিছুটা উস্কোখুস্কো, কিছুটা উদ্ধত।

এর পরে যতবারই চন্দ্রলোপা আলফেসানী যুগলবন্দী হয়েছিলো, ততবারই দুজন দুজনকে আরো কাছে টেনেছিলো। তবে তাদের নিজেরা কোনো কমিটমেন্টে আসেনি। যেখানে আকাশ আর মাটির মানসিকতাটা একই দিগন্তে মিশেছে সেখানে কমিটমেন্ট ততটা...

ফুলতোলা চাদরের উপর নিজের দেহটাকে বিছিয়ে দিয়ে, কৃত্রিম প্রকৃতিকে আত্মস্থ করার সাথে সাথে চন্দ্রলোপা নিজেকে আরেকটি পরিবর্তনে মানিয়ে নেবার চেষ্টায় ছিলো।
কাকতালীয়ই হবে। একই সময়ে আলফেসানীও চেক চেক চাদরের উপর শুয়ে ছাদের বিশালতায় আকাশটা খুঁজছিলো আর সাথে হাত বাড়িয়ে তার প্রিয় সাবউফারটার সুইচ...

মৃদু ভোঁতা ঢিপ শব্দের সাথে সাবউফারটা যখন অন হয়েছিলো, ঠিক তখনই চন্দ্রলোপার হার্টবিটটাও চুপ করে গিয়েছিলো...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন