সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০১০

হাতুড়ে গদ্য (অসংলগ্ন)

আলফেসানী ভোর পাহারা দিতে চেয়েছিলো। ও জানতো না ভোর পাহারা যারা দেয় তাদের নিশিকালীন সঙ্গমে বেশী সময় খরচ করা নিষেধ।

কত অজানারে বলে, যখন ঢুলতে ঢুলতে আলফেসানী পাবলিক বাস থেকে 'নামছিলো' ঠিক তখনই রাতজাগা কয়েকটা উদ্ভট শুকর তাদের মোটা ঘাড় গর্দান নিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে করতে পেট্রোলে টানা গাড়িতে করে বাড়ি 'ফিরছিলো'। যেখানে তাদের হরিণ চোখের অর্ধাঙ্গীনীরা বিছানাকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে শুয়ে আছে। হয়তো সারারাত তারাও কোনো উদ্ভট শুকরকে আনন্দ দিয়েছে, নিজেরাও আনন্দিত হয়েছে। হয়তোবা দেয়নি, সারারাত সতী-সাধ্বী নারীর মতো ভাতের থালা আগলে রেখেছে উচ্ছিষ্ট লোভী পোকা আর পশুদের কাছ থেকে।
যাহোক, পেট্রোল টানা গাড়ির আরোহীদের চোখে আরো রঙধনু জড়ানো 'ছিলো'। যার ফলশ্রুতিতে তারা রাস্তা পেরুতে থাকা আলফেসানীকে মেটে, রোমসর্বস্ব একটা বেজী 'ভেবেছিলো'। কতদিন বেজী দেখিনা বলে তারা যখন আলফেসানীর লেজের উপরে উঠে পড়ার উপক্রম 'করছে', তখনই সিগনালের লাইটটা একচোখা সাইক্লপের মতো লাল চোখে তাদের বাহনের পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়ে 'গেলো'।
উদ্ভট শুকরগুলো আর যাই হোক অমানুষ না। তারা একটা বেজীকে পিষতে রাজী আছে, কিন্তু সাইক্লপসের সাথে তাদের ভয়ানক দোস্তি। তাই লালচোখ সাইক্লপকে বাঁচাতে তারা লাফ দিলো রাস্তা থেকে আধাফুট মতন উঁচু নদীতে। যেখানে কয়েকটা পোকামাকড় ঘুমিয়ে থাকে অন্য ভোর গুলোতে।

আলফেসানী যখন দেখতে পেলো একটা মুশকো কালো গাড়ি তার পায়ের কাছে আসার পাঁয়তারা 'করছে' তখন সে সহজাত পাশবিক প্রবৃত্তির বশে একটা লাফ দিয়ে উঠে 'পড়লো' রাস্তার পাশের ফুটপাথ নামের জঙ্গলা জমিতে। এই জঙ্গলায় কিছু পোকামকড় (এইখানে আলফেসানী আর উদ্ভট শুকর গুলোর চিন্তা একই রকম) পলিথিনের পাতা মুড়ি দিয়ে সারারাত অবৈধ মেলামেশা করে, আর ভোরে এসে ভোঁস ভোঁস করে নিশ্বাসের কসরত করে।
আলফেসানী একবার পলিথিন মোড়া একটা পোকার সাথে রাত-বৌ 'খেলেছিলো'। সেদিন নিজেকে তার খুব পোকা-পোকা মনে 'হয়েছিলো'। আর যখন সে নিজের শরীরের উত্তপ্ত শুয়োপোকা গুলোকে ছেড়ে দিতে 'পেরেছিলো', তখনকার মতো আনন্দ আর কোনোদিনও পায়নি বলে তার মনে 'হচ্ছিলো'।

এখন আমরা এই দুই গ্রুপের কাছ থেকে একটু দুরে সরে যাই। সেখানে একটা ঝাপসা চশমা পড়া বুড়ো কুনো ব্যাঙ ড্যাবড্যাব করে যেই ঘটনাটা কেবলি ঘটে গেলো সেটা দেখছিলো। বহু বছর আগে ব্যাঙ টার বাড়ি ছিলো নদীর ধারের কোনো গ্রামে। একটা নৌকাও ছিলো। অবশ্য সে তখন ব্যাঙ হিসেবে পরিচিত ছিলোনা। তখন তার পরিচয় ছিলো তাগড়া মোষ হিসেবে। মোষ আর মোষনী সারাদিন নানা কাজে ব্যাস্ত 'থাকতো'। আর রাতের বেলা তৃপ্ত সঙ্গম সেরে সকালের জন্য প্রস্তুত 'হতো'।
সেই গ্রামে কিছু সাপ আর শেয়াল ছিলো। তারা ভরভরন্ত মোষনীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু কাছে আসার সাহস করে পারে নি মোষের জন্য। একদিন গ্রামে কয়েকটা গলাছিলা শকুন 'আসলো'। শকুন সাপ আর শেয়ালের মিলিত পরিকল্পনায় একটা মেয়ে বাছুর মারা 'পড়লো'। দোষ পড়লো মোষের উপর। মোষটাকে ধরে খোয়াড়ে পাঠানো হলো। মোষনীকে ছিবড়ে বানিয়ে দিলো শকুন, সাপ আর শেয়ালেরা।
মোষ খোঁয়াড় থেকে যখন তার গোয়ালে ফিরলো তখন আর সে মোষ নেই। হয়ে গেছে ঝাপসা চশমা পড়া কুনো ব্যাঙ।

ব্যাঙটা এখানে অনেক কিছুরই সাক্ষী। যেমন সাক্ষী আজকের ফুটপাথের উপর আলফেসানীর হুমড়ী খেয়ে পড়ে যাবার, একটা কালো গাড়ীর আলফেসানীর মাথার উপর দিয়ে চলে যাবারও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন